আঁচিল সংক্রামক জাতীয় এক ধরনের রোগ। এটা ফোস্কার মত, উপরিভাগে কালো ফোঁটা দেখতে ক্ষুদ্র বীচির মত হয়ে থাকে। প্রায় সব পদ্ধতিতেই আঁচিলের চিকিৎসা করা যায়। এটা মানবদেহের নানা অঙ্গ প্রত্যাঙ্গে হয়ে থাকে। তবে হাতে এবং পায়ে বেশি হয়। দেহের চামড়ায় সংক্রামণ অথবা মানব আব ভাইরাস (Human Papilloma Virus) সংক্ষেপে এইচপিভি (HPV) দ্বারা চামড়া আক্রান্ত হলে আঁচিল হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ ধরনের আঁচিল আছে। কিছু কিছু আঁচিল আছে একা সেরে যায়। আবার কিছু আছে সহজে সারে না।
তথ্য সূচী দেখুন
Toggleআঁচিল কি ছোঁয়াচে? (Are Warts Contagious)?
হ্যাঁ, কিছু ধরনের আঁচিল ছোঁয়াচেও হয়। একজনের দেহে আঁচিল স্পর্শের কারণে ঐ ভাইরাস অন্য আরেকজনের দেহে আসতে পারে। আঁচিল বহনকারী রোগীর তোয়ালে ব্যবহার করার মাধ্যমে দেহে আঁচিল হতে পারে। এমনকি আঁচিল স্পর্শকৃত হাত দিয়ে দেহের অন্য কোন স্থান স্পর্শ করলে আঁচিল হতে পারে।
আঁচিলের চিকিৎসা (How to get rid of warts):
আঁচিলের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে হোমিও চিকিৎসা আমাদের দেশের খুব জনপ্রিয়। পাশাপাশি এলোপ্যাথি চিকিৎসাও অনেকে করে থাকেন। তবে দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে এটার প্রাকৃতিক চিকিৎসা বা ঘরোয়া চিকিৎসা করে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা ভুলভাবে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে।
আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা (Home Remedies for Warts):
আঁচিলের অনেক ধরনের কার্যকরী প্রাকৃতিক চিকিৎসা আছে। আঁচিল ৭ দিনেই পুরোপুরি ভাল হতে পারে আবার ভাল হতে কয়েকমাসও লাগতে পারে। এটা নির্ভর করে আঁচিলের ধরনের উপর। নিচে সবচেয়ে সফল পরীক্ষিত ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো বর্ণনা করা হল।
১। আঁচিল চিকিৎসায় রসুনঃ
রাতে ঘুমানোর আগে রসূন ছেঁচে বা রস করে আঁচিলের উপর মেখে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখুন। সারা রাত রাখার পর সকালে খুলে ফেলুন এবং নিয়মিত করতে থাকুন।
২। মধু মাখিয়ে আঁচিল চিকিৎসাঃ
সরাসরি মৌচাক থেকে পাওয়া খাঁটি মধু আঁচিলের উপর মাখিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখুন। ৩-৪ ঘণ্টা বা সারারাত বেঁধে রাখতে পারেন। মধু মাখানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে আঁচিল ধুয়ে নিন।
৩। সিরকা বা আপেলের গজানো রস (Apple Cider Vinegar):
আঁচিল চিকিৎসায় এটা অনেক জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে তুলা পানিতে ভিজিয়ে আঁচিলের উপর হালকা করে ঘষে ময়লা পরিষ্কার করুন। তারপর আরেকটু তুলায় সিরকা মাখিয়ে অনুরূপভাবে আঁচিলের উপর ২-৩ মিনিট ঘষুন। সবশেষে আরেকটি তুলায় একটু ভিনেগার মাখিয়ে আঁচিলের উপর ব্যান্ডেজ করে রাখুন। সিরকার সাথে বেকিং সোডা মাখিয়ে প্রলেপ দিতে পারলে আরো ভাল।
৪। দুগ্ধসদৃশ রসঃ
আমাদের আশে পাশে অনেক আগাছা আছে সেগুলোর কষ দেখতে অবিকল দুধের মত। জঙ্গলে এবং রাস্তার পাশে এধরনের আগাছা বেশি জন্মে। উদ্ভিদগুলোর দুগ্ধসদৃশ রস বা দুগ্ধস্তম্ব আঁচিলের চিকিৎসায় খুব কার্যকরী এবং জনপ্রিয়। তবে এটা সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। দেহের অন্য ভাল কোন স্থানে এই রস লাগলে ঘা হয়ে যেতে পারে। উদ্ভিদের কষ হাতে দিয়ে না ঘষে, উদ্ভিদের ছেড়া অংশ হাতে নিয়ে আঁচিলের উপরে হালকা করে লাগিয়ে দিন।
৫। কলার খোসাঃ
হ্যাঁ, কলার খোসা দিয়েও আঁচিলের চিকিৎসা করা যায়। কলার খোসার ভেতরের সাদা অংশ চামচ দিয়ে তুলে নিন। তারপর হাত দিয়ে একটু মাখিয়ে নিয়ে আঁচিলের উপর হালকা ঘষে প্রলেপ দিয়ে দিন। দিনে ২-৩ বার এটা করতে পারেন। যতদিন পর্যন্ত আঁচিল ভাল না হচ্ছে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে থাকুন।
৬। আঁচিলের চিকিৎসায় ভিটামিন সিঃ
ভিটামিন সি তে থাকা এসিড আঁচিলের সংক্রামণকারী ভাইরাসকে সরাসরি মেরে ফেলতে সক্ষম। ভিটামিন সি ট্যাবলেট গুড়ো করে সাথে লেবুর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করবেন। তারপর আঁচিলের উপর সুন্দর করে প্রলেপ দিয়ে রেখে দেবেন। অথবা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেঁধেও রাখতে পারেন। দিনে ৩-৪ বার এই পেস্ট ব্যবহার করুন।
৭। আলু দিয়ে আঁচিলের চিকিৎসাঃ
শুনতে অদ্ভুত লাগলে এটা সত্য যে, আঁচিলের চিকিৎসায় আলু অনেক কার্যকরী। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও যুগ যুগ ধরে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আলু ছেঁচে পেস্টের মত করে আঁচিলের উপর রেখে দিলে আঁচিল ভাল হয়ে যায়।
৮। আনারসের জুসঃ
আনারসের জুস বা রস দিয়ে আঁচিল ভিজিয়ে রাখলে ধীরে ধীরে এটা সেরে যায়। আনারসে উচ্চ মাত্রায় এসিড এবং এক ধরনের জৈবরসায়নিক পদার্থ আছে যা আঁচিলে থাকা জীবাণুকে সরাসরি মেরে ফেলে। দিনে ৩-৪ বার আনাসের জুস দিয়ে আঁচিল ভিজিয়ে রাখলে খুব দ্রুত এটা সেরে যায়।
৯। সূচের ছ্যাকাঃ
সূচ বা সূই হালকা গরম করে আঁচিলের উপর ধরে রাখুন। এভাবে ১০-১৫ বার করে গরম সূচের ছ্যাকা দিন। দিনে ৪-৫ বার করে এটা করে দেখুন, আঁচিল ভয়ে পালাবে। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এই পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয়।
১০। শক্ত টেপ বা নেইল পলিশঃ
আঁচিলের চিকিৎসায় এগুলো অনেক কার্যকরী। আঁচিলের উপর শক্ত টেপ দিয়ে আটকিয়ে রাখলে বা পরিষ্কার নেইল পলিশের প্রলেপ দিয়ে রাখলে জীবাণু শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়। রাতে ঘুমানোর আগে এটা করতে পারেন।
পরামর্শঃ
আঁচিল স্পর্শ করার আগে এবং পরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন। যেন এর জীবাণু শরীরের অন্যকোন স্থানে না ছড়ায়।
আঁচিল থেকে বাঁচতে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন।[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
Author
-
একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
No comment yet, add your voice below!