এইডস রোগের উৎপত্তি, লক্ষণ ও চিকিৎসা

সমাজের চোখে এইডস রোগীরা ব্রাত্য। এইডস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গম থেকে হয়ে থাকে। তবে এটাই এইডস হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। ছোট্ট শিশু এইচআইভি পজিটিভ নিয়ে জন্মায় কারণ তার বাবা-মা কেউ একজন এই ভাইরাসের ধারক। তাই, ডাক্তাররা বিয়ের আগে রক্তপরীক্ষা করা আবশ্যক বলে মনে করছেন।

তবে এইচআইভি পজিটিভ নয় এমন ব্যক্তিরাও অনেক সময় এইডসে আক্রান্ত হন। কারণ বিরল প্রজাতির কিছু ক্যানসার থেকেও এইডস হতে পারে। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট আপনার সুস্থ জীবনধারাকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে, এজন্য সতর্ক থাকুন।

এইডস রোগের উৎপত্তি

কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসাতে ১৯২০ সালে প্রথম এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। মূলত কঙ্গো ১৯০৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। ঐসময় প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ লোক রেলে কিনসাসায় যাতায়াত করতো। বিভিন্ন দেশ থেকে লোকসমাগম এবং অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের ফলে কঙ্গোতে এইচআইভি’র সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এ রোগের বিস্তারের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও অনেকাংশে দায়ী। যুদ্ধকালীন সময়ে একই সিরিঞ্জ বারবার ব্যবহার করে আহত সৈন্যদের অনিরাপদ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়ার কারণে সংক্রমণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। আফ্রিকান দেশগুলোর অনিরাপদ যৌনপল্লীগুলোও এ ভাইরাসের সংক্রমণের অন্যতম কারণ।

১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের গবেষকরা সর্বপ্রথম এইডস এর ভাইরাস শনাক্ত করে এর নাম দেন হিউম্যান টি-সেল লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস, সংক্ষেপে HTLV (III) । পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্সের গবেষকরা এ মরণব্যাধি ভাইরাসের নাম দেন ‘লিম্ফাডেনোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েটেড ভাইরাস’ (Lymphadenopathy Associated Virus), সংক্ষেপে ‘লাভ’ (LAV)। এর ২ বছর পর এ ভাইরাসের নতুন নামকরণ করা হয় হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (Human Immuno-deficiency Virus-HIV)।

এইচ আই ভি/এইডস সংক্রমণের তিনটি ধাপ

এইচআইভি’র সংক্রমণ তিনটি পর্যায়ে হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এটি আপনার ইমিউনিটি সিস্টেমকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে।

এই স্তরগুলি হলো –

প্রথম স্টেজ: অ্যাকিউট এইচআইভি ইনফেকশান

প্রাথমিকভাবে এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও মারাত্মক কোনো প্রভাব শরীরে পড়ে না। তবে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি এসময় ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এ শারীরিক অবস্থাকে বলা হয় রেট্রোভাইরাল সিনড্রম বা প্রাথমিক এইচআইভি সংক্রমণ। এইডসের প্রথম স্টেজে ফ্লুর মতো জ্বর হয়, আবার ১-২ সপ্তাহ পরে সেরেও যায়। এছাড়া এ স্তরে এইডস এর আরো বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যায়; যেমন- পেটের প্রদাহ, মাথাঘোরা, বমিভাব, ক্লান্তি, পেশীর ব্যথা, গলা ব্যথা, গাঁট ফুলে যাওয়া, শরীরের ঊর্ধ্বাংশ বা টরসোতে লাল লাল গোটা গোটা দাগ, তীব্র জ্বর ইত্যাদি। অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গম বা অন্যান্য কারণে এইচ আই ভির ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এ ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য আপনি অ্যান্টি-এইচআইভি ওষুধ খেতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়, কারণ এসব পিইপি (PeP- Post-exposure Prophylaxis) ওষুধের অনেক ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

দ্বিতীয় স্টেজ: ক্রনিক এইচআইভি ইনফেকশান

এইচআইভি সংক্রমণের দ্বিতীয় স্তরকে অ্যাসিম্পটোম্যাটিক বা ক্লিনিক্যালি লেটেন্ট পিরিয়ড বলে। এ সময় এইচআইভি’র সংক্রমণ বা এইডস এর লক্ষণ বোঝা যায় না। আর সে কারণেই দ্বিতীয় স্টেজ খুবই ভয়ঙ্কর। আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনার শরীরে কতটা শক্তিশালী ভাইরাস বাসা বেঁধে আছে। আর নিজের অজান্তেই রক্তদান বা অন্য কোনো উপায়ে এইচআইভি ভাইরাস অন্যের শরীরে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। ক্রনিক এইচআইভি ইনফেকশানের স্টেজ দশ বছর পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

এ সময় এই ভাইরাস আপনার রক্তের সি-ডি-ফোর-টি কোষের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে আপনার রক্তে কি পরিমাণে এ কোষ বিদ্যমান। ইমিউনিটি সিস্টেম ভেঙে পড়ার কারণে আপনার রক্তে এই কোষের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকবে এবং আপনি আরো দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তবে সতর্কতা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন।

তৃতীয় বা অ্যাডভান্স স্টেজ: এইডস

যখন কারো রক্তে প্রতি মাইক্রো লিটারে সি-ডি-ফোর-টি কোষ ২০০’র নিচে নেমে যায়, তখন ধরে নিতে হবে এটি সংক্রমণের অ্যাডভান্সড্ স্টেজ। আবার যাদের কাপোসি’স সারকোমা (Kaposi’s Sarcoma) বা ত্বকের ক্যানসার এবং নিউমোসাইটিস নিউমোনিয়া (Pneumocystis Pneumonia) থাকে, তাদের এইডস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এসময় শরীরে ক্লান্তিভাব, গলা ও পেট ও থাইয়ের মাঝ বরাবর অংশে ফোলাভাব, দীর্ঘসময় ধরে জ্বর, রাত্রে ঘাম হওয়া, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, ত্বকের উপর বেগুনি রঙের দাগ, হাঁপানি, অনেক দিন ধরে ডায়রিয়া হওয়া, মুখ, গলা ও ভ্যাজাইনাতে ছত্রাক সংক্রমণ, হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ বা চোট পাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে।

 

এইচআইভি/এইডস এর সংক্রমণ

এইচআইভি ভাইরাস সিডি৪ টি লিমফোসাইট জাতীয় কোষের ভেতর আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকে। এসব কোষ সহজে ধ্বংস হয় না, কারণ এদের মেটাবলিজম বা বিপাকীয় ক্ষমতা অতি উচ্চ। তাই এগুলোই এইচআইভির মূল লক্ষ্যবস্তু।

সাধারণত বিভিন্ন বডি ফ্লুইড বা শারীরিক তরলের মাধ্যমে একজন থেকে আরেক জনের শরীরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। রক্ত, সিমেন, ভ্যাজাইনাল ও রেকটাল ফ্লুইড এবং মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

এছাড়া অন্য যে উপায়ে এইচআইভি ভাইরাস অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে-

  • ১। এইচআইভি সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে অ্যানাল সেক্সের মাধ্যমে। সমকামী পুরুষ যারা কোনো সুরক্ষা ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করেন তাদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
  • ২। অসুরক্ষিত বা অন্যের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ অথবা সূচ ব্যবহার করলেও এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে।
  • ৩। ট্যাটু করলে বা নাক/কান পিয়ারসিং করলে। যদি এই যন্ত্রগুলো স্টেরিলাইজ না করা হয় তাহলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
  • ৪। কোনো গর্ভবতী মা যদি এইচ আই ভি পজিটিভ হয়, তবে জন্মের পর তার সন্তানের রক্তেও এই ভাইরাস থাকতে পারে।
  • ৫। স্তন্যপানের সময়।
  • ৬। এইচ আই ভি পজিটিভ আছে এমন কেউ যদি আপনাকে রক্ত দেয় তাহলেও এই ভাইরাস আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এইডস এর প্রধান লক্ষণসমূহ

এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি কণ্ঠনালীতে ব্যথা ও শরীরে র‍্যাশ দেখা দেয়।

অন্যান্য রোগের মতো সুনির্দিষ্ট কোনো শারীরিক পরিবর্তন এইডস আক্রান্ত রোগীর দেহে দেখা যায়। তবে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু উপসর্গ দেখলে আমাদের এইডস পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

যেমনঃ

  • দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে জ্বর থাকা।
  • জিভে,ঠোঁটে,গলায় ও যৌনাঙ্গে ঘা হয়ে যাওয়া।
  • শারীরিক ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে।
  • কোনও কিছু খাওয়ার সময় মুখে ও গলায় ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • শুকনো কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা।
  • রাতের বেলা সারা শরীরে ঘাম দেখা দেওয়া।
  • শরীরের লিম্ফ নোড বা লাসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
  • দীর্ঘ সময় ধরে ডায়রিয়া থাকা।
  • শরীরের ওজন কমতে থাকা।
  • ধীরে ধীরে শরীরের অঙ্গ অকেজো হয়ে যাওয়া।
  • মস্তিষ্কে ক্রিপটোকোকাল মিনিঙ্গিটিস নামক এক ধরনের পরজীবির সংক্রমণ দেখা দেয়। ফলে স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়া।
  • ঘাড়ে ও বগলে ফোলাভাব দেখা দেওয়া।
  • চোখ, নাক, মুখ, পিঠ, গলায় লাল, গোলাপী অথবা কালো রঙের র‌্যাশ বেরোনো।
  • মুখ ও জিহ্বায় সাদা দাগ পড়ে, এমনকি মুখ বেঁকে যেতে পারে।
  • মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আগের তুলনায় এসময় ব্লিডিং এর পরিমাণ কম হয়।

অনেক সময় রক্ত পরীক্ষায়ও এইডসের জীবাণু ধরা পড়ে না। এইচআইভি ভাইরাস আস্তে আস্তে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়, ফলে সামান্য অসুখেও মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়ে পড়ে।

এইডস রোগী কতদিন বাঁচে

এইডসে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কোনো ব্যক্তির দেহে এইডসের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিন থেকেই তার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকে। কোনো রকম চিকিৎসা ছাড়া এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় ৩ বছরের মতো বেঁচে থাকতে পারেন৷ তবে অতিমাত্রায় সংক্রমিত হলে রোগী ১ বছরের বেশি সময় বাঁচতে পারেন না।

অনেকসময় কোনো রোগীর দেহে এইডসের সম্পূর্ণ বিকাশ হতে ১০ বছরের মতো সময় লাগে। বিভিন্ন এন্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ ব্যবহার করে রোগীর দেহে এইচআইভি ভাইরাসের ব্যাপ্তিকাল বাড়ানো যায়। তবে সব রোগীর দেহে এসকল ঔষধ পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হয় না। এইডসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই রোগটি সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত না হওয়ায়, নিজের অজান্তেই রোগীর দেহে এইআইভি পূর্ণমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে বর্তমান সময়ে সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণ এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিও দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছেন।

ডায়াগনোসিস বা এইডস টেস্ট

এইডস রোগের সংক্রমণ নির্ণয়ের দুটি প্রধান উপায় রয়েছে। প্রথমত, রোগীর দেহে সরাসরি এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা, দ্বিতীয়ত, ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলো শনাক্ত করার মাধ্যমে এইডস টেস্ট করা। বেশিরভাগ সময়ই রক্ত কিংবা লালার মাধ্যমে রোগীর দেহে এইচআইভির সংক্রমণ জীবাণু পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন ‘ফোর্থ জেনারেশন এইচআইভি টেস্ট’ করানো সম্ভব। আগে পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু এইচআইভি’র অ্যান্টিবডি শরীরে রয়েছে কিনা তা জানা যেত। এখন এইচআইভি অ্যান্টিবডির সঙ্গে p24 antigens-এর উপস্থিতিও নির্ণয় করা সম্ভব।

এছাড়া কেউ চাইলে ঘরে বসে নিজের দেহে এইচআইভির পরীক্ষা করতে পারেন। ‘ওরাকুইক’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে লালা পরীক্ষার মাধ্যমে এইডসের উপস্থিতির পরীক্ষা করা যায়।

এইডস এর চিকিৎসা

এইচআইভি রোগীর দেহে অন্যান্য সংক্রামক রোগ, যেমন হেপাটাইটিস বি বা যক্ষা ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। অনেকসময় নার্ভের সমস্যা, হার্টের সমস্যা বা ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও দেখা দেয়। এমনকি গনোরিয়া, ক্ল্যামেডিয়া, সিফিলিসের মতো মারাত্মক যৌনরোগেও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এইচআইভি’র চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপরে। যদি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তবে তাকে নানা ধরনের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়।

পাশাপাশি ইমিউনিটি সিস্টেমে ভারসাম্য রাখতে করণীয়:

# পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে৷ যেসব খাবার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, সেগুলি এড়িয়ে চলুন; যেমন: কাঁচা মাংস। যথাসম্ভব রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

# নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

# পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন।

এইডস রোগীর জন্য বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং সমাজের মানুষদের মানসিক সমর্থন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এইডস এর ঔষধ

ফিউশন ইনহিবিটর্স এইডস এর চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী ওষুধ যা শরীরের CD4 কোষগুলোতে এইচআইভি ভাইরাস প্রবেশে বাধা দেয়। এইচআইভি অতি অভিযোজনক্ষম হওয়ায় এটি সরাসরি দেহের টি-সেলগুলোকে সংক্রমিত করে এবং এসব সেলের প্রোটিন গ্রহণ করে স্বল্পসময়েই বংশবিস্তার করে। ইসিডিফোর-এলজি ওষুধ কোষের অভ্যন্তরে থাকা প্রোটিনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এইডস এর চিকিৎসায় জিডোবোডিন, ল্যামিবোডিন, নেভিরাপিন, টেনোফোবিন ইত্যাদি ওষুধ প্রেসক্রাইভ করে থাকে।

এইডসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরো কিছু অ্যান্টিবায়োটিকস্:

Alltera Alltera
Valten 300 Mg
Saquin Saquin 500 Mg
Ritocom 50 Mg/200 Mg
Heptavir 10 Mg
Lamimat
Dinosin 100 Mg Tablet
LAMIVIR 100MG
Dinex Ec 400 Mg

এইডস এর ভ্যাকসিন

এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ যেমন হেলপার টি সেল, মনোসাইট, ম্যাক্রোফেজ, ডেনপ্রাইটিক সেল, চর্মের ল্যাঙ্গারহেন্স সেল, মস্তিষ্কের গ্লায়াল সেল ইত্যাদিকে আত্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে এগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। তখন যে কোনো সংক্রামক জীবাণু সহজেই এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে।

এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে মূলত দু’ধরনের ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয়। প্রথমটি হলো প্রিভেন্টিভ বা প্রতিরোধমূলক ভ্যাক্সিন। এটি এইচআইভি নেগেটিভ ব্যক্তিদের জন্য। মৃত এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করিয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদনের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তোলা হয়। আর অন্যটি হলো থেরাপিউটিক ভ্যাক্সিন, যা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং রোগের বিস্তারকে বাধাগ্রস্ত করবে। এই ভ্যাক্সিনগুলো শরীরের সংক্রমিত হওয়া কোষগুলো খুঁজে বের করে এবং তাদের কপি বা প্রতিলিপি তৈরি করতে বাধা দেয়।

যুক্তরাজ্যের একটি সফল গবেষণায় দেখা যায়, এইচআইভি ভাইরাসমুক্ত একজন সুস্থ মানুষের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহকে সফলভাবে এইডসের ভাইরাসমুক্ত করা যায়। প্রক্রিয়াটি এইডস রোগের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি সাধনের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

এইডস প্রতিরোধে করণীয়

এইচআইভির প্রতিরোধের মূল উপজীব্য হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় এবং আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন। এবং একাধিক যৌন সঙ্গী পরিহার করুন। নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অসংক্রমিত মানুষ এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।

পাশাপাশি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ড্রাগ নেয়া থেকে বিরত থাকুন। সূচ, সিরিঞ্জ, ব্লেড বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি একাধিকবার ব্যবহার পরিহার করতে হবে। রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের পূর্বে অবশ্যই জেনে নিতে হবে দাতা ব্যক্তি এইচআইভি নেগেটিভ কিনা। যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কেউ যৌনরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।

এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার অনেকখানি আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সন্তান নেয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করুন। তবে যেসব মায়েরা থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম। যেসব মহিলা এইডসে আক্রান্ত, ডাক্তারগণ তাদের সন্তানদেরকে বুকের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করেন।

জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এইচআইভি পজিটিভ হলেই তৎক্ষণাৎ মৃত্যু ঘটবে না, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একজন রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবেন। রোগীর আশা ও আত্মবিশ্বাস এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।

 

এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের ভূমিকা

এইডস প্রতিরোধে সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিতে পারেন।

যেমন:

  • এইচআইভি/এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বিভিন্ন বিষয়ে সন্তানদের খোলামেলো আলোচনায় অংশ নিতে উৎসাহিত করুন।
  • জীবনভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আত্ননির্ভরশীল করে গড়ে তুলুন ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিন।
  • নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত রাখুন এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিন।
  • স্ব-স্ব ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুশাসন ও আদেশ মেনে চলার পরামর্শ দিন।
  • পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত এইচআইভি ও এইডস বিষয় ও এ সংক্রান্ত বইপত্র/পুস্তিকা সংগ্রহ করে পড়তে উৎসাহিত করুন এবং আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিন।
  • যুবসমাজের উপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন।

এইচ আই ভি/এইডস কখন সংক্রমিত হয় না:

১। এইচআইভি ভাইরাস বাতাস বা পানির মাধ্যমে ছড়ায় না।

২। কোনো এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে।

৩। এইডস রোগীর সঙ্গে করমর্দন করলে বা তাকে জড়িয়ে ধরলে।

৪। এইচ আই ভি পজিটিভ কারো সঙ্গে এক টেবিলে বা এক থালায় খেলে বা তার গ্লাসে কোনো পানীয় পান করলেও এইডস হয় না।

৫। এইডস রোগীর তোয়ালে, বিছানা বা বালিশ ব্যবহার করলেও এইডস হয় না।

৬। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ওয়াশরুম ব্যবহার করলে।

বাংলাদেশে এইডস এর চিকিৎসা

এইচআইভি সংক্রমণ শুধু একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়, বরং আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক ও মানসিক প্রভাব প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক কম; মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বস্তিতে বসবাস করা জনগোষ্ঠী এইচআইভি আক্রান্তের ঝুঁকির তালিকায় রয়েছেন। এখন নারী-পুরুষ যৌনকর্মী ছাড়াও বিবাহিত দম্পতিদের মাধ্যমেও এ রোগের বিস্তার ঘটছে। নারীদের মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়াকে বৈশ্বিকভাবে মহামারীর অশনি সঙ্কেত হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে এইডসের বিষয়ে নজরদারির সুযোগ একদমই সীমিত।

তাছাড়া লাখ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপে অভিবাসী হয়েছেন। তারা সেখানে প্রধানত কায়িক শ্রম করেন। অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ অনেক বেশি। অজ্ঞতার কারণে এইডসে আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে তারা অনুতপ্ত হন।

বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস রোগী পাওয়া যায়। এরপর এইডস রোগী প্রতি বছর ধীরে ধীরে বাড়ছে। সুইস রেড ক্রিসেন্টের তত্ত্বাবধানে ২০০৫ সালে বেসরকারিভাবে সর্বপ্রথম দেশে এইচআইভি/এইডস রোগীদের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর উন্নয়ন সহযোগী গ্লোবাল ফান্ড এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন এবং বিভিন্ন এনজিওর আর্থিক সহায়তায় এ কাজ চলতে থাকে। তবে তারা মূলত এইডস রোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর কাছে ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়ার কাজ করতো। সে সময় এনজিগুলোর শুধু ওষুধ সরবরাহ করতে ব্যয় হতো প্রায় ১৪ কোটি টাকা।

সরকারিভাবে ২০১৬ সাল থেকে এইডসের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পরিচালিত হচ্ছে। একই বছর থেকে এসব কর্মসূচী সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এএসপি কর্মসূচির মাধ্যমে পরিচালিত হতে শুরু করে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আর রোগীরাও আগের তুলনায় বেশি সেবা পাচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে খরচ আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সেবার পরিধি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস মুক্ত হবে বাংলাদেশ।

এ কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীদের নিয়মিত ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

‘প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমটিসিটি)’ প্রকল্পের আওতায় শুধু বিএসএমএমইউ-তে এইডসে আক্রান্ত ৬৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৫২ জন মা সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকদের ৫০ জনই এইচআইভি মুক্ত, ১ জন এইচআইভি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে এবং একজন মারা গেছে। এছাড়া একই সময়ে সিলেটে ২৬ জন অন্তঃসত্তার মধ্যে ২৪ জন এইচআইভিমুক্ত সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন।

এইচআইভি/এইডস নির্মূলে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক মনোবৃত্তির পরিচর্যা, উন্নত মননশীলতা এবং সুকুমারবৃত্তির অনুশীলন একান্তই জরুরি। নারী বা পুরুষ, যে কেউ এইচআইভি সংক্রমিত হলে, তাকে ভয় পাওয়া, ঘৃণা করা বা তার কাছ থেকে দূরে থাকা উচিৎ নয়। তার প্রতি সমবেদনা জানানো, যত্ন করা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আসুন আমরা ঐক্যের হাত তুলি, এইচআইভি প্রতিরোধ করি।

Source:

https://www.healthline.com/health/hiv-aids
https://www.medicalnewstoday.com/articles/17131
https://medbroadcast.com/condition/getcondition/hivaids
https://www.healthxchange.sg/men/health-scares-outbreaks/hiv-symptoms-causes-prevention

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

মাসিকের নানা সমস্যার সহজ সমাধান

মাসিকের নানা সমস্যা

প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর নিয়মিত ও সময়মতো মাসিক হওয়াটা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। তবে যৌবনের প্রারম্ভে ও শেষে কারো কারো অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। মাসিকচক্র নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক মেয়ে দিনের পর দিন গোপনে মাসিকের সমস্যায় ভুগে, লজ্জায় কাউকে বলতে চায় না। এতে বরং নিজেরই ক্ষতি হয়। তাই, হীনমন্যতা এড়িয়ে ভয়কে জয় করে স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন, আর গড়ে তুলুন উৎকণ্ঠামুক্ত জগৎ।

মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ কি কি

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস। আবার অতিমাত্রায় ব্যায়াম করার ফলে শরীরে হরমোন ক্ষরণে তারতম্য ঘটে; যা প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। দৌড়বিদ, সাতারু প্রমুখের ক্ষেত্রে অনেক সময় এজন্য পিরিয়ডে দেরি বা মিস হয়।

মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থির পাশে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস পিরিয়ডের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপে হাইপোথ্যালামাসের এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি যদি আপনার জীবনে এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে, যেমন- কারও মৃত্যু, ব্রেক-আপ, চাকরি না পাওয়া, কাজের চাপ ইত্যাদি, তবে পিরিয়ডে বিলম্ব হতে পারে।

এমনকি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের কারণেও পিরিয়ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। PCOS এর জন্য মুখে এবং গায়ে অতিরিক্ত লোম, ব্রন, তলপেট ব্যাথা, গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়। এটি অত্যাধিক রজস্রাবের জন্যও দায়ী। অনেকের আবার ওভারিতে সিস্ট হয়। এসব জিনগত সমস্যার জন্য মহিলাদেরকে পিরিয়ডে নানানরকম অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যার জন্যও হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। এজন্য পিরিয়ডে বিলম্ব হয়। সাথে মানসিক অবসাদ, অতিরিক্ত চুল ওঠা, ওজন বৃদ্ধি এবং সবসময় ঠান্ডা লাগছে মনে হওয়া; এরকম কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিকে সমস্যার কারণ

অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া এতে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিও থাকে। খাদ্যাভ্যাসে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেশি হওয়া এবং ওজন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। বয়ঃসন্ধির শুরুতে সাধারণত ১২-২০ বছর বয়সে অনেকের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন হরমোনের অভাব থাকে। এ কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। অনেকসময় এসব হরমোনের ঘাটতির ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জন্মগত ত্রুটির কারণেও পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।

একমাসে দুইবার মাসিক হওয়ার কারণ

মানসিক চাপ অথবা অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে কিংবা শরীরে কোন হরমোনাল সমস্যা থাকলে মাসে ২ বার পিরিয়ড হতে পারে। Contraceptive pills সেবনের কারণেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

তবে মাসিক যদি নির্দিষ্ট সময়ের দুই অথবা তিন দিন আগে বা পরেও হয় ভয় পাবেন না। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে নির্দিষ্ট দিনের সাথে যদি ছয় দিনের গ্যাপ থাকে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ কি

বছরে একবার বা দু’বার অনিয়মিত পিরিয়ড মোটামুটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনা যদি বারবার ঘটতে থাকপ তবে একে গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার। এটি কেবল আপনার সামাজিক জীবনকেই নষ্ট করবে না, বরং আপনার দৈনন্দিন রুটিন-ওয়ার্কেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।

চলুন দেখে নিই কি কি কারণে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে-

উচ্চ রক্তচাপ

পিরিয়ডের সময় উচ্চ রক্তচাপ ডিম্বস্ফূটনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে ইস্ট্রোজেন এবং অন্যান্য প্রজনন হরমোন উৎপাদনেও বিঘ্ন ঘটে। এতে গর্ভাশয় স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয় না, এবং মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে হয় না।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ

কম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপূর্ণ খাবার মহিলাদের হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দেয়। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিগুলোর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। এর ফলে কর্টিসোল বৃদ্ধি পেতে পারে; যা অনিয়মিত মাসিকচক্রের জন্য দায়ী।

অতিরিক্ত ভারি ব্যায়াম

অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে পিরিয়ড ইরেগুলার হতে পারে। যারা রেসার, হেভি ওয়েট লিফটিং করেন বা অন্যান্য কারণে নিয়মিতভাবে কঠিন পরিশ্রম করেন, তারা এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। কারণ অতিরিক্ত এক্সারসাইজ ইস্ট্রোজেন লেভেল কমায়। এতে পিরিয়ডও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রমের ফলে থাইরয়েড এবং পিটুইটারি গ্রন্থিগুলির স্বাভাবিক কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের অন্যতম কারণ।

মানসিক চাপ

মস্তিস্কে রয়েছে হাইপোথ্যালামাস নামের একটি বিশেষ অংশ, যেখান থেকে প্রতিনিয়ত নিঃসরিত হয় নানা ধরনের হরমোন। এর মধ্যে কিছু হরমোন রয়েছে, যা নারীদেহে মাসিকের জন্য প্রভাবকের কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগলে অনেক সময় হাইপোথ্যালামাস ঠিকমতো কাজ করে না। যার ফলে মাসিক শুরু হতে দেরি হয়।

থাইরয়েড

থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের অবস্থান আমাদের গলার নিচে। এটি শরীরে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি দেহের অভ্যন্তরীণ কাজে সাহায্য করে। থাইরয়েড গ্রন্থির যে কোন সমস্যার কারণে আপনার মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল

জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল সেবন পিরিয়ডের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি মাসিক চক্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিবাহিত নারীরা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বন্ধ করে দিলে বা বার বার ওষুধ পরিবর্তন করলেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। কিছু কিছু জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি, যেমন- IUD-এর প্রভাবেও পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে। আবার হঠাৎ করে এসব জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার বন্ধ করলেও স্বাভাবিক পিরিয়ড ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে যদি পিরিয়ড দেরি বা মিস হয় তবে এতে চিন্তার কোন কারণ নেই।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম

ডিম্বাশয়তে ছোট্ট ছোট্ট সিস্টের উপস্থিতি-ই হলো পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম। এর কারণে মহিলারা অনিয়মিত মাসিক চক্রের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এজন্য প্রতি মাসে ওভারি থেকে ডিম্বাণু নির্গমন হয় না। ডিম্বাণুগুলো ওভারিতে সিস্ট তৈরি করে এর চারপাশে জমা হয় এবং শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মাসিক সময় মত হয় না। কখনো কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ওজন কম বা বেশি হওয়া

শরীরের BMI ১৮ বা ১৯-এর নিচে নেমে গেলে, কম চর্বির কারণে আপনি অনিয়মিত পিরিয়ড অনুভব করতে পারেন। চর্বি দেহে ইস্ট্রোজেন তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযোগী। ওজনে অতিরিক্ত তারতম্য ঘটলে পিরিয়ডের উপর প্রভাব পড়ে। আবার অতিমাত্রায় স্থূল নারীদের ডিম্বাশয়ের চারপাশে ফ্যাট জমেও ওভুলেশন-এ সমস্যা হয়। এজন্য পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

অন্যান্য চিকিৎসাগত শর্তাবলী

ডায়াবেটিস, ফাইব্রোইয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং যৌন সংক্রামিত রোগের জন্যও একজন মহিলা অনিয়মিত পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। রুমাটয়েড-আর্থ্রাইটিসকেও অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য দায়ী করা হয়। এরকম অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

  • বয়সঃ 
    কম বয়সে স্বাভাবিক কারণেই পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। বয়সের সাথে মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়মিত হয়ে যায়। এজন্য কিশোরী বয়সের অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য চিন্তিত হওয়া যাবে না। এসময় অভিভাবকদের উচিৎ, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মেয়েকে সচেতন করে তোলা।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ
    অনিয়মিত মাসিক-এর আরেকটি প্রধান কারণ হলো অসুস্থতা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং নানান রোগব্যাধি শরীরে চেপে বসে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক হয় না।
  • প্রি-মেনোপজঃ
    সাধারণত ৫০ বছর থেকে মেনোপজ হয় বা একবারে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। ৪০ থেকে ৪৫ বছর থেকেই মেনোপজের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। এ পর্যায়কে প্রি-মেনোপজ বলে। এ সময়েও পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।
  • ব্রেস্ট ফিডিংঃ
    ব্রেস্ট ফিডিং-কে বলা হয় ন্যাচারাল কন্ট্রাসেপ্টিভ বা প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যেসব মায়েরা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের পিরিয়ড সাধারণত বন্ধ থাকে বা অনিয়মিত হয়।
    সদ্যজাত শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় মূলত প্রোল্যাকটিন হরমোনের প্রভাবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে থাকে।
  • দৈনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ
    ভ্রমণ বা কাজের সময়ের পরিবর্তন ইত্যাদির জন্যও পিরিয়ডে দেরি বা মিস হতে পারে। তবে এটা সাময়িক; এতে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। এছাড়া নতুন কোন ঔষধ খেতে শুরু করলেও পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে।

নিয়মিত পিরিয়ড না হলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এক মাসে হলে দেখা যায় আরেক মাসে হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো দুই-তিন মাস পরপর পিরিয়ড হয়। কখনো অল্প রক্তপাত হয়, আবার কখনো অনেক বেশি। এতে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস প্রায়। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণেরও কারণ হতে পারে অনিয়মিত মাসিক। এজন্য অনেক সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে এবং অস্বস্তি বোধ হয়।

অনিয়মিত পিরিয়ড কি গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করে?

অনিয়মিত পিরিয়ড মানে আপনার প্রতি মাসে ঠিকভাবে ডিম্বস্ফূটন হচ্ছে না। এটি আপনার প্রজনন স্বাস্থ্যের বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে অনেক মহিলা সারাজীবনের জন্য মা হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। আপনার অনিয়মিত বা অনিশ্চিত পিরিয়ড যদি হরমোনাল হয়, তবে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

মাসিক বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা

৬ মাসের বেশি সময় ধরে যদি মাসিক না হয় অথবা বয়স ১৬ পার হওয়ার পরেও মাসিক শুরু না হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে সতর্ক না হলে শরীরের গ্রোথ হরমোন উত্‍পাদনে ব্যাঘাত ঘটবে এবং দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। কোন কোন মহিলার জন্মগতভাবে যোনিতে ত্রুটি থাকে। এজন্যও মাসিক অনিয়মিত হয়।

আবার মাসিকের আগে বা পরে হরমোনের কারণে স্তন ব্যথা হতে পারে। এজন্য মাঝে মধ্যে পেইন কিলার খেতে পারেন। স্তন ব্যথাকে স্বাভাবিক ধরে নিলেই ভালো। মাসিক অনিয়মিত হওয়ার জন্য আপনাকে কিছু হরমোন টেস্ট করাতে হবে। আমাদের দেশে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন মহিলার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক আরম্ভ হয় না।

অতিরিক্ত ওজন আপনার মাসিক অনিয়মিত হওয়ার জন্য দায়ী। অনেক সময় ওভুলেশন ঠিকমতো না হলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এজন্য একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের বা অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্টের তত্ত্ববধানে হরমোন পরীক্ষা করে তদানুযায়ী ওষুধ সেবন করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

অনিয়মিত মাসিকের সমস্যার জন্য কিছু ওষুধ (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা বাঞ্ছনীয়) –

  • Carbonica
  • Amenorrhea
  • Aconitum n.
  • Viburnum op.
  • Ferrum meta.
  • Natrum

মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

পিরিয়ড নিয়মিত করতে চিকিৎসকেরা সাধারণত হরমোন থেরাপি দিয়ে থাকেন, যা আমরা খাবার পিল হিসেবে চিনে থাকি। কিন্তু এসব পিল-এর অনেক ধরনের সাইড ইফেক্ট থাকে। মোটা হয়ে যাওয়া, খাবারে অরুচি, পিম্পলস, মাথা ব্যথা, পা ব্যথা, পেট ফাঁপা ইত্যাদিসহ নানান অসুবিধা দেখা দিতে পারে। মাসিক অনিয়মিত হলে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। হঠাৎ করে আপনার মাসিক অনিয়মিত হওয়া শুরু করলে সেটিকে নিয়মিত করার সহজ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে।

চলুন দেখে নিই, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করে তাড়াতাড়ি মাসিক হওয়ার কিছু ঘরোয়া সমাধান-

কাঁচা পেপে:

কাঁচা পেপে পিরিয়ড রেগুলেশন-এ সাহায্য করে। এটি জরায়ুর মাসল ফাইবার কন্ট্রাকশনের জন্যও উপকারি। পর পর কয়েক মাস নিয়মিত কাঁচা পেপের রস খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হয়। পিরিয়ড নিয়মিত করা ছাড়াও কাঁচা পেপে হজমে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। তবে পিরিয়ড চলাকালীন এটি না খাওয়াই ভালো। গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকায় গর্ভকালীন সময়েও পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

কাঁচা হলুদ:

হলুদ পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদ প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরের হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় রাখে। কাঁচা হলুদ জরায়ুর মাংসপেশী সঙ্কোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান পিরিয়ড-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধে চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ নিয়ে মধু বা গুড় মিশিয়ে কিছুদিন খেয়ে দেখুন, পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন।

অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী রূপচর্চার পাশাপাশি মাসিক নিয়মিতকরণেও দারুণ কার্যকর। এটি হরমোন রেগুলেশনে সাহায্য করে। সব থেকে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তাজা অ্যালোভেরা পাতার রস সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খান। তবে পিরিয়ড চলাকালীন না খাওয়াই ভালো।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:

রক্তে ইনসুলিন ও সুগার-এর তারতম্যের কারণেও মাসিক অনিয়মিত হয়। এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার করে খান। আপনার পিরিয়ড সাইকেল নিয়ন্ত্রণে এটি সাহায্য করবে। পাশাপাশি রক্তে ইলসুলিন এবং ব্লাড সুগার এর মাত্রা কমিয়ে আপনাকে বাড়তি সুরক্ষা দিবে।

আদা:

১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ মিহি আদা কুঁচি নিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর এতে সামান্য চিনি বা মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন খাওয়ার পর এই পানীয়টি তিন বেলা খাবেন। আদা পিরিয়ড সাইকেল রেগুলেশনে সাহায্য করে এবং অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করে। পাশাপাশি সর্দি-কাশি থাকলেও আদা খাওয়ার ফলে তা দূর হয়ে যায়।

দারুচিনিতে হবে জাদু: 

পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে দারুচিনি দারুণ উপকারি। দারুচিনি ব্যবহারে পিরিয়ডজনিত ব্যথা থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন।এক গ্লাস দুধে ১/২ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো যোগ করুন। সাথে খানিকটা মধু মিশিয়ে নিন। ৪-৫ সপ্তাহ নিয়মিত এই মিশ্রণ পান করুন। পিরিয়ড নিয়ে সমস্যা কেটে যাবে। অনিয়মিত পিরিয়ড দূর করতে চা বা লেবুর রসের সাথেও দারুচিনি গুড়া করে মিশিয়ে খেতে পারেন।

আঙুর: 

আঙুর ফলও পিরিয়ড রেগুলার করার জন্য খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন আঙুরের জুস খেলে বা খাবারের তালিকায় আঙুর থাকলে ভবিষ্যতে মাসিকে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

লেবুর রস: 

পিরিয়ড আসার এক বা দুই সপ্তাহ আগে এক গ্লাস লেবুর রস খালি পেটে পান করুন। তবে লেবুর রসে পানি মেশানো যাবে না। চাইলে আপনি এতে লবণ যোগ করতে পারেন। মাসিক নিয়মিত করতে এটি দারুণ ফলদায়ক।

শশা এবং তরমুজ: 

শশা এবং তরমুজ খুব ঠান্ডা জাতীয় ফল। এক সপ্তাহ যাবৎ দিনে দুই বার করে শসা অথবা তরমুজ খেলে এবং একবার এর জুস খেলে আপনি অনিয়মিত মাসিক থেকে মুক্তি পাবেন ইনশা’আল্লাহ।

জিরা:

মাসিক নিয়মিত করতে জিরা ভারি উপকারি। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ জিরা নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এই পানি এবং জিরা দুটোই খেয়ে ফেলুন। নিয়মিত সেবন করুন, ইনশা’আল্লাহ সুফল পাবেন।

সবজির জুস:

খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি সবজির জুস রাখুন। এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখে ও হরমোন রেগুলেশনে সাহায্য করে। গাজর, পুদিনা পাতা, করলার রস ইত্যাদি দিনে দু’বার করে খেতে পারেন।
গাজরে প্রচুর বিটা ক্যরোটিন রয়েছে, যা মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে। মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দিনে ধনিয়া পাতার রসও সেবন করতে পারেন।

মাসিকের সময় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের চাহিদা তৈরি হয়। এজন্য বেশি বেশি কলা, আপেল, পেয়ারা খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি গরু, মুরগীর মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ডিম, কচুর শাক, লাল শাক, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি, খেজুর, গাব, টমেটো, ডাল, ভুট্টা, শস্যদানা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খান। তবে সফট ড্রিঙ্কস্, কফি ও চা খাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

মূলত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সামগ্রিক সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোবোটিক্স থাকা অপরিহার্য। সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং নিজেকে ঠান্ডা রাখুন।

তিল এবং গুড়: 

তিল আপনার অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করবে। তিলের পুষ্টিগুণ হরমোন উৎপাদনেও সহায়ক। অল্প পরিমাণ তিল ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এর সাথে এক চামচ গুড় মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন খালি পেটে এক চা চামচ করে খান। প্রতিদিন গুড় খেলেও আপনার মাসিক নিয়মিত হবে।

টক জাতীয় ফল: 

টক জাতীয় ফল বিশেষ করে তেঁতুল মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে থাকে। চিনি মেশানো পানিতে কিছু তেঁতুল এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এর সাথে লবণ, চিনি এবং জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এটি দিনে দু’বার করে খেলে দারুণ ফল পাবেন।

যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন:

মাসিক নিয়মিত না হওয়ার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। শরীরে যে সমস্ত হরমোন পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্রেস-এর কারণে সেগুলোর ব্যাল্যান্স নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ঠিকমত পিরিয়ড হয় না। যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে।

 

মেনেপজ কাকে বলে?

মেনোপজ (রজনীবৃত্তিকাল) হলো জীবনের এমন এক পর্যায় যখন মাসিকচক্র চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, এবং গর্ভধারণের আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। প্রত্যেক মহিলার তলপেটে জরায়ুর দু’ধারে দুটি ডিম্বাশয় থাকে। এদের কাজ হল ডিম্বস্ফূটন এবং হরমোন নিঃসরণ। নারীর বয়স ৪০ পার হওয়ার পর ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এবং বয়স যখন ৫০-এ পৌঁছে যায়, তখন ডিম্বাশয় একদমই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

 

মেনোপজের পূর্ব লক্ষণ

সাধারণত ছয় মাস একটানা রক্তস্রাব বন্ধ থাকলে ধরে নেয়া যায় যে মেনোপজ পর্যায় শুরু হয়েছে। এসময় হঠাৎ করে গরম লাগা, মনোসংযোগ না থাকা, মাথাব্যথা, দুশ্চিন্তা, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া, এবং ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। পাশাপাশি কিছু দৈহিক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়, যেমন- শরীরে কিছু বাড়তি মেদ জমে থাকা, স্তনের আকার ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যাওয়া, হজমে ব্যাঘাত, চুল পড়া ইত্যাদি।

নারীদের মেনোপজ হলে দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। এতে করে হাড়ের ক্ষয়, হাড় ভাঙা, হৃদরোগ, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক নারীই এসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, তাদের বদ্ধমূল ধারণা জীবনের সব কিছুই শেষ হয়ে গেল, এভাবে বাঁচার কোন অর্থ নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মেনোপজ মানে জীবনের এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে পদার্পণ। এ নতুন অধ্যায়টি অবাঞ্ছিত নয়- একান্তভাবে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। সংসারে এমন একজন মহিলার মতামতের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর স্বামীর কাছেও তার দাম অনেক বেড়ে যায়, কারণ এখন সে যেকোনো বিজ্ঞচিত মতামত দিতে সক্ষম।

পিরিয়ডের সমস্যাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিন। এসময় গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা ইত্যাদি চিত্তবিনোদনমূলক কাজে প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় ব্যয় করুন। এতে পিরিয়ডকালীন ব্যথা আর অস্বস্তি অনেকটাই লাঘব হবে। আর দেখবেন, আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে প্রাত্যহিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছেন।

Source:
https://medlineplus.gov/druginfo/meds/a682470.html
https://www.medicalnewstoday.com/articles/178635
https://www.healthline.com/health/womens-health/irregular-periods-home-remedies
https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/14633-abnormal-menstruation-periods/management-and-treatment
https://www.drugs.com/condition/menstrual-disorders.html

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

জরায়ু ইনফেকশন | লক্ষণ, করনীয় ও ঔষধ

জরায়ু ইনফেকশন

জরায়ু বা যোনি, যা গর্ভাশয় নামেও পরিচিত, মহিলা প্রজনন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গ।  বিশেষকরে এটি গর্ভের বিকাশে সহায়তা করে। জরায়ুতে ইনফেকশন, যা জরায়ুগহ্বরের প্রদাহ নামেও পরিচিত, বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং মহিলাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকে। মূলত ভেজা ও সিন্থেটিক পোশাক অনেকক্ষণ পরে থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে এসব সংক্রমণ ঘটে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ত্রী যৌনাঙ্গের সঠিক পরিচর্যা না করলে, সেখানে প্রদাহজনিত ব্যথা, যোনি থেকে রক্তপাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ভাইরাস জরায়ুতে দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে, সংক্রমিত কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই, মহিলাদের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

জরায়ুর রোগসমূহঃ

মহিলাদের, জরায়ুর মুখ যেখানে যোনির সাথে মিলিত হয়, তাকে সার্ভিক্স বলা হয়। যখন সার্ভিক্স উদ্দীপ্ত হয়, তখন তাকে সারভিসাইটিস বলে। সারভিসাইটিস সংক্রামক বা অসংক্রামক হতে পারে। সাধারণত যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণে সারভিক্স উদ্দীপ্ত হয়।

এই যৌনবাহিত রোগগুলি হল-

  • ক্লামিডিয়া
  • গনোরিয়া
  • হার্পিস

লেটেক্স অ্যালার্জি এবং ডিউসিং এর কারণেও জ্বালাভাব (প্রদাহ) সৃষ্টি হয়। যেসব মহিলা ক্যানসারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন তাদেরও সার্ভিক্সের মধ্যে জ্বালাভাব দেখা দিতে পারে। এতে যদি মূত্রনালী সংক্রমিত হয় তবে আক্রান্ত মহিলাটি মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যোনিতে চুলকানি অথবা যোনি থেকে রক্তপাতও হতে পারে। বিশেষত যৌন সংসর্গের পরে অথবা মাসিক চক্রের মধ্যখানে অনেক সময় পেটের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে।

এইচপিভি-ও জরায়ু রোগসমূহের মধ্যে অন্যতম। এর ফলে দেহে আঁচিল, গুটি বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়- যা যৌনাঙ্গ থেকে শুরু করে মুখে, হাতে-পায়ে এমনকি মুখের ভেতরেও হতে পারে। এ ভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে। সাধারণত নারী পুরুষ যখন প্রথম যৌন-সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই এ সংক্রমণের শিকার হয়।

জরায়ুতে জ্বালাপোড়া

ইনফেকশান হলে জরায়ু জ্বালাপোড়া করতে পারে। 
গর্ভাবস্থায় জরায়ুর ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্লাডারে চাপ পড়ে। এতে প্রস্রাব ঠিক মতো বেরোতে পারে না। এক্ষেত্রে সাবধান না হলে কিডনির উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি সময়ের আগেই প্রসূতি বেদনা শুরু হয়। অস্বাভাবিক কম ওজনের শিশু জন্মানোরও ঝুঁকি থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় কেটে গেলেও ইউরিনারি ট্রাক্ট (urinary tract) বা ব্লাডার ইনফেকশনের (bladder infection) ঝুঁকি থেকে যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালা করে, তলপেটে চাপ এবং বারবার প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

চলুন দেখে নিই আর কি কি কারণে জরায়ুমুখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে –

  1. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিপান না করার ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে। মূলত পানি আমাদের দেহের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। এজন্য প্রতিদিন আমাদের পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ।
  2. নারীদের ক্ষেত্রে এই উপর্সগটি বেশ কষ্টদায়ক। মেয়েদের পায়ুপথের খুব কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। যার ফলে পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
  3. মাসিক বা পিরিয়ডের কারণেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে। অনেকে সে সময় অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন কিংবা কাপড় ব্যবহার করে। এসব ন্যাপকিন বা কাপড়ের সাথেও জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে প্রবেশ করে সংক্রমণের সৃষ্টি করতে পারে।

জরায়ু ব্যথার কারণঃ

মহিলাদের অনেকে তলপেটে ব্যথা এবং নিতম্বের ব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে মাসিক হওয়ার আগে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। মাসিক হওয়ার সময় এ ব্যথা খুব বেড়ে যায়।
পিরিয়ড জনিত দীর্ঘমেয়াদি এ ব্যথা মূলত জরায়ু প্রাচীরের চারদিকে প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায়ও যোনিতে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এর কয়েকটি কারণ-

জরায়ুর বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যথার এটি সাধারণ কারণ। জরায়ু ভ্রূণের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে আকারে বেড়ে যায়। ফলে এটি যোনি ও আশেপাশের পেশীগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে।

হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা নারীদেহে হরমোনের পরিবর্তন ঘটায়। এটি যোনিকে অযাচিতভাবে শুষ্ক করে তোলে। এর ফলে যোনিতে ব্যথা সৃষ্টি হয়; বিশেষত যৌন মিলনের সময়।

ভ্রূণের বৃদ্ধি: জরায়ুতে ভ্রূণের আকার বাড়ার সাথে সাথে নিতম্বের লিগামেন্টগুলিও প্রসারিত হয়। যোনিকে ঘিরে থাকা লিগামেন্ট এবং পেশীর অত্যধিক প্রসারণের ফলে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা দেখা দেয়। শিশুর ওজন পেলভিক মেঝেতে চাপ তৈরি করার ফলেও যোনিতে ব্যথা সৃষ্টি হয়।

সংক্রমণ: সংক্রমণের কারণে বাহ্যিক যৌনাঙ্গে এবং যোনিতে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। গর্ভাধারণকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বিধায়, এসময় মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

জরায়ুর বিভাজন: জরায়ুর প্রসারণের ফলে যোনিতে তীক্ষ্ণ এবং শ্যুটিংয়ের ন্যায় ব্যথা হতে পারে। তবে, ব্যথা যদি তলপেটে হয় এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।

পেলভিক অরগান প্রোল্যাপস (পিওপি): পিওপি হল গর্ভাবস্থাকালীন এমন একটি অবস্থা যেখানে শ্রোণী বা তার আশেপাশের অঙ্গগুলি কখনও কখনও যোনি বা মলদ্বারে প্রবেশ করে। আপনি যদি তীব্র চাপ অনুভব করেন, অন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়, তবে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। পিওপি চিকিৎসাযোগ্য, তবে এটি মারাত্মক ব্যথা ও জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

এক্ষেত্রে করণীয়:

  • ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমান। এতে আপনার রক্ত ​​সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং যোনি চাপমুক্ত থাকবে
  • একইভাবে, আপনার পা উঁচু জায়গায় রেখে বসুন। গর্ভাবস্থায় যোনিপথের চাপ অনেকাংশে হ্রাস করতে এটি সহায়ক। ফলে যোনিতে ব্যথাও কমে যায়।
  • সাঁতার এবং যোগ ব্যায়ামের মতো সাধারণ অনুশীলনগুলি শরীরে রক্ত চলাচল বাড়াতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে অনেক কার্যকর। এভাবে যোনির ব্যথা অনেকখানি উপশম করা সম্ভব।
  • নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ করলে যোনির চাপ ও ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • যদি আপনার পেট বিশাল হয়, তবে বুঝে নিবেন এটি শিশুর মাথা যোনিতে চাপ দেয়ার ফলে হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় সাপোর্ট বেল্ট পরলে সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যথা অস্বস্তিকর হতে পারে যদিও এটি মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। জীবনযাত্রার কয়েকটি পরিবর্তন যোনির ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। তবে আপনি যদি মনে করেন, ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়েও খারাপ, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

জরায়ু মুখের ইনফেকশন কি?

জরায়ু ইনফেকশন বা পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) বলতে ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণকে বোঝায়। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক সহ বিভিন্ন জীবাণুর কারণে হতে পারে। মাঝে মাঝে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। যৌনবাহিত রোগের (এর মধ্যে chlamydia and gonorrhoea অন্যতম) কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সংক্রমণ হয়ে থাকে। আবার ডি অ্যান্ড সি, কপার টি, অ্যান্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি, হিস্টারোসাল-ফিঙ্গোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষার কারণেও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর ফলে প্রজনন অঙ্গগুলোর জটিলতা, গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়।

জরায়ুতে ইনফেকশন কেন হয়?

জরায়ুতে ইনফেকশনের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

  • যৌন সংক্রামিত রোগ (STD): ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া এবং ট্রাইকোমোনিয়াসিস জরায়ুতে ইনফেকশনের সাধারণ কারণ।
  • যোনি ব্যাকটেরিয়োসিস (BV): এটি যোনিতে থাকা “ভালো” ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে ঘটে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে যোনিতে “ভালো” ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • গর্ভপাত: গর্ভপাতের পর জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • আইইউডি ব্যবহার: ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস (IUD) ব্যবহার জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি সামান্য বৃদ্ধি করতে পারে

অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু ইনফেকশন কেন হয়?

অবিবাহিত মেয়েদের জরায়ু ইনফেকশনের কিছু সম্ভাব্য কারণ:

  • অস্বাস্থ্যকর যৌন অভ্যাস: যৌনতা চলাকালীন সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার না করা, যেমন কনডম, জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • অপরিষ্কার পরিবেশে সাঁতার কাটা: অপরিষ্কার পানিতে সাঁতার কাটলে জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার: অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করলে জরায়ুতে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণঃ

অন্যান্য কারণের পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের জন্যও জরায়ু ইনফেকশন হতে পারে। এর ফলে তলপেটে এবং কোমরের নিচে ব্যথা হয় এবং সে ব্যথা লাগাতার চলতে থাকে। এ রোগের কিছু পরিচিত লক্ষণ হলো: এবনরমাল স্রাব, জ্বর, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

আরো কিছু লক্ষণঃ 

  1. অনিয়মিত মাসিক এবং জ্বর জ্বর লাগা
  2.  মাসিকের সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা
  3.  সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া
  4.  মল-মূত্র ত্যাগ কালে যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হয় ও ব্যথা হয়।
  5.  হাত, পা, শরীর আগুনে পোড়ার মত জ্বালা করে
  6.  প্রস্রাবের সময় ও পরে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক বেদনা
  7. জরায়ুর গ্রীক ফোলা ও শক্ত থাকা
  8. কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অত্যন্ত ক্লান্তিকর অনুভূতি

এই লক্ষণগুলোর তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। এমনকি অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও আপনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ এ রোগের জীবাণুগুলো জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায়ও থাকতে পারে।

গর্ভাবস্থায় জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ:

  • যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব
  • যোনিতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া
  • পেটে ব্যথা
  • মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা
  • যোনি থেকে রক্তপাত

 

কিভাবে সংক্রমণ ঘটে?

জরায়ু সাধারণত ক্ল্যামাইডিয়া, ই. কলাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ব্যাকটেরয়েডস, গনোরিয়া ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। জীবাণুগুলো যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু ও ট্রাইকোমোনাড (যা পুরুষের যৌনাঙ্গে থাকে) বাহিত হয়ে যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে। পরে জরায়ু, নালী হয়ে ডিম্বাশয়েও এসব ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

নারীদের যৌনাঙ্গে অবস্থিত সার্ভিক্স(cervix) ব্যাকটেরিয়াকে ইউরেটাসে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। সন্তান জন্মদান কিংবা সার্জারির সময় কার্ভিক্স খোলা থাকে বিধায়, এসময়ও ব্যাকটেরিয়া সহজে জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে।

ডায়াগনোসিসঃ

এ রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন পড়ে। জরায়ুর মুখ বা মূত্রনালী থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণুর উপস্থিতি নিরূপণ করা হয়। এছাড়া সংক্রমণের লক্