করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য পেয়েছে কোভিড-১৯, যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত । এই ভাইরাসের বিস্তার জনজীবনকে অস্বাভাবিক করে তুলেছ। মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। শ্রমজীবী-পেশাজীবী মানুষকে ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই রোগটির সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্ব মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পুরনো হলেও, এই মরণঘাতী ভাইরাসের সাথে কয়েকদিন আগেও মানুষের পরিচয় ছিলো না। ২০০২ সালে চীনে সংক্রমিত হওয়া সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসে মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সংক্রমিত হয়েছিল আরো হাজার হাজার মানুষ। এটিও ছিল এক প্রকারের করোনাভাইরাস।

করোনা ভাইরাস কি?

এটি মূলত ভাইরাসের একটি শ্রেণি, যা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। হোমো স্যাপিয়েন্সের মাঝে এদের সংক্রমণস্থল শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে। অনেক সময় এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, যা সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই। আবার অনেকক্ষেত্রে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা যায়।অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন, মুরগির মধ্যে এটি উর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।

মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

কিভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল এই ভাইরাস?

মাঝে মাঝে জীব-জন্তু থেকে নতুন কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বাধে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, করোনার উৎস কোনো প্রাণী। এই ভাইরাসে মানুষের প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে একটি মাছের আড়ৎ-এ। শহরের ঐ বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ ইত্যাদি । এসব প্রাণী এই করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে বলে মনে করা হয়।

পরীক্ষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের বাদুড়ের মাঝে সংক্রমণ ঘটায় এমন ভাইরাসের সাথে এর ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। তাদের ধারণা, ভাইরাসটি প্রথমে বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণীতে প্রবেশ করেছে। এবং এরপর কোনোভাবে সেটা মানুষের শরীরে পৌঁছে গেছে।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণঃ

এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন:

  • অবসাদ
  • মাথা ব্যাথা
  • গলা ব্যাথা
  • অঙ্গ বিকল হওয়া
  • পেটের ব্যাথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • শুষ্ক কাশি
  • বমি হওয়া
  • জ্বর

এটি মানুষের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায় এবং আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে যাওয়া কারণে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডার মতো এই ভাইরাস হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত হলে অনেকসময় শুষ্ক কাশির সঙ্গে জ্বরও থাকে।

জ্বর ও কাশি’র মোটামুটি ৭ দিনের মাথায় শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ডব্লিউএইচও-এর মতে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সবগুলো লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্তও সময় লাগতে পারে। এটাকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।

রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা ( ডায়াবেটিস, অ্যাজমা,উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদি) রয়েছে তারা মারাত্মকভাবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘ্রাণ না পাওয়াও করোনায় সংক্রমণের লক্ষণ

ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, স্বাদ হারানো বা ঘ্রাণ না পাওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই গবেষণাটি চালিয়েছে কিংস কলেজ লন্ডন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এমন চার লাখের বেশি মানুষ এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।

তবে ফুসফুসের অন্যান্য জটিলতার ক্ষেত্রেও স্বাদহীনতা বা ঘ্রাণ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এসব লক্ষণ প্রকাশিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

এই ভাইরাসের লক্ষণ কি পরিবর্তনশীল হতে পারে?

হ্যাঁ, আক্রান্ত ব্যক্তি যখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন, তখন হঠাৎ করে তার এই লক্ষণগুলো আর প্রকাশ পায় না। তিনি সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু আবারও এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে রোগীর শরীরে। কয়েকদিন বা সপ্তাহধরে জ্বর, ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের মাত্রা পরিবর্তন হতে থাকে।

আপনার কি লক্ষণ ছাড়াই কোভিড -১৯ থাকতে পারে?

কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ সাধারণত ২-১৪ দিনের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। তবে অনেক সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না এবং তারা অসুস্থও বোধ করে না।

আক্রান্ত ব্যক্তির হাতে তৈরি খাবার থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ

ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না না করেন তবে সেই খাবার থেকে আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। আমাদের কাশির সঙ্গে যে সূক্ষ্ম থুতুকণাগুলো বেরিয়ে আসে এগুলোকে বলা হয় ‘ড্রপলেট’। হাঁচি বা কাশির সঙ্গে এই ভাইরাস খাবার বা আমাদের ব্যবহার্য জিনিসে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা জরুরি। আর যারা খাবার তৈরি করছেন, যে কোন খাদ্যবস্তু স্পর্শ করার আগে তার উচিৎ ভালভাবে হাত ধুয়ে নেয়া।

শিশুরা কি ঝুঁকিতে?

যে কোন বয়সের মানুষই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে বিশেষ করে অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। আবার বস্তিতে থাকা দরিদ্র শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ভাইরাসের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে সহজেই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরের মতে,
“এই করোনাভাইরাসটি ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের উপর এই ভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে আমরা আশঙ্কাগ্রস্ত । কিন্তু নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সময় আমাদের সাথে নেই।”

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়ীত্বকাল

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসকে কতদিন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারবে- এই নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে আমাদের অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। আর যেহেতু রোগটি নতুন,তাই এই নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী তথ্যের অভাব রয়েছে। এজন্য আশ-পাশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অন্যদের মাঝে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া আক্রান্ত ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব।

লক্ষণ প্রকাশ পেলে কি করবেন?

নিজের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে প্রথমে নিজেকে সবার থেকে আলাদা রাখতে হবে। এর পর নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর বা সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁদের দেয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে নিচের হটলাইন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা যেতে পারে:
৩৩৩
১৬২৬৩
১৬৬৩৩
১০৬৫৫
০১৯৩৭০০০০১১
০১৯৩৭১১০০১১
০১৯২৭৭১১৭৮৪
০১৯২৭৭১১৭৮৫

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায়:

সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে নিম্নোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে বা অ্যালকোহলযু্ক্ত হাত-ধোয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

কাশি বা হাঁচি দেবার সময় মুখ এবং নাক কনুই দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন।

ঠান্ডা লেগেছে বা জ্বরের লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া।

করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়াও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিদিন বাড়ি-ঘর ভালো মতো পরিষ্কার করাও জরুরি।

আসুন জেনে নিই, যে পাঁচটি স্বাস্থ্য উপকরণ আমাদের সবার ঘরে থাকা জরুরি-

১. জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাসা-বাড়িতে জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ রাখতে হবে । খাবার রান্না করার আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে-পরে, প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, এবং বাইরে থেকে বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন কাজে আমাদের জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।

হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি:

ধাপ ১: প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো;
ধাপ ২: ভেজা হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাবান ব্যবহার করা;
ধাপ ৩: হাতের পেছনের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যের অংশ এবং নখের ভিতরের অংশ অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধোয়া;
ধাপ ৪: প্রবাহমান পানিতে ভালোভাবে কচলে হাত ধোয়া;
ধাপ ৫: একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার করেন এমন তোয়ালে দিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে ফেলা।

বার বার হাত ধুয়ে নিবেন। বিশেষ করে, নাক পরিস্কার করার পর, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পরেও। আর যদি সাবান বা পানি বা থাকে, তবে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

২. জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে

রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখতে জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে ব্যবহার করুন। রান্নাঘর ছাড়াও বাথরুম, ডাইনিং রুম, লিভিং রুম এবং বেডরুমও জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করুন ।

৩. রাবার গ্লাভস

টয়লেট বা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করা এবং হাড়ি-পাতিল ধোয়ার মতো গৃহস্থালি কাজেও রাবার গ্লাভস ব্যবহার করুন।

৪. বক্সড টিস্যু

বাড়ির প্রতিটি ঘরে টিস্যু রাখুন। যাতে কাশি বা হাঁচির সময় হাত বাড়ালেই টিস্যু পাওয়া যায়।

৫. ভেজা টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং পকেট টিস্যু

স্যানিটাইজার বা ভেজা টিস্যু ঘরে বা ঘরের বাইরেও ব্যবহার করা সম্ভব। যখন হাতের কাছে সাবান বা পানি পাওয়া যাবে না, তখন আপনি সহজেই এসব ব্যবহার করে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন। আমাদের সকলেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

আমাদের কি মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিৎ?

যদি কারো শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (কাশি বা হাঁচি) থাকে, তবে অন্যের সুরক্ষার জন্য মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি । তবে আপনার যদি ভাইরাসের কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই।

আর কেউ যদি একান্তই মাস্ক ব্যবহার করেন, তবে ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। এবং ব্যবহার শেষে মাস্ক নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে।

তবে শুধু মাস্কের ব্যবহার এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট নয়। এর সাথে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি ও কাশি ঢেকে রাখা, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিৎ ।

যদি আপনার সন্তানের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে কি করা উচিত?

যদি কারো কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। এসময় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হাত ধোয়া এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। যদি অন্য কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ থাকে তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী সন্তানকে ভ্যাকসিন দিন। এছাড়াও, অন্যদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য জনসমাগমস্থলে (কর্মক্ষেত্র, বিদ্যালয়, গণপরিবহন) যাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। এর পাশাপাশি জীবাণুনাশক ক্লিনার ব্যবহার করে দরজার নক, ফোন, ট্যাবলেট এবং ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ঘন ঘন পরিষ্কার করুন। এসময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিন। আর এক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় আক্রান্ত ব্যক্তির আলাদা বাথরুম ব্যবহার করা উচিৎ ।

 

ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বের কার্যকারিতা

আমাদের শুনে হয়তো খারাপ লাগছে যে, এতগুলো ক্রীড়া ইভেন্ট, উৎসব এবং অন্যান্য জমায়েত বাতিল করা হচ্ছে। মূলত এর পেছনে জনস্বাস্থ্য রক্ষা অন্যতম উদ্দেশ্য। এভাবে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা একটি অভিনব কৌশল। অফিসে না গিয়ে বাসায় থেকে কাজ করা এবং স্কুল বন্ধ করে বা অনলাইনে ক্লাস স্যুইচ করে সামাজিক দূরত্ব তৈরি অত্যন্ত কার্যকরী।তবে, অনেকের মতে এটা কার্যকরী নয় বরং তথ্য বিভ্রাট।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভেষজ চা:

আমরা অনেকেই এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে সকাল শুরু করি। কিছু লোক কাজের পরে সন্ধ্যায় সতেজ চা পান উপভোগ করেন। আমরা যদি প্রতিদিন চা গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলি, তবে এটি ভাইরাল সংক্রমণের জন্য আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলবে। চলুন কিছু ইমিউন বুস্টার ভেষজ চা সম্পর্কে জেনে নিই।

গ্রিন টি(Green Tea): 

আমরা সকাল বেলা গ্রিন টি খেতে পারি। এটি ক্যাফেইনের দুর্দান্ত উৎস; যা আমাদের দেহে ইনস্ট্যান্ট শক্তি সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া, গ্রিন টি-তে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে, যেমন- পটাসিয়াম (K), আয়রন (Fe), ক্যালসিয়াম (Ca), প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।

এছাড়াও শুকনো গ্রিন টি পাতায় কিছু সক্রিয় পদার্থ রয়েছে, যেমন- ফ্যাটি অ্যাসিড, তেল, ফ্ল্যাভানলস্, ক্লোরোফিল এবং আরও অনেক ভেষজ উপাদান। এসব পদার্থের মাধ্যমে গ্রিন টি আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-এনজাইমেটিক বিক্রিয়া করে । এইভাবে গ্রিন টি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

গ্রিন টি কীভাবে প্রস্তুত করবেন:

আধা লিটার পানি প্রায় ১০ মিনিটের মতো সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ পানিতে ১টা টি-ব্যাগ বা ১ চামচ চা-পাতা দিন এবং এভাবে আরো ৩-৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপরে চা ব্যাগটি সরিয়ে ফেলুন বা চা ছাড়িয়ে দিন। আরো স্বাদের জন্য আপনি গ্রিন টিতে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১চামচ মধু যোগ করতে পারেন। এভাবে আপনি খুব সহজে গ্রিন টি তৈরি করে নিতে পারেন।

লেবু চা: 

আপনি যখন গলা ব্যথা, অবিরাম মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, অথবা অন্য কোনো ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা অনুভব করেন, এ অবস্থায় আপনি বেছে নিতে পারেন এসবের ঘরোয়া প্রতিকার লেবু চা। এছাড়াও লেবু চা প্রদাহ হ্রাস, রক্তচাপ হ্রাস, রক্তনালীগুলির কার্যকারিতা বাড়ানো, হজমে সাহায্য করা-সহ অসংখ্য সুবিধা দিতে পারে। এমনকি লেবু সাধারণ সর্দি, ফ্লু, H1N1 (সোয়াইন) ফ্লু, সাইনাস প্রদাহ, টিনিটাস, পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, কিডনিতে পাথর ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে চিকিৎসকরা COVID19 এর চিকিৎসার জন্য ভিটামিন সি ডোজ প্রয়োগ করেছেন। কারণ এখনও পর্যন্ত করোনার অনুমোদিত কোনো ভ্যাকসিন নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, COVID19 এবং অন্যান্য সাধারণ ধরণের ভাইরাল সংক্রমণ রোধে প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া অত্যন্ত উপকারি। লেবু ভিটামিন সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। তাই লেবু চা আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অংশ হতে পারে।

লেবু চায়ের প্রস্তুত প্রণালী:

প্রথমে আধা লিটার পানি ১০ মিনিটের জন্য সিদ্ধ করুন। সাথে দারুচিনি, গোল মরিচ, লবঙ্গ, কালোজিরা, তেজপাতা, এলাচ পরিমাণমত যোগ করুন। তারপর ১ চা চামচ চা-পাতা যোগ করুন। চা পাতা কয়েক মিনিটের জন্য জ্বাল দিন। চায়ের স্বাভাবিক রং হওয়ার পর ২ চামচ লেবুর রস যোগ করুন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য, আপনি আপনার লেবু-চাতে ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন।

আদা চা: 

হাঁপানি, সর্দি, কাশি, বমি বমি ভাব, বাত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি, ভ্রমণ অসুস্থতা, হতাশা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময়ের জন্য আদা মূল বা গুঁড়ো অত্যন্ত কার্যকর সমাধান। আদার ব্যবহার ভাইরাস সংক্রমণকেও প্রতিরোধ করে। আদার ব্যবহার আপনার শরীরের সঞ্চিত টক্সিনগুলোকে ভেঙে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আদা অত্যন্ত উপকারি।

আদা প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আপনার দেহ কোষের ডিএনএ কাঠামোর ক্ষতি প্রতিরোধ করে। COVID19 এর বিরুদ্ধে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্ত করতে, আপনি আপনার ডায়েট পরিকল্পনায় আদা চা যুক্ত করতে পারেন।

আদা চা কীভাবে প্রস্তুত করবেন:

এক চা চামচ আধা গুঁড়া বা টাটকা আদা ১/২ লিটার পানিতে যোগ করুন এবং এগুলো ১০-১৫ মিনিট ধরে সিদ্ধ করতে থাকুন। এরপর ১ চা চামচ চা-পাতা যুক্ত করুন। ২-১ মিনিট পর চা চুলো থেকে নামিয়ে ফেলুন । পানীয়টি স্বাস্থ্যকর করতে আপনি ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন।

এছাড়া আমরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালোজিরা ও রসুনের ভর্তা, অথবা সরিষা ভর্তা যোগ করতে পারি। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ থাকে। পাশাপাশি এসব খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরের pH লেভেলে ভারসাম্য তৈরি হয়। তাছাড়া এসব মুখরোচক খাবার আমাদের এনার্জির ঘাটতি দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

করোনা ভাইরাসের ঔষধ:

কবে এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে? এখন এই প্রশ্ন সবারই।
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দুরন্ত গতিতে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে ২০টিরও বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। তবে গবেষকরা এ বছরের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেও এটিকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে হার্ড ইমিউনিটি পলিসির দিকে ঝুঁকছে।

ভ্যাকসিন বা টিকা:

গোটা বিশ্বে গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা ভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু হয়ে গেছে৷ তবে এগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

পাশাপাশি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট-এর নেতৃত্বে একটি প্রি-ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট হয়। অক্সফোর্ডের গবেষক দলটির দাবি, তাদের উদ্ভাবিত টিকা একবার নিলেই শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে। পরীক্ষামূলক এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনসিওভি-১৯’। সফল পরীক্ষা শেষে চলতি বছরেই এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

আবার, প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাসের (2019-nCoV) টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছেন রাশিয়া ও চীনের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে চীন করোনা ভাইরাসের জেনোম রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা আশা করছেন, শিগগিরই ভাইরাসটির প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।

বিভিন্ন দেশে ট্রায়াল দেয়া ঔষধ সমূহ:

যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনার চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’ ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের প্রতিরোধে এটা অনেক কার্যকর ছিল। তাছাড়া ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনে এন্টিভাইরাল থাকায় চিকিৎসকরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটি সেবনেরও পরামর্শ দিচ্ছেন।

আবার চীনে করোনা রোগীর চিকিৎসায় অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি ইন্টারফেরন আলফা-টুবিও প্রেসক্রাইভ করা হচ্ছে। এ থেকেও আশাপ্রদ ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া যুক্তরাজ্যের ‘রিকভারি ট্রায়ালে’ পরীক্ষা করা হচ্ছে ডেক্সামেথাসন নামের একটি ঔষধের। এটি এক ধরণের স্টরয়েড যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

তাছাড়া ‘জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.- তৈরি ফ্যাভিপিরাভির ‘অ্যাভিগান (Avigan)’ অ্যান্টভাইরাল ওষুধ হিসেবে অনেক কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় এটি তৈরি হয়েছিল। চীনের উহানে কভিড-১৯-এ ব্যাপক প্রাণহানির পর ‘অ্যাভিগান’ ভাইরাসের প্রতিরোধে অনেক সুফল দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, ফ্লুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ওসেলটামিভির নামে একটি ওষুধ। এবং এইচআইভি-র চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের নাম লোপিনাভির এবং রিটোনাভির। ব্যাংককের রাজাভিথি হাসপাতালের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন, এসব ওষুধের প্রয়োগে করোনা রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে। তাঁরা এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

হার্ড ইমিউনিটি কি? 

যখন কোনো এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে একটি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক দেয়া হয়, তখন ঐ এলাকায় রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা আর থাকে না। কারণ ঐ অবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার মতো আর কোনো মানুষই থাকে না।

কিন্তু করোনাভাইরাসের তো এখনো কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি।

হার্ড ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করে?

এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, যারা একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে এক ধরনের শক্তিশালী ইমিউনিটি তৈরি হয়। এভাবে বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকলে এক সময় বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়, যাতে করে রোগটির সংক্রমণ থেমে যায়।

তাই সংক্রমণের শুরুতে এই হার্ড ইমিউনিটির ভরসাতেই ছিলো সুইডেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রাজিল, ইতালির মতো দেশ। এজন্য তারা অন্যান্য দেশের মতো লকডাউন সিস্টেমে যায় নি। এর নেপথ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখাও উদ্দেশ্য ছিল। তবে এসব দেশে মৃত্যুহার এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, বাধ্য হয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য, ইতালি হার্ড ইমিউনিটি ফর্মূলা থেকে সরে এসেছে। কিন্তু সুইডেন তাদের নীতিতে এখনও অটল। তারা তাদের বিপণী বিতান, পরিবহন, মানুষের অবাধ চলাচল চালু রেখেছে। সেই দেশের সরকারের দাবি রাজধানী স্টকহোমে এরই মধ্যে প্রতিটি নাগরিক হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে।

দীর্ঘ দিনের লকডাউনের পর বাংলাদেশ সরকার এখন আস্তে আস্তে হার্ড ইমিউনিটির দিকেই হাঁটছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি হার্ড ইমিউনিটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসব মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার সক্ষমতা সরকারের নেই। এতে ডেথ রেট ক্রমশ বাড়তে পারে। তাই, হার্ড ইমিউনিটি পলিসি প্রয়োগে একটা বড় আশঙ্কা থেকেই যায়।

 

হাদিসের আলোকে করোনা ভাইরাস(মহামারী )থেকে মুক্তির উপায়:

মহামারির সময়ে সতর্কতা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১০৬৫)

তাই আমাদের উচিৎ, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে; যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।

এছাড়া নবিজি (স.) মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়তে বলেছেন- اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ (আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি,ওয়া মিন্ সাইয়ি-ইল আসক্কম)। অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত রোগ, পাগলামি, কুষ্ঠ রোগ এবং জানা-অজানা সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।

সর্বোপরি করোনা প্রতিরোধে আমাদের যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। আর সাথে সাথে মহান রব্বুল আ’লামিনের কাছে এই ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি দু’আ করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমরা এই মহমারী থেকে রক্ষা পাবো ইনশা’আল্লাহ।

Source:

https://www.bbc.com/bengali/news-51257048
https://www.jagonews24.com/amp/555631
https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public
https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/prevent-getting-sick/prevention.html
https://www.webmd.com/lung/coronavirus
https://www.health.harvard.edu/diseases-and-conditions/preventing-the-spread-of-the-coronavirus
https://www.wvi.org/publications/infographic/bangladesh/karaonaa-bhaairaasa-paratairaodhae-abhaibhaabakaera-bhauumaikaa
https://www.unicef.org/bangladesh/%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B9/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1-%E0%A7%A7%E0%A7%AF
https://m.banglanews24.com/cat/news/bd/767570.details
https://amp.dw.com/bn/%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%93%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%A7-%E0%A6%A4%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE/a-52869385
https://www.ittefaq.com.bd/covid19-update/146909/%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE-%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%8B%E0%A6%97%C2%A0
https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/60503

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
আমার ওজন কমানোর গল্প

আমার ৩৪ কেজি ওজন কামানোর কথা

home remedies for insomnia

অনিদ্রা দূর করার উপায় । ১০ টি ঘরোয়া ঔষধ

আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আমার ওজন কমানোর খাবার তালিকা

আমার ওজন কমানোর খাবার তালিকা বা ডায়েট চার্ট

অতিরিক্ত ওজন কমানোর ঔষধ

ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা

কফ কাশির প্রাকৃতিক ঔষধ

কফ বা কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়

গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা

গরম পানি খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

খুশকি দূর করার উপায়

ঘরে বসে খুশকি দূর করার সহজ ১০টি উপায় । খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক শ্যাম্পু

চুল পরা বন্ধের উপায়

চুল পড়া বন্ধের প্রাকৃতিক ঔষধ 

দ্রুত ওজন বাড়ানোর উপায়

দ্রুত ওজন বারানোর উপায়

বমি দূর করার উপায়

বমি দূর করার উপায় | বমি হলে করনীয়

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর ৯ টি সহজ উপায়

দ্রুত ওজন কমানোর খাবার তালিকা

মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট




Categories