কলা শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক। এজন্য আমাদের প্রায় প্রতিদিনকার প্রাতরাশে এটি খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছে। কলা আপনার তাৎক্ষণিক শক্তির সঞ্চারিকা হিসাবেও কাজ করবে। স্থায়ীভাবে সকল প্রকার ক্লান্তি ও অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে কলার জুড়ি নেই।
কলার পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় ১১৬ ক্যালোরি শক্তি, ৮৫ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ০.৬মি.গ্রা. আয়রন থাকে। এছাড়াও কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফসফরাস, প্রোটিন, খনিজ লবণ রয়েছে। কলা পটাশিয়ামের এক অনন্য উৎস। তাছাড়া শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৬ কলা থেকে পাওয়া যায়।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা বহুগুণে সমৃদ্ধ। তাই, শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ছোট-বড় সকলেরই একটি করে কলা খাওয়া উচিৎ।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা–
মানসিক অবসাদ কমায়
কলায় বিদ্যমান ট্রাইপটোফিন নামক রাসায়নিক উপাদানের প্রভাবে দেহে ফিল-গুড হরমোন নিঃসৃত হয়। কলা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে স্নায়বিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও কলা খুব উপকারি। প্রি-মেন্সট্রয়াল সিনড্রোম প্রতিরোধে কলা ফ্যাটি ফুডের মতোই কার্যকর।
শরীরকে ডিটক্সিফাই করে
কলায় বিদ্যমান প্রেকটিন শরীরের ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। এমনকি শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতেও বেশ সহায়ক। এছাড়া কলা শরীর থেকে চর্বি এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় উপাদান শোষণ করে এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে
কলায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা শরীরে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়। কলা রক্তকে পরিশুদ্ধ করতেও অনেক কার্যকর।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে
কলা শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খেলে আপনার হৃদযন্ত্র সচল থাকবে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে।
কিডনি সুস্থ রাখে
কলা ইউরিনে ক্যালসিয়াম জমা হতে বাধা দেয় বলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
শরীরে শক্তির যোগান দেয়
কলাতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা ও সল্যুবল ফাইবার রয়েছে , যা শরীরে শক্তির যোগান দেয়। এছাড়া কলা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন করে।
হজমে সহায়তা করে
কলা অ্যান্টাসিডের মত কাজ করে। কলার ফাইবার ও প্রোবায়োটিক অলিগোস্যাকারাইজড হজমের জন্য দারুণ উপকারি। এর ফলে আপনার শরীরে অধিক পরিমাণে পুষ্টি সঞ্চয় হয়। কলা পাকস্থলীতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় শুকনো কিছু খাবারের সঙ্গে কলা মিলিয়ে খাওয়া ভালো। তা না হলে শরীরে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেশিয়ামের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
পাকস্থলির আলসার প্রতিরোধ করে
কলা প্রোটেক্টিভ মিউকাস লেয়ার বৃদ্ধির মাধ্যমে পাকস্থলিতে পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে, যা আপনাকে বুক-জ্বালা ও পাকস্থলীর আলসার থেকে রক্ষা করবে। কলা অভ্যন্তরীণ অ্যাসিড নিঃসরণে বাধা দেয়।
ত্বকের যত্নে কলা
কলা ত্বকের হারানো আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে ত্বককে সতেজ করে তুলতে, শুষ্কতা নিরাময় করতে সহায়তা করে।
ব্যবহারবিধি:
১) অর্ধেক পাকা কলা নিয়ে তার মধ্যে এক টেবিল চামচ চন্দন কাঠের গুঁড়ো এবং ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। অথবা একটা পাকা কলা কেটে এর মধ্যে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
২) এরপর এটি মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩) তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অন্যতম একটি উপকারি ফেসপ্যাক।
এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সহায়তা করবে।
শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি করে
কলা ডোপামিন, ক্যাটেচিন্স এর মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে থাকে। পাকা কলা শরীরের TNF-A নামক এক ধরণের যৌগ সরবরাহ করে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। এতে করে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। কলায় বিদ্যমান ফোলেট ও লেক্টিন নামক রাসায়নিক উপাদান শরীরের কোষগুলোকে ভাইরাস আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার ব্যবহার
নিয়মিত কলা খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এটি কোষে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং নিউরন গুলোকে সুগঠিত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও মৃগী এবং পারকিনসন রোগের সমস্যায় সমাধানে কলা দারুণ কার্যকর। কলা খাওয়ার ফলে মেনোপজাল পরবর্তী মহিলাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
হাড় গঠনে কলার উপকারিতা
কলা হাড়ের সুরক্ষায় সহায়তা করে। নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে অস্টিওপোরোসিস এর সমস্যা কম হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কলার ভূমিকা
কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি সিক্স ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন কলা খাওয়ার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে ফ্রুক্টোজ এর পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলা
কলায় বিদ্যমান ভিটামিন-এ চোখ এবং কর্নিয়ায় সুরক্ষা প্রদান করে থাকে; যাতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা চোখ সংক্রমিত হতে না পারে।
মাসিকের যন্ত্রণা কমাতে কলার উপকারিতা
কলায় থাকা খনিজ উপাদান পিরিয়ডের সময় জরায়ুর পেশীগুলোকে শক্তি প্রদান করে এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
মর্নিং সিকনেস সমস্যায় কলা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সকাল বেলা বমি ভাব কিংবা বমি হতে দেখা যায়। কলা মর্নিং সিকনেস সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি করে কলা খান। সবুজ কলাতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ রয়েছে। এটি শরীরে ফাইবার এর মত কাজ করে রক্তে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে।
অনিদ্রা কাটাতে কলার ব্যবহার
কলাতে বিদ্যমান ট্রিপটোফ্যান ও মেলাটোনিন ঘুমের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। রোজ খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা রাখুন, অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়ে যাবে ইনশা’আল্লাহ।
পায়ের যত্নে কলার ব্যবহার
দীর্ঘ সময় ধরে খালিপায়ে হাঁটা-চলা করলে গোড়ালির সমস্যা দেখা যেতে পারে। ফাটা গোড়ালির সমস্যা সমাধানে কলা খুব উপকারি।
ব্যবহার: দুটি পাকা কলা ব্লেন্ড করে পানিতে মিশিয়ে পরিষ্কার পায়ে লাগিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি পায়ের ত্বককে মসৃণ করে তুলবে।
চুলের যত্নে কলা
চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে কলা বেশ সহায়ক ভেষজ মেডিসিন। এটা চুল পড়া বন্ধের প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবেও কার্যকর।
খুশকির সমস্যা দূর করতে চুলে কলা, টক দই আর লেবুর রসের তৈরি একটি মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহার: অর্ধেক পাকা কলার সঙ্গে তিন চামচ টক দই ও এক চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এটি শুধু চুলের গোড়া ও মাথার তালুর ত্বকে লাগাবেন। খেয়াল রাখতে হবে, এই মিশ্রণটি যাতে মাথার বাকি চুলে না লাগে। ২০-২৫ মিনিট পর চুল ভাল ভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে এবং আরো উজ্জ্বল।
কাঁচা কলার উপকারিতা
কাঁচা কলায় আছে অত্যাবশ্যকীয় খনিজ ও পুষ্টি উপাদান যা চর্বিকে শক্তিকে রূপান্তরিত করে এবং এনজাইম ভাঙতে সহায়তা করে। কাঁচা কলা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রেখে কিডনি বা বৃক্কের কাজকে ত্বরান্বিত করে । প্রতিদিন কাঁচা কলা খেলে ‘কিডনি ক্যান্সার’- এর ঝুঁকি দূর হয়ে যায়।
কাঁচা কলার খোসা সেদ্ধ করে ভর্তা করে বা সবজির মতো রান্না করেও খেতে পারেন। ডায়রিয়ার সময় কাঁচা কলা খেলে শরীরের পটাশিয়ামের অভাব দূর হয়।
তবে বেশি পরিমাণে কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কলার থোড়ের স্বাস্থ্যগুণ
কলার থোড় পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
এসিডিটির সমস্যায় ভুগলে কলার থোড় ব্লেন্ড করে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। নিয়মিত থোড়ের রসে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারলে গলব্লাডার পরিষ্কার থাকে। শিশুর ইউরিনের কোনো সমস্যা থাকলে থোড়ের রসে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ান।
কলার খোসার উপকারিতা
কলার খোসাতেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কলার খোসাকে আপনি ব্যক্তিগত অনেক কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাসায়নিকমুক্ত কলা হলে তা ভালো কাজে দেবে।
চলুন তবে জেনে নেয়া যাক, এর গুণাগুণ সম্পর্কে-
জুতা পলিশ
জুতা চকচকে রাখতে কলার খোসা ব্যবহার করা হয়। খোসার ভিতরের নরম অংশ জুতার উপর কিছুক্ষণ ঘষুন। তারপর একটি নরম কাপড় দিয়ে জুতা মুছে ফেলুন।
রূপার উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে
কলার খোসা ব্লেন্ড করে পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এ পেস্টটি রুপার পাতের উপর ঘষুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে একটি শুকনো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
দাঁত সাদা করতে
হলদেটে দাঁত নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। কলার খোসার নরম অংশটি দিয়ে দাঁতের উপর কিছুক্ষণ ঘষুন। নিয়মিত ব্যবহারে দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়ে যাবে।
ব্যথা প্রশমিত করতে
শরীরের যেকোনো প্রদাহে সরাসরি কলার খোসা লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর খোসাটি সরিয়ে ফেলুন। দেখবেন ব্যথা অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া ভেজিটেবল অয়েল এবং কলার খোসা একসাথে ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রণ প্রতিরোধে
ব্রণের উপর কলার খোসার একটি ছোট টুকরো কেটে নিয়ে নরম অংশটি ম্যাসাজ করুন। তারপর ৫ মিনিটের জন্য তা রেখে দিন। এটি শুকিয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ডিমের সাদা অংশ এবং কলা খোসার ভিতরের অংশ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এ মিশ্রণটি ত্বকে ৫ মিনিট ধরে ব্যবহার করুন ৫ মিনিট। তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কালো দাগ দূর করতে
ব্যথায় কালো হয়ে যাওয়া দাগ দূর করতে কলার খোসা বেশ কার্যকর। দাগের স্থানে কলার খোসা কিছুক্ষণ ঘষুন অথবা ঐ স্থানে কলার খোসা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন।
দাদের ওষুধ
কলার খোসা দাদের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। চুলকালে সেই অংশে কলার খোসা ঘষে দিলে চুলকানি বন্ধ হবে। কোথাও পাঁচড়া-জাতীয় কিছু হলে সেই জায়গায় কলার খোসা মেখে রাখুন, অথবা কলার খোসা পানিতে মধ্যে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে সংক্রমিত জায়গা কয়েক দিন ধুয়ে ফেলুন।
মশা কিংবা পোকামাকড়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে
মশার কামড়ে ফুলে, লাল হয়ে ওঠা ত্বকের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার করুন। তবে আক্রান্ত স্থানটিতে কলার খোসা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একবার ডেটল দিয়ে মুছে নেবেন। তাতে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যাবে।
সোরিয়াসিস রোগে
সোরিয়াসিসের মতো মারাত্মক রোগের জন্যও কলা বেশ কার্যকর প্রতিষেধক। ত্বকে এটি ব্যবহার করার ১০ মিনিটের মধ্যে সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলো চলে যাবে।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলার পুষ্টিগুণ গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে। বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি দিতে এবং মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যও কলা খুব উপকারি।
চলুন দেখে নিই, এসময় কলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা-
- কলা গর্ভাবস্থায় বমি বমিভাব থেকে মুক্তি দেয়।
- এডিমার কারণে গর্ভবতী মহিলার গোড়ালি, পা এবং অন্যান্য জয়েন্টগুলিতে ফোলাভাব হতে পারে। আপনার ডায়েটে কলা অন্তর্ভুক্ত করুন; এ ফোলাভাব কমে যাবে।
- গর্ভাবস্থার শেষ ত্রৈমাসিকে শক্তি স্তরে ভারসাম্য থাকা জরুরি। কলা আপনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
- গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ফলে শরীরে ফোলেটের মাত্রা উন্নত হয় এবং শিশুর জন্মগত ত্রুটি হ্রাস পায়। এসময় নিয়মিত কলা খাওয়া শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য জরুরি।
- কলাতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার থাকে যা গ্যাসের ফলে পেটে ফোলাভাব হওয়া কমাতে সাহায্য করে।
- কলা ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা শিশু এবং মা উভয়েরই হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক। শরীরে পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণের জন্যও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
- কলা ক্ষুধার উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। গর্ভবতী মহিলারা যাদের ক্ষুধা হ্রাস হয়ে যায়, তাদের নিয়মিত কলা খাওয়া উচিৎ।
সতর্কতা:
কলাতে চিটিনেজ নামক অ্যালার্জেন থাকে, যা ল্যাটেক্স-ফ্রুট সিনড্রোমের কারণ হয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদেরও খুব বেশি কলা খাওয়া উচিৎ নয়, কারণ এতে চিনির মাত্রা দ্রুত বাড়তে পারে।
কলার অপকারিতা
১) কলার মধ্যে অতিমাত্রায় পটাশিয়াম বিদ্যমান। অত্যাধিক পরিমাণে পটাশিয়ামের উপস্থিতির কারণে হৃদপিণ্ড অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
২) কলা গাছের পাতা, কান্ড সবকিছুই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু এলার্জির আশঙ্কা থাকলে দেখে নেবেন কলা গাছের কোন বিশেষ অংশ আপনার খাওয়া উচিৎ নয়।
৩) কলার মধ্যে উচ্চমাত্রায় অ্যামিনো এসিড থাকায়, অধিকমাত্রায় কলা খাওয়ার ফলে রক্তনালীতে প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে মাথাব্যথার সৃষ্টি হয়।
৪) অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে হাইপারক্যালেমিয়া রোগ দেখা দিতে পারে। যার ফলে পেশির দুর্বলতা কিংবা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা হতে পারে।
৫) যদি কারো কিডনির সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে তাদের কলা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিৎ।
প্রাণবন্ত থাকতে কে না চায়? কিন্তু সবসময় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহুমুখী কাজের চাপ যেনো দিন দিন বেড়েই চলেছে। সময়ের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতে-ই দিনের শেষ। এই নিরন্তর ব্যস্ততার মাঝেও চটপটে থাকতে চাই শরীরে সঠিক মাত্রার পুষ্টিগুণ। একদম ছোট শিশু থেকে শুরু করে, কিশোর-তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক এমনকি বৃদ্ধদেরও নিয়মিতভাবে ফল খাওয়া উচিৎ। কলা তেমনই একটি ফল যা খেতে সুস্বাদু এবং অবাক করা সব ভেষজগুণে টইটম্বুর।
Source:
https://www.healthline.com/nutrition/11-proven-benefits-of-bananas
https://www.medicalnewstoday.com/articles/271157
https://www.bbcgoodfood.com/howto/guide/health-benefits-bananas
https://www.everydayhealth.com/diet-nutrition/11-banana-health-benefits-you-might-not-know-about/