স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন (underweight) অসুস্থতার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে অশান্তির একটি বড় কারণ। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ওজন বারানোর উপায় জানার জন্য নানা লোকের নানা পদ্ধতি বা কৌশল অনুসরণ করেন।
তথ্য সূচী দেখুন
Toggleএসব ছেলে মেয়েদের আমাদের দেশে সবাই একটু বাঁকা চোখে দেখে। এর জন্য তাদের নানা কটু কথা শুনতে হয়। ছেলেদের তুলনায় এটা নিয়ে মেয়েরা বেশি ভুক্তভোগী।
আমাদের দেশে মোটা মানুষের তুলনায় চিকন, রোগা বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের মানুষ বেশি। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য দ্রুত ওজন বারানোর উপায় বা মোটা হওয়ার সহজ উপায়গুলো নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব।
ওজন বাড়ানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই উচ্চ প্রোটিন, ক্যালরি, চর্বিযুক্ত খাবারগুলো বেশি খেতে। ফাইবার বা সহজে হজম হয় এধরনের খাবারগুলো কম খেতে হবে।
দ্রুত খাবার হজম হয়ে থাকলে আপানার খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে এবং পাশাপাশি ব্যায়াম করলে ভাল ফলাফল পাবনে।
অতিরিক্ত চিকন আসলে কি (What is underweight)?
সাধারণভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনকে ঊন ওজন (underweight) বলে। এটা মাপার জন্য বডি ম্যাস ইন্ডেক্সিং (Body Mass Indexing) সংক্ষেপে বিএমআই (BMI) যা উচ্চতার সাথে ওজন অনুযায়ী মানবদেহের চর্বির পরিমাপক। এটি শুধুমাত্র একজন পূর্ণ বয়স্ক (২০ বছরের অধিক) মানুষের দেহে পরিমাপ করা হয়। অনলাইনে অনেক বিএমআই পরিমাপ পাওয়া যায়। তার মধ্যে এটি সবচেয়ে ভাল। https://www.nhlbi.nih.gov/health/educational/lose_wt/BMI/bmicalc.htm
বিভিন্ন কারণে একজন মানুষের স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন হতে পারে। খাদ্যাভ্যাস জনিত, গলায় অবস্থিত শারীরিক বৃদ্ধি ও কর্মতৎপরতাকে প্রভাবিতকারী এক ধরনের গ্রন্থিবিশেষের (হরমণ) সমস্যা, বংশগত সমস্যা, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, সংক্রমণ, ইত্যাদি কারণে দেহে ওজন বৃদ্ধিতে সমস্যা তথা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন হতে পারে। তবে আমার দেয়া ওজন বারানোর কৌশলগুলো অনুশীলন করার আগে শারীরিক পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য ডাক্তারি চেকআপ করে নিলে ভাল হবে। কেননা আপনার শরীর সংক্রমণ বা অন্যকোন রোগের কারণে অতিরিক্ত চিকন হলে এই উপায়গুলো আপনার জন্য কার্যকরী নাও হতে পারে।

দ্রুত মোটা হবার সহজ উপায়গুলোঃ
আপনি চিকন থেকে মোটা বা স্বাভাবিক ওজন বানাতে চাচ্ছেন, কিন্তু সেটা সঠিক নিয়মে করছেন কিনা এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সোডা জাতীয় পানীয় বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাবার খেয়ে ওজন বাড়ানোর যায়। এতে শরীরে মাংসপেশি না বেড়ে শুধু চর্বি বাড়ে, তাতে নানা রোগ হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। ওজন বাড়াতে চাইলে আপনাকে সঠিক পরিমাণে মাংসপেশি বাড়াতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুনঃ দ্রুত ওজন বাড়ানোর প্রথম এবং প্রধান কৌশল হচ্ছে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। সবার আগে একটি পূর্ণাঙ্গ ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা তৈরি করে নিন। ধীরে না খেয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ধীরে খেলে হজমগ্রন্থি খাবারগুলো পেটে যাওয়ার সাথে সাথে হজম করে ফেলে। সকালে পেট ভরে খেতে হবে। প্রতিবার খাওয়ার শেষে হালকা কিছু খাবেন। যেমনঃ ফলমূল, মিষ্টি, দই, চকলেট, বাদাম, ইত্যাদি।
বেশি বেশি ক্যালরি খানঃ সারাদিনের কাজকর্মে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ করছেন দ্বিগুণ আপনাকে খেতে হবে। শরীরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ ক্যালরি জমা করলে মাসে ২-৩ কেজি ওজন বাড়বে। আপনি যদি আরো দ্রুত ওজন বাড়াতে চান তাহলে দিনে ৭০০-১০০০ ক্যালরি জমা করুন। দিনে অন্তত ২-৩ বার মাছ, মাংসসহ উচ্চ প্রটিনযুক্ত শাকসবজি এবং কার্বহাইড্রেড জাতীয় খাবার খান।

দিনে ৩ বার না খেয়ে ৬ বার খেতে হবেঃ আপনার যদি হজমক্রিয়ায় সমস্যা না থাকে তাহলে দিনে ৩ বারের বদলে ৬ বার খান। সেক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার একটা সময় ও তালিকা করে নিতে পারেন। হালকা খাবারের সময় উচ্চ ক্যালারিযুক্ত খাবার যেমনঃ কলা, মাখন, মিষ্টি জাতীয় খাবার, বাদাম জাতীয় খাবার, তেলে ভাজা স্বাস্থ্য সম্মত খাবার বেশি বেশি খান।
রাতে দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে, ঘুমানোর আগে হালকা কিছু খেয়ে নিন। মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলেও হালকা কিছু খেতে পারেন। রাতে শোয়ার আগে বিছানার আশে পাশে খাবার রাখুন। ওজন বাড়ানোর সকালের খাবার তালিকা দেখতে এটা পড়ুনঃ
খাবারের পরিমাণের চেয়ে পুষ্টিগুণের পরিমাণের উপর নজর দিনঃ সারাদিনে কতবার, কতখানি খেলেন, সেটা নিয়ে না ভেবে কি খেলেন এবং সে খাবারের পুষ্টিগুণ কেমন সেটা নিয়ে ভাবুন। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। শরীরে জমা বাড়তি প্রোটিনগুলো পরে মাংসপেশিতে রূপান্তরিত হয়। প্রক্রিয়াকরণহীন খাবার (Unprocessed Food) বেশি বেশি খাবেন। ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, আগে থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার (Frozen Food), ইত্যাদিতে প্রচুর লবণ, চিনি, অস্বাস্থ্যকর তেল থাকে। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
ঘরে বানানো চর্বিযুক্ত খাবারঃ ওজন বাড়ানোর জন্য তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার তবে সেটা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হতে হবে। ঘরে বানানো তেলে চুবিয়ে ভাজা খাবার বা আইসক্রিমে স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগুণও অটুট থাকে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বেগুনি, সিঙ্গারা, সমুচা থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, পিজ্জা সব কিছুই ঘরে বানিয়ে খাওয়া সম্ভব। বাইরের পানীয় না খেয়ে ঘরে তৈরি করে খান। ফলের জুস, জিরা পানি সব এসব খুব সহজেই ঘরে তৈরি করা যায়।
প্রচুর পরিমাণে পানি ও শক্তিযুক্ত খাবার খানঃ পানি হল শরীরের অন্যতম জ্বালানী। পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি আপনাকে প্রচুর পানি বা পানীয় খেতে হবে। পানি শরীরে খাবারগুলোকে সঠিকভাবে কার্যকরী করে তোলে। নিয়মিত ৪-৫ লিটার পানি খেতে হবে। ওজন বাড়ানোর জন্য অল্প অল্প করে বার বার পানি খাওয়া সবচেয়ে ভাল কৌশল।
কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কিসমিস, খেজুর, আলুবোখারা, দুধ, মালাই, অলিভ ওয়েল, যব, লাল চালের ভাত, মাংস, মিষ্টি আলু, ইত্যাদি খাবারে প্রচুর শক্তি বর্ধক পুষ্টিগুণ আছে। এগুলো নিয়মিত খেতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ মোটা হওয়ার জন্য খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম আপনার দেহে মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করবে এবং শরীরকে সুগঠিত করবেন। শরীরের অযাচিত চর্বিগুলোকে পুড়িয়ে সুস্থ সবল থাকার জন্য ব্যায়াম অত্যান্ত জরুরী। সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যায়ামাগারে (Gymnasium) যান এবং শরীরের সব অংশের ব্যায়াম করুন। তবে প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী ভারোত্তলন ব্যায়ামগুলো করুন। হৃদযন্ত্রের ব্যায়ামের (Cardio Exercise) চেয়ে ওজন তোলার ব্যায়ামগুলোতে বেশি মনোযোগী হন। এটা মাংসপেশি গঠনের পাশাপাশি শরীরে শক্তি বাড়িয়ে দেবে।

দ্রুত ওজন বাড়ানোর আরো ১০টি উপায়ঃ
১। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে থেকে কোন পানি খাবেন না। এটা আপনার পেটের জায়গা দখল করে, ফলে বেশি খাওয়া যায় না।
২। একটু পর পরই খাওয়ার অভ্যাস করুন। ক্ষুদা লাগার জন্য অপেক্ষা করবেন না। তিনবার ভারি খাবারের পাশাপাশি একটু পর পর যখন যেটা মন চায় খাবেন।
৩। রাতে শোয়ার আগে হালকা গরম দুধ খান। এতে প্রচুর উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ক্যালরি আছে।
৪। যদি নিয়মিত ব্যায়াগারে যান, তাহলে ওজন বাড়ানোর প্রোটিন শেক খেতে পারেন। তবে অবশই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
৫। বড় প্লেটে খাবার খান। এটা আপনাকে বেশি খাবার নিতে এবং খেতে উৎসাহ দেবে।
৬। চা-কফিতে দুধ চিনি বেশি করে নিন। এর সাথে ক্রিম বা মালাইও যুক্ত করতে পারেন।
৭। ওজন বাড়ানোর ভাল ঘুমের বিকল্প নেই। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। দুপুরের খাবার পর ৩০ মিনিট ঘুমাতে পারলে আরো ভাল। তাই অনিদ্রা সমস্যা দূর করে নিয়ন্ত্রিত ঘুমের অভ্যাস করুন।
৮। খাবার সময় আগে মাছ-মাংশ পরে শাক সবজি খান। এটা আপনাকে বেশি বেশি ক্যালরি ও প্রোটিন গ্রহণ করতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুনঃ গাজরের উপকারিতা
৯। হালকা খাবারের সময় মিষ্টি জাতীয় এবং তেলে ভাজা খাবার বেশি বেশি খান।
১০। ধূমপান বা সকল ধরনের নেশা জাতীয় অভ্যাস ছেড়ে দিন।
ভিন্ন শারীরিক গঠন অথবা সমস্যার কারণে অনেকের জন্য এটা কষ্টকর হতে পারে। তবে উপরের ওজন বাড়ানোর উপায়গুলোর অনুশীলন চালিয়ে গেলে ফলাফল আসবেই। শুরুতে হয়ত ওজন বাড়ার হার অনেক কম হবে, পরে অনেক দ্রুত উন্নতি হবে। সবশেষে এটাই বলব, লেগে থাকুন কাজ হবেই।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
Author
-
একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
1 Comment
উচ্চ বিপাক, পাতলা ফ্রেম বা কম ক্ষুধাযুক্ত অনেক লোক ওজন বাড়াতে লড়াই করে। আপনি মাংসপেশির ভর তৈরি করতে বা প্রতিদিনের আরও স্বাস্থ্যকর ওজন আবিষ্কার করার আশায় থাকুক না কেন, ওজন বাড়ানোর সর্বোত্তম সমাধান হল বেশি খাওয়া এবং সঠিক খাওয়া। এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে আপনার ওজন বৃদ্ধি, পেশী বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য বেনিফিট সর্বাধিক করতে কীভাবে কী খাওয়াবেন তা শিখাব।