জরায়ু ইনফেকশন | লক্ষণ, করনীয় ও ঔষধ

জরায়ু ইনফেকশন

জরায়ু বা যোনি, যা গর্ভাশয় নামেও পরিচিত, মহিলা প্রজনন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গ।  বিশেষকরে এটি গর্ভের বিকাশে সহায়তা করে। জরায়ুতে ইনফেকশন, যা জরায়ুগহ্বরের প্রদাহ নামেও পরিচিত, বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং মহিলাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকে। মূলত ভেজা ও সিন্থেটিক পোশাক অনেকক্ষণ পরে থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে এসব সংক্রমণ ঘটে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ত্রী যৌনাঙ্গের সঠিক পরিচর্যা না করলে, সেখানে প্রদাহজনিত ব্যথা, যোনি থেকে রক্তপাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ভাইরাস জরায়ুতে দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, সংক্রমিত কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই, মহিলাদের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

জরায়ুর রোগসমূহঃ

মহিলাদের, জরায়ুর মুখ যেখানে যোনির সাথে মিলিত হয়, তাকে সার্ভিক্স বলা হয়। যখন সার্ভিক্স উদ্দীপ্ত হয়, তখন তাকে সারভিসাইটিস বলে। সারভিসাইটিস সংক্রামক বা অসংক্রামক হতে পারে। সাধারণত যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণে সারভিক্স উদ্দীপ্ত হয়।

এই যৌনবাহিত রোগগুলি হল-

  • ক্লামিডিয়া
  • গনোরিয়া
  • হার্পিস

লেটেক্স অ্যালার্জি এবং ডিউসিং এর কারণেও জ্বালাভাব (প্রদাহ) সৃষ্টি হয়। যেসব মহিলা ক্যানসারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন তাদেরও সার্ভিক্সের মধ্যে জ্বালাভাব দেখা দিতে পারে। এতে যদি মূত্রনালী সংক্রমিত হয় তবে আক্রান্ত মহিলাটি মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যোনিতে চুলকানি অথবা যোনি থেকে রক্তপাতও হতে পারে। বিশেষত যৌন সংসর্গের পরে অথবা মাসিক চক্রের মধ্যখানে অনেক সময় পেটের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে।

এইচপিভি-ও জরায়ু রোগসমূহের মধ্যে অন্যতম। এর ফলে দেহে আঁচিল, গুটি বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়- যা যৌনাঙ্গ থেকে শুরু করে মুখে, হাতে-পায়ে এমনকি মুখের ভেতরেও হতে পারে। এ ভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে। সাধারণত নারী পুরুষ যখন প্রথম যৌন-সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই এ সংক্রমণের শিকার হয়।

জরায়ুতে জ্বালাপোড়া

ইনফেকশান হলে জরায়ু জ্বালাপোড়া করতে পারে। 
গর্ভাবস্থায় জরায়ুর ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্লাডারে চাপ পড়ে। এতে প্রস্রাব ঠিক মতো বেরোতে পারে না। এক্ষেত্রে সাবধান না হলে কিডনির উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি সময়ের আগেই প্রসূতি বেদনা শুরু হয়। অস্বাভাবিক কম ওজনের শিশু জন্মানোরও ঝুঁকি থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় কেটে গেলেও ইউরিনারি ট্রাক্ট (urinary tract) বা ব্লাডার ইনফেকশনের (bladder infection) ঝুঁকি থেকে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালা করে, তলপেটে চাপ এবং বারবার প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

চলুন দেখে নিই আর কি কি কারণে জরায়ুমুখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে –

  1. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিপান না করার ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে। মূলত পানি আমাদের দেহের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। এজন্য প্রতিদিন আমাদের পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ।
  2. নারীদের ক্ষেত্রে এই উপর্সগটি বেশ কষ্টদায়ক। মেয়েদের পায়ুপথের খুব কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। যার ফলে পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
  3. মাসিক বা পিরিয়ডের কারণেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে। অনেকে সে সময় অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন কিংবা কাপড় ব্যবহার করে। এসব ন্যাপকিন বা কাপড়ের সাথেও জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে প্রবেশ করে সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে।

জরায়ু ব্যথার কারণঃ

মহিলাদের অনেকে তলপেটে ব্যথা এবং নিতম্বের ব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে মাসিক হওয়ার আগে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। মাসিক হওয়ার সময় এ ব্যথা খুব বেড়ে যায়।
পিরিয়ড জনিত দীর্ঘমেয়াদি এ ব্যথা মূলত জরায়ু প্রাচীরের চারদিকে প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায়ও যোনিতে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এর কয়েকটি কারণ-

জরায়ুর বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যথার এটি সাধারণ কারণ। জরায়ু ভ্রূণের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে আকারে বেড়ে যায়। ফলে এটি যোনি ও আশেপাশের পেশীগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে।

হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা নারীদেহে হরমোনের পরিবর্তন ঘটায়। এটি যোনিকে অযাচিতভাবে শুষ্ক করে তোলে। এর ফলে যোনিতে ব্যথা সৃষ্টি হয়; বিশেষত যৌন মিলনের সময়।

ভ্রূণের বৃদ্ধি: জরায়ুতে ভ্রূণের আকার বাড়ার সাথে সাথে নিতম্বের লিগামেন্টগুলিও প্রসারিত হয়। যোনিকে ঘিরে থাকা লিগামেন্ট এবং পেশীর অত্যধিক প্রসারণের ফলে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা দেখা দেয়। শিশুর ওজন পেলভিক মেঝেতে চাপ তৈরি করার ফলেও যোনিতে ব্যথা সৃষ্টি হয়।

সংক্রমণ: সংক্রমণের কারণে বাহ্যিক যৌনাঙ্গে এবং যোনিতে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। গর্ভাধারণকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বিধায়, এসময় মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

জরায়ুর বিভাজন: জরায়ুর প্রসারণের ফলে যোনিতে তীক্ষ্ণ এবং শ্যুটিংয়ের ন্যায় ব্যথা হতে পারে। তবে, ব্যথা যদি তলপেটে হয় এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।

পেলভিক অরগান প্রোল্যাপস (পিওপি): পিওপি হল গর্ভাবস্থাকালীন এমন একটি অবস্থা যেখানে শ্রোণী বা তার আশেপাশের অঙ্গগুলি কখনও কখনও যোনি বা মলদ্বারে প্রবেশ করে। আপনি যদি তীব্র চাপ অনুভব করেন, অন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়, তবে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। পিওপি চিকিৎসাযোগ্য, তবে এটি মারাত্মক ব্যথা ও জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

এক্ষেত্রে করণীয়:

  • ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমান। এতে আপনার রক্ত ​​সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং যোনি চাপমুক্ত থাকবে
  • একইভাবে, আপনার পা উঁচু জায়গায় রেখে বসুন। গর্ভাবস্থায় যোনিপথের চাপ অনেকাংশে হ্রাস করতে এটি সহায়ক। ফলে যোনিতে ব্যথাও কমে যায়।
  • সাঁতার এবং যোগ ব্যায়ামের মতো সাধারণ অনুশীলনগুলি শরীরে রক্ত চলাচল বাড়াতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে অনেক কার্যকর। এভাবে যোনির ব্যথা অনেকখানি উপশম করা সম্ভব।
  • নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ করলে যোনির চাপ ও ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • যদি আপনার পেট বিশাল হয়, তবে বুঝে নিবেন এটি শিশুর মাথা যোনিতে চাপ দেয়ার ফলে হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় সাপোর্ট বেল্ট পরলে সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যথা অস্বস্তিকর হতে পারে যদিও এটি মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। জীবনযাত্রার কয়েকটি পরিবর্তন যোনির ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। তবে আপনি যদি মনে করেন, ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়েও খারাপ, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

জরায়ু মুখের ইনফেকশন কি?

জরায়ু ইনফেকশন বা পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) বলতে ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণকে বোঝায়। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক সহ বিভিন্ন জীবাণুর কারণে হতে পারে। মাঝে মাঝে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। যৌনবাহিত রোগের (এর মধ্যে chlamydia and gonorrhoea অন্যতম) কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সংক্রমণ হয়ে থাকে। আবার ডি অ্যান্ড সি, কপার টি, অ্যান্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি, হিস্টারোসাল-ফিঙ্গোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষার কারণেও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর ফলে প্রজনন অঙ্গগুলোর জটিলতা, গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়।

জরায়ুতে ইনফেকশন কেন হয়?

জরায়ুতে ইনফেকশনের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

  • যৌন সংক্রামিত রোগ (STD): ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া এবং ট্রাইকোমোনিয়াসিস জরায়ুতে ইনফেকশনের সাধারণ কারণ।
  • যোনি ব্যাকটেরিয়োসিস (BV): এটি যোনিতে থাকা “ভালো” ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে ঘটে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে যোনিতে “ভালো” ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • গর্ভপাত: গর্ভপাতের পর জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • আইইউডি ব্যবহার: ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস (IUD) ব্যবহার জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি সামান্য বৃদ্ধি করতে পারে

অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু ইনফেকশন কেন হয়?

অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু ইনফেকশনের কিছু সম্ভাব্য কারণ:

  • অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস: যৌনতা চলাকালীন সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার না করা, যেমন কনডম, জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • অপরিষ্কার পরিবেশে সাঁতার কাটা: অপরিষ্কার পানিতে সাঁতার কাটলে জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার: অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করলে জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণঃ

অন্যান্য কারণের পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের জন্যও জরায়ু ইনফেকশন হতে পারে। এর ফলে তলপেটে এবং কোমরের নিচে ব্যথা হয় এবং সে ব্যথা লাগাতার চলতে থাকে। এ রোগের কিছু পরিচিত লক্ষণ হলো: এবনরমাল স্রাব, জ্বর, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

আরো কিছু লক্ষণঃ 

  1. অনিয়মিত মাসিক এবং জ্বর জ্বর লাগা
  2.  মাসিকের সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা
  3.  সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া
  4.  মল-মূত্র ত্যাগ কালে যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হয় ও ব্যথা হয়।
  5.  হাত, পা, শরীর আগুনে পোড়ার মত জ্বালা করে
  6.  প্রস্রাবের সময় ও পরে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক বেদনা
  7. জরায়ুর গ্রীক ফোলা ও শক্ত থাকা
  8. কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অত্যন্ত ক্লান্তিকর অনুভূতি

এই লক্ষণগুলোর তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। এমনকি অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও আপনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ এ রোগের জীবাণুগুলো জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায়ও থাকতে পারে।

গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ:

  • যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব
  • যোনিতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া
  • পেটে ব্যথা
  • মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা
  • যোনি থেকে রক্তপাত

 

কিভাবে সংক্রমণ ঘটে?

জরায়ু সাধারণত ক্ল্যামাইডিয়া, ই. কলাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ব্যাকটেরয়েডস, গনোরিয়া ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। জীবাণুগুলো যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু ও ট্রাইকোমোনাড (যা পুরুষের যৌনাঙ্গে থাকে) বাহিত হয়ে যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে। পরে জরায়ু, নালী হয়ে ডিম্বাশয়েও এসব ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

নারীদের যৌনাঙ্গে অবস্থিত সার্ভিক্স(cervix) ব্যাকটেরিয়াকে ইউরেটাসে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। সন্তান জন্মদান কিংবা সার্জারির সময় কার্ভিক্স খোলা থাকে বিধায়, এসময়ও ব্যাকটেরিয়া সহজে জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে।

ডায়াগনোসিসঃ

এ রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন পড়ে। জরায়ুর মুখ বা মূত্রনালী থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণুর উপস্থিতি নিরূপণ করা হয়। এছাড়া সংক্রমণের লক্ষণ বোঝার জন্য রক্ত, ইউরিন পরীক্ষা ও অ্যাবডমিনাল আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কপি পরীক্ষার মাধ্যমেও জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

প্রতিবছর দেশে প্রায় ৯ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করা মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। গ্রামীণ নারীরা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। প্রথমে জরায়ু-তে ইনফেকশন, এবং পরে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে ক্যান্সারে রূপ নেয়। অনেকে লজ্জার কারণে চিকিৎসাও নিতে চায় না। তারা শরীরে রোগ পুষে রাখে। অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনের ফলে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অপরিণত বয়সে বিয়ে এবং ঘন ঘন প্রেগন্যান্সি বা ডেলিভারির কারণে জরায়ু ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। যেসব মেয়েরা বহুগামী কিংবা স্বামীরা অনেকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে এমন ক্ষেত্রেও নারীদের এইচপি (Human Papilloma Virus) ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

জরায়ু ইনফেকশনের ঔষধঃ 

প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং পেইন কিলার দিয়ে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় খেতে হবে।

  • অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য
  • অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ: ছত্রাকের সংক্রমণের জন্য
  • ভাইরাসবিরোধী ওষুধ: ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য

জরায়ু সংক্রমণের প্রতিকারে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকস্:

  • Pulmocef 1500
  • Zomycin 250
  • Zybact 250 Mg
  • Cefadur CA 250 Mg
  • Zycin 250 mg
  • ALTAXIME 500MG
  • Cef 250 ইত্যাদি।

যদি এসব অ্যান্টিবায়োটিকস্ সেবনের পরও কোনো উন্নতি দেখা না যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হতে পারে; যেমন: ডিম্বনালী সংক্রমিত হয়ে পুঁজের সৃষ্টি হলে এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায়। এছাড়া যাদের বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের তীব্রতা কমানোর জন্য ডিম্বনালী এবং জরায়ু সার্জারি করে অপসারণ করা হয়।

উল্লেখ্য, আপনার যদি ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হবে যা গর্ভকালীন সময়েও নিরাপদ। তবে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করতে হবে যদিও সংক্রমণের লক্ষণগুলো সেরে যায়। অন্যথায়,আবার যেকোন মুহূর্তে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। ৩০ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস তিন মাসের মধ্যে আবার দেখা দেয়। অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ হল খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলো-কে মেরে ফেলা। কিন্তু এটি ভালো ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। পুনরায় লক্ষণ প্রকাশ পেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এর পাশাপাশি স্বামী বা পার্টনারের চিকিৎসাও জরুরি। অন্যথায় বার বার জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাবে।

সময়মতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাঃ

যথাসময়ে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা না করালে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে তলপেট ব্যথা, কোমর ব্যথা, ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে বা জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারণে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সিও (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে গর্ভপাত, সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর গর্ভবতী নয় এমন মেয়েদের ক্ষেত্রে পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ এর আশঙ্কা দেখা দেয়। এটি sexually transmitted disease (যেমন- গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, HIV ইত্যাদি)-এ সংক্রমিত হওয়ার পথকে সুগম করে।

তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। শুধু একটু সচেতনতা আপনাকে মারাত্মক জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে।

জরায়ু ইনফেকশনের হলে ঘরোয়া চিকিৎসা

এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান খুব উন্নত। তবে ডাক্তারি পরামর্শের পাশাপাশি আপনি ঘরোয়া কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

চলুন, দেখে নিই কি উপায়ে আপনি ঘরে বসেই সংক্রমণের মাত্রা হ্রাস করবেন-

দই ব্যবহারে:

দইয়ে Lactobacillus acidophilus নামে একধরনের ভাল ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যেখানে খুব চুলকানি হচ্ছে বা সংক্রমণের প্রভাব পড়েছে, ২০-৩০ মিনিট দই লাগিয়ে রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সরাসরি যৌনাঙ্গেও দই লাগাতে পারেন। দিনে দু’বার লাগান। ঘণ্টা দুই রেখে ধুয়ে নিন। এটি আপনার শরীরকে যেকোনো ধরনের ইনফেকশন থেকে রক্ষা করবে।

নারকেল তেল:

নারকেল তেলে অ্যান্টিফানগাল উপকরণ থাকে যা ছত্রাককে ধরাশায়ী করতে খুবই কার্যকরী। সংক্রমণ এলাকায় (তবে যৌনাঙ্গের ভিতরে লাগাবেন না) ভালভাবে নারকেল তেল লাগান। দিনে ২ থেকে ৩ বার লাগালে দ্রুত কাজ হবে। সঙ্গে একটু দারুচিনি তেল মিশিয়ে নিলে সংক্রমণ ছড়ানোর আর ভয় থাকবে না।

অ্যাপল সিডার ভিনিগার:

হাল্কা গরম জলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে দিনে দু’বার করে সপ্তাহখানেক খান। সাদা ভিনিগার বা অ্যাপল সিডার ভিনিগার জলে মিশিয়ে সংক্রমণের জায়গায়ও লাগাতে পারেন। এতে ভালো কাজ হবে।

রসুন:

অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ঘরোয়া অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে রসুনের জুড়ি নেই। কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। যেসব জায়গায় ফুসকুড়ি হয়েছে বা জ্বলছে ঐ স্থানে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। পাশাপাশি রোজ এক কোয়া করে রসুন খেতে পারেন। ছত্রাক নিরাময়ে এটি বেশ উপকারি।

যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা পোশাক পড়া দরকার। আর সংক্রমণের জায়গাটা সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। দেখবেন দ্রুত সেরে উঠছেন ইনশা’আল্লাহ।

যেসব বিষয় মেনে চলা খুব জরুরি:

নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এবং কনডম ব্যবহার জীবাণুর সংক্রমণ থেকে জরায়ুকে রক্ষা করে।

যত্রতত্র এম আর (গর্ভপাত) করানো থেকে বিরত থাকুন। বাংলাদেশে অনেক ফার্মেসির দোকানেও গর্ভপাত করানো হয়। যা কখনোই উচিৎ নয়। কারণ সেখানে জীবাণু সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে। তাই গর্ভপাত বা ডিএন্ডসি করাতে হলে কোন ভালো গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে গর্ভপাত করানো উচিৎ।

ধূমপানের অভ্যাস থাকলে এখনি তা ত্যাগ করার সময়। ধূমপায়ীদের রক্তে (নিকোটিনের) পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং জরায়ুর মুখে ক্যান্সার এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হট টাব বা বাথ টাব এ গোসল না করে শাওয়ার নেয়ার চেষ্টা করুন। গোসলের পর যৌনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখতে হবে। সুগন্ধি ও রুক্ষ সাবান যথাসম্ভব পরিহার করুন।

বিশেষ অঙ্গের নিয়মিত যত্ন ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আপনাকে পরিছন্ন ও স্বাস্থ্যবান রাখবে। যত্ন নেয়া মানে শুধু গোসলের সময় পরিষ্কার করা নয়। নারীদের যৌনাঙ্গ প্রতিদিন তিন থেকে চারবার পরিষ্কার করা উচিৎ। বিশেষ করে বর্ষা ঋতু এবং পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে। এতে করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

সুতি কাপড় নরম এবং অধিক ত্বকবান্ধব। এটি দ্রুত আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং বাতাস চলাচলের জন্য অধিক উপযোগী। বিশেষ কোনো উপলক্ষে সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস পরতে পারেন। পাশাপাশি টাইট জামাকাপড় এড়িয়ে চলুন। কারণ এ ধরনের পোশাক বায়ু চলাচলে বাধা তৈরি করে।

Douche ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। গর্ভাবস্থায়ও Douche এর ব্যবহার উচিৎ নয়।

কোনো রকম ছোট সংক্রমণকে অবহেলা করা উচিৎ নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, যৌন-স্বাস্থ্য ভালো থাকা মানে শরীর ভালো থাকা। নির্বিঘ্ন সুরক্ষিত যৌনজীবন আনন্দময়।

Source:
https://www.medicalnewstoday.com/articles/321298
https://www.medicalnewstoday.com/articles/177923
https://www.webmd.com/women/guide/your-guide-urinary-tract-infections
https://www.webmd.com/women/guide/cervicitis
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/urinary-tract-infection/symptoms-causes/syc-20353447
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/pelvic-inflammatory-disease/symptoms-causes/syc-20352594
https://medlineplus.gov/ency/article/000888.htm
https://www.southerncross.co.nz/group/medical-library/urinary-tract-infections-symptoms-treatment-prevention

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহার

অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা

শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে অলিভ অয়েলে খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে কমায় কোলেস্টেরলের মাত্রা, হৃদরোগের ঝুঁকি, ডায়াবেটিস, এবং হজমের সমস্যা। এর পাশাপাশি রান্নায় স্বাদ-গুণ বাড়াতে অলিভ অয়েলের ব্যবহার অতুলনীয়। শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, এটি গায়েও মাখা যায়। ত্বকের জন্য উপকারী নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর অলিভ ওয়েল খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলো জেনে নেই। 

 

অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলপাই গাছের ফল থেকে তৈরি অতুলনীয় এই অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ই, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম আছে। এটি oleic acid ও palmitoleic acid-এর মতো উপকারী উপাদানেও সমৃদ্ধ। অলিভ অয়েলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা

শীতকালে অলিভ অয়েল খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন একটা করে জলপাই খান। নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ভালভাবেকাজ করে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

শুধু তাই নয়, অলিভ অয়েল সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে। এতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত জলপাই খান এবং প্রয়োজনে চুলে লাগান। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এর পাশাপাশি জলপাইয়ের তেল সেলুলার স্ট্রেস কমিয়ে অকাল বার্ধক্য রুখে দেয়।

চলুন একনজরে দেখে নিই, অলিভ অয়েল কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে-

অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ফ্যাট

শরীরকে সুস্থ রাখতে এতে থাকা উপকারী ফ্যাট প্রয়োজন। বিশেষ করে হরমোনাল এবং ব্রেন ফাংশন ঠিক রাখতে উপকারী ফ্যাটের কোনো বিকল্প নেই। তাই, নিয়মিত অলিভ অয়েল খাওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে oleic acid-এর মতো monounsaturated fat স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। এতে আরো রয়েছে ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের বাড়তি সুরক্ষা দেয়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে

আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অলিভ অয়েলের ব্যবহার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হার্টের যেকোনো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা হ্রাস পায়। এতে উপস্থিত polyphenols নামক উপাদানটি কোষের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ কারণে arterial wall-এর ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি পায়। আমাদের পাকস্থলীর জন্য এ তেল দারুণ উপকারী।

ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে

নিয়মিত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খান, দেখবেন ডায়াবেটিস আপনার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। কারণ, এতে  বিদ্যমান পলি ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে, যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

পেটের রোগের প্রকোপ কমে

গ্যাস-অম্বলের সাথে বদহজমের সমস্যাও এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তেমনি আছে বদহজমের সমস্যাও। এতে রয়েছে monosaturated fat যা bowel movement এর উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়ে যায়। তাই, বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি অলিভ অয়েল খাওয়ার পরামর্শ দেন। নিয়মিত এক চামচ সঙ্গে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাল হয়।

ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি দূরে রাখে

জলপাইয়ের তেলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানকে ধ্বংস করে oxidative damage প্রতিরোধ করে। সেই সঙ্গে এটি ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধ্বংস করে দেয়। নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের অস্বাভাবিক কোষ গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়। পাশাপাশি এটি এপিজেনিক পরিবর্তন থেকেও শরীরকে রক্ষা করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

এতে প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও পলিফেনাল মজুদ থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই, পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাসায় তৈরি খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। বাড়তি পুষ্টিগুণ পেতে কাঁচা অলিভ অয়েলও খেতে পারেন।

স্ট্রেস-ডিপ্রেশনের প্রকোপ কমায়

অলিভ অয়েল খাওয়া মাত্র শরীরে serotonin নামে এক প্রকার ‘ফিল গুড’ বা ভাল লাগার হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মানসিক অবসাদ প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকর।

ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতে

ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে এর জুড়ি নেই। এতে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিডসমূহ মস্তিষ্কের উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, এটি ব্রেন সেলে তৈরি হওয়া Beta-Amyloid Plaque-ও দূর করে। এর ফলে স্নায়ু কোষগুলো সচল হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে

চটজলদি ওজন কমাতে অলিভ অয়েল খেতে ভুলবেন না। এটি হজমে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া জলপাইয়ে বিদ্যমান ভিটামিন-ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভেন-৩-ওলস, অ্যানথোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিমারস্ ফ্রি radical প্রতিরোধ করে ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

শরীরের প্রদাহ কমে

শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে যেমন হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়, তেমনি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, এবং আর্থ্রাইটিস-এর মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই প্রদাহ হ্রাসে এটি দারুণভাবে কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রদাহের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা দেয়।

শরীরের ব্যথা নিরাময়ের জন্য

২০০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে ২০ চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। সাথে যোগ করুন ১০ চামচ সৈন্ধব লবণ। প্রতিদিন এভাবে অলিভ অয়েল ও লবণের মিশ্রণ তৈরি করে ব্যথার স্থানে ১৫ মিনিট ধরে মালিশ করুন।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

হৃদরোগীদের জন্য এটা খুবই উপকারী। দুর্বল হার্টের জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজনীয় চর্বির জোগান দেয় অলিভ অয়েল। এই লক্ষ্যে ছোট একটি কড়াইয়ে দেড় কাপ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, ৮-১০টি শুকনা রোজমেরি পাতা, সামান্য সামুদ্রিক লবণ ও গোলমরিচ নিন। এরপর ৫-১০ মিনিট ধরে এটি জ্বাল দিন। কিছুক্ষণ পর চুলা থেকে নামিয়ে নির্যাসটুকু গ্রহণ করুন এবং বোতলে সংরক্ষণ করুন। ভালো ফল পেতে আপনি সালাদ, স্যুপসহ অন্যান্য পছন্দের খাবারের সঙ্গে তৈরিকৃত জেলিটি ব্যবহার করতে পারেন।

কানের সমস্যায় অলিভ অয়েল

কানের মধ্যে চুলকানি এবং দুর্গন্ধ হওয়া এমন বেশ কিছু সাধারণ সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। এসব সমস্যা দূর করতে একটা কটন বাড অলিভ অয়েলে ভিজিয়ে খুব সাবধানে কানের মধ্যে ব্যবহার করুন।

নাক ডাকা বন্ধ করতে

অলিভ অয়েলে থাকা ঔষধিগুণ নাক ডাকা বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। এটি আপনার কণ্ঠনালীকে পিচ্ছিল করে দেয় এবং নাক ডাকা বন্ধ করে।

ডার্ক সার্কেল দূর করতে

চোখের নিচে কালি পড়লে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। এবং পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মমাফিক প্রতিদিন ব্যবহারে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যায়।

তাছাড়া এটি আমাদের ভিটামিন ‘এ’র অভাব পূরণ করে। রাতকানা ও গ্লুকোমা-সহ চোখের অন্য সব রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

পা ফাটা সমস্যার সমাধান

পায়ের দুরবস্থার কারণে কারও সামনে পা বের করতে বিব্রত হচ্ছেন? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন এবং ঘুমানোর সময় মোজা পরে ঘুমান। আর পরদিন সকালে নরম তুলতুলে পায়ে পছন্দের স্যান্ডেল পড়ে চলে যান আপনার গন্তব্যস্থলে।

ঠোঁটের স্ক্রাবার হিসেবে

ঠোঁটে মাঝে মাঝে মরা চামড়া জমে কালচে দেখায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অলিভ অয়েল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষুন। এতে ঠোঁটের মরা চামড়া দূর হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঠোঁটের কোমলতা ধরে রাখতে এবং ঠোঁট ফাটা রুখতে এক চা চামচ তেল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও আধ চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ঠোঁটে লাগিয়ে চিনি না গলে যাওয়া অবধি ম্যাসাজ করুন।

নখের যত্নে

ভঙ্গুর নখ এবং নখের চামড়ার বাইরের স্তর সুস্থ, সুন্দর এবং কোমল রাখার জন্যও এটি দারুণ উপযোগী। কয়েক ফোঁটা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হাতের আঙুলে নিয়ে নখের উপরে এবং চারপাশে ভালোভাবে মালিশ করুন। এতে নখ শক্ত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। অথবা, প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নখ ও এর আশেপাশের ত্বকে ম্যাসাজ করে নিন। ধীরে ধীরে নখ ভাঙ্গার প্রবণতা কমে যাবে এবং নখ হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়।

আয়রনের ভালো উৎস

আয়রনের অভাব দেখা দিলে আমাদের দেহাবস্থিত টিস্যুগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আয়রন শরীরে শক্তি উৎপাদনের এক দারুণ উৎস। আয়রনের ঘাটতি দূর করতে প্রতিদিন কালো জলপাই খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে। সর্বোপরি শারীরবৃত্তীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরিমিত পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

অলিভ অয়েল বাথ

এক বালতি পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে গোসল করুন। অথবা, গোসলের আগে তেল দিয়ে পুরো শরীর ম্যাসাজ করে নিলে ভাল ফলাফল পাবেন।

মেক-আপ রিম্যুভার

বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখের মেইকাপ তোলার জন্যও সবচেয়ে ভালো হচ্ছে অলিভ অয়েল। চোখের পাপড়িতে লাগানো মাশকারা ওঠাতে কিংবা চোখের নিচের কালো দাগ এবং রিঙ্কল দূর করতেও এটি ভালো কাজ করে। এটি চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা ত্বককে হাইড্রেট করে আরো নরম করে তোলে। আর ত্বকের মেকআপ তুলতে আঙ্গুলের ডগায় অথবা কটন প্যাডে এই তেল লাগিয়ে নিন। তারপর সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে সমস্ত মেক-আপ তুলে ফেলুন। তারপর ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে আপনার মেক-আপ তোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।

অলিভ অয়েল মুখে দিলে কি হয়

অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ রয়েছে যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তাই বাইরে বেরোনোর আগে মুখে খানিকটা অলিভ অয়েল মেখে নিন।

তাছাড়া অলিভ অয়েল ব্রণ প্রতিরোধকও বটে। মুখে ব্যবহারের জন্য ৪ টেবিল চামচ লবণের সাথে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এই পেস্ট ২ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। নিয়মমতো এক সপ্তাহ এই পেস্ট ম্যাসাজ করলে আপনি অবশ্যই মুখের পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

এমনকি, অন্য যেকোনো তেলের তুলনায় অলিভ অয়েল খুবই হাল্কা বিধায় এটি খুব সহজেই মুখের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। সেজন্য ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/৪ কাপ ভিনেগার আর ১/৪ কাপ পানি মিশিয়ে একটি সলিউশন তৈরি করুন, যা রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিমের মত ব্যবহার করতে পারবেন। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম করে তোলে, এবং ভিনেগার ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে।

 

চুলে অলিভ অয়েলের উপকারিতা

আপনার চুলের সুরক্ষায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ ওয়েল ময়েশ্চরাইজার হিসেবে চমকপ্রদ ফল দেয়।

অলিভ বা জলপাইয়ের তেল চুলকে ঘন ও উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল নিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কোমল ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। চায়ের লিকার, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিয়েও চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটা হেয়ার ট্রিটমেন্টের কাজ করে।

চুলের বাড়তি যত্ন নিতে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন-

  • ১। যাঁদের খুশকির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা সপ্তাহে দু’দিন ভাল করে মাথায় এই তেল ম্যাসাজ করুন। তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি সমপরিমাণ জলপাই তেল আর বাদামের তেল একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ করলে খুশকি অনেকটা কমে আসবে।
  • ২। তাছাড়া অলিভ অয়েলের সঙ্গে অল্প নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের আগা তাতে চুবিয়ে রাখুন। এতে চুল নরম থাকে, এবং ফাটার আশঙ্কা আর থাকে না।
  • ৩। আবার চুলের ফ্রিজিনেস দূর করার জন্য একটি চিরুনি অলিভ অয়েলের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। এতে চুল ময়েশচার হয়ে ফ্রিজিনেস কেটে যাবে।
  • ৪। কন্ডিশনারের পরিবর্তেও আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো ভাবে দুই হাতে ঘষে ফেলুন। তারপর এটি আলতো করে চুলে লাগিয়ে নিন।
  • ৫। আর প্রতি সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। এভাবে ২/৩ ঘন্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর নিজেই লক্ষ করবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।

এভাবে বাসায় বসে আপনি ভেষজগুণসমৃদ্ধ অলিভ অয়েল ব্যবহারে চুলের যত্ন নিতে পারেন।

 

ত্বকে অলিভ অয়েলের উপকারিতা

অলিভ অয়েলে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস্ ত্বককে আলট্রা-ভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে। এতে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। অলিভ অয়েলে আরো রয়েছে ভিটামিন এ এবং ই যা ত্বককে সতেজ রাখে। তাই, প্রতিদিন বাসায় ফিরে গোসল করার পর সামান্য পানির সাথে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে সারা শরীরে ম্যাসেজ করুন। দেখবেন শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং সারারাত শরীরে ভেজাভাব বজায় থাকবে। প্রতিদিন এভাবে অলিভ অয়েল দিয়ে শরীরের ত্বক ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে সহজে বলিরেখা পড়ে না।

পাশাপাশি শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা আঁচড় লাগলে অলিভ অয়েল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। একটি পরিষ্কার পাত্রে প্রয়োজনমত এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, নারকেল তেল, ক্যালেনডুলা ও ল্যাভেন্ডার তেল, মোম, চা পাতা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে।

জলপাই তেল শিশুর ত্বকের জন্যও নিরাপদ। শিশুদের নিতম্ব থেকে র‌্যাশ দূর করতে সামান্য অলিভ ওয়েল মাখিয়ে দিন। যাদের ত্বকে চুলকানির সমস্যা রয়েছে তারা নির্দ্বিধায় এ তেল গায়ে মাখতে পারেন। অলিভ অয়েল অতিরিক্ত শুষ্ক, ছোপ ছোপ ত্বক কোমল ও মসৃণ করে। জলপাই তেলে রয়েছে হাইড্রেটিং এজেন্ট, যা শিশুর ত্বককে নরম করে তোলে।

 

অলিভ অয়েলের প্রকারভেদ

বাজারে মোটামুটি চার ধরনের অলিভ অয়েল পাওয়া যায়; ক্লাসিক বা ভার্জিন অলিভ অয়েল, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, অলিভ পোমেস অয়েল এবং লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল। আমাদের প্রাত্যহিক রান্না-বান্নায় সয়াবিন বা সরিষার তেলের বিকল্প হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি।

চলুন দেখে নিই বিভিন্ন প্রকার অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ-

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল

এটি সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের অলিভ অয়েল। রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য আপনি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মাখনের বিকল্প আপনি হিসেবেও এটি খেতে পারেন। অন্যান্য ভেষজ তেলের তুলনায় এটি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল জলপাইয়ের আসল নির্যাস থেকে প্রস্তুত করা হয়। এবং এতে অলিক অ্যাসিডের পরিমাণও অনেক কম। একেবারে খাঁটি তেল হিসেবে আপনি এটি গ্রহণ করতে পারেন।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে জিরো ক্যালোরি। ফলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের ব্যবহার ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি দেহে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। পাশাপাশি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনলস্ এবং ফ্যাট। এটি আমাদের দেহকে নানারকম রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করে।

ক্লাসিক বা ভার্জিন অলিভ অয়েল

রান্না-বান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ক্লাসিক অলিভ অয়েল। এতে এসিডের পরিমাণ অত্যন্ত কম। পাস্তা, স্টার-ফ্রাইড ভেজিটেবল বা রাইস তৈরিতে ক্লাসিক অলিভ অয়েলের বিকল্প নেই। এটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও ভালো কাজ করে। ফলে চুল ও ত্বকে ব্যবহারের জন্যও ক্লাসিক অলিভ অয়েল উপযোগী।

অলিভ পোমেস অয়েল

গন্ধহীনতা ও লঘু হলুদ রঙের কারণে অলিভ পোমেস রান্নার জন্য আদর্শ তেল। উচ্চ স্ফুটনাঙ্কের কারণে ডিপ ফ্রাইং-এর জন্য খুব ভালো এই তেল। পোলাও, পরোটা এমনকি পাকোড়া তৈরিতেও অলিভ পোমেস অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল

হালকা রং ও মৃদু গন্ধের জন্য সহজেই এই অলিভ অয়েল চিনতে পারবেন। এটি দিয়ে কন্টিনেন্টাল রান্না, ভাজি, রোস্ট বা বেকিং এমনকি যেকোনো রকম পদই অনায়াসে তৈরি করতে পারেন।

আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়

বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল তেল কিনতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোনটি আসল কোনটি নকল সেটা বোঝা মুশকিল।  এছাড়া বিদেশি অনেক ব্র্যান্ডের প্রক্রিয়াজাত ও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। চলুন, আসল তেল চেনার কিছু সাধারণ নিয়ম জেনে নেই।

  • বোতল: আসল অলিভ অয়েল সবসময় ডার্ক কাচের বোতলে স্টোর করা হয়। কারণ সূর্যালোক এর গুণ নষ্ট করে।
  • গন্ধ: আসল অলিভ অয়েলের একটা নির্দিষ্ট গন্ধ থাকে। একটি ছোট কাঁচের পাত্রে খানিকটা তেল স্প্রে করে তার মুখ আঁটকে দেয়া যেতে পারে। এরপর এতে সামান্য পরিমাণ তাপ প্রয়োগ করুন। পাত্রের ঢাকনা খুললে যদি এর সুগন্ধ আগের চেয়ে বেশি হয়, তবে বুঝতে হবে এটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। আর সুগন্ধ যদি কমে যায়, তাহলে বুঝে নিবেন এটি আসল এক্সট্রা ভার্জিন নয়।
  • স্বাদ: আসল তেলের স্বাদ একটু তিক্ত হয়।
  • ঘনত্ব: আসল তেল অন্যান্য তেলের তুলনায় ঘন হয়।
  • ফ্রিজ পরীক্ষা: ফ্রিজে রাখলে আসল অলিভ অয়েল জমাট বাঁধে। আপনার ব্যবহৃত তেলটি আসল কিনা এটা নির্ণয়ের জন্য ফ্রিজ টেস্ট অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এজন্য একটি পাত্রে খানিকটা তেল নিয়ে ২ ঘন্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজ থেকে বের করার পর যদি দেখেন এটি জমে শক্ত হয়ে গেছে অথবা লিকুইড’ই আছে, তাহলে বুঝবেন এটি খাঁটি  নয়। তবে যদি দেখেন, হালকা জমে গেছে অথবা ঘন হয়ে আছে, তখন আপনি এটাকে খাঁটি ধরে নিতে পারেন।
  • লেবেল: এক্সট্রা ভার্জিন হলে বোতলের লেবেলে ‘Extra Virgin Olive Oil’ লেখা থাকতে হবে।
  • অ্যাসিডিটি: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের অ্যাসিডিটি 0.8% এর কম হতে হবে।
  • রঙ: এক্সট্রা ভার্জিন তেলের রঙ হালকা সবুজ বা হলুদ হয়।
  • স্বাদ: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের স্বাদ আরও বেশি তিক্ত হয়।
  • মূল্য: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অন্যান্য গুলোর চেয়ে দামি হয়।

উল্লেখ্য, উপরোক্ত উপায়গুলো 100% নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এগুলো অনুসরণ করলে আসল ও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কেনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য, সব সময় ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন। আর যদি অন্ধকার জায়গায় রাখতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। খুব উচ্চ তাপমাত্রায় এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই, কোনোভাবেই এর শিশি উষ্ণ স্থানে ফেলে রাখা যাবে না। এভাবে নিয়ম মেনে অলিভ অয়েল সংরক্ষণ করলে তিন বছর পর্যন্ত এটি ভাল থাকবে।

 

কুর’আন ও হাদিসে অলিভ অয়েলের বর্ণনা

রাসূল (স.) নির্দেশ দেন, তোমরা জয়তুনের তেল(জলপাইয়ের তেল) খাও এবং শরীরে মাখো। কেননা, এটি আসে বরকতময় গাছ থেকে। (সহিহ তিরমিজি, আহমাদ)।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘আর তিনি এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন বিভিন্ন রকম ফসল, জয়তুন (জলপাই), খেঁজুর, আঙুর ও সব ধরনের ফল। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা : নাহল : ১১)

শুধু কোরআন ও হাদিস দ্বারাই এর উপকারিতা বা ব্যবহার প্রমাণিত নয়, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যখন মানুষের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে, তখন হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। জয়তুন তথা অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ হার্ট ব্লক হতে বাধা দেয়। তাছাড়া হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল মুখে মাখলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। জয়তুন তেল অ্যালার্জি প্রতিরোধেও সহায়তা করে। জয়তুনে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে অত্যন্ত কার্যকর।

 

অলিভ অয়েল তেল খাওয়ার সঠিক ও কার্যকরী নিয়ম

অলিভ অয়েল হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। এটি  বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে সঠিক ও কার্যকরী নিয়ম মেনে চললে এর সুফল পাওয়া যায়। অলিভ অয়েল খাওয়ার নিয়মগুলো হলঃ 

  • এটি কাঁচা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। রান্নার সময় অতিরিক্ত গরম হলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
  • প্রতিদিন ২-৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিবিদ অথবা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এর বেশি খাওয়া ঠিক না। 
  • সালাদ, স্যুপ, ভাত, ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • এর তেল দিয়ে রান্না করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে রান্না না করাই ভালো।
  • এটি ফ্রিজে রাখলে তা ঘন হয়ে যায়। তাই রুমের তাপমাত্রায় রাখা ভালো।

তবে, অলিভ অয়েল খাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।

  • যারা ওজন বেশি তাদের অতিরিক্ত অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে।
  • যাদের পিত্তথলির সমস্যা আছে তাদের খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • এতে অ্যালার্জি আছে কি না তা আগে থেকে জেনে নেওয়া উচিত।
  • অলিভ অয়েল কেনার সময় ভালো ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল কেনা উচিত।
  • এটি খোলা অবস্থায় বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। কারণ এতে বাতাসের সংস্পর্শে এসে অক্সিডাইজ হয়ে যেতে পারে।

নিয়মিত ও সঠিকভাবে অলিভ অয়েল খেলে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব।

 

বাচ্চাদের অলিভ অয়েল খাওয়ার নিয়ম

নিয়মিত ও সঠিকভাবে অলিভ অয়েল খাওয়ালে শিশুদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

  • ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের অলিভ অয়েল খাওয়ানো উচিত নয়।
  • ১-২ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১ চা চামচ এই তেল খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ২-৩ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১-২ চা চামচের বেশি খাওয়ানো উচিত নয়।
  • ৩ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ২-৩ চা চামচ খাওয়ানো যেতে পারে।

শিশুদের সালাদ, স্যুপ, ভাত, ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। অলিভ অয়েল দিয়ে শিশুদের জন্য রান্না করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে রান্না না করাই ভালো। শিশুদের অ্যালার্জি আছে কি না তা খাওয়ানোর আগে জেনে নেওয়া উচিত। নিয়মিত ও সঠিকভাবে অলিভ অয়েল খাওয়ালে শিশুদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

 

অলিভ অয়েলের দাম

অন্যান্য ভোজ্য তেলের তুলনায় অলিভ অয়েলের দাম খানিকটা বেশি। ব্যান্ডভেদে আন্তর্জাতিক বাজারে অলিভ অয়েলের মূল্যমানে তারতম্য লক্ষ করা যায়। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে মেরিল অলিভ অয়েল বেশ জনপ্রিয় ও উপকারী। বাজারে প্রতি ১লিটার এক্সট্রা ভার্জিন অয়েলের দাম ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ক্লাসিক, পোমেস ও লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় পাওয়া যায়।

অলিভ অয়েল অপরিমেয় পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের শরীর সচল রাখতে এটি অত্যন্ত উপকারি রসদ। খাদ্যগুণ বিবেচনায় ভোজ্য তেল হিসেবে অলিভ অয়েলের চাহিদা এখন সর্বাধিক।

 

Source:

https://www.medicalnewstoday.com/articles/266258
https://food.ndtv.com/food-drinks/olive-oil-amazing-benefits-of-olive-oil-for-health-hair-skin-its-wonderful-uses-1736506?amp=1&akamai-rum=off
https://www.stylecraze.com/articles/amazing-benefits-of-olive-oil-that-you-never-knew/
https://feeds.aarp.org/health/healthy-living/info-2020/olive-oil-benefits.html?_amp=true
https://www.sclhealth.org/blog/2020/01/olive-oil-the-real-thing-has-real-benefits/
https://olivewellnessinstitute.org

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

কিভাবে নবজাতক শিশুর যত্ন করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

এই ধরণী মাঝে নতুন শিশুর আগমন সৃষ্টিকর্তার পরম অনুগ্রহ। ক্ষুদ্র একটি ভ্রুণ তিল তিল করে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। তারপর একদিন আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণ। শিশুর জন্মে পরিবার-পরিজনদের মাঝে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। নতুন অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য চারদিকে চলে নানা আয়োজন। তাকে ঘিরে তৈরি হয় অনেক স্বপ্ন, সম্ভাবনা। তাই সদ্যভূমিষ্ঠ এই নবজাত শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য থাকতে হবে বাড়তি সতর্কতা এবং এর পাশাপাশি বিশেষ যত্ন নেওয়াও চাই।

নবজাতকের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন কেন?

মূলত মাতৃগর্ভ আর পৃথিবীর মাঝে বিস্তর ফারাক। তাই নতুন এই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
জন্মের সময় নবজাতকের পাকস্থলী, কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি পরিপূর্ণ থাকে না। এছাড়া তার ত্বকও অনেক সংবেদনশীল হয়। পৃথিবীর আলো- বাতাসের সাথে খাপ-খাইয়ে নিতে তাকে অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়। তাই তার বেড়ে ওঠার এই পরিবেশকে অনুকূল করে তুলতে তার প্রতি আমাদের সযত্ন দৃষ্টি রাখা খুব প্রয়োজন।

জন্মপরবর্তী ঘণ্টার বিশেষ যত্ন:

শিশুর জন্মের প্রথম ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কে তাই বলা হয় গোল্ডেন ওয়ান আওয়ার কেয়ার। নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে জন্মের সাথে সাথে শিশুকে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে মুছে নিন।

এরপর আরেকটি পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে মাথা ও শরীর জড়িয়ে রাখুন। দেরি না করে নবজাতককে মায়ের বুকে দিন। মায়ের শরীরের উষ্ণতা তার জন্য খুব প্রয়োজন। জন্মের ৩ দিনের মধ্যে কোনোভাবেই শিশুকে গোসল করানো যাবে না । এইসময়ের মধ্যে শিশুকে মায়ের শাল-দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মূলত শিশুর জন্মের পরপর মায়ের শরীরে প্রথম ঘন আঠালো হলুদ বর্ণের যে দুধ বের হয় এটিই তার একমাত্র খাবার।

শালদুধের উপকারিতা:

শালদুধ শিশুর জন্য প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি এটি নবজাতকের শরীরে পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগায় । শালদুধ খাওয়ালে শিশুর রাতকানা, জন্ডিস ও অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে । শালদুধ খাওয়ানো মা ও শিশু উভয়ের জন্যই জরুরি। কারণ শিশুকে শালদুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ কম হয় এবং জরায়ু দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে । তাছাড়া শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ৬ মাস শুধু মায়ের বুকের দুধই খাওয়াতে হবে। এসময় এক ফোঁটা পানি খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই।

ঋতু অনুযায়ী নবজাতকের যত্ন

নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়কাল অনুযায়ী তার যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, যে প্রতিটা নবজাতকই আলাদা। এসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নবজাতকের জন্য সঠিক পরিচর্যা নিতে হবে।

নবজাতক শিশুর গরমকালের যত্ন:

এসময় একটু পর পর বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে দেখতে হবে ঘাম আছে কিনা। বাচ্চাকে বেশি কাঁথা- কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা যাবে না। গরমের কারণে বাচ্চার গলা শুকিয়ে যেতে পারে। তাই বার বার মায়ের দুধ পান করানোর কোনো বিকল্প নেই।

এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন:

  • শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত নরম সূতি কাপড় ভিজিয়ে শিশুর গা মুছে দিতে হবে।
  • গরমের সময় শিশুর দেহের বিভিন্ন জায়গায় ঘামাচি হতে পারে। ঘামাচি এড়ানোর জন্য নবজাতকের গোসলের পানি কুসুম গরম করে নিতে হবে।
  • প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে ডায়াপার না পরানোই ভালো।
  • গরমের সময় নবজাতক শিশুর ঘুমাতে সমস্যা হয়। তাই ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করা খুব জরুরি। শিশুকে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় রাখতে হবে।
  • তাছাড়া বাড়ির আশে-পাশে কোথাও জলাবদ্ধতা থাকলে সে স্থান পরিষ্কার করে নিন। ফলে মশা জন্মাতে পারবে না। এবং বাড়ির জানালায় নেট লাগিয়ে রাখলে পোকামাকড়-মশা ইত্যাদির কামড় থেকে শিশু রক্ষা পায়।

 

নবজাতকের শীতকালীন যত্ন:

ঠাণ্ডা নবজাতক-কে খুব খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এ থেকে বাচ্চার নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এসময় নবজাতকের মা ও অন্য যারাই বাচ্চার দেখাশোনা করবেন তাদের বারবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।

শীতকালে খেয়াল রাখতে হবে নবজাতকের ঘরে যাতে ঠাণ্ডা বাতাস না আসতে পারে। ঘর যথাসম্ভব গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দিনের বেলা দরজা-জানালা খোলা রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুর ব্যবহার্য লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি কড়া রোদে শুকাতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ভালো ভাবে ঝেড়ে পরিস্কার করাও জরুরি। এগুলোর ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো কারণ এতে সহজে ধুলাবালি থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়।

পাশাপাশি শিশুর শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটি ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করে এবং হাড়ও শক্ত করে। এসময় কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন এবং ডাক্তারের পরামর্শমত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

পাশাপাশি লক্ষণীয়:

  • শিশুকে কয়েক স্তরের শীতের কাপড় পরিধান করাতে হবে। তবে অতিরিক্ত মোটা পোশাক যেন শিশুর অস্বস্তির কারণ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
  • শিশুকে গরম রাখার জন্য কখনোই চুলার কাছে কিংবা আগুনের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। এর ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে।
  • খুব প্রয়োজন না হলে শিশুকে গোসল করানো থেকে বিরত রাখা উচিত।
  • নবজাতককে উষ্ণ রাখার জন্য ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার পদ্ধতি অর্থাৎ মায়ের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে হবে।
  • শিশুর দেহের তাপমাত্রার দিকে নজর রাখতে হবে। নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম হলে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে৷ আবার তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের থেকে বেশি হলে নবজাতকের জ্বর হতে পারে। কোনো রকম অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • নবজাতককে ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খেতে দিন। বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধক শক্তি থাকে বলে শিশু সহজে ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয় না। সাথে সাথে মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শিশু যদি ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে ঠিকমতো দুধ পাচ্ছে। এছাড়া শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোবালি বেশি থাকে। তাই খেয়াল রাখতে হবে শিশুর গায়ে যেন ধুলোবালি না লাগে।

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা:

প্রথমবার নবজাতককে স্পর্শ করার অনুভূতি তুলনাহীন। আবার এই আনন্দ-উদ্দীপনার মাঝেও মিশে থাকে খানিকটা স্নায়ুচাপ, আত্নপ্রত্যয়ের অভাব। তাই, দেখে নিই আপনি কিভাবে জন্মপরবর্তী সময়ে আপনার কলিজার টুকরা শিশুর লালন-পালন করবেন-

আরামদায়ক পোশাক পরান :

নবজাতককে গরম কিন্তু আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। নবজাতকের গায়ে ভারি কম্বল বা লেপ কোনোটাই দেওয়া যাবে না। শীতের প্রকোপ কমাতে নবজাতকের হাত ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। আপনার শিশুর গায়ের পোশাকটি তার অনুভূতি এবং ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে। আরামদায়ক গরম পোশাক আপনার বাবুকে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে। তবে ভারী এবং আঁটসাঁট কাপড় ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

নবজাতকের চোখের যত্ন:

চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল অংশ। আঙুল, শাড়ির আঁচল, গামছা বা অপরিষ্কার কাপড় দিয়ে কখনোই নবজাতকের চোখ মোছা উচিৎ নয়। সব সময় পরিষ্কার, নরম সুতি কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে।

নবজাতকের ত্বকের যত্ন:

শিশুর ত্বককে সবসময় মসৃণ রাখতে হবে। এজন্য ভালো মানের বেবি লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। জন্মের পর শিশুর ত্বকের অবস্থা কিছুটা নাজুক থাকে। নবজাতকের ত্বকে ভারনিক্স (Vernix) নামের একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ থাকে যা এন্টিবডির (Antibody) মতো কাজ করে। তাই শিশুর ত্বকের যত্নে হঠাৎ করেই কোনো পাউডার, ক্রিম, তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নাভির বিশেষ যত্ন:

নবজাতকের নাভির সংক্রমণের বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে; যেমন- নাভি থেকে পুঁজ পড়া, নাভির চারদিকে চামড়া পর্যন্ত লাল হয়ে যাওয়া, নাভিতে দুর্গন্ধ, নাভি দেরিতে পড়া ইত্যাদি। অনেক সময় নাভী থেকে এটি লিভারে গিয়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে তখন জন্ডিস, লিভারের ফোড়া-সহ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। কখনো কখনো এ ইনফেকশন হাড় অথবা অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নাভির সংক্রমণের চিকিৎসায় বিলম্ব হলে অথবা সঠিক চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে।

তবে জন্মের পরপরই নাভীর যত্ন নিলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এসব লক্ষণ অল্পমাত্রায় দেখা দিলে নাভী স্পিরিট দিয়ে ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে। সেই সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক পাউডার প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাভীতে তেল বা এমন কোনো কিছু লাগানো যাবে না।

চুলের যত্ন:

চুল কাটার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর যেহেতু এটি শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপ থেকে শিশুকে সুরক্ষা দেয়, তাই এসময় চুল না কাটাই ভালো। তবে ফাঙ্গাস, অ্যালার্জি বা অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মাথায় খুশকি বা মাথার চামড়া উঠে যেতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহারের আগেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

গোসলের ক্ষেত্রে যেসব সাবধানতা জরুরি:

নবজাতকের গোসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে জন্মের পরপরই তাকে গোসল দেয়া যাবে না। এত দিন মায়ের গর্ভে শিশু উষ্ণতার ভেতর ছিল। বাইরের বাতাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তার একটু সময় লাগে। তাই জন্মের সাথে সাথে গোসল না করিয়ে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করাতে হবে।

গোসলের পানিতে স্যাভলন বা ডেটল এসব দেওয়ার দরকার নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে যে ঘরে বাতাস নেই এ রকম জায়গায় গোসল করাতে হবে। জন্মের ৩ দিন পর থেকে শিশুকে প্রতিদিন গোসল বা গা মুছিয়ে দিয়ে হবে। শীতের সময়ে একদিন পরপর গোসল করানো ভালো। তাছাড়া শিশুর মাথা ভেজানোর পরে খুব দ্রুত ভালো করে মুছে ফেলতে হবে।

বার্থ এসফেক্সিয়া (Birth asphyxia):

নবজাতক জন্মের পর যদি নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে বার্থ এসফেক্সিয়া বা এসফেক্সিয়া নিউনেটারাম বলে। গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের নিউমোনিয়া, হার্ট ফেইলুর, রক্তস্রাব বা এক্লামপসিয়া (Ecclampsia) জাতীয় কোনো রোগ থাকে তাহলে শিশুর এসফেক্সিয়া নিউনেটারাম হতে পারে। এছাড়া প্রসবের সময় শিশুর গলায় অনেক্ষণ নাড়ীর প্যাচ লেগে থাকা, মাথায় রক্তপাত হওয়া বা আঘাত পাওয়া কিংবা কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

এক্ষেত্রে নবজাতক বিশেষজ্ঞ বা নিউন্যাটোলজিস্ট (Neonatologist)-এর পরামর্শ নিতে হবে। শিশু জন্মের ১ মিনিট এর মধ্যে ও যদি শ্বাস না নেয় তাহলে দ্রুত তার মুখ গহ্বর পরিষ্কার করে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে। এবং শিশুকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শিশুর তাপমাত্রা কোনোভাবেই কমে না যায়। এজন্য তাকে উষ্ণ কাপড়ে মুড়ে রাখতে হবে।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে সাকশন (suction) দিয়ে মুখ ও পেট খালি করা হয় এবং ৮০% অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। জন্মের তিন মিনিটের মধ্যেও শ্বাস না নিলে মুখে বা গলায় নল দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দিতে হয়। সেই সাথে হাতের তালু দিয়ে বুকে ঘন ঘন চাপ দিয়ে (Cardiac massage) হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হয়।
বার্থ এসফেক্সিয়া তীব্র হলে বা চিকিৎসা করাতে সামান্য দেরী হয়ে গেলেও শিশু মানসিক প্রতিবন্ধকতা, মৃগী রোগ, নির্জীব থাকা বা প্যারালাইসিস(Cerebral palsy)-সহ নানা জটিলতায় ভুগতে পারে। এ রোগে শিশুর মৃত্যুর হারও অত্যাধিক।

নবজাতকের ওজনহীনতা:

চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, কিশোরী মাতার সন্তানের ওজন সাধারণত খুব কম হয়। আবার গর্ভে শিশু পরিণত বয়সপ্রাপ্ত হবার আগে (Preterm) ভূমিষ্ঠ হলেও ওজন খুব কম হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি ডায়াবেটিস (Diabetes), হৃদরোগ, কিডনি রোগ, পুষ্টিহীনতা, রক্তশুন্যতা, বড় কোনো ইনফেকশন, টক্সেমিয়া (Toxaemia), রক্তস্রাব বা এইধরনের জটিল কোনো রোগ থাকে তাহলে নবজাতকের ওজন কম হতে পারে। জমজ শিশু বা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের ওজন কম হয়। ধুমপায়ী মায়েদের সন্তানেরও জন্মের সময় ওজন বেশ কম থাকে।

কম ওজনের নবজাতক অল্পতেই যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমন, অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর মুখ ও নাকে শ্লেষ্মা এবং অন্যান্য পদার্থ জমে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করে। সর্দি জমে থাকার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। যার কারণে বুক ঘন ঘন ওঠানামা করে ও শিশু ক্লান্ত হয়ে পরে। এসকল লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথে মুখের লালা ও নাকের সর্দি পরিষ্কার করে দিতে হবে।

শিশুর ওজন একদমই কম হলে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি নাকে নল দিয়ে খাবার দেয়া, এমনকি শিরার মাধ্যমেও খাবার দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে তাকে ইনকিউবেটর (Incubator)-এ রাখতে হবে। ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি ভিটামিন এবং ফেনোবারবিটোন (Phenobarbitone)জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ভূমিষ্ঠ হওয়া (Preterm) শিশুর অবস্থা খুব খারাপ হলে শিশুকে এন,আই,সি,ইউ (NICU – Neonatal Intensive Care Unit)-তে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়।

নবজাতকের পরিপূর্ণ যত্নে যা একান্ত জরুরি:

বুকের দুধ পানে:

শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময় মা পিঠ সোজা রেখে বসবেন। শিশুর পেট মায়ের পেটের সঙ্গে লাগানো রাখতে হবে। শিশু বড় হাঁ করে স্তনের বোঁটা নিয়ে নেবে। সিগারেট ধরার ভঙ্গিতে স্তনের বোঁটা শিশুর মুখে গুঁজে দেয়া ভুল।

আবার খেয়াল রাখতে হবে, যেন নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে না যায়। এজন্য প্রতিবার খাবার পরে তাকে কাঁধের উপর শুইয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঢেকুঁর তোলাতে হবে। এতে পেটে গ্যাস জমে থাকলে এটি বেরিয়ে আসবে।

শিশুকে শোয়ানো:

বেশি তুলতুলে নরম বিছানায় নবজাতক শিশুকে শোয়ানো উচিৎ নয়। এতে করে সে উল্টে গিয়ে তার নাক-মুখ চেপে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছুটা শক্ত বিছানা ও দুই পাশে ছোট বালিশ ব্যবহার করুন।

ঘুম থেকে জাগানো: 

শিশুকে জাগাতে তীব্র কোনো বাজনা বাজানো বা শব্দ সৃষ্টি না করা ভালো। তাকে আলতোভাবে চুম্বন-স্পর্শ দিন। গায়ে হালকা করে সুড়সুড়ি দিন। আস্তে আস্তে সে জেগে উঠবে। পিঠে বা শরীরের অন্য অংশে জোরে থাপড় বা ঝাঁকুনি দেওয়া একদমই অনুচিৎ।

শিশুকে নিয়ে খেলার সময়: 

ছোট্ট শিশুকে নিয়ে খেলার সময় ওকে এমনভাবে দুই হাতে ধরে রাখতে হবে, যেন সে হাত থেকে ছিটকে না পড়ে। হাত ছেড়ে শূন্যে খেলা করা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।

শিশুকে শান্ত করানো: 

হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে তার কান্না থামাতে যাওয়া অনুচিৎ। এগুলোর মধ্যে বিপজ্জনক দ্রব্যও থাকতে পারে। বরং তাকে কাঁধে নিন। মায়া-মমতায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিন। দেখবেন শিশুর কান্না থেমে যাবে।

শিশুকে হাসাতে:

অনেকে শিশুকে হাসানোর জন্য তার মুখের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দেন। এটা একদমই নির্বোধের মতো কাজ। বরং তার বয়স অনুযায়ী রং-বেরঙের পুতুল নিয়ে তার সঙ্গে মজা করুন।

শিশুর নাক পরিষ্কার রাখতে: 

নবজাতকের নাক পরিষ্কার করতে গিয়ে কেউ কেউ নিজের অপরিচ্ছন্ন আঙুলের ডগা শিশুর নাসারন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেন। এতে মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে একটা পরিষ্কার কাপড় সুঁচোমুখ করে তাতে কয়েক ফোঁটা লবণমিশ্রিত পান দিয়ে শিশুর নাক পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে ন্যাজেল অ্যাসপিরেটরের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

দেহের উষ্ণতা: 

উষ্ণ ও আরামদায়ক পরিবেশ আপনার শিশুকে সবসময় হাসিখুশি রাখবে। এজন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যেসব দরজা-জানালা দিয়ে বাবুর ঘরে জোরে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে পারে সেগুলো বন্ধ রাখুন। কিন্তু স্বাভাবিক আলো-বাতাস চলাচলের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখুন। একইসাথে শুষ্কতা এবং ত্বক ফেটে যাওয়া এড়াতে পর্যাপ্ত আর্দ্র পরিবেশ বজায় রাখুন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা একান্ত জরুরি:

নবজাতকের কাঁথা, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে তার ব্যবহৃত সবকিছু পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া শীতকালে ফ্লু ও ঠাণ্ডা লাগার বাড়তি ঝুঁকি থাকে। এজন্য শিশুকে খাওয়ানোর আগে, কোলে নেয়ার আগে এমনকি আদর করার সময় সংক্রমণ এড়াতে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। এতে আপনার বাবু ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।

আবার শিশুর ব্যবহৃত কাপড় থেকে বিভিন্ন চর্মরোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। আবার শিশুদের নখ বড় থাকার কারণে নখের আঁচড়ে দেহের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ছিলে যেতে পারে। এজন্য নবজাতকের নখ বড় হলেই কেটে ছোট করে দিতে হবে।

ম্যাসাজিং কিভাবে করবেন?

নবজাতক শিশুকে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে তার শরীরের রক্ত-সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। তেল এবং ময়েসচারাইজার শিশুকে রাখবে নরম এবং প্রাণবন্ত। তবে এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শমত একটি বা দু’টি ওয়েল বেছে নিন।

সতর্কতা:

কোন কারণে শিশু অসুস্থ হয়ে গেলেও মায়ের বুকের দুধ দেয়া বন্ধ করা যাবে না। আবার নবজাতক যাতে কোন অবস্থায় প্রস্রাব-পায়খানা করে তার মধ্যে বেশিক্ষণ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে ডায়াপার পরাতে হবে। তবে ডায়াপার র‍্যাশ থেকে সাবধান হতে হবে। দিনের কিছু সময় ডায়াপার ছাড়া রাখতে হবে। তবে ডায়াপার র‍্যাশ যদি একান্ত হয়েই যায় সেক্ষেত্রে র‍্যাশ দূর করার ক্রিম লাগাতে হবে। পাশাপাশি নবজাতকের নাভি না পরা পর্যন্ত তেল বা পানি যাতে না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা:

সময় অনুযায়ী শিশুকে সবগুলো টিকা দেওয়াতে হবে। এটি শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেক বড় ভূমিকা রাখে এবং বেশ কিছু সংক্রামক অসুখের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। যদি কোনো কারণে একটি ডোজ বাদ যায়, তবে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন এবং সেই অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা নিন।

যেসব কাজ একদমই করা যাবে না:

  • শিশুর জন্মের পর অনেকেই মুখে মধু বা চিনি দিয়ে থাকেন। এটা মোটেই উচিৎ নয়। জন্মের ছয় মাসের মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের দুধের বাইরে কোনো কিছু খাওয়ানো তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
  • বাচ্চার গরম লাগবে ভেবে বাচ্চাকে একদম খোলা রাখা বা শীত লাগবে ভেবে বেশি কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা উভয়ই বর্জনীয়। এক্ষেত্রে বাচ্চাকে সহনীয় পোশাক পরাতে হবে।
  • হলদেটে রঙ বিধায় অনেকে শাল দুধ খাওয়াতে নিরুৎসাহিত করেন। এটা কখনোই করা যাবে না। মা ও শিশু উভয়ের জন্যই এই শাল দুধ পান করানো অতি উত্তম।
  • নবজাতক অবস্থায় শিশুর মুখের সংস্পর্শে এসে আদর করা থেকে একদম বিরত থাকা উচিৎ।
  • বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে নবজাতককের ঘরে প্রবেশ করা যাবে না।
  • ছোট্ট একটি প্রাণ আমাদের সবার জীবনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। সেই আনন্দকে সব সময় ধরে রাখতে হলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে শিশুর একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ। সেইসাথে নিতে হবে পরিপূর্ণ যত্ন। তবেই শিশুর বেড়ে উঠা নিরাপদ হবে।

Source:

http://healthtalkbd.org/newboarn_care
https://bangla.babydestination.com/how-to-take-care-of-newborn-in-summer-in-bengali
https://www.shajgoj.com/new-born-babys-winter-care-12-tips/
https://www.jagonews24.com/amp/10694
https://www.kalerkantho.com/print-edition/doctor-acen/2017/12/10/575526
https://mytonic.com/bn/child-health/tonic/%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A8
https://learningfrommylife.wordpress.com/newborn/
http://m.poriborton.news/children-health/191277

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা | কিভাবে ইমিউন সিস্টম বুস্ট করবেন

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়াবেন?

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বেশি আমাদের সকলেরই আছে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। তখন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি হয়। ইমিউন সিস্টেমে ঘাটতির ফলে আমাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে এবং কায়িক পরিশ্রম করলে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়।

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি?

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো কোষ এবং প্রোটিনের এমন এক আন্তঃজাল যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। মূলত শ্বেত রক্তকণিকা, অস্থিমজ্জা, অ্যান্টিবডি, প্লীহা ইত্যাদির সমন্বয়ে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম গঠিত হয়। শ্বেত রক্তকণিকা বিভিন্ন রকম পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া, ফানজাই ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আবার অ্যান্টিবডিগুলো রোগজীবাণু ও এদের বিষক্রিয়া মোকাবিলা করে। এবং প্লীহা রক্তকে ফিল্টারিং করে । আর অস্থিমজ্জা লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি করে যা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজকে ত্বরান্বিত করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা:

চিকিৎসকদের মতে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে মানুষ সহজেই যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। তাই দেহে যথাযথ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, তার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু আছে যা হজমে সাহায্য করে। পাকস্থলীর এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে গেলে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। শারীরিক পরিশ্রমের সময় আমাদের দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। এতে মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। একই সাথে শরীরের রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীরের সবপ্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে এবং কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদিত হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় কেন:

মানসিক চাপ:

মানসিক চাপগ্রস্ত অবস্থায় কিংবা ভয় পেলে শরীরে ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে দেয়।
তাই এসব পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা বন্ধ করে ইতিবাচক কাজে মনোযোগ দিতে হবে।

ঘুমের ঘাটতি:

অনেকে হয়তো দিনভর সিনেমা দেখে পার করে, রাত জাগে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্ট ঘুমানো জরুরি। পাশাপাশি ঘুম হতে হবে নির্ভেজাল।

পড়ুনঃ অনিদ্রা দূর করার উপায়

ধূমপান:

ফুসফুসের ক্ষতি করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করছে এই বদোভ্যাস। এতে অল্পতেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বিড়ি-সিগারেটে নিকোটিন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা ‘কর্টিসল’ হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। আবার ধূমপানের কারণে রক্তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-এর মাত্রাও কমে। এজন্য ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাস দূর করা খুব জরুরি।

মদ্যপান:

কালেভদ্রেও যদি কেউ মদ্যপান করে তবে সেটাও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি মদ্যপান অন্ত্রের ‘ফ্লোরা’ ও যকৃতের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া যেকোনো মাত্রার ‘অ্যালকোহল’ পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

জ্বর না হওয়া:

প্রয়োজনের সময় জ্বর না হওয়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ। শরীরের নানান রোগের প্রতিরোধের জন্য জ্বর হওয়া প্রয়োজন। জ্বর হলে অধিকাংশ মানুষ শুরুতেই তা কমানোর জন্য ওষুধ খায়। এটা শরীরের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। সংক্রমণ ছাড়া যদি দীর্ঘদিন জ্বর না হয়, তাহলে বুঝতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।

আরো পড়ুনঃ
জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

দুর্বল অন্ত্র:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ৮০ শতাংশ নির্ভর করে অন্ত্রের সুস্থতার উপর। কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি, পেটফাঁপা ইত্যাদির কারণে অন্ত্রের দুর্বলতা দেখা দেয়। এর প্রতিকারের জন্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার।

ভিটামিন ডি কম থাকা:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমে গেলে তা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিৎ। নতুবা নানারকম সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি খাওয়া:

অত্যাধিক পরিমাণে চিনি খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। কারণ সুগার রক্তের শ্বেত কণিকার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অথচ এই রক্ত উপাদান আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা দেয়াল হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম এর বেশি চিনি খাওয়া উচিৎ না। অতিরিক্ত ‘মিউকাস’ বা শ্লেষ্মার কারণেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এক্ষেত্রে বাড়তি চিনি, লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার আমাদের কিছুটা উপকার দিতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ:

প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে প্রাইমারী ইমিউনোডেফিসিয়েন্সী বলে। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য নিচের লক্ষণগুলোকে চিনে রাখা জরুরি-

শিশুদের ক্ষেত্রে:

১. বছরে চার বা তার চেয়ে বেশি বার কানের ইনফেকশন হওয়া।
২. বেশি বেশি সাইনাসের সমস্যা হওয়া।
৩. অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরও যদি কাজ না হয়।
৪. বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে।
৫. শিশুর ওজন এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকভাবে না হওয়া।
৬. মুখের ঘা বা ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ সহজে ভালো না হওয়া।
৭. জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বার অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগের প্রয়োজন হলে।

বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে:

১. অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলেও এক বছরের মধ্যে দুই বা তার চেয়ে বেশি বার সাইনাসের ইনফেকশন হওয়া।
২. বেশি বেশি নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হওয়া।
৩. দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া এবং ওজন কমে যাওয়া।
৪. বার বার ভাইরাসের সংক্রমণ যেমন সর্দিকাশি, হার্পিস ইত্যাদি।
৫. মুখের ঘা, ত্বক বা অন্যান্য স্থানে ছত্রাকের সংক্রমণ সহজে ভালো না হওয়া

তাছাড়া সারাক্ষণই মন মেজাজ খারাপ থাকা, খিটখিটে মেজাজ এবং অল্পতেই মানসিক চাপে পড়ে যাওয়া ইত্যাদিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ। পাশাপাশি সবসময় অসুস্থ থাকা, ক্লান্ত লাগা, ঘুম ঘুম ভাব, কোনো আঘাত ভালো হতে অনেক সময় লাগা, রক্ত শূন্যতা, হতাশা, চোখের নিচে কালো দাগ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। তাই, আপনার বয়স অনুযায়ী কতটুকু স্ট্যামিনা থাকা প্রয়োজন তা জেনে নিন। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তৎপর হোন।

আবার বারবার হাঁচি(ধুলার কারণে অ্যালার্জি), গলা ব্যথা, ত্বকে দানা দানা ওঠা ইত্যাদির মানেও হল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

অনেকে আবার পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনেই অসুস্থ হয়ে যান। এর প্রধান শরীরের তাপমাত্রা কম থাকা। সুস্থ অবস্থায় কোনো ব্যক্তির মুখমন্ডলের তাপমাত্রা ৩৬.৩° সেলসিয়াসের কম হয় না। কারণ সাধারণ ঠাণ্ডার ভাইরাস যেমন- রাইনোভাইরাস ৩৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শক্তি পায়। নিয়মিত শরীরচর্চা শরীরের তাপমাত্রা ও কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া রসুন, আদা, দারুচিনি, এলাচ ইত্যাদি মসলা শরীর গরম রাখতে ভালো কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়:

আমরা অনেক সময় নিজেদের শরীরের অনেক বড় রোগ বা জটিল বিষয় খেয়াল করি না। শুধু একটু সচেতন এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হলে অনেক অঘটন থেকে বাঁচা সম্ভব। পাশাপাশি প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রাকৃতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে এবং রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা জোগায়।
নিচের বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখলে আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবো।

খাদ্যভ্যাস:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। ফলের রসের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফল চিবিয়ে খাওয়া-ই ভালো। এতে পুষ্টি উপাদানের সাথে সাথে ফাইবারও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, ৮ থেকে ১০ গ্লাস। ফাস্টফুড, তেল-চর্বি ও মসলা জাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন।

পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন এবং খনিজ লবণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-ই অধিক কার্যকর।

তাছাড়া ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। জিংক-সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে আদা, রসুন, ডাল, বিন্স, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইদ্যাদি।

আমরা আমাদের খাদ্যতালিকায় মধু যোগ করতে পারি। মধুতে জীবাণু ধ্বংসকারী হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও নাইট্রিক অক্সাইড রয়েছে যা ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারি। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা মধু সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

মানসিক চাপমুক্ত থাকুন:

অতিরিক্ত মানসিক চাপে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এজন্য মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবরগুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো সময় কাটান, বই পড়ুন বা নতুন কিছু শেখায় মন দিন। মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি ভালো উপায়।

শরীরচর্চা:

শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা অপরিহার্য। বিশেষ করে এসময়ে যখন আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং বাচ্চাদের কমপক্ষে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিৎ। ঘরে থেকে আপনি হাঁটাহাটি, সাইক্লিং, ইয়োগা, ওয়েট শিফ্টিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা ইত্যাদি ব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি নফল নামাজ পড়াও আপনার শরীর চর্চার উপায় হতে পারে।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা:

ধূমপান সরাসরি আপনার শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে শ্বাসনালীতে বিভিন্ন রকম ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ধূমপান বাদ দিন ও সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপন করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা:

শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। খাবার পরিমিত খান ও শারীরিকভাবে সচল থাকুন।

আরো পড়ুনঃ
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর সহজ পদ্ধতি
মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর সহজ উপায়
কিভাবে ব্যায়াম ছাড়া ওজন কামাবেন
দ্রুত ওজন বাড়ানোর উপায়
ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

পরিমিত ঘুম:

পরিমাণমতো ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা করে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

আমরা যদি রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে চাই, তবে নিজের ও আশ-পাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার্য জিনিপত্র জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দরজার হাতল, সুইচ, লিফ্টের বাটন জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার রাখুন

যেসব খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

শারীরিক সুস্থতা এবং রোগের আক্রমণে টিকে থাকতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের রক্ষা কবচ। কিছু খাবার আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীর সুস্থ রাখে।

এমন কিছু খাবারের তালিকা এখানে দেয়া হলো-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় হলুদ:

গবেষণায় দেখা যায়, হলুদে প্রচুর পরিমাণে কার্কিউমিন পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যান্টিভাইরাল হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া হলদি চা-ও আমাদের শরীরের জন্য ভারী উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর জুড়ি নেই। এর সাথে আদা, গোলমরিচ, দারচিনি মিশিয়েও খাওয়া যায়।

প্রোটিন বা আমিষসমৃদ্ধ খাবার:

আমিষ আমাদের দেহ গঠনেে এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সহায়ক। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল এগুলো প্রোটিনের প্রধান উৎস। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রতিদিন দেহের ওজনের ০.০০১% প্রোটিনের যোগান দেয়া জরুরি। অর্থাৎ, কারও ওজন যদি ৬৮ কেজি হয়, তবে দৈনিক তাঁর ৬৮ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন দরকার।

খাদ্যতালিকায় ভিটামিন-সি:

আমরা জানি, লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি আছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। মানবদেহের জন্য এটি অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। তাছাড়া ভিটামিন-সি দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। তাছাড়া ভিটামিন-সি শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমলকী, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। এমনকি গোল মরিচে ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় যা চোখের সুরক্ষার জন্য খুব উপকারী।
তবে ভিটামিন-সি আমাদের শরীরে জমা থাকে না। এজন্য প্রতিদিন ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।

ভিটামিন বি১২-যুক্ত খাবার

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও ডিমে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। তবে যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো মেডিসিন গ্রহণ করতে পারেন।

আদা ও রসুন:

আদা প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে। কারো বমির ভাব থাকলে আদা খাওয়ার ফলে তা চলে যায়। এছাড়া এটি দেহের কোলেস্টেরলও হ্রাস করে। তাছাড়া খাবারের ঝাঁজ বাড়াতে আদার তুলনা নেই। আবার, আদা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেরও ভালো উৎস।

রসুনও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি ধমনীগুলোকে শক্ত ও স্থির করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। রসুন থাকে সবার বাসায়ই। কাঁচা রসুন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে, ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে ভালো কাজ করে রসুন। আবার দেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে অধিক উপযোগী রসুন।

পালং শাক:

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। যতটা কম রান্না করা যায় ততই এটি স্বাস্থ্যকর। তবে আমাদের দেহ যাতে সহজে এতে বিদ্যমান ভিটামিন-এ এবং অ্যান্টালিউট্রিয়েন্ট অক্সালিক অ্যাসিড শোষণ করে নিতে পারে এজন্য হালকা রান্না করে নিলে ভালো। পালং শাক খুবই পুষ্টিকর এবং উপাদেয় খাদ্য।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দই:

দই আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। দই ভিটামিন ডি এর দুর্দান্ত উৎস।
দিনে অন্তত ১০০ গ্রাম দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এমনকি COVID-19-এর প্রতিষেধক তৈরিতে দই-এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে।

বাদাম:

বাদামে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। এটি ঠাণ্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। তাছাড়া এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সমুন্নত রাখে।

সূর্যমুখী বীজ: 

সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি -6 এবং ভিটামিন-ই সহ অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।

ভিটামিন ই ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সূর্যমুখীর বীজে এতো বেশি পরিমাণ সিলিনিয়াম রয়েছে যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের সিলেনিয়ামের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম।

গ্রিন টি:

গ্রিন টি-তে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড বিদ্যমান। এই চা অ্যামিনো অ্যাসিড এল-থানাইনিনের একটি ভাল উৎস। আর এল-থ্যানাইন ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনেক কার্যকর। তাছাড়া গ্রিন টি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভারী উপকারী।

পেঁপে:

পেঁপেতে পাপাইন নামক একধরনের হজম এনজাইম রয়েছে যা প্রদাহ উপশম করে। উৎসব-পার্বণে আমাদের ভূড়িভোজ একটু বেশিই হয়ে যায়। এজন্য বিড়ম্বনাও কম হয় না। হজমশক্তি বাড়াতে এবং পেটের গোলযোগ এড়াতেও পেঁপে অনেক কার্যকর।

এছাড়া পেঁপেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেট থাকে, যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এমনকি পেঁপেতে টমেটো বা গাজরের চেয়েও বেশি ভিটামিন এ আছে। তাছাড়া পেঁপের পুষ্টিগুণ চোখের মিউকাস মেমব্রেনকে সবল করতে ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পেঁপেতে বিটা ক্যারোটিন, জিয়াক্সনাথিন ও লুটেইন বিদ্যমান; যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত পেঁপে খেলে সাধারণ রোগবালাই দূরে থাকে। কোলন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি অনেক উপকারি।

মুরগির স্যুপ:

মুরগির স্যুপ খুব উপাদেয় খাদ্য। ঠান্ডার সমস্যা দূরীকরণে এটি ভালো ফল দেয়। বাসায় বানানো চিকেন স্যুপ মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারি। এতে থাকে কারনোসিন নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে মানুষের শরীরকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
তাছাড়া মুরগী ভিটামিন বি-৬ এর অন্যতম প্রধান উৎস; যা শারীরবৃত্তীয় বিক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়ক। এটি মূলত লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে।

মুরগির মাংসে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যান্য আরো অনেক সহায়ক পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

শিম বীজ:

জিঙ্কের ঘাটতির ফলে রক্তে শ্বেতকণিকার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিম ও দুগ্ধজাত পণ্যে জিঙ্কের পরিমাণ বেশি থাকে। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অধিক পরিমাণে জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিৎ। তাছাড়া শিম চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আবার শিম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। শিমে সিলিকনজাতীয় উপাদান থাকে যা হাড় সুগঠিত করে।

এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিম সাহায্য করে। নিয়মিত শিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। তাছাড়া শিমের ফুল রক্ত আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে। শিমের দানায় ভিটামিন বি সিক্স ভালো পরিমাণে থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে। ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শিম মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে ও এলার্জির সমস্যার প্রতিকারক হিসেবে বেশ কার্যকর।

মিষ্টি আলু:

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে। পরে মানুষের শরীরে এসে এটি ভিটামিন এ-তে রূপ নেয়। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এমনকি বার্ধক্য ঠেকাতেও কাজ করে বিটা-ক্যারোটিন।

আমলকী:

আমলকীর সাথে অল্প আদা ও খেজুর বেটে নিন। ভিটামিন সি-তে ভরপুর আমলকীর এই চাটনি শরীরের জন্য ভারি উপকারি।

তরমুজ:

তরমুজে থাকে গ্লুটাথায়োন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার সক্ষমতা বাড়ে।

পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশি করে গাজর, টমেটো, কুমড়ো খান। প্রতিদিন ১ কাপ গাজরের জুস খেলে দারুণ উপকার পাবেন। গাজরের জুস দুধের থেকেও সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর। এবং সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কোমল পানীয় কম খান। এটি শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলে সহজে কোনো রোগ আক্রান্ত করতে পারে না। আসলে প্রতিটি মানুষের শরীর-ই আলাদা। । বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে কার ইমিউনিটি কতটা শক্তিশালী। এজন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লো নাকি কমলো, সেটা জানাও অনেক কঠিন। আপনি রাতারাতি প্রচুর ভিটামিন খেতে আরম্ভ করলেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে না। সামগ্রিকভাবে সুস্থ এবং সবল থাকার চেষ্টা করতে হবে।

Source:
https://www.bbc.com/bengali/amp/news-49151613
https://www.healthline.com/health/food-nutrition/foods-that-boost-the-immune-system
https://food.ndtv.com/bengali/keep-this-turmeric-tea-pre-mix-handy-for-your-daily-dose-of-immunity-booster-2216732?amp=1&akamai-rum=off
https://amp.dw.com/bn/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF/g-53434727
http://www.prothomalo.com/amp/life-style/article/1055981/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A7%9F
https://m.bdnews24.com/amp/bn/detail/lifestyle/1749590
https://www.somoynews.tv/pages/details/208611/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B0-%E0%A7%A7%E0%A7%A6-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A7%9F
https://www.priyo.com/articles/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A7%AB-%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9D%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE
https://mytonic.com/bn/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF/tonic/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%83-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8
https://mytonic.com/bn/%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF/tonic/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য পেয়েছে কোভিড-১৯, যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত । এই ভাইরাসের বিস্তার জনজীবনকে অস্বাভাবিক করে তুলেছ। মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। শ্রমজীবী-পেশাজীবী মানুষকে ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই রোগটির সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্ব মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পুরনো হলেও, এই মরণঘাতী ভাইরাসের সাথে কয়েকদিন আগেও মানুষের পরিচয় ছিলো না। ২০০২ সালে চীনে সংক্রমিত হওয়া সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসে মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সংক্রমিত হয়েছিল আরো হাজার হাজার মানুষ। এটিও ছিল এক প্রকারের করোনাভাইরাস।

করোনা ভাইরাস কি?

এটি মূলত ভাইরাসের একটি শ্রেণি, যা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। হোমো স্যাপিয়েন্সের মাঝে এদের সংক্রমণস্থল শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে। অনেক সময় এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, যা সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই। আবার অনেকক্ষেত্রে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা যায়।অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন, মুরগির মধ্যে এটি উর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।

মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

কিভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল এই ভাইরাস?

মাঝে মাঝে জীব-জন্তু থেকে নতুন কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বাধে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, করোনার উৎস কোনো প্রাণী। এই ভাইরাসে মানুষের প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে একটি মাছের আড়ৎ-এ। শহরের ঐ বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ ইত্যাদি । এসব প্রাণী এই করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে বলে মনে করা হয়।

পরীক্ষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের বাদুড়ের মাঝে সংক্রমণ ঘটায় এমন ভাইরাসের সাথে এর ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। তাদের ধারণা, ভাইরাসটি প্রথমে বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণীতে প্রবেশ করেছে। এবং এরপর কোনোভাবে সেটা মানুষের শরীরে পৌঁছে গেছে।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণঃ

এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন:

  • অবসাদ
  • মাথা ব্যাথা
  • গলা ব্যাথা
  • অঙ্গ বিকল হওয়া
  • পেটের ব্যাথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • শুষ্ক কাশি
  • বমি হওয়া
  • জ্বর

এটি মানুষের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায় এবং আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে যাওয়া কারণে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডার মতো এই ভাইরাস হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত হলে অনেকসময় শুষ্ক কাশির সঙ্গে জ্বরও থাকে।

জ্বর ও কাশি’র মোটামুটি ৭ দিনের মাথায় শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ডব্লিউএইচও-এর মতে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সবগুলো লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্তও সময় লাগতে পারে। এটাকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।

রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা ( ডায়াবেটিস, অ্যাজমা,উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদি) রয়েছে তারা মারাত্মকভাবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘ্রাণ না পাওয়াও করোনায় সংক্রমণের লক্ষণ

ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, স্বাদ হারানো বা ঘ্রাণ না পাওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই গবেষণাটি চালিয়েছে কিংস কলেজ লন্ডন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এমন চার লাখের বেশি মানুষ এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।

তবে ফুসফুসের অন্যান্য জটিলতার ক্ষেত্রেও স্বাদহীনতা বা ঘ্রাণ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এসব লক্ষণ প্রকাশিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

এই ভাইরাসের লক্ষণ কি পরিবর্তনশীল হতে পারে?

হ্যাঁ, আক্রান্ত ব্যক্তি যখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন, তখন হঠাৎ করে তার এই লক্ষণগুলো আর প্রকাশ পায় না। তিনি সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু আবারও এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে রোগীর শরীরে। কয়েকদিন বা সপ্তাহধরে জ্বর, ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের মাত্রা পরিবর্তন হতে থাকে।

আপনার কি লক্ষণ ছাড়াই কোভিড -১৯ থাকতে পারে?

কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ সাধারণত ২-১৪ দিনের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। তবে অনেক সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না এবং তারা অসুস্থও বোধ করে না।

আক্রান্ত ব্যক্তির হাতে তৈরি খাবার থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ

ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না না করেন তবে সেই খাবার থেকে আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। আমাদের কাশির সঙ্গে যে সূক্ষ্ম থুতুকণাগুলো বেরিয়ে আসে এগুলোকে বলা হয় ‘ড্রপলেট’। হাঁচি বা কাশির সঙ্গে এই ভাইরাস খাবার বা আমাদের ব্যবহার্য জিনিসে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা জরুরি। আর যারা খাবার তৈরি করছেন, যে কোন খাদ্যবস্তু স্পর্শ করার আগে তার উচিৎ ভালভাবে হাত ধুয়ে নেয়া।

শিশুরা কি ঝুঁকিতে?

যে কোন বয়সের মানুষই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে বিশেষ করে অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। আবার বস্তিতে থাকা দরিদ্র শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ভাইরাসের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে সহজেই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরের মতে,
“এই করোনাভাইরাসটি ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের উপর এই ভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে আমরা আশঙ্কাগ্রস্ত । কিন্তু নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সময় আমাদের সাথে নেই।”

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়ীত্বকাল

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসকে কতদিন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারবে- এই নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে আমাদের অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। আর যেহেতু রোগটি নতুন,তাই এই নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী তথ্যের অভাব রয়েছে। এজন্য আশ-পাশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অন্যদের মাঝে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া আক্রান্ত ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব।

লক্ষণ প্রকাশ পেলে কি করবেন?

নিজের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে প্রথমে নিজেকে সবার থেকে আলাদা রাখতে হবে। এর পর নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর বা সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁদের দেয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে নিচের হটলাইন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা যেতে পারে:
৩৩৩
১৬২৬৩
১৬৬৩৩
১০৬৫৫
০১৯৩৭০০০০১১
০১৯৩৭১১০০১১
০১৯২৭৭১১৭৮৪
০১৯২৭৭১১৭৮৫

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায়:

সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে নিম্নোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে বা অ্যালকোহলযু্ক্ত হাত-ধোয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

কাশি বা হাঁচি দেবার সময় মুখ এবং নাক কনুই দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন।

ঠান্ডা লেগেছে বা জ্বরের লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া।

করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়াও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিদিন বাড়ি-ঘর ভালো মতো পরিষ্কার করাও জরুরি।

আসুন জেনে নিই, যে পাঁচটি স্বাস্থ্য উপকরণ আমাদের সবার ঘরে থাকা জরুরি-

১. জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাসা-বাড়িতে জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ রাখতে হবে । খাবার রান্না করার আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে-পরে, প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, এবং বাইরে থেকে বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন কাজে আমাদের জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।

হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি:

ধাপ ১: প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো;
ধাপ ২: ভেজা হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাবান ব্যবহার করা;
ধাপ ৩: হাতের পেছনের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যের অংশ এবং নখের ভিতরের অংশ অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধোয়া;
ধাপ ৪: প্রবাহমান পানিতে ভালোভাবে কচলে হাত ধোয়া;
ধাপ ৫: একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার করেন এমন তোয়ালে দিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে ফেলা।

বার বার হাত ধুয়ে নিবেন। বিশেষ করে, নাক পরিস্কার করার পর, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পরেও। আর যদি সাবান বা পানি বা থাকে, তবে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

২. জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে

রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখতে জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে ব্যবহার করুন। রান্নাঘর ছাড়াও বাথরুম, ডাইনিং রুম, লিভিং রুম এবং বেডরুমও জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করুন ।

৩. রাবার গ্লাভস

টয়লেট বা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করা এবং হাড়ি-পাতিল ধোয়ার মতো গৃহস্থালি কাজেও রাবার গ্লাভস ব্যবহার করুন।

৪. বক্সড টিস্যু

বাড়ির প্রতিটি ঘরে টিস্যু রাখুন। যাতে কাশি বা হাঁচির সময় হাত বাড়ালেই টিস্যু পাওয়া যায়।

৫. ভেজা টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং পকেট টিস্যু

স্যানিটাইজার বা ভেজা টিস্যু ঘরে বা ঘরের বাইরেও ব্যবহার করা সম্ভব। যখন হাতের কাছে সাবান বা পানি পাওয়া যাবে না, তখন আপনি সহজেই এসব ব্যবহার করে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন। আমাদের সকলেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

আমাদের কি মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিৎ?

যদি কারো শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (কাশি বা হাঁচি) থাকে, তবে অন্যের সুরক্ষার জন্য মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি । তবে আপনার যদি ভাইরাসের কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই।

আর কেউ যদি একান্তই মাস্ক ব্যবহার করেন, তবে ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। এবং ব্যবহার শেষে মাস্ক নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে।

তবে শুধু মাস্কের ব্যবহার এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট নয়। এর সাথে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি ও কাশি ঢেকে রাখা, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিৎ ।

যদি আপনার সন্তানের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে কি করা উচিত?

যদি কারো কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। এসময় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হাত ধোয়া এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। যদি অন্য কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ থাকে তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী সন্তানকে ভ্যাকসিন দিন। এছাড়াও, অন্যদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য জনসমাগমস্থলে (কর্মক্ষেত্র, বিদ্যালয়, গণপরিবহন) যাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। এর পাশাপাশি জীবাণুনাশক ক্লিনার ব্যবহার করে দরজার নক, ফোন, ট্যাবলেট এবং ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ঘন ঘন পরিষ্কার করুন। এসময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিন। আর এক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় আক্রান্ত ব্যক্তির আলাদা বাথরুম ব্যবহার করা উচিৎ ।

 

ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বের কার্যকারিতা

আমাদের শুনে হয়তো খারাপ লাগছে যে, এতগুলো ক্রীড়া ইভেন্ট, উৎসব এবং অন্যান্য জমায়েত বাতিল করা হচ্ছে। মূলত এর পেছনে জনস্বাস্থ্য রক্ষা অন্যতম উদ্দেশ্য। এভাবে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা একটি অভিনব কৌশল। অফিসে না গিয়ে বাসায় থেকে কাজ করা এবং স্কুল বন্ধ করে বা অনলাইনে ক্লাস স্যুইচ করে সামাজিক দূরত্ব তৈরি অত্যন্ত কার্যকরী।তবে, অনেকের মতে এটা কার্যকরী নয় বরং তথ্য বিভ্রাট।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভেষজ চা:

আমরা অনেকেই এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে সকাল শুরু করি। কিছু লোক কাজের পরে সন্ধ্যায় সতেজ চা পান উপভোগ করেন। আমরা যদি প্রতিদিন চা গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলি, তবে এটি ভাইরাল সংক্রমণের জন্য আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলবে। চলুন কিছু ইমিউন বুস্টার ভেষজ চা সম্পর্কে জেনে নিই।

গ্রিন টি(Green Tea): 

আমরা সকাল বেলা গ্রিন টি খেতে পারি। এটি ক্যাফেইনের দুর্দান্ত উৎস; যা আমাদের দেহে ইনস্ট্যান্ট শক্তি সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া, গ্রিন টি-তে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে, যেমন- পটাসিয়াম (K), আয়রন (Fe), ক্যালসিয়াম (Ca), প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।

এছাড়াও শুকনো গ্রিন টি পাতায় কিছু সক্রিয় পদার্থ রয়েছে, যেমন- ফ্যাটি অ্যাসিড, তেল, ফ্ল্যাভানলস্, ক্লোরোফিল এবং আরও অনেক ভেষজ উপাদান। এসব পদার্থের মাধ্যমে গ্রিন টি আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-এনজাইমেটিক বিক্রিয়া করে । এইভাবে গ্রিন টি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

গ্রিন টি কীভাবে প্রস্তুত করবেন:

আধা লিটার পানি প্রায় ১০ মিনিটের মতো সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ পানিতে ১টা টি-ব্যাগ বা ১ চামচ চা-পাতা দিন এবং এভাবে আরো ৩-৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপরে চা ব্যাগটি সরিয়ে ফেলুন বা চা ছাড়িয়ে দিন। আরো স্বাদের জন্য আপনি গ্রিন টিতে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১চামচ মধু যোগ করতে পারেন। এভাবে আপনি খুব সহজে গ্রিন টি তৈরি করে নিতে পারেন।

লেবু চা: 

আপনি যখন গলা ব্যথা, অবিরাম মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, অথবা অন্য কোনো ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা অনুভব করেন, এ অবস্থায় আপনি বেছে নিতে পারেন এসবের ঘরোয়া প্রতিকার লেবু চা। এছাড়াও লেবু চা প্রদাহ হ্রাস, রক্তচাপ হ্রাস, রক্তনালীগুলির কার্যকারিতা বাড়ানো, হজমে সাহায্য করা-সহ অসংখ্য সুবিধা দিতে পারে। এমনকি লেবু সাধারণ সর্দি, ফ্লু, H1N1 (সোয়াইন) ফ্লু, সাইনাস প্রদাহ, টিনিটাস, পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, কিডনিতে পাথর ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে চিকিৎসকরা COVID19 এর চিকিৎসার জন্য ভিটামিন সি ডোজ প্রয়োগ করেছেন। কারণ এখনও পর্যন্ত করোনার অনুমোদিত কোনো ভ্যাকসিন নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, COVID19 এবং অন্যান্য সাধারণ ধরণের ভাইরাল সংক্রমণ রোধে প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া অত্যন্ত উপকারি। লেবু ভিটামিন সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। তাই লেবু চা আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অংশ হতে পারে।

লেবু চায়ের প্রস্তুত প্রণালী:

প্রথমে আধা লিটার পানি ১০ মিনিটের জন্য সিদ্ধ করুন। সাথে দারুচিনি, গোল মরিচ, লবঙ্গ, কালোজিরা, তেজপাতা, এলাচ পরিমাণমত যোগ করুন। তারপর ১ চা চামচ চা-পাতা যোগ করুন। চা পাতা কয়েক মিনিটের জন্য জ্বাল দিন। চায়ের স্বাভাবিক রং হওয়ার পর ২ চামচ লেবুর রস যোগ করুন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য, আপনি আপনার লেবু-চাতে ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন।

আদা চা: 

হাঁপানি, সর্দি, কাশি, বমি বমি ভাব, বাত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি, ভ্রমণ অসুস্থতা, হতাশা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময়ের জন্য আদা মূল বা গুঁড়ো অত্যন্ত কার্যকর সমাধান। আদার ব্যবহার ভাইরাস সংক্রমণকেও প্রতিরোধ করে। আদার ব্যবহার আপনার শরীরের সঞ্চিত টক্সিনগুলোকে ভেঙে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আদা অত্যন্ত উপকারি।

আদা প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আপনার দেহ কোষের ডিএনএ কাঠামোর ক্ষতি প্রতিরোধ করে। COVID19 এর বিরুদ্ধে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্ত করতে, আপনি আপনার ডায়েট পরিকল্পনায় আদা চা যুক্ত করতে পারেন।

আদা চা কীভাবে প্রস্তুত করবেন:

এক চা চামচ আধা গুঁড়া বা টাটকা আদা ১/২ লিটার পানিতে যোগ করুন এবং এগুলো ১০-১৫ মিনিট ধরে সিদ্ধ করতে থাকুন। এরপর ১ চা চামচ চা-পাতা যুক্ত করুন। ২-১ মিনিট পর চা চুলো থেকে নামিয়ে ফেলুন । পানীয়টি স্বাস্থ্যকর করতে আপনি ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন।

এছাড়া আমরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালোজিরা ও রসুনের ভর্তা, অথবা সরিষা ভর্তা যোগ করতে পারি। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ থাকে। পাশাপাশি এসব খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরের pH লেভেলে ভারসাম্য তৈরি হয়। তাছাড়া এসব মুখরোচক খাবার আমাদের এনার্জির ঘাটতি দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

করোনা ভাইরাসের ঔষধ:

কবে এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে? এখন এই প্রশ্ন সবারই।
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দুরন্ত গতিতে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে ২০টিরও বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। তবে গবেষকরা এ বছরের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেও এটিকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে হার্ড ইমিউনিটি পলিসির দিকে ঝুঁকছে।

ভ্যাকসিন বা টিকা:

গোটা বিশ্বে গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা ভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু হয়ে গেছে৷ তবে এগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

পাশাপাশি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট-এর নেতৃত্বে একটি প্রি-ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট হয়। অক্সফোর্ডের গবেষক দলটির দাবি, তাদের উদ্ভাবিত টিকা একবার নিলেই শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে। পরীক্ষামূলক এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনসিওভি-১৯’। সফল পরীক্ষা শেষে চলতি বছরেই এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

আবার, প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাসের (2019-nCoV) টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছেন রাশিয়া ও চীনের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে চীন করোনা ভাইরাসের জেনোম রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা আশা করছেন, শিগগিরই ভাইরাসটির প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।

বিভিন্ন দেশে ট্রায়াল দেয়া ঔষধ সমূহ:

যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনার চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’ ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের প্রতিরোধে এটা অনেক কার্যকর ছিল। তাছাড়া ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনে এন্টিভাইরাল থাকায় চিকিৎসকরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটি সেবনেরও পরামর্শ দিচ্ছেন।

আবার চীনে করোনা রোগীর চিকিৎসায় অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি ইন্টারফেরন আলফা-টুবিও প্রেসক্রাইভ করা হচ্ছে। এ থেকেও আশাপ্রদ ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া যুক্তরাজ্যের ‘রিকভারি ট্রায়ালে’ পরীক্ষা করা হচ্ছে ডেক্সামেথাসন নামের একটি ঔষধের। এটি এক ধরণের স্টরয়েড যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

তাছাড়া ‘জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.- তৈরি ফ্যাভিপিরাভির ‘অ্যাভিগান (Avigan)’ অ্যান্টভাইরাল ওষুধ হিসেবে অনেক কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় এটি তৈরি হয়েছিল। চীনের উহানে কভিড-১৯-এ ব্যাপক প্রাণহানির পর ‘অ্যাভিগান’ ভাইরাসের প্রতিরোধে অনেক সুফল দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, ফ্লুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ওসেলটামিভির নামে একটি ওষুধ। এবং এইচআইভি-র চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের নাম লোপিনাভির এবং রিটোনাভির। ব্যাংককের রাজাভিথি হাসপাতালের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন, এসব ওষুধের প্রয়োগে করোনা রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে। তাঁরা এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

হার্ড ইমিউনিটি কি? 

