কফ বা কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

কফ বা কাশি অন্যতম একটি পরিচিত রোগ।  গলার ভেতর কোন কিছু ঢুকতে বা বের হওয়ার সময়, মস্তিষ্ক যখন সেটাকে চিনতে না পারে তখন শরীরকে কফের মাধ্যে সেটা বের করতে সংকেত দেয়। কফ দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১. শুকনা বা খুসখুসে কাশি (Dry Cough) ২. উর্বর কাশি (Productive Cough)। কাশির সাথে সাথে শ্লেষ্মা বা কফ বের হলে সেটাকে উর্বর কাশি বলা হয়। এ ধরনের কাশিতে দেহ থেকে শ্লেষ্মা বের হয়ে গেলে কাশি সেরে যায়। প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে দেহের ভেতরে জমে থাকা শ্লেষ্মাগুলো তাড়াতাড়ি বের হয় যায়। অন্যদিকে খুসখুসে কাশিতে কিছু বের হয় না। ফলে এটা বেশ যন্ত্রণাদায়কও বটে। মৌসুম পরিবর্তনের সময় সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, শুকনা বাতাস, ধুলাবালি,  এবং এলার্জিজনিত কারণে এটা বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও ভাইরাস সংক্রমণ, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গলায় উঠে আসা, হাঁপানি ইত্যাদি কারণে খুসখুসে কাশি হতে পারে।

কাশি দূর করার উপায় সমূহঃ

রোগ হিসেবে কাশিকে মোটেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা এটা হাঁপানি, যক্ষ্মা, কন্ঠনালী ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষন হতে পারে। ১. কাশি হলে বার বার হালকা গরম পানি পান করুন। ২. ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিন। তামাক কাশিকে আরো শক্তিশালী করে। ৩. সবসময় উষ্ণ থাকুন। যেহেতু ঠান্ডা কাশির একটি উপলক্ষ তাই কাশি হলে উষ্ণ থাকবেন। ৪. মেন্থল লজেন্স চুষতে পারেন। এটা গলা থেকে কফ গুলোকে বের করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে। ৫. কাশি হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এটা শরীরের ইন্দ্রিয় সমূহ থেকে কাশির জীবাণুগুলোকে বের করে দেয়। কাশি হওয়ার পূর্বে গলা ভেতরে চুলকানি, বুকে ব্যাথা এবং নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। এর জন্য বিভিন্ন এন্টিবায়েটিক সিরাপ না খেয়ে কাশির প্রাকৃতিক ঔষধ খেতে পারেন। এতে কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই এবং এসব ঔষধ খেতেও সুস্বাদু।
কফ কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসা
কফ কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসায় মধু, লেবু, আদা, দারুচিনি অনেক কার্যকরী।

কাশির প্রাকৃতিক ঔষধঃ

কাশি হলে আগে এর কারণ বোঝার চেষ্টা করুন। যদি কোন বড় কোনের রোগের কারণে হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সাধারণ কারণে হলে নিচের ঔষধগুলো খেতে পারেন। ১। কাশি দূর করতে এক চামচ মধুঃ মধুকে বলা হয় সর্ব রোগের মহৌষধ। আমরা জানি কথাটি মোটেই মিথ্যা নয়। মধুর গুনাগুনের দিকে তাকালে এটা পরিষ্কার হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে কাশি দূর করতে মধু বাজারে প্রচলিত সিরাপের চেয়ে অনেক গুণ বেশি কার্যকর। এটা শিশু, বৃদ্ধ সবাই খেতে পারে। কাশি দূর করতে দিন ৩ বার ১ টেবিল চামচ কাঁচা মধু (Raw Honey) খান। কাশির কারণে ঘুমাতে সমস্যা হলে শোয়ার আগে ১ টেবিল চামচ মধু খেয়ে নিন। বাচ্চাদের ১ চা চামচ করে খাওয়ান। ২। যষ্ঠিমধুর চাঃ যষ্ঠিমধু ভেতর থেকে কাশি বের করে ফেলার পাশাপাশি গলাকে পরিষ্কার করে। ফলে গলাভাঙা এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট থাকলে সেটাও দূর হয়। এমনকি এটা কিডনির সমস্যা ভাল করতে সক্ষম। এর প্রধান উপাদান হল মিষ্টি পদার্থ (Glycyrrhizin) যা সাধারণ চিনি থেকে ৩০-৩৫ গুন বেশি মিষ্টি। একারণে এটা কাশি তাড়াতে এত বেশি কার্যকর। ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে দুই টেবিল চামচ যষ্ঠিমধুর গুঁড়া বা সমপরিমাণ যষ্ঠিমধুর চলা দিন। ১০-১৫ মিনিট চুলায় রেখে দিন। এর পর কাপে ঢেলে চায়ের মত করে পান করুন। এই চা দিনে দুইবার করে পান করবেন। ৩। লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করাঃ কাশি দূর করতে এটা অনেক জনপ্রিয় এবং প্রাচীন পদ্ধতি। লবণ পানি গারগিল করার ফলে গলা অনেক পরিষ্কার এবং আরামদায়ক হয়। গড়গড়া করার সময় পানি গলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে একধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি করে ফলে কণ্ঠনালীতে থাকা জীবাণুগুলো বের হয়ে আসে। লবণ পানি ফেলে দেয়ার মাধ্যমে জীবাণুগুলো দূর হয়। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ লবণ দিয়ে গরম করে নিন। যতক্ষণ না লবণ পানির সাথে একবারে মিশে যায়। এরপর হালকা গরম পানি মুখে নিয়ে ১৫ সেকেন্ড ভালভাবে গড়গড়া করতে থাকুন। দিনে ৩ বার এটা করতে পারেন। ঘুমানোর আগে করলে কাশির কারণে ঘুমের সমস্যা থেকে আরাম পাওয়া যায়। ৪। গোলমরিচের সাথে মধুঃ সবার রান্নাঘরেই গোলমরিচ পাওয়া যায়। এটা রান্নার কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও কাশি প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে এর ভাল সুনাম রয়েছে। এর সাথে মধু যোগ করলে এর গুনাগুণ অনেক বেড়ে যায়। এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়া এবং ১ টেবিল চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন। হালকা কুসুম পানি ব্যবহার করতে পারেন। এই পানীয় দিনে দুই বার ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি কাশি সেরে যাবে। ৫। আদা ও মেন্থলের সুমিষ্ট রসঃ আদা, মেন্থল ও মধুর মিশ্রণে তৈরি এই যতটা কার্যকরী খেতে ততটাই সুমিষ্ট। আদা কাশি দূর করতে এবং কণ্ঠনালী পরিষ্কার করতে খুব কার্যকরী। খুসখুসে কাশি হলে গলা সুড়সুড় করে। আদা এই বিরক্তিকর গলার সুড়সুড়িও দূর করে। ২ গ্লাস পানির সাথে ৩ টেবিল চামচ আদা বাটা এবং ১ টেবিল চামচ শুকনা মেন্থল মিশিয়ে দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করতে দিন। পানি ফুটে ওঠার পর চুলা আসতে দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ঘন না হয় ততক্ষণ হালকা জ্বালে চুলায় রাখুন। এর পর যখন পানি অর্ধেক হয়ে আসবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হওয়ার পর ১ কাপ মধু মিশিয়ে ভাল করে নাড়ানাড়ি করুন। ৩ ঘণ্টা পর পর এক টেবিল চামচ করে এই ঔষধ খেতে হবে। এটা ঠান্ডা এবং শুষ্ক স্থানে রাখুন। ৬। দারচিনী ও হলুদ চাঃ হলুদ সবার কাছে মসলা হিসেবে বেশি পরিচিত। কিন্তু এর ভেষজ কিছু গুনাগুণ আছে। নিয়মিত হলুদ চা খেলে হৃদযন্ত্র ভাল থাকে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। এক কাপ পানির সাথে ১ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া, ২-৩টি গোল মরিচ, এক টেবিল চামচ দারচিনীর গুঁড়া মিশিয়ে ৩-৪ মিনিট উত্তপ্ত আগুনে সিদ্ধ করে নিন। তারপর চুলা থেকে নামিয়ে সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। দিনে দুইবার এই পানীয় পান করুন যতদিন কাশি ভাল না হচ্ছে। ৭। আঙ্গুর ও কাঠবাদামের সিরাপঃ  আঙ্গুর এবং কাঠবাদামে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো কাশি ভাল করতে খুব কার্যকরী। কাশি ভাল করার পাশাপাশি এটা শরীরকে সুস্থ সবল রাখে। ১০০ গ্রাম আঙ্গুরের সাথে ৩০ গ্রাম কাঠবাদাম ও পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে ব্লেন্ডারে রস করে নিন। এবার এর সাথে আধা কাপ মধু মেশান। প্রতিদিন ২ চামচ করে এই সিরাপ সেবন করুন। দ্রুত ফলাফলের জন্য সাথে আদা মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নেবেন। ৮। লেবুর পানি ও মধুঃ কাশির প্রতিকার করার জন্য লেবু নানা উপায়ে ব্যবহার করা যায়। লেবুতে থাকা পুষ্টিগুণ যে কোন ধরনের প্রদাহ দূর করতে সক্ষম। এক কাপ কুসুম গরম পানির সাথে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ২ বার পান করুন। এর সাথে এক চিমটি শুকনা মরিচের গুঁড়া মিশিয়েও পান করা যায়। ৯। পেঁয়াজের রস ও মধুঃ কাশি ভাল করতে সবচেয়ে সহজ প্রাকৃতিক চিকিৎসা হচ্ছে একটা পেয়াজ কেটে খেয়ে নিন। পেয়াজে থাকা উচ্চ মাত্রার বাষ্পীয় পদার্থ কাশি ভাল করতে কার্যকরী। আপনি চাইলে পেঁয়াজ বাটা, চা এবং মধু একসাথে মিশিয়ে কাশির সিরাপও বানাতে পারেন। এছাড়া ১ টেবিল মধুর সাথে হাফ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে দিনে ৩ বার পান সেবন করুন। কাশি ভাল হয়ে যাবে। ১০। গরম দুধের সাথে মধুঃ খুসখুসে কাশি ভাল করার জন্য গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে বারবার কাশির কারণে বুক ব্যাথাও ভাল হবে। ভাল ফলাফলের জন্য ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। উপরের কাশি ভাল করার প্রাকৃতিক ঔষধগুলো পার্শ প্রতিক্রিয়া ছারাই নানা ধরনের কফ দূর করতে সক্ষম। বাজারে পাওয়া বড়ি বা সিরাপে কম বেশি পার্শ প্রতিক্রিয়া আছে। তবে আপনার যদি টানা দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
ভাল লাগলে ৫ স্টার রেটিং দিন!

Author

  • একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।

Recommended Posts

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *