অনিদ্রা (Insomnia) একটি ঘুম সংক্রান্ত রোগ। এ রোগ হলে রোগীর ঘুম হয় না। ফলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে, কাজে মন বসে না, দুশ্চিন্তা, মাথা ব্যাথা, বিরক্তভাব, অবসাদসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসে অনিদ্রা দূর করার উপায়গুলো অনুসরণ করলে, এ রোগ ভাল হয়। অনিদ্রা দুই ধরনের।
তথ্য সূচী দেখুন
Toggleক. স্বল্পস্থায়ী অনিদ্রা- এটা জীবন যাপনে হঠাত পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকে এবং বেশিদিন স্থায়ী হয় না। রাতের বেলায় কাজ, মানসিক আঘাত, শোবার ঘরের পরিবর্তন, টেনশন ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
অন্যদিকে খ. দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা- এটা রোগীদের দীর্ঘদিন এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত ভোগাতে পারে। এর ফলে নানা রোগবালাই দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানসিক সমস্যা, একঘেয়েমি, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এটাক, ইত্যাদি রোগ হতে পারে। অনেক সময় ঔষধ সেবনের কারণেও অনিদ্রা সমস্যা হতে পারে।

অনিদ্রা দূর করার ১০ টি ঘরোয়া ঔষধ
১। অনিদ্রা দূর করতে জিরাঃ জিরা ঔষধি গুণসম্পন্ন রান্না ঘরের পরিচিত একটি মসলা। হজম শক্তি বর্ধনে এটা খুব কার্যকরী। ১টি চটকানো কলার সাথে ১ চা চামচ জিরার গুঁড়া মিশিয়ে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিন। ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে জিরা চা খেতে পারেন। চা তৈরি করতে, প্রথমে জিরা হালকা আঁচে ভেজে নিন। এরপর এক কাপ পানির সাথে ভাজা জিরা ফুটিয়ে ৫ মিনিট ঠেকে রাখুন। সবশেষে ছেঁকে সে ঘুমানোর আগে পান করুন।
২। জায়ফলঃ জায়ফলে (Nutmeg) স্নায়ুর উত্তেজনা কমিয়ে মনকে শান্ত করার সব উপদান আছে। ফলে অনিদ্রা দূর হয় এবং গভীর ঘুম হয়। ১ চা চামচ জায়ফলের গুড়ার ১ কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে ঘুমানোর আগে পান করুন। এছাড়াও এটা যে কোন ফলের জুসের সাথে মিশিয়েও পান করতে পারেন।
৩। জাফরানঃ অনিদ্রা দূর করতে জাফরান অনেক ফলপ্রসূ। এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ২ টুকরো জাফরান ভিজিয়ে রাখুন এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন।
৪। ক্যামোমিল বা ডেইজিফুলের চাঃ ক্যামোমিলের অনেক ধরনের ঔষধি গুণ আছে। ক্যামোমিল চা অনিদ্রা দূর করার প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে সুপরিচিত। এতে থাকা এপিজেনিন স্নায়ুকে শান্ত করে এবং তাড়াতাড়ি ঘুম আসতে সাহায্য করে। ঘুমানোর আগে এক কাপ ক্যামোমিল চা খেলে প্রশান্তির ঘুম হবে। চাইলে এর সাথে দারচিনী এবং মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
৫। কলাঃ কলাতে থাকে এমিনো এসিড অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটা বার বার ঘুম ভেংগে যাওয়ার সমস্যাও তাড়ায়। এতে আছে উচ্চমাত্রায় লৌহ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং মিনারেলস যা মনকে প্রশান্ত করে। রাতের খাবার খাওয়ার পর একটা কলা খেলে ভাল ঘুম হয়।
৬। গরম দুধঃ গরম দুধ দেহ ও মনকে শান্ত করার দারুণ ঔষধ। এতে আছে ট্রাইপটফান যা অনিদ্রা দূর করে ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে একচতুর্থাংশ চা চামচ দারচিনীর গুড়া ১ কাপ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন।
৭। মেথির রসঃ মেথি দুশ্চিন্তা, হতবিহবল ও অনিদ্রা দূর করে। ২ চা চামচ মেথি পাতার রসের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খান।
৮। চেরি ফলের রসঃ ১ কাপ চেরি ফলের রস পানে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয় এবং ভাল ঘুম হয়। চেরি ফলের প্রচুর ট্রিপটফান আছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এমিনো এসিড যা নিদ্রা তৈরির কাজে ব্যবহৃত মেলাটোনিনকে আরো কার্যক্ষম করে। দৈনিক এক কাল চেরি ফলের রস খেলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয়।
৯। ভিনেগার ও মধুঃ আপেল সিডার ভিনেগারে অনিদ্রা দূর করার এমিনো এসিড আছে। এছাড়াও এটা ফ্যাটি এসিড দূর করে ট্রিপটফানকে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে মধু ঘুম তৈরির হরমোনকে দেহে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও মধু সেরোটোনিন নামক হরমোনকে শক্তিশালী করে যা সময়মত ঘুমাতে এবং ঘুম ভাঙ্গাতে সাহায্য করে। ২ চা চামচ অরগানিক আপেল সিডার ভিনেগার ও মধু ১ গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন। এছাড়া ২ চা চামচ ভিনেগার ১ কাপ মধুমে মিশিয়ে ১ টেবিল চামচ করে দিনে ৩ বার খেতে পারেন। এটা অনিদ্রা দূর করার খুব ভাল টনিক।
১০। গরম পানির গোসলঃ ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে গরম পানি দিয়ে গোসল করে দেখুন। অনেক সুন্দর ঘুম হবে। এটা অনিদ্রা দূর করে খুব ভাল একটি উপায়। এটা আপনার শরীরকে শিথিল করে এবং স্নায়ুগুলোকে শান্ত করে। অনিদ্রা দূর করতে আরো কার্যকরী করার জন্য গরম পানির সাথে কয়েক ফোঁটা ক্যামমিল, রোজমেরি অথবা লেভেন্ডার তেল মিশিয়ে নিন।
অতিরিক্ত পরামর্শঃ
ক. এগুলোর পাশাপাশি ঘুমানোর একটি নির্দিষ্ট সময় বা রুটিন করে নিন।
খ. নিয়মিত একই সময় ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন।
গ. দিনের বেলায় ঘুমাবেন না।
ঘ. ঘুমানোর আগে রুমের সব লাইট বন্ধ করে রুম অন্ধকার করে নিন।
ঙ. প্রতিদিন তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং সকাল সকাল উঠুন।
চ. শোয়ার সাথে সাথে ঘুম না এলে বই পড়ুন। মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে এমন কোন বই পড়বেন না।
ছ. ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন।
জ. বিকেলের পরে কোন ভারি ব্যায়াম করবেন না।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
Author
-
একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
1 Comment
ধন্যবাদ