যখন কোনো এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে একটি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক দেয়া হয়, তখন ঐ এলাকায় রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা আর থাকে না। কারণ ঐ অবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার মতো আর কোনো মানুষই থাকে না।

কিন্তু করোনাভাইরাসের তো এখনো কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি।

হার্ড ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করে?

এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, যারা একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে এক ধরনের শক্তিশালী ইমিউনিটি তৈরি হয়। এভাবে বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকলে এক সময় বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়, যাতে করে রোগটির সংক্রমণ থেমে যায়।

তাই সংক্রমণের শুরুতে এই হার্ড ইমিউনিটির ভরসাতেই ছিলো সুইডেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রাজিল, ইতালির মতো দেশ। এজন্য তারা অন্যান্য দেশের মতো লকডাউন সিস্টেমে যায় নি। এর নেপথ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখাও উদ্দেশ্য ছিল। তবে এসব দেশে মৃত্যুহার এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, বাধ্য হয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য, ইতালি হার্ড ইমিউনিটি ফর্মূলা থেকে সরে এসেছে। কিন্তু সুইডেন তাদের নীতিতে এখনও অটল। তারা তাদের বিপণী বিতান, পরিবহন, মানুষের অবাধ চলাচল চালু রেখেছে। সেই দেশের সরকারের দাবি রাজধানী স্টকহোমে এরই মধ্যে প্রতিটি নাগরিক হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে।

দীর্ঘ দিনের লকডাউনের পর বাংলাদেশ সরকার এখন আস্তে আস্তে হার্ড ইমিউনিটির দিকেই হাঁটছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি হার্ড ইমিউনিটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসব মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার সক্ষমতা সরকারের নেই। এতে ডেথ রেট ক্রমশ বাড়তে পারে। তাই, হার্ড ইমিউনিটি পলিসি প্রয়োগে একটা বড় আশঙ্কা থেকেই যায়।

 

হাদিসের আলোকে করোনা ভাইরাস(মহামারী )থেকে মুক্তির উপায়:

মহামারির সময়ে সতর্কতা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১০৬৫)

তাই আমাদের উচিৎ, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে; যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।

এছাড়া নবিজি (স.) মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়তে বলেছেন- اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ (আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি,ওয়া মিন্ সাইয়ি-ইল আসক্কম)। অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত রোগ, পাগলামি, কুষ্ঠ রোগ এবং জানা-অজানা সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।

সর্বোপরি করোনা প্রতিরোধে আমাদের যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। আর সাথে সাথে মহান রব্বুল আ’লামিনের কাছে এই ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি দু’আ করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমরা এই মহমারী থেকে রক্ষা পাবো ইনশা’আল্লাহ।

Source:

https://www.bbc.com/bengali/news-51257048
https://www.jagonews24.com/amp/555631
https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public
https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/prevent-getting-sick/prevention.html
https://www.webmd.com/lung/coronavirus
https://www.health.harvard.edu/diseases-and-conditions/preventing-the-spread-of-the-coronavirus
https://www.wvi.org/publications/infographic/bangladesh/karaonaa-bhaairaasa-paratairaodhae-abhaibhaabakaera-bhauumaikaa
https://www.unicef.org/bangladesh/%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B9/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1-%E0%A7%A7%E0%A7%AF
https://m.banglanews24.com/cat/news/bd/767570.details
https://amp.dw.com/bn/%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%93%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%A7-%E0%A6%A4%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE/a-52869385
https://www.ittefaq.com.bd/covid19-update/146909/%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE-%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%8B%E0%A6%97%C2%A0
https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/60503

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপার টেনশন আমাদের কাছে খুবই পরিচিত এক রোগ। এই রোগ সাধারণত কয়েক বছরের চেষ্টায় আমাদের দেহে বাসা বাঁধে। অধিকাংশ মানুষ এই রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন না। ফলে নীরবে আমাদের দেহে উচ্চ রক্তচাপের বিস্তার ঘটে।

আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই রোগের কোনো পূর্ব লক্ষণ প্রকাশ পায় না৷ কিন্তু এই রোগের ফলে রক্তনালী, চোখ, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপ আসলে কী

আমাদের দেহের রক্তচাপ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। রক্তনালীর মধ্য দিয়ে কী পরিমাণ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে এবং হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করার সময় কতটুকু বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সেটাই মূলত রক্তচাপ।

ধমনী যদি সরু হয়ে যায় তাহলে রক্ত চলাচলে বাধা প্রদান করে। পাশাপাশি ধমনী সরু হয়ে আসার ফলে রক্তনালীতে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায়৷ যদি দীর্ঘ সময় ধরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে শরীরে আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হৃদরোগ হয়ে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ যদি শুরুতেই ধরা পড়ে তাহলে খুব সহজেই একে মোকাবেলা করা সম্ভব। তাই আমাদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

যদি কোনো কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায় তাহলে টানা এক থেকে দুই সপ্তাহ রক্তচাপ পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। যত তাড়াতাড়ি এই রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন তত দ্রুত এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ এক ধরনের নীরব ঘাতক। অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কখনো কখনো এই রোগের সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক বছর কিংবা এক দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়। আবার এই রোগের এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে যা অন্য রোগের সাথে সম্পর্কিত। ফলে সেগুলো থেকে আলাদাভাবে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ চিহ্নিত করা যায় না। তবে এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করার আগে যেসব লক্ষণ পায়:

  • প্রচণ্ড মাথাব্যথা
  • নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
  • নাক দিয়ে রক্তপড়া
  • অনিদ্রা
  • মাথা ঘোরা
  • বুকে ব্যথা হওয়া
  • দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন
  • মূত্রের সাথে রক্তপড়া

উপরের লক্ষণগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। হতে পারে এই লক্ষণ অন্য কোনো রোগের। তবে এক লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর আরেকটি লক্ষণের অপেক্ষায় বসে থাকা উচিত নয়।

উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে মনে হয় তাহলে কিছুদিন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। পরিবারের অন্য সদস্যদের যদি রক্তচাপ থাকে, বিশেষ করে বাবা মায়ের থাকলে সন্তানেরও হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ

উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক. প্রধান উচ্চ রক্তচাপ এবং দুই. অপ্রধান উচ্চ রক্তচাপ। উভয় প্রকার উচ্চ রক্তচাপের ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে।

প্রধান বা প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ

এ উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় প্রয়োজনীয় হাইপারটেনশন। এই ধরনের উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের শরীরে সৃষ্টি হয়৷ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের দেহেই এই ধরনের হাইপারটেনশন রয়েছে।

গবেষকরা এখনো রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং প্রাইমারি উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সুস্পষ্ট কোনো কারণ আবিষ্কার করতে পারেননি। তবে এর পেছনে সম্ভাব্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হয়ে থাকে। তবে সেগুলো একেবারে সুনিশ্চিত প্রাইমারি হাইপারটেনশনের কারণ নয়।

  • জিন: অনেকের জিনগত কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়। পিতামাতার কাছে থেকে পাওয়া জিন থেকে অনেকের এই রোগ হয়।
  • শারীরিক পরিবর্তন: আমাদের দেহের কোনো একটি অংশ যদি পরিবর্তিত হয়, তাহলে সেটা আমাদের দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়। প্রাইমারি হাইপারটেনশনও এমন কোনো শারীরিক পরিবর্তনের ফলে হয়ে থাকতে পারে।
  • পরিবেশ: মাত্রাতিরিক্ত কাজ, অনিষ্টকর জীবনযাপন, শারীরিক ব্যায়ামের ঘাটতি এবং বাজে ডায়েটের কারণে হাইপারটেনশন হতে পারে। বিশেষ করে খারাপ জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে আমাদের দেহের ওজন বৃদ্ধি পায়। আর অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন

সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন খুবই দ্রুত ঘটে এবং প্রাইমারি হাইপারটেনশনের চেয়ে তা খুবই বিপদজনক। বিভিন্ন কারণে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন হতে পারে। উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে:

  • কিডনির সমস্যা
  • অবসট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
  • হৃদরোগের সমস্যা
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • মাদক গ্রহণ
  • মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান
  • মূত্রগ্রন্থির সমস্যা
  • এন্ডোক্রাইন টিউমার

উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় পদ্ধতি

উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় করা খুবই সহজ। রক্তচাপ পরীক্ষার মাধ্যমে অতি সহজেই এই রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে একবার বা দুইবার রক্তচাপ মেপে রক্তচাপের সমস্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।

যদি স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তচাপ বেশি হয় তাহলে টানা এক সপ্তাহ তা মেপে দেখতে হবে। যদি কোনো উন্নতি না হয় তাহলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকরা সাধারণত যেসব পরীক্ষা করতে দিয়ে থাকেন:

  • মূত্র পরীক্ষা
  • কোলেস্টেরল স্ক্রিনিং
  • রক্ত পরীক্ষা
  • ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইকেজি/ইসিজি)
  • হৃদপিণ্ড ও কিডনির
  • আল্ট্রাসোনোগ্রাফি

বিভিন্ন প্রকারের ব্লাড প্রেসার রিডিং

রক্তচাপের বিভিন্ন পাঠ থেকে উচ্চ রক্তচাপের ধরন সম্পর্কে খুব সহজেই ধারণা পাওয়া সম্ভব। রক্তচাপের পাঠ মূলত দুইটি সূচকে প্রকাশ করা হয়। উচ্চ সূচককে বলা সিস্টোলিক প্রেসার। আর নিম্নের সূচককে বলা হয় ডায়াস্টোলিক। মূলত ব্লাড প্রেসারের পাঠকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়।

স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ: রক্তচাপ যদি ১২০/৮০ হয় তাকে স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ বলে।

উচ্চ রক্তচাপ: সিস্টোলিক পাঠ যদি ১২০-১২৯ এবং ডায়াস্টোলিক পাঠ যদি ৮০ এর কম হয় তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। তবে এ ধরনের রক্তচাপের জন্য চিকিৎসকরা কোনো ঔষধ প্রদান করেন না। এক্ষেত্রে তারা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার কথা বলে থাকেন।

হাইপারটেনশন স্টেজ ওয়ান: সিস্টোলিক পাঠ ১৩০-১৩৯ এবং ডায়াস্টোলিক পাঠ ৮০-৮৯ হয় তাকে স্টেজ ওয়ান হাইপারটেনশন বলা হয়।

হাইপারটেনশন স্টেজ টু: সিস্টোলিক পাঠ ১৪০ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক পাঠ ৯০ বা তার বেশি হলে তাকে হাইপারটেনশন স্টেজ টু বলা হয়।

হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস: সিস্টোলিক পাঠ ১৮০ এর বেশি এবং ডায়াস্টোলিক পাঠ ১২০ এর বেশি হলে তাকে হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস বলা হয়। এই মাত্রার রক্তচাপের ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যদি রোগীর মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা এবং নিঃশ্বাসে হয় তাহলে তাকে দ্রুতে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা

বিভিন্ন সূচকের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে রোগীর কোন ধরনের হাইপার টেনশন রয়েছে এবং তার পেছনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসকরা সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে থাকেন।

যদি কোনো রোগী প্রাইমারি হাইপারটেনশন থাকে তাহলে চিকিৎসকরা তাকে লাইফস্টাইল পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাতে যদি কোনো কাজ না হয় তখন চিকিৎসকরা ঔষধ দিয়ে থাকেন।

অন্যদিকে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের চিকিৎসা হিসেবে শুরু থেকেই নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ দেওয়া হয়। ঔষধ খাওয়ার পর রক্তচাপের গতিবিধি দেখে চিকিৎসকরা ঔষধ পরিবর্তন কিংবা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ

উচ্চ রক্তচাপের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে। তবে আগে নিশ্চিত হতে হবে কোন ঔষধ রোগীর দেহের সাথে কার্যকর হচ্ছে। সেই অনুযায়ী

চিকিৎসকরা ঔষধ নির্ধারণ করে থাকেন৷ এই রোগের জন্যে চিকিৎসকরা সাধারণত যে সকল ঔষধ প্রদান করে থাকেন:

বেটা-ব্লকার (Beta-blockers): বেটা-ব্লকার হার্টবিট ধীর করে দেয় এবং হার্টের চাপ কমায়। ফলে প্রতিবার হার্টবিট করার সময় আগের চেয়ে কম রক্ত পাম্প করে। ফলে রক্তচাপ কমে যায়। একই সাথে এই ঔষধ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এমন হরমোনের তৈরির গতিকে হ্রাস করে দেয়।

ডাই-ইউরেটিকস (Diuretics): শরীরের উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম এবং অতিরিক্ত তরল রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। ডাই-ইউরেটিকস নামের এক ধরনের ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনি মাধ্যমে বের হয়ে যায়।। সোডিয়াম বের হয়ে যাওয়ার পর অতিরিক্ত পানি মূত্র হিসেবে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যার ফলে রক্তচাপ কমে যায়।

এসিই ইনহিবিটর্স (ACE inhibitors): অ্যানজিওটেনসিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আমাদের রক্তনালী ও ধমনীকে শক্ত ও সরু করে দেয়। ফলে এসিই (অ্যানজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম) ইনহিবিটর্স দেহে অ্যানজিওটেনসিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তনালী শিথিল থাকে এবং রক্তচাপ কমে যায়।

অ্যানজিওটেনসিন টু রিসেপটর ব্লকার (Angiotensin II receptor blockers [ARBs]): এসিই ইনহিবিটর্স অ্যানজিওটেনসিনে উৎপান কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে এআরবি অ্যানজিওটেনসিনকে তার রিসেপটরদের সাথে বন্ধন সৃষ্টিতে বাধা দেয়।

ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার (Calcium channel blockers): এই ঔষধ হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরে ক্যালসিয়ামের প্রবেশে বাধা প্রদান করে। ফলে হৃদযন্ত্র কম চাপে হার্টবিট করে। এতে করে রক্তচাপ কমে যায়। এই ঔষধ রক্তনালীকে কিছুটা শিথিল করতে সাহায্য করে।

আলফা-২ অ্যাগোনিস্ট (Alpha-2 agonists): এই ঔষধ স্নায়ু তাড়না পরিবর্তন করে দেয়। যা সাধারণত পূর্বে রক্তনালিকে শক্ত করে দেয়। এই ঔষধ নেওয়ার পর রক্তনালি শান্ত থাকে এবং রক্তচাপ কমে যায়।

উচ্চ রক্তচাপের ঘরোয়া চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা সুস্থ জীবনচর্চা। অর্থাৎ সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চলা। তবে এর পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা

খাবারের তালিকায় এমন সব খাবার রাখতে হবে যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এতে করে হৃদপিণ্ড ভালো থাকার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই সাথে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এজন্য প্রচুর পরিমাণ ফল, শাকসবজি, শস্যদানা এবং মাছ খেতে হবে।

দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই ওজন কমাতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও কায়িক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কায়িক পরিশ্রম বৃদ্ধি

দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কায়িক পরিশ্রম আবশ্যক। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস দুশ্চিন্তা কমানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। একই সাথে হৃদরোগকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। অর্থাৎ সপ্তাহের পাঁচদিন গড়ে আধা ঘণ্টা। তবে এর পরিমাণ যত বৃদ্ধি পাবে রক্তচাপ তত বেশি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

মানসিক চাপের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে যেকোনো মূল্যে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাশাপাশি ধ্যান, দীর্ঘ নিঃশ্বাস, ম্যাসেজ, পেশি শিথিলকরণ এবং যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক অবসাদ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর ধূমপানের অভ্যাস থাকলে অবশ্যই তা পরিহার করতে হবে। কারণ তামাক দেহের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তনালীকে শক্ত করে। পাশাপাশি মদপানের অভ্যাস থাকলে সেটাও পরিহার করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডায়েট

রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করার সহজ পন্থা হলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট৷ তার জন্য প্রয়োজন আহারে সঠিক খাবার বেছে নেওয়া। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডায়েট যেমন হওয়া উচিত:

মাংস কম, সবজি বেশি

শাকসবজি নির্ভর ডায়েট শরীর ফাইবার বৃদ্ধি করে সোডিয়াম এবং ক্ষতিকর আনস্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ কমায়। মাংসের পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, শস্যদানা ও সবুজ লতাপাতা খেতে হবে। প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের জন্য লাল মাংসের পরিবর্তে মাছ, পোলট্রি ও টফু খেতে হবে।

সোডিয়াম খাওয়া কমাতে হবে

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে যারা প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করেন তারা বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ডায়েটে সোডিয়ামের পরিমাণ কমানোর জন্য খাবার সতেজ থাকা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া উচিত। রেস্টুরেন্ট এবং প্যাকেটজাত খাবার পরিহার করা উত্তম।

মিষ্টি পরিহার

চিনি জাতীয় খাবার এবং বেভারেজে পুষ্টিকর কোনো খাদ্য উপাদান নেই। সুস্থ থাকতে হলে এসব খাবার পরিহার করতে হবে। যারা মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন তারা সতেজ ফলমূল অথবা সামান্য পরিমাণে চিনিছাড়া ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ডার্ক চকোলেট খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে।

গর্ভবতী নারীদের করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও গর্ভবতী নারীরা সুস্থ সবল বাচ্চা জন্মদান করতে পারেন। তবে বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় তাকে অবশ্যই নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে। গর্ভবতী নারীদের রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তাদের কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর ফলে অনেকের বাচ্চার ওজন কম হয় অথবা অকালে বাচ্চা প্রসব করেন।

অনেক নারীর গর্ভবতী থাকার সময় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন। এতে উচ্চ রক্তচাপ জনিত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। গর্ভবতী অবস্থায় এই রোগ হলে পরবর্তীতে তা বৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ

উচ্চ রক্তচাপকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়৷ একে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে চাইলে এই রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে তার জন্য প্রয়োজন বিশেষ কিছু পদক্ষেপ। যেমন:

  • স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা
  • মাংস পরিহার করে প্রচুর পরিমাণ
  • মাছ, শাকসবজি ও সালাদ খাওয়া
  • চিনি পরিহার করা
  • ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা
  • নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা।

রক্তচাপ নিয়ে যত ভুল ধারণা

রক্তচাপ বাড়লে ঘাড়ব্যথা হয়

ঘাড়ে ব্যথা হলে কেউ কেউ মনে করেন, নিশ্চয়ই রক্তচাপ বেড়েছে। এই ধারণা অমূলক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তচাপ বৃদ্ধির কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। সাধারণত হাড়ের জোড়া বা সন্ধির সমস্যায় ঘাড়ব্যথা হয়ে থাকে।

রক্তচাপ বেশি থাকলে দুধ-ডিম নিষেধ

দুধ-ডিম-মাংস খেলে রক্তচাপ বাড়ে—এমন ধারণা ভুল। রক্তচাপ বেড়ে গেলে অনেকে দুধ-ডিম খাওয়া ছেড়ে দেন। কিন্তু আসলে লবণ বা লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। মূলত হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিকে তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন ডিমের কুসুম, দুধের সর, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি খেতে নিষেধ করা হয়।

টক খেলে রক্তচাপ কমে

এই ধারণাও ভুল। রক্তচাপের পরিমাণ বেশি দেখলে কেউ কেউ তেঁতুলের পানি বা টক খান। লবণ মিশিয়ে এসব খেলে রক্তচাপ আরও বাড়তে পারে। আর লবণ ছাড়া খেলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়।

লবণ ভেজে খাওয়া যাবে

উচ্চ রক্তচাপের জন্য কাঁচা লবণ খেতে নিষেধ করায় অনেকে লবণ হালকা ভেজে খান বা রান্নায় লবণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। কিন্তু লবণ যেভাবেই খান না কেন, তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেবে।

রক্তচাপ কমলে ওষুধ নয়

উচ্চ রক্তচাপের অনেক রোগী রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এমনকি জীবনের ঝুঁকিও থাকে।

সমস্যা নেই বলে ওষুধ বাদ দেবেন

রক্তচাপ বাড়তি থাকলেও শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, এমন অজুহাতে কেউ কেউ ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে চান। আসলে উচ্চ রক্তচাপে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকলেও এটি ধীরে ধীরে হৃদরোগ, পক্ষাঘাত, দৃষ্টিহীনতা ও কিডনি অকার্যকারিতার ঝুঁকি বাড়াবে।

দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এড়াতেই আপনাকে ওষুধ দেওয়া হয়। অনেকে বলেন, এই ওষুধ শুরু করলে সারা জীবন খেতে হবে, তাই শুরু না করাই ভালো। এটাও বিপজ্জনক চিন্তা। প্রয়োজন হলে ওষুধ অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত, নয়তো জটিলতা বাড়বে।

রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ টেনশন

মানসিক চাপ, উদ্বেগ ইত্যাদি কিছুটা দায়ী বটে। তবে কেবল মানসিক উৎকণ্ঠা উচ্চ রক্তচাপের একমাত্র কারণ নয়।

অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, ওজনাধিক্য, ধূমপান, মদ্যপান, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ প্রভৃতি উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জীবনাচরণ পরিবর্তন করে রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারবেন।

অন্যের ওষুধে ভালো কাজ হয়

উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে আপনার বয়স, উচ্চ রক্তচাপের তীব্রতা, আনুষঙ্গিক অন্য রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস, হাঁপানি, প্রোস্টেটের সমস্যা, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি) অনেক বিষয় বিবেচনা করেই রক্তচাপ কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়।

কোনো ওষুধ কারও জন্য প্রয়োজনীয়, আবার একই ওষুধ অন্য কারও জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই যে ওষুধে অন্যের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেটা আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়ার চিন্তাও করবেন না।

Source: https://www.healthline.com/health/high-blood-pressure-hypertension?ref=global#preventing-high-blood-pressure
https://www.prothomalo.com/amp/life-style/article/1068191/%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A-%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AA-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A7%AE-%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%BE

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়




Categories

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

সাধারণত কোনো শিশুকে জন্মের ২৮ দিন বয়স পর্যন্ত নবজাতক বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে, একটি শিশু তার জন্মের প্রথম ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত খুবই ঝুঁকিতে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় নবজাতক শিশুরা খুব সহজে একাধিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা বলছে ২০১৮ সালে জন্মের প্রথম মাসেই সালে মারা গেছে প্রায় ২৫ লক্ষ শিশু। সংস্থাটির তথ্যমতে, সেবছর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭,০০০ শিশু মৃত্যুবরণ করেছে।

নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, নবজাতক শিশুর যত্ন নিয়ে অসচেতনতা এবং কুসংস্কার শিশুমৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রসবে ত্রুটি এবং জন্মগতভাবে পাওয়া বিভিন্ন রোগও নবজাতক শিশু মৃত্যুর জন্য সমানভাবে দায়ী।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক উপায়ে নবজাতকের যত্ন রুখে দিতে পারে শিশু মৃত্যুর হার। এজন্য অবশ্য উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতেও নবজাতক শিশুর যত্ন নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের সেই কাজ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা

জন্মের পর থেকেই নবজাতকের প্রয়োজনীয় যত্নের ব্যাপারে শতভাগ সচেতন থাকতে হয়। শিশুর জন্মের প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া বিকল্প কোনো খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। শালদুধ গ্রহণের ফলে নবজাতকের দেহে রাতকানা এবং জন্ডিসের মতো ব্যাধির বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। শালদুধ শিশুর দেহে প্রাকৃতিক টিকা হিসেবে কাজ করে।

শিশু জন্মের পরপরই নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করে পুরো দেহ পরিষ্কার করে শুষ্ক করতে হবে। পাশাপাশি নরম কাপড় ব্যবহার করে শিশুকে জড়িয়ে রাখা অত্যাবশ্যক। নবজাতকের জন্মের প্রথম ৩ দিনের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই গোসল করানো উচিত নয়। অনেক সময়ই কান্না থামাতে কিংবা খেলার ছলে অনেকেই নবজাতককে কোলে নিয়ে দোল খাওয়াতে পছন্দ করেন। কিন্তু এর ফলে সৃষ্ট কম্পন শিশুর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। নবজাতককে কোলে নিয়ে চলাফেরা করার সময় মাথা যাতে বেঁকে না যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

অনেক অভিভাবকই নবজাতককে রাখার ঘরের দরজা, জানালা সারাক্ষণ বন্ধ রাখেন। এর ফলে বাইরের আলো বাতাসের অভাবে শিশুর দেহে নিউমোনিয়ার মতো ভয়াবহ রোগ দানা বাঁধতে পারে। এছাড়াও ঘরের তাপমাত্রাও যাতে শিশুর সহ্য সীমার বাইরে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বাহির থেকে এসে সরাসরি নবজাতককে কোলে তুলে নেয়া উচিত নয়। কোলে নেয়ার আগে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করা উচিত। এছাড়া শিশুদের নখ দ্রুত বাড়ে, নখের ভেতর ময়লা জমে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত নবজাতকের নখ কাটা উচিত।

শিশু মলমূত্র ত্যাগ করার পর দ্রুত পরিষ্কার করে কাপড় বদলে দিতে হবে। নবজাতককে গোসল করানোর সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা কিংবা গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। ৩৭-৪০ সপ্তাহ গর্ভে থাকা নবজাতকের উপযুক্ত ওজন ধরা হয় ২৫০০ গ্রাম। জন্মের পর নবজাতকের ওজন এর থেকে অত্যাধিক বেশি বা কম হলে অবশ্যই এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণে বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে নবজাতকের ওজনের বৃদ্ধি হয় না। তাই এরকম সমস্যার দেখা মিললে অবশ্যই শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রয়োজন।

শীতে সময় নবজাতকের যত্ন

শিশুকে কয়েক স্তরের মোটা শীতের পোশাক পরিধান করাতে হবে। তবে অতিরিক্ত মোটা কাপড়ের পোশাকের জন্য শিশু যেন অস্বস্তিবোধ না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

শীতের সময় নবজাতককে সাথে নিয়ে কোথাও ভ্রমণ না করাই শ্রেয়।

শিশুকে গরম রাখার জন্য কখনোই চুলার কাছে কিংবা আগুনের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। এর ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে।

খুব প্রয়োজন না হলে শিশুকে গোসল করানো থেকে বিরত রাখা উচিত।

শিশুকে সারাক্ষণ শুষ্ক রাখতে হবে।

নবজাতককে উষ্ণ রাখার জন্য ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার পদ্ধতি অর্থাৎ মায়ের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে হবে।

শিশুর দেহের তাপমাত্রার দিকে নজর রাখতে হবে। নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম হলে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে৷ আবার দেহের তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের থেকে বেশি হলে নবজাতকের জ্বর হতে পারে। এই দুটি সমস্যার যেকোনো একটি হলেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন

শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত নরম সুতি কাপড় ভিজিয়ে শিশুর গা মুছে দিতে হবে।

নবজাতকে পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিধান করাতে হবে।

নবজাতকের শরীরের ঘাম নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। শিশুর অতিরিক্ত ঘাম শরীরের সাথে লেগে থাকলে তা থেকে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

নবজাতক শিশুর একমাত্র খাদ্যের উৎস মায়ের বুকের দুধ। তাই গরমের সময় মাকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর ফলে মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশু প্রয়োজনীয় তরল পাবে।

গরমের সময় শিশুর দেহের বিভিন্ন জায়গায় ঘামাচি হতে পারে। ঘামাচি এড়ানোর জন্য নবজাতকের গোসলের পানি কুসুম গরম করে নিতে হবে।

প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে ডায়াপার ব্যবহার না করানোই ভালো।

গরমের সময় নবজাতক শিশুর ঘুমাতে সমস্যা হয়। তাই ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

শিশুকে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় রাখতে হবে।

নবজাতকের ত্বকের যত্ন

শিশুর জন্মের পর ত্বকের অবস্থা কিছুটা নাজুক থাকে। তবে নবজাতকের দেহের চামড়ায় ভারনিক্স (Vernix) নামের একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ থাকে যা এন্টিবডির (Antibody) মতো কাজ করে। তাই শিশুর ত্বকের যত্নের জন্য হঠাৎ করেই কোনো পাউডার, ক্রিম, তেল ইত্যাদি ব্যবহার করানো যাবে না। এতে শিশুর জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। এর ফলে নবজাতকের চামড়ায় ভারনিক্সের অভাবে শুষ্কতার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থায়ী দাগেরও সৃষ্টি হতে পারে।

নবজাতককে গোসল করানোর সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে গোসলের কারণে নবজাতকের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। শিশুর ব্যবহৃত কাপড় থেকে বিভিন্ন চর্মরোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত কাপড় পরিষ্কার করা জরুরি।

শিশুদের নখ বড় থাকার কারণে নখের আঁচড়ে দেহের বিভিন্ন জায়গার চামড়া ছিলে যেতে পারে। তাই নবজাতকের নখ বড় হলেই কেটে ছোট করে দিতে হবে। শিশুর ত্বকে অস্বাভাবিক কিছু নজরে এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো করা যাবে না

নিজের যত্ন নেয়ার ক্ষমতা না থাকায় নবজাতক শিশুর যত্নে কোনো রকম হেলাফেলা করা উচিত নয়।

নবজাতক শিশুরা তাদের সমস্যার কথা বোঝাতে না পারলেও কান্নার মাধ্যমে তাদের সমস্যার কথা বোঝা সম্ভব।

নবজাতকের কান্নার কারণ বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বল প্রয়োগ করে নবজাতকের কান্না থামানোর চেষ্টা করা যাবে না। সাধারণত কোনো কারণে অস্বস্তিতে ভুগলে শিশুরা কান্না করে। শিশুকে কখনোই অস্বস্তিতে রাখা উচিত নয়। এতে তার মানসিক স্বাস্থ্যে স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

নবজাতকের কাছাকাছি উচ্ শব্দে গান বাজনা বা অন্য কোনো শব্দ সৃষ্টি করা একেবারেই অনুচিত। এতে তার শ্রবণশক্তি লোপের পাশাপাশি মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।

শিশুর ঘরে অতিরিক্ত আলোর ক্ষতিকর বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা যাবে না। এতে নবজাতকের চোখ ও ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নবজাতক শিশুর কাছাকাছি ধূমপান পরিহার করতে হবে। এর কারণে শিশুর শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে।

শিশুর কোনো শারীরিক সমস্যা নজরে এলে যত দ্রুত সম্ভব কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যাবশ্যক।

Source: https://hetv.org/pdf/taking-care-of-a-baby-after-birth.pdf
https://kidshealth.org/en/parents/guide-parents.html
https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/newborns-reducing-mortality
https://www.parents.com/baby/health/babys-first-winter-a-survival-guide/

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়




Categories

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

কথায় আছে, দমে জীবন, দমে মরণ। আর মানুষসহ সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীদের দম তথা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে ফুসফুস। একে বলা হয় শ্বাসযন্ত্র। ফুসফুসের প্রধান কাজ বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছেড়ে দেওয়া। এই দুটি গ্যাসের আদান-প্রদান হয় বিশেষ ধরনের এক কোষ দ্বারা তৈরি খুবই পাতলা লক্ষাধিক বায়ুথলির মাধ্যমে। যাকে বলা হয় অ্যালভিওলাই।

 

ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

মানবদেহের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে তার মধ্যে ফুসফুস অন্যতম। কেননা এর মাধ্যমেই আমরা বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন পাই। আবার আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ত্যাগ করি। আমরা অনেক সময় বিভিন্নজনকে শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখি। এর কারণ হলো ফুসফুসের ইনফেকশন। শ্বাসকষ্ট হলো ফুসফুস ইনফেকশনের অতি সাধারণ এক রোগ। কিন্তু এর বাইরে আরো অনেক জটিল রোগ হতে পারে যদি আমাদের বায়ুথলি কোনো কারণে সংক্রমিত হয়।

 

ফুসফুসের ইনফেকশন কী

মূলত নাক ও মুখের মধ্যে দিয়ে যদি কোনো ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস দেহের ভেতরে প্রবেশ করে ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে তাহলে তাকে ফুসফুসের ইনফেকশনের বলে। ফুসফুসের ইনফেকশনের হলে অনেক সময় শ্বাসনালী ফুলে যায়৷ যার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। ফুসফুস যেহেতু আমাদের দেশে একাধিক কার্য সম্পাদন করে থাকে তাই ফুসফুস সংক্রমিত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট ছাড়াও আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। শিশু বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলেরই এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ

ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণগুলো মাঝারি থেকে তীব্র আকারে দেখা দিতে পারে৷ তবে সেটা নির্ভর করে রোগীর বয়স, স্বাস্থ্যের সর্বোপরি অবস্থা এবং ইনফেকশনের কারণ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক, এর মধ্যে যেকোনো একটির আক্রমণে ফুসফুস সংক্রমিত হলে তার লক্ষণ প্রকাশ পায়৷ কিন্তু লক্ষণগুলো কখনো আলাদাভাবে বোঝা যায় না। তবে অনেক সময় লক্ষণ সমূহের স্থায়ীত্বতা থেকে ফুসফুস ইনফেকশনের কারণ বোঝা যায়৷ এবার তাহলে ফুসফুস ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ফুসফুস ইনফেকশনের প্রধান লক্ষণ কফের সাথে ঘন শ্লেষ্মা বা মিউকাস বের হওয়া। রোগীভেদে এই মিউকাসের রং ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে খারাপ দিক হলো কফের সাথে রক্ত পড়া৷ যদি কারো কফের সাথে রক্ত পড়ে তাহলে বুঝতে হবে তার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে এবং তার অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ফুসফুসে ইনফেকশনের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়৷ যার ফলে বুকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। এই ব্যথা কখনো মাঝারি, আবার কখনো মারাত্মক আকারে হয়ে থাকে৷ ফুসফুসের ইনফেকশনের কারণে একনাগাড়ে কয়েকদিন বুকে ব্যথা অনুভব হয়।

অনেক সময় ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে আমাদের শরীরে জ্বর হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে যদি ফুসফুস সংক্রমিত হয় তাহলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। অতিরিক্ত জ্বরের কারণে শরীরে ঘাম, পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও দুর্বলতাসহ আরো অনেক লক্ষণ দেখা দেয়। যদি শরীরের তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ফুসফুস ইনফেকশনের কারণে পেশি ও পিঠে ব্যথা হয়। একে মায়ালজিয়া বলা হয়। এর ফলে অনেক সময় পেশির মধ্যে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

ফুসফুস সংক্রমিত হলে নিঃশ্বাসে দুর্বলতার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর ফলে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায় এবং ঘনঘন শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

প্রশ্বাসের মাধ্যমে যখন বায়ু ত্যাগ করা হয় তখন যদি বুকের মধ্যে আওয়াজ হয়৷ যা ফুসফুস ইনফেকশনের স্পষ্ট লক্ষণের মধ্যে একটি। মূলত শ্বাসনালি ছোট সঙ্কুচিত হওয়ার ফলে এই সমস্যা হয়।

ফুসফুস সংক্রমিত হলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়৷ ফলে আমাদের শরীর খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অল্পতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়লে তা ফুসফুসের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

ফুসফুসের ইনফেকশনের কারণে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়৷ ফলে ঠোঁট ও হাতের নখ হালকা নীলাভ বর্ণ ধারণ করে।

 

ফুসফুস ইনফেকশনের কারণে যেসব রোগ হয়

ফুসফুস ইনফেকশনের কারণে অসংখ্য রকমের রোগ হয়ে থাকে। তবে প্রধান তিনটি রোগ হলো ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিওলাইটিস। এর প্রত্যেকটি ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অথবা রেসপিরেটরি সিনশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) আক্রমণে ব্রঙ্কাইটিস হয়ে থাকে। অন্যদিকে ব্রঙ্কাইটিসের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে রয়েছে মাইক্রোপ্লাজমা নিউমোনিয়ে, ক্লামাইডিয়া নিউমোনিয়ে এবং বোর্ডেটেলা পার্টুসিস। নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী স্ট্রেপটোকোকাস নিউমোনিয়া ও মাইক্রোপ্লাজমা নিউমোনিয়ে ভাইরাস এবং আরএসভি ব্যাকটেরিয়া।

প্রধান তিনটি রোগ ছাড়াও ফুসফুসের ইনফেকশন থেকে অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) ও ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হয়ে থাকে। ফুসফুসের সমস্যার কারণে রক্তনালি ও বুকে আরো বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি করে৷ তাই এই রোগকে কোনোভাবেই অবহেলা করার সুযোগ নেই।

 

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

সময়মত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে ফুসফুস ইনফেকশন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যদি কারো তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হয় অথবা শ্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে চিকিৎসক দেখানোর ক্ষেত্রে বয়স ও রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

তিন মাসের কম বয়সী কোনো বাচ্চার যদি একনাগাড়ে কয়েকদিন ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর থাকে তাহলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উত্তম। ৩-৬ মাস এবং ৬-২৪ মাস বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বরের এই মাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি৷ আর জ্বরের স্থায়ীত্ব হতে হবে কমপক্ষে দুই দিন। এর চেয়ে অধিক বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টানা তিনদিন ১০২.২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বরের পাশাপাশি যদি বমি ও প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বড়দের ক্ষেত্রে জ্বরের মাত্রা ১০৩ ডিগ্রির বেশি হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া আবশ্যক।

 

ফুসফুসের ইনফেকশন নির্ণয়ের টেস্ট

শ্বাস-প্রস্বাসে কোনো সমস্যা হলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এরপর চিকিৎসকের কাছে পূর্বের সকল রোগ এবং শরীরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খুলে বলতে হবে। এমনকি আপনি কোন ধরনের পেশার সাথে জড়িত, কোন এলাকায় থাকেন, সর্বশেষ কোথায় ভ্রমণ করেছেন কিংবা কোন কোন প্রাণীর সংস্পর্শে ছিলেন সবকিছুই চিকিৎসকের কাছে বলতে হবে। সাধারণত চিকিৎসকরা নিজে থেকে এসব প্রশ্ন করে থাকেন। এরপরও নিজে থেকে এই বিষয়গুলো বিস্তারিত জানানো উচিত।

চিকিৎসক সাধারণত শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বুকের ভেতরে কোনো শব্দ হয় কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেন। এর মধ্যে রয়েছে বুকের এক্স-রে অথবা সিটি স্ক্যান, নিঃশ্বাসের গতি পরিমাপের জন্য স্পাইরোমেট্রি টেস্ট, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য পালস অক্সিমেট্রি, কফ পরীক্ষা, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) টেস্ট এবং ব্লাড কালচার টেস্ট।

ফুসফুস ইনফেকশন হলে করণীয়

চিকিৎসকের দেওয়া পরীক্ষা থেকে যদি ফুসফুসের ইনফেকশন ধরা পড়ে তাহলে তার ধরন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কিন্তু ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর। এর বিরুদ্ধে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই করে। অনেক সময় তা দীর্ঘায়িত হয়। আর ছত্রাকের কারণে যদি ফুসফুসের ইনফেকশন হয় তাহলে ছত্রাক প্রতিরোধী হিসেবে কিটোকোনাজল অথবা ভোরিকোনাজল গ্রহণ করতে হয়।

তবে ঔষধের পাশাপাশি কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসের ইনফেকশন থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। এই ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে, সেই সাথে আদা বা মধুর সাথে চা খেতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করলে ফুসফুসের ইনফেকশন দ্রুত উপশম হয়। আর কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ না করে ঔষধ বন্ধ করা যাবে না।

 

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কিভাবে প্রতিরোধ করবেন

ফুসফুস ইনফেকশন পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও একটু সচেতন হলেই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এই রোগ সরাসরি পরিবেশ ও ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উপর নির্ভরশীল। তাই দূষিত ধূলিকণা থেকে দূরে থাকতে হবে। বাইরে গেলে নাক ও মুখে মুখোশ লাগিয়ে চলাফেরা করা উচিত।

নিয়মিত হাত পরিস্কার রাখার পাশাপাশি বারবার ফেস ও মুখ হাতানো থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যদের সাথে খাবারের কোনো পাত্র, খাবার ও পানীয় শেয়ার না করা উত্তম। পাশাপাশি জনবহুল জায়গাগুলো এড়িয়ে চলা ভালো৷ কারণ এসব জায়গা থেকে খুব সহজে ভাইরাস ছড়ায়।

ফুসফুসের যেকোনো সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য ধূমপান থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে হবে। এর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনকে প্রতিরোধ করার জন্য দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে। যথা: পিসিভি১৩ নিউমোকাকাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (PCV13 pneumococcal conjugate vaccine) এবং পিপিএসভি২৩ নিউমোকাকাল পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষ নিতে পারবেন।

Source:

https://www.healthline.com/health/symptoms-of-lung-infection
https://www.webmd.com/lung/lung-diseases-overview
https://www.betterhealth.vic.gov.au/health/conditionsandtreatments/chest-infections
https://www.lung.org/lung-health-and-diseases/lung-disease-lookup/pneumonia/learn-about-pneumonia.html
https://www.nhs.uk/conditions/respiratory-tract-infection/
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4798234/

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়




Categories

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

টাইফয়েড আমাদের অতি পরিচিত একটি রোগ। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে শীত শেষ হওয়ার পর গরম পড়তে শুরু করলে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়। টাইফয়েড এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ।

মূলত সালমোনালা টাইফিমিউরিয়াম বা এস. টাইফি ও প্যারা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এই রোগ হয়। মানুষ ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণী এই রোগ বহন করে না। তাই টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তিকে যথাসময়ে চিকিৎসা প্রদান না করলে তার আশেপাশের অন্যদের মধ্যে এই রোগ খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।

টাইফয়েড কেন হয়

টাইফয়েড রোগ মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফি ব্যাকটেরিয়া যুক্ত পানি ও খাবার খাওয়ার ফলে টাইফয়েড জ্বর হয়৷ এই ব্যাকটেরিয়া মূলত বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করা পানি ও সিউয়েজ লাইন থেকে ছড়ায়। এছাড়া টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র থেকেও টাইফি ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

একবার দূষিত পানি ও খাবারে সাথে টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে প্রবেশের পর তা কয়েক সপ্তাহ অন্ত্রের মধ্যে থাকে। সেখানে এই ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি শক্তিশালী হওয়ার পর তা অন্ত্রের গাত্র ও রক্তনালির মধ্য দিয়ে দেহের অন্যান্য কোষ ও অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। টাইফি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের দেহের ইমুউন সিস্টেম খুব বেশি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। ফলে খুব সহজেই এই ব্যাকটেরিয়া মানুষকে কাবু করে ফেলে।

টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩-৫% ব্যক্তি এই ব্যাকটেরিয়া বহনকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। বাকিদের অনেকে সামান্য মাত্রা আক্রান্ত হয়৷ কেউ কেউ আবার টাইফি ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু এদের শরীরে দীর্ঘদিন এই ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। পরবর্তী সময়ে এদের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ হতে শুরু করে। টাইফয়েডের প্রধান দুটি লক্ষণ হলো জ্বর ও শরীরে লালচে ফুসকুড়ি। টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের মাত্রা সাধারণ জ্বরের চেয়ে অনেক বেশি হয়। জ্বর ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়৷ জ্বরের পাশাপাশি ঘাড় ও তলপেটে লালচে রঙের ফুসকুড়ি উঠে থাকে৷ তবে টাইফয়েডে আক্রান্ত সকলেরই ফুসকুড়ি উঠে না।

এর বাইরে টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচণ্ড মাথাব্যথা, গলাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও শরীর দুর্বল হয়। অনেক টাইফয়েড রোগীর ডায়রিয়া ও বমি হয়। টাইফয়েড যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে অন্ত্রে ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। যা থেকে অন্ত্রের ঝিল্লিতে প্রচণ্ড প্রদাহ হয়। তবে এই ঘটনা খুবই কম সংখ্যক রোগীর সাথে হয়ে থাকে। আরেক ধরনের টাইফয়েড রয়েছে যাকে বলা হয় প্যারা টাইফয়েড। এই রোগের লক্ষণসমূহ টাইফয়েড রোগের মতোই। কিন্তু এটা টাইফয়েডের চেয়ে কিছুটা দুর্বল।

টাইফয়েড টেস্ট

সাধারণত রক্ত, মল ও মূত্রের পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নির্ণয় করা হয়। রোগীর এসব নমুনা মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষা করে সালমোনেলা টাইফি ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা তা যাচাই করা হয়।  অনেক সময় প্রথমবারের পরীক্ষায় টাইফয়েড ধরা পড়ে না। এ কারণে বেশ কয়েকবার একই ধরনের পরীক্ষা করে টাইফয়েড হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা হয়।

তবে বোন ম্যারো পরীক্ষার মাধ্যমে সূক্ষ্মভাবে টাইফয়েড নির্ণয় করা যায়। কিন্তু পরীক্ষা ও নমুনা গ্রহণ, উভয়ই বেশ জটিল ও কষ্টকর। তাই অন্য পরীক্ষায় যদি কোনোভাবে টাইফয়েড ধরা না পড়ে তবেই বোন ম্যারো টেস্ট করা হয়। যদি পরিবারের একজনের টাইফয়েড ধরা পড়ে তাহলে অন্য সদস্যদেরও টাইফয়েড পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কেননা টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

টাইফয়েড হলে করণীয়

রক্ত পরীক্ষা: টাইফয়েড পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ছড়ায়। তাই টাইফয়েডের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে সবার আগে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। রক্ত পরীক্ষা থেকে নিশ্চিত হতে হবে টাইফয়েড হয়েছে কিনা।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে: টাইফয়েড হওয়ার অন্যতম কারণ নোংরা পরিবেশ। তাই টাইফয়েড রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে এবং টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করতে হবে। নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ফলমূল ধুঁয়ে খেতে হবে। ঘরের সকল জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে রাখতে হবে।

পানি ও খাবারে সতর্কতা: টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। ঠাণ্ডা কোনো খাবার খাওয়া যাবে না৷ প্রয়োজনে গরম করে খেতে হবে। অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া যাবে না।

বাসস্থান ও টয়লেটের ব্যবস্থা: সবসময় বাসস্থান ও টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। টয়লেট অথবা ঘরে যেন নোংরা পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির টয়লেট ও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিতে খোলামেলা পরিবেশে রাখতে হবে।

টাইফয়েড হলে যেসব খাবার খাবেন

চিকিৎসকদের মতে টাইফয়েডের যেকোনো রোগীর উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কেননা উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার টাইফয়েডের কারণে ওজন হ্রাস হওয়া প্রতিরোধ করে। এ কারণে এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে পাস্তা, সেদ্ধ আলু, সাদা রুটি ও কলা খেতে দিতে হবে।

টাইফয়েডের রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ টাইফয়েডের কারণে অনেক সময় ডায়রিয়া হতে পারে। যার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। শরীরে পানির পরিমাণ কমে টাইফয়েডের চিকিৎসাতেও সমস্যা হয়। তাই টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, প্রচুর পানিযুক্ত ফল ও অন্যান্য খাবার এবং ফলের রস খাওয়াতে হবে।

অধিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার দিতে হবে। হালকা শক্ত ও হালকা নরম জাতীয় খাবার সহজেই পরিপাক হয়। এ জন্য টাইফয়েডের রোগীদের ভাত, ভাজা আলু ও ডিম পোচ খেতে দিতে হবে। এই খাবারগুলো টাইফয়েডেে রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।

টাইফয়েডে আক্রান্তদের প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি তাদের খাঁটি মধু খাওয়ালে দ্রুত রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করবেন।

টাইফয়েড রোগীর ডায়েটে অবশ্যই দই ও ডিম রাখতে হবে। এগুলো খুব তাড়াতাড়ি পরিপাক হয়। যা টাইফয়েড রোগীদের দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি দেহের প্রোটিনের অভাব পূরণ করে। তবে যারা নিরামিষভোজী তারা দই ও ডিমের পরিবর্তে মসুরের ডাল, মাষকলাই ও কটেজ চিজ খেতে পারেন।

যেসব খাবার খাওয়া যাবে না

টাইফয়েড রোগীদের প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এ ধরনের খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে।

ক্যাপসিকাম ও বাঁধাকপির মতো গ্যাস সৃষ্টিকারী সবজি পরিহার করতে হবে। এই খাবারগুলো পেটে গ্যাস তৈরি করে এবং পেট ফেঁপে যায়।

রসুন ও পেঁয়াজ বেশি খাওয়া যাবে না। এমন ফ্লেভারযুক্ত অন্য কোনো সবজিও খাওয়া যাবে না।

মসলাদার ও এসিটিক এসিড সৃষ্টিকারী খাবার খাওয়া খাবে না। যেমন: হট সস, কাঁচামরিচ ও ভিনেগার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

ঘি, মাখন, ডেজার্ট ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করতে হবে।

টাইফয়েডের চিকিৎসা

টাইফয়েড সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়৷ তবে ক্ষেত্র বিশেষে আরো দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। টাইফয়েডের চিকিৎসা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো সাধারণত টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। সচরাচর এই রোগের চিকিৎসায় সিপ্রোফ্লোক্সাসিন (সিপ্রো), অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও সেফট্রিয়াক্সোন।

যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত গর্ভবতী ব্যতীত অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসকরা সিপ্রোফ্লোক্সাসিন দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশেও টাইফয়েডের রোগীদের এই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। বাদ নেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও। যে সকল রোগী সিপ্রোফ্লক্সাসিন নিতে পারেন না কিংবা এই অ্যান্টিবায়োটিক যাদের শরীরে কোনো কাজ করে না তাদের টাইফয়েড চিকিৎসায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন দেওয়া হয়।

আর যাদের টাইফয়েডের মাত্রা অনেক বেশি এবং বাচ্চাদের সিপ্রোফ্লক্সাসিনের পরিবর্তে সেফট্রিয়াক্সোন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনের মাধ্যম্যে শরীরে দেওয়া হয়। তবে এসব অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন এসব ঔষুধ ব্যবহার করলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্ট তৈরি হতে পারে। আর টাইফয়েডের ফলে যদি কারো অন্ত্রে ছিদ্র হয় তাহলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে।

টাইফয়েডের ভ্যাকসিন

টাইফয়েড প্রতিরোধ করার জন্য মূলত দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে। এক. ভিআই অ্যান্টিজেন বা ভিআই-পিএস (Vi-PS) ভ্যাকসিন। অপরটি হলো টিওয়াই-২১ ভ্যাকসিন। ভিআই ভ্যাকসিন সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে একবার দেওয়া হয়। যা প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত ৭০ ভাগ টাইফয়েড প্রতিরোধ করে। অপরদিকে টিওয়াই-২১ ভ্যাকসিন ক্যাপসুল আকারে খেতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন দিনে মোট তিনটি ক্যাপসুল খেতে হয়। এই ভ্যাকসিন দীর্ঘদিন টাইফয়েডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

Source:

1. https://doctor.ndtv.com/living-healthy/typhoid-diet-foods-to-eat-and-avoid-during-typhoid-1879975?amp=1#aoh=15741785461923&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&amp_tf=From%20%251%24s
2. https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/typhoid-fever/diagnosis-treatment/drc-20378665
3. https://www.who.int/immunization/research/development/typhoid/en/
4. https://www.nhs.uk/conditions/typhoid-fever/vaccination/
5. https://www.webmd.com/a-to-z-guides/typhoid-fever
6. https://www.medicalnewstoday.com/articles/156859.php

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়




Categories

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

বন্ধুদের আড্ডায় বাদাম এক অতি পরিচিত খাবার। বছরের পুরো সময়ই ছোট থেকে বড়, সব দোকানেই বাদাম কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত আমরা যে বাদাম খেয়ে থাকি তার নাম চীনা বাদাম। কিন্তু এই বাদাম ছাড়া আরো অনেক রকমের বাদাম রয়েছে। প্রত্যেক বাদামেরই রয়েছে আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ এবং ব্যবহার।

বাদামের প্রকারভেদ

সারাবিশ্বে অসংখ্য রকমের বাদাম রয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্যের কারণে একেক অঞ্চলে একেক রকমের বাদাম উৎপন্ন হয়। তবে সারাবিশ্বে মোটামুটি ১০-১২ রকমের বাদাম রয়েছে যেগুলো প্রায় সকলের কাছেই পরিচিত।

সহজলভ্যতা ও বহুল ব্যবহারের দিক থেকে যেসব বাদাম আমাদের কাছে অধিক পরিচিত সেগুলো হলো কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, ব্রাজিলিয়ান বাদাম, চেস্ট নাট ( এক ধরনের গোলাকার বাদাম), হ্যাজেল নাট, ম্যাকাডেমিয়া বাদাম, পিক্যান বাদাম, পিলি বাদাম, পাইন বাদাম ও আখরোট।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

বাদামে উচ্চমাত্রায় ফ্যাট থাকে। কিন্তু এই ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং উপকারী। এছাড়া বাদাম ফাইবার ও প্রোটিনের ভালো উৎস। বিভিন্ন গবেষণা থেকে বাদামের নানাবিধ উপকারের কথা জানা গেছে। বিশেষ করে বাদাম খাওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া বাদামের আরো যেসকল উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পুষ্টি উপাদানের বড় উৎস: বাদামে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যার প্রত্যেকটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ৩০ গ্রাম বিভিন্ন ধরনের বাদাম থেকে ১৭৩ ক্যালরি পাওয়া যায়। এছাড়া প্রোটিন ৫ গ্রাম, ফ্যাট ১৬ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি বাদামে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম থাকে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর: বাদামকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস বা শক্তিঘর বলা হয়। বিশেষ করে আখরোট ও কাঠবাদামে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির ঝুঁকি কমায়।

বাদাম ওজন কমাতে সহায়ক: বাদামকে উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার মনে করা হয়। কিন্তু বাদাম খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে না। বরং তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েটে অলিভ অয়েলের চেয়ে বাদাম খেলে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। ওজন কমানোর জন্য কাঠবাদাম খুবই উপকারী। কাজুবাদামেরও একই গুণ রয়েছে।

যে সকল নারী অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ডায়েটে বাদাম রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ ডায়েটে বাদাম রাখলে অন্য নারীদের চেয়ে তিনগুণ দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। অনেকে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকার কারণে বাদাম খেতে চান না। তাদের জন্য আশার বাণী হলো আমাদের শরীর বাদামে থাকা ফ্যাট পুরোপুরি শোষণ করে না। যার ফলে বাদামে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকলেও বাদাম খেয়ে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

বাদাম কোলেস্টেরল ও টাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়: অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও টাইগ্লিসারাইডের ফলে শরীর মুটিয়ে যায় এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদি নিয়মিত বাদাম খাওয়া হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি করা সম্ভব। বিশেষ করে পেস্তাবাদাম টাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়। প্রায় ১২ সপ্তাহের এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত পেস্তাবাদাম খান, তাদের শরীরে টাইগ্লিসারাইড প্রায় ৩৩% কম। আর কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে বাদামের ফ্যাটি এসিড।

কাঠবাদাম ও হ্যাজেল নাট খাওয়ার ফলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর নিম্ন ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) কমিয়ে উপকারী উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়ে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আখরোট, চিনাবাদাম, পাইন বাদাম ও ম্যাকাডেমিয়া নাটও খুবই উপকারী। এই বাদামগুলো যেভাবে খুশি খেতে পারেন।

প্রদাহ কমাতে সহায়ক: বাদামের মধ্যে প্রদাহ বিরোধী উপাদান রয়েছেন। কোনো চোট, ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হলে বাদাম খাওয়া উত্তম। নিয়মিত বাদাম খেলে ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। বিশেষ করে যারা কিডনি ও ডায়াবেটিসের সমস্যা ভুগছেন। এর জন্য খেতে হবে আখরোট, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম ও ব্রাজিলিয়ান বাদাম।

ফাইবারের ভালো উৎস: ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন খাবারে ফাইবারের অভাব হয় তখন আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার ঘটে। ফাইবার খাবার হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি খাবারের ক্যালরির মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে পারে না। কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, চিনাবাদাম, পিক্যান, হ্যাজেলনাট, ম্যাকাডেমিয়া বাদাম ও ব্রাজিলিয়ান বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।

বাদাম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: হৃদযন্ত্রের জন্য বাদাম খুবই উপকারী। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বাদাম খেলে হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়৷ যার ফলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। একই সাথে স্ট্রোক করার ঝুঁকি হ্রাস পায়।

কাজুবাদামের উপকারিতা

নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকে।

কাজুবাদামে উচ্চমাত্রায় কপার থাকে। যা রক্তের দূষিত কণিকা দূর করে রক্তে লৌহের মাত্র বাড়ায়। ফলে রক্তের বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

কাজুবাদামে জিয়া জ্যানথিন নামে এক ধরনের শক্তিশালী পিগমেন্ট থাকে, যা আমাদের চোখকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।

কাজুবাদামে উচ্চমাত্রায় সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস থাকে। সেলেনিয়াম আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া সেলেনিয়াম ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

কাজুবাদাম ওজন কমাতে সহায়তা করে। এই বাদাম ফাইবারের বড় এক উৎস। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে চুল উজ্জ্বল ও ঘন হয়।

কাজুবাদামের অপকারিতা

অনেক গুনাগুনের পাশাপাশি কাজুবাদামের বিভিন্ন ধরনের অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যায়৷ এছাড়া কাজুবাদামে উচ্চমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম থাকার ফলে অনেক অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা মন্থর করে দেয়। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের কাজুবাদাম খেলে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া কাঁচা কাজুবাদামের মধ্যে থেকে এক ধরনের বিষাক্ত তরল বের হয় যা শরীরে লাগলে ঘা হয়ে যায়৷ এ কারণে বাজারে খোলযুক্ত কাঁচা কাজুবাদাম পাওয়া যায় না।

কাঠবাদামের উপকারিতা

কাঠবাদাম হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাঠবাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন -ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক সুস্থ রাখে।

কাঠবাদাম ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।

কাঠবাদাম ওজন বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস প্রতিরোধ করে।

কাঠবাদাম খাওয়ার পরে শরীরে পুষ্টি উপাদান শোষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কাঠবাদাম পাকস্থলির পরিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

এই বাদাম শরীরের প্রদাহ কমায় এবং ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

কাঠবাদামের অপকারিতা

অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হয়।

১০০ গ্রাম কাঠবাদামে ২৫ গ্রাম ভিটামিন-ই থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ১৫ গ্রাম ভিটামিন-ই গ্রহণ করতে পারেন। অতিরিক্ত ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, শরীর দুর্বল ও চোখের জ্যোতি কমে যেতে পারে।

অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে শরীরে রক্তচাপের ঔষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করতে পারে না।

গর্ভবর্তী মহিলাদের অতিরিক্ত কাঠবাদাম খেলে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে।

চিনাবাদামের উপকারিতা

বায়োটিনের বড় উৎস চিনাবাদাম। বায়োটিনকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের সাথে তুলনা করা হয়। বায়োটিন স্কোরোসিস, ডায়াবেটিস ও মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

চিনাবাদামে শতকরা ৮০ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে যা হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত চিনাবাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে।

চিনাবাদামে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

চিনাবাদাম পিত্তথলিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে।

চিনাবাদাম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

চিনাবাদামের অপকারিতা

অতিরিক্ত চিনাবাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে, যা শরীরে অন্যান্য জলীয় উপাদান শোষণে বাধা প্রদান করে।

চিনাবাদামে এলার্জির সমস্যা হতে পারে।

চিনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

পেস্তাবাদামের উপকারিতা

পেস্তাবাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।

অন্যান্য বাদামের তুলনায় পেস্তাবাদামে ক্যালরি কম থাকে। কিন্তু অ্যামিনো এসিড থাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পেস্তাবাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে।

পেস্তাবাদাম খাওয়ার ফলে রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমে যায়৷ ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

পেস্তাবাদাম রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।

পেস্তাবাদামের অপকারিতা

অতিরিক্ত পেস্তাবাদাম খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

অতিরিক্ত পেস্তাবাদাম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের পেস্তাবাদাম পরিহার করা উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত পেস্তাবাদাম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে থাকে।

পেস্তাবাদাম এলার্জির সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া অতিরিক্ত ফাইবার থাকায় হজমেও সমস্যা তৈরি করে।

কাঁচা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা বাদাম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বাদাম ভাজলে আগুনের তাপে উপকারী মনোআন্স্যাচুরেটেড এবং পলিআন্স্যাচুরেটেড ফ্যাট নষ্ট হয়ে যায়। আর তেলে ভাজা বাদাম খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। তবে ১০-১৫ মিনিট নিম্ন তাপে ভোজ্য তেল ছাড়া বাদাম ভেজে খাওয়া যেতে পারে।

কাঁচা বাদাম খাওয়ার আগে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাস থাকতে পারে। কাঁচা বাদাম সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ত্বকের উপকার হয় এবং অধিক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।

Source:
1.https://www.fastnewsfeed.com/health/disadvantages-of-cashew-nuts-everyone-should-know/
2. https://food.ndtv.com/food-drinks/7-incredible-cashew-nut-benefits-from-heart-health-to-gorgeous-hair-1415221?amp=1&akamai-rum=off#aoh=15732868142020&referrer=https%3A%2F%2Fwww.google.com&amp_tf=From%20%251%24s
3. https://m.timesofindia.com/life-style/health-fitness/photo-stories/5-surprising-side-effects-of-eating-too-many-almonds/amp_etphotostory/60747918.cms
4. https://nuts.com/healthy-eating/benefits-of-peanuts
5. https://www.livestrong.com/article/474309-side-effects-of-eating-too-many-peanuts/
6. https://www.healthline.com/nutrition/9-benefits-of-pistachios#18

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়




Categories