মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কামানোর উপায়গুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম, পরিমিত খাওয়া, সবসময় হাসি খুশি থাকা, শরীরের যত্ন নেয়া এবং কিছু ব্যায়াম করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া মেয়েদের সমস্যার শেষ নেই। শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক এমনি বন্ধুদের মধ্যেও সে হাসির পাত্র এবং বৈষম্যের শিকার। আর আমাদের দেশে এটা আরো ভয়াবহরূপে দেখা যায়। বিশেষকরে বিয়ের সময়, এমনকি চাকরির সময়ও মুটিয়ে যাওয়া মেয়েদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়।

আমাদের দেশের মেয়েদের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া হয় না। ছেলেরা যেমন কাজ ছাড়াও ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, ইত্যাদি কাজে সহজেই বাইরে যেতে পারে। আমরা ভাবি, প্রায় সারাক্ষণ ঘরে থাকার কারনে মেয়েদের মোটা হওয়ার বা ওজন বাড়ার ঝুকি যেমন বেশি, তেমনি মেয়েদের ওজন কমানো ছেলেদের তুলনায় কষ্টকর। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তবে ভিন্ন হজম ক্রিয়ার  (Metabolism) কারনে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত যে, ভিন্ন শারীরিক গঠনের কারনে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি খেতে পারে এবং তারাতারি হজম করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

অতিরিক্ত ওজন মানেই শুধু শারীরিক ভার বহনে বাড়তি ঝামেলা নয়। অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে ফিট মেয়েদের তুলনায় মোটা মেয়েদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৬৬ ভাগ বেশি। মেয়েদের অতিরিক্ত ওজনের কারনে শারিরিক-মানসিক সমস্যা, হরমন জনিত সমস্যা, গর্বপাতের সময় অধিক কষ্ট এমনকি গর্ব ধারণেও সমস্যা হতে পারে। ভয় পাচ্ছেন? দুশ্চিন্তা না করে বরং এখনি সংকল্প করে ফেলুন আজ থেকেই ওজন কমানো শুরু করবেন। শুরু না করে কিভাবে আপনি এতটা কঠিন বা দুরহ ভাবছেন? একবার শুরু করেই দেখুন। আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এর কষ্টের চেয়ে আনন্দের পরিমাণটা হাজার গুণ বেশি। মনে মনে নিজেকে একবার চিকন (slim) ভাবুন না!

কিভাবে সহজে মেয়েরা ওজন কমাতে পারেঃ

বিভিন্ন কারণে মেয়েদের ওজন বাড়তে পারে। বংশীয়, হরমন জনিত সমস্যা, অতিরিক্ত খাওয়া এবং ঘুমানো, বিয়ে পরবর্তী নিয়মিত যৌন সঙ্গমের কারণেও মেয়েরা মোটা হতে পারে। চলুন এবার মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

১। খাওয়া

কঃ মিষ্টি জাতীয়  খাবার থেকে দূরে থাকুন

মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো শরীর ইন্সুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইন্সুলিন হল শরীরে চর্বি সংরক্ষণ করার প্রধান হরমন। দেহে ইনসুলিন বেড়ে গেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে দৈনন্দিন খাওয়া খাবার গুলো শরীরে থেকে যায় এবং ওজন বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে ইনসুলিনের মাত্রা কমে গেলে তাড়াতাড়ি খাবার হজম হতে থাকে এবং শরীর থেকে চর্বি কমতে থাকে। খাবার থেকে সুগার এবং কার্বোহাইড্রেড বাদ দিলে ইনসুলিনের মাত্রা কমে আসে।

খঃ প্রটিন ও চর্বিযুক্ত সবজি বেশি বেশি খান

দিনের প্রতিবার খাবারে প্রোটিন, ফ্যাট এবং অল্প কার্বহাইড্রেড যুক্ত সবজি রাখুন। এগুলো আপনাকে সুস্থ,সবল রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। মাংস, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, দুধ এসব খাবারে প্রোটিন থাকে। নিয়মিত এসব খাবার খান। তবে উচ্চ মাত্রায় ক্যালরি থাকার কারণে লাল মাংস না খাওয়াই উত্তম।

অল্প কার্বোহাইড্রেড যুক্ত সবজিগুলোর মধে, ব্রোকলি, ফুলকপি, পালংশাক, বাঁধাকপি, শিম, লেটুস, শসা, গাঁজর, ইত্যাদি খেতে পারেন। এসব সবজি বেশি বেশি খাবেন। এতে কোন ক্ষতি নেই। ওজন কমানোর জন্য মাংস এবং সবজি যোগে খাওয়া খাবারে থাকে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেলস যা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। রাতের খাবারে সবজির আইটেম দিয়েই শেষ করুন। এছাড়াও প্রায় সব ফলমূলে এসব পুষ্টিগুণ আছে। তাই হালকা খাবারের সময় ফলমূল খান।

গঃ  প্রোটিন এবং ক্যালরি হিসেব করে খান

আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেন অথবা মিষ্টি জাতীয় এবং কার্বস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন, তাহলে এটা না করলেও চলবে। তবে এটা করলে আপনি ওজন কমানোর প্রতি মনোযোগ রাখতে পারবেন। বাসায় ওজন মাপার যন্ত্র কিনে ফেলুন এবং সপ্তাহে দুইবার মাপুন। এটাও মনোযোগ ধরে রাখতে আপনাকে সহায়তা করবে। দৈনিক আপনার কত ক্যালরি খেতে হবে ইন্টারনেটে এটা হিসেব করার অনেক মাপকযন্ত্র পাবেন। তবে আপনার প্রধান লক্ষ্য রাখুন দিনে ৩০-৫০ গ্রামের বেশি কার্বহাইড্রেড গ্রহণ করবেন না।

ঘঃ না খেয়ে থাকবেন নাঃ

আমরা ডায়েট মানেই না খেয়ে থাকা মনে করি। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। না খেয়ে থাকলে ওজন কমবে না বরং অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই দিনে ৩-৪ বার খেতে হবে। তবে পেটা ভরে খাওয়া যাবে না।  বেশি বেশি পানি খেতে হবে।

ডাক্তারের ঔষধ খাওয়া অবস্থায় ওজন কমানোর পরিকল্পনা করলে সেটা আগে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিন। কারণ শরীরে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে হরমনীয় পরিবেশের পরিবর্তন হয় এবং আপনার দেহ ও মস্তিষ্ককে ওজন কমানোর উপযোগী করা হয়।

উঃ সকালে বেশি এবং রাতে কম খান

২০১২ সালে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে- যারা সকালের তুলনায় রাতে অল্প খায় তাদের ওজন বাড়ার হার অনেক কম। আমরা ঠিক উল্টো করি, তাই না? অনেকে আবার সকালটি না খেয়েই কাটিয়ে দেই। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।  সারাদিনের ক্যালরির ৫০ ভাগ সকালের খাবারে খেতে হবে, ৩৬ ভাগ দুপুরে বাকি ১৪ ভাগ রাতে খেতে হবে। এটা আপনার দেহের ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

ওজন কমাতে ঘুম
নিয়মতান্ত্রিক ঘুম ওজন কামাতে সাহায্য করে।

২। ঘুম

ঘুম মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা শরীর, মন, অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। সারাদিনে খাওয়া খাবারের পুষ্টিগুণগুলো ঘুমের মধ্যে দেহের প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গিয়ে তাদের কর্মক্ষম করে। তাই একজন পূর্নবয়স্ক নারীর দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম কম হলে শরীর খারাপ হয়, মন খারাপ থাকে, মাথাব্যাথা হতে পারে, কাজে অনিচ্ছা জাগে, নানা দুশ্চিন্তা এসে ভর করে। এগুলো মেয়েদের ওজন কমানোর জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

আরো দেখুনঃ

অনিদ্রা দূর করার ঔষধ

ঘুম কামানোর সহজ উপায়

৩। ব্যায়াম

ব্যায়াম করা মানে ব্যায়ামাগারে যেতে হবে, ঠিক তা না। আপনি ঘরে বসে বা আশেপাশে খোলা মাঠেও ব্যায়াম করতে পারেন। তবে ব্যায়ামাগারে যাওয়া উত্তম পন্থা। সারাদিনে ঘরের কাজকর্ম নিজে করলেই ব্যায়াম হয়ে যায়। বাইরে হাঁটতে যেতে পারেন এবং ঘরে স্কিপিং বা দড়িলাফ খেলতে পারেন। গৃহিণী হলে আজি বাসার কাজের মেয়েকে বিদায় করুন। নিয়মিত এগুলো করলেই হবে। এছাড়াও ঘরে বসে মেয়েদের ওজন কমানোর অনেক ব্যায়াম আছে সেগুলো নিয়ে শিগ্রি লেখব।

জেনে নিনঃ- ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর ৯ টি সহজ উপায়

 

মেয়েদের দ্রুত ওজন কামানোর ১০টি সহজ উপায়



১। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত সকালের নাস্তা খাওয়া এবং ক্যালরি হিসেব করে খাওয়া।

২। মিষ্টি জাতীয় সকল ধরনের পানীয় বর্জন করা এমনকি মিষ্টি জাতীয় ফলের জুসও এড়িয়ে চলা।

৩। প্রতিবার খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে ২ গ্লাস পানি খাওয়া। এটা আপনাকে পরিমিত খেতে সাহায্য করবে।

৪। ওজন কমানোর সহায়ক খাবারগুলো খাওয়া। আমি ওজন কমানোর সহায়ক খাবারের একটা তালিকা খুব শিগ্রি প্রকাশ করব।

৫। সলিউবল ফাইবার বা পানি দিয়ে গুলিয়ে খাওয়া যায় এমন খাবার বেশি বেশি খাওয়া। যেমনঃ ওটমিল

৬। নিয়মিত চা-কফি খাওয়া। তবে ওজন কমানোর চা বা কফি খেলে আরো ভাল।

৭। অরগানিক বা প্রাকৃতিক খাবার। অর্থাৎ যে খাবারটি কোন ধরনের প্রোসেসিং করা হয় নি।

৮। ধীরে ধীরে খান। যারা দ্রুত খায় তাদের ওজন তারাতারি বাড়ে। ধীরে ধীরে খেলে আপনি অল্প খাবারে পেট ভরবে এবং ওজন কমানোর হরমন বৃদ্ধি পাবে।

৯। ছোট প্লেটে খান। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ছোট প্লেটে খেলে কম খাওয়া হয়। ব্যাপারটি অদ্ভুত হলেও সত্য।

১০। রাতের ঘুমটি ভাল হতে হবে। অনির্দিষ্ট এবং অনিয়মিত ঘুম ওজন বাড়ানোর জন্য মারাত্মক ঝুকির। তাই রাতে একটি ভাল ঘুম অনেক জরুরী

2/5 - (3 votes)

Author

  • একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।

Recommended Posts

1 Comment

  1. ওজন কমাতে যা যা দরকার তার প্রায় সব কিছুই লিখছেন, ধন্যবাদ ।


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *