কোন উপায়ে আপনার শিশুর সর্দি কাশি দূর করবেন এটা নিয়ে অবিভাবকদের নানা দুশ্চিন্তা। অনেকে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে বাচ্চাদের সর্দি কাশির চিকিৎসা করাতে ভয় পান। নবজাতকের সর্দি কাশি দূর করতে প্রাকৃতিক চিকিৎসা অনেক কার্যকরী এবং সম্পূর্ণ ঝুকিমুক্ত।
তথ্য সূচী দেখুন
Toggleপ্রত্যেক বছর বাংলাদেশে কমপক্ষে কয়েক নবজাতক শিশুরা সর্দিকাশিতে ভোগে শুধুমাত্র দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হওয়ার কারণে।
অধিকাংশ শিশু জন্মের প্রথম বছরে সাতবারের বেশি ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হয়। নানা মাধ্যমে শিশুদের শরীরে রোগসংক্রামণ দ্বরা আক্রান্ত হয়। ক্ষতিকর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যাক্তি অথবা দূষিত বাতাস এবং আবহাওয়ার মাধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়।
নবজাতকের সর্দি-কাশির লক্ষণ
শিশুদের সর্দিকাশি হলে নাক দিয়ে পানি পরে, হালকা জ্বর আসে (১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), হাঁচি হয়, কফ বের হয়, খাবারে অরুচি দেখা দেয়, অনিদ্রা, ইত্যাদি লক্ষন দেখা দেয়।

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়
আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (শিশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অ্যাকাডেমি) এর মতে, ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের সর্দিকাশি হলে ঔষধ খাওয়ানো উচিত না এবং প্রাকৃতিক উপায়ে তাদের চিকিৎসা করা উচিত। বাসায় চিকিৎসা করালে তাদের সর্দিকাশি ভাল প্রতিকার পাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
যাইহোক, শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি চেয়ে বেশি হলে এবং সাধারণ সর্দিকাশি ১ সপ্তাহের চেয়ে বেশি থাকলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বাচ্চা যদি ৩ মাসের ছোট হয় তবে যে কোন কিছুতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের সর্দি কাশি দূর করার উপায়ঃ
নবজাতকের যে কোন অসুখের প্রধান অসুখ হল সব সময় বিশ্রামে রাখা। অসুস্থ হলে শান্ত ও চুপচাপ স্থানে রাখা এবং সব সময় খেয়াল রাখা কেউ যেন বাচ্চাকে বিরক্ত না করে। এছাড়া নিচে বাচ্চাদের সর্দিকাশি দূর করার প্রাকৃতিক ঔষধগুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
১। স্পঞ্জ গোসল (Sponge Bath): ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করালে বা স্পঞ্জ গোসল করালে বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে জ্বর ভাল হয়ে যায়। এটা বাচ্চাদের শরীরকে শান্ত করে এবং ভালভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে যে, রোগ সারানোর জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয়।
জ্বর হলে নবজাতককে দিনে ২-৩ বার স্পঞ্জ ও ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শরীর ভাল করে মুছতে হবে। স্পঞ্জে পানি নিয়ে চিপে অতিরিক্ত পানি ফেলে দিন। এরপর সে স্পঞ্জ দিয়ে হাত, পা সহ সারা শরীর ভাল করে মুছে দিন। শিশুর বয়স বেশি হলে গোসল করাতে পারেন।
সতর্কতাঃ বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না।
২। লেবুর সিরাপঃ শিশুদের কাশি কমানোর উপায় হিসেবে লেবু আরেকটি ভাল প্রাকৃতিক ঔষধ। এতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরকে ঠান্ডা দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ও এন্টি-ইনফ্লামাটরি সর্দি-কাশি, কফ, গলা শুকিয়ে যাওয়া কমাতে কার্যকর।
৪টি লেবু খোসা ছাড়িয়ে ১ টেবিল চামচ ফালি করা আদার সাথে একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। সেই লেবুর আর আদা ফালি গরম পানিতে রেখে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর পানি ছেঁকে নিন এবং এর সাথে স্বাদ বাড়ানোর জন্য সামান্য মধু মেশান। শিশুকে দিনে ৩-৪ বার এই পানি খাওয়ান।
সতর্কতাঃ ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য মধুর পরিবর্তে চিনি মেশান।
৩। মধুঃ নানা গুনে গুণান্বিত মধু ১ বছর বা তার অধিক বয়সী বাচ্চাদের সর্দিকাশি নিরাময়ে অনেক নিরাপদ ঔষধ। এতে আছে উচ্চ মাত্রায় এন্টিব্যাক্টেরিয়াল, এন্টিওক্সিডেন্ট এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো গুনাগুণ।
এসব কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর জীবাণু হত্যা করে। ২ টেবিল চামচ মধুর সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর পর বাচ্চাদের খাওয়ান। ১ গ্লাস গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে বাচ্চাদের শুকনা কাশি ভাল হয় এবং বুকে ব্যাথা কমে যায়।
সতর্কতাঃ ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কখন মধু খেতে দেবেন না।
৪। মুরগির স্যুপঃ ১ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের সর্দি কাশি দূর করতে মুরগির স্যুপ অনেক কার্যকরী। এটা হালকা এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে থাকা এন্টিওক্সিডেন্ট দ্রুত রোগ সাড়াতে সাহায্য করে। ২০০০ সালে চেস্ট জার্নালে (Chest Journal) প্রকাশিত এক গবেষণায় পরামর্শ দেয়া হয় যে, মুরগির স্যুপে থাকা পুস্টি গুলো শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যায় ঔষধের মত কাজ করে। সর্দিকাশি হলে ঘরে দেশি মুরগির সাথে শাকসবজি (গাঁজর, বিট, পালংশাক, ইত্যাদি) দিয়ে স্যুপ বানিয়ে বাচ্চাদের দিনে ২-৩ বার খাওয়ান।
৫। কমলালেবুঃ কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি রক্তকোষের উৎপাদন বাড়ায় যা সর্দিকাশির জীবাণুদের সাথে যুদ্ধ করে। এছাড়াও এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ২ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের ১ থেকে ২ গ্লাস কমলালেবুর রস পান করতে দিন। ছোটবাচ্চাদের জন্য, কমলালেবুর রসের সাথে সমপরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। এরপর তাদের সেটা খাওয়ান।
৬। আদাঃ বাচ্চাদের কাশি দূর করতে আদা অনেক জনপ্রিয় এবং কার্যকরী। এটা সাধারণ জ্বর তাড়াতে খুব ফলপ্রসূ। একটি পাত্রে ৬ কাপ পানি, আধা কাপ আদার ফালি এবং ২টি দারচিনির ডাল নিন। ২০ মিনিট হালকা তাপে সেগুলো এসাথে রান্না করুন। তারপর ছেঁকে নিন। সবশেষে পানির সাথে মধু অথবা চিনি মিশিয়ে শিশুদের দিনে ১ বার পান করতে দিন।
৭। আজওয়াইনঃ

শিশুর ঠাণ্ডা কাশি নিরাময়ে আজওয়াইন আরেকটি কার্যকরী মসলা। শিশুর জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া দূর করতে করতে এটা খুব ফলপ্রসূ।
আধা চা চামচ আজওয়াইন ১ কাপ গরম পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এর পর ছেঁকে পানিটুকু বাচ্চা দিনে একবার পান করতে দিন। অথবা ১ চা চমচ আজওয়াইন এবং ২ কোয়া রসূন একটা পরিষ্কার সুতি কাপড়ে বেঁধে বাচ্চার জামার পেকেটে রেখে দিন।
৮। আপেল সিডার ভিনেগারঃ শিশুর জ্বর নিরাময়ে ভিনেগার অনেক কার্যকরী। এতে থাকা প্রাকৃতিক এসিড শরীরের তাপমাত্রা দূর করতে সাহায্য করে। ভিনেগারের সাথে পানি মিশিয়ে নিন। ২ টুকরো পরিষ্কার কাপড় তাতে ভিজিয়ে নিন। এরপর কাপড়ে লাগা অতিরিক্ত পানি চিপে ফেলে দিন। সবশেষে কাপড়টি দিয়ে আলতো করে শিশুর কপাল এবং পেটের উপর কিছু সময় রাখুন। বাচ্চার বয়স ২ বছরের বেশি হলে আধা কাপ ভিনেগারের সাথে কুসুম গরম পানি মিশিয়ে বাচাকে গোসল করান।
সতর্কতাঃ গোসলের সময় খেয়াল রাখবেন এটা যেন বাচ্চার নাক, মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ না করে।
৯। বুকের দুধঃ বলা হয়,”Breast milk is the best milk for children.” নবজাতকের জন্য এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিশেষকরে তারা যখন অসুস্থ হয়। এটা সম্পূর্ণ আলাদা সব পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ যা বাচ্চাদের যে কোন রোগবালাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ৬ মাসের ছোট বাচ্চাদের সর্দিকাশি নিরাময়ে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পান করান।
পরামর্শঃ
ক. পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে পারে এমন ঘরে বাচ্চাকে রাখুন যাতে বাচ্চার শ্বাস নিতে কোন কষ্ট না হয়।
খ. বাচ্চার নাকের ফুটা সব সময় পরিষ্কার রাখন।
গ. বাচ্চাদের বেশি বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খেতে দিন।
ঘ. শিশুর যথেষ্ট ঘুম হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
ঙ. রাতে শিশুর মাথার নিচে একটা অতিরিক্ত বাচ্চাদের বালিশ দিন যাতে নাকের ভেতরে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের হতে পারে।
চ. অসুস্থ হলে বাচ্চার ঘরে কোন পোষাপ্রানি রাখবেন না।
ছ. ঠান্ডা লাগলে বাচ্চাকে বড় হাতা জামা কাপড় পরান।
জ. বাচ্চাকে সব সময় পরিষ্কার রাখুন। বিশেষকরে বাচ্চার হাত।
ঝ. বাচ্চার ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন এবং সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
Author
-
একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
No comment yet, add your voice below!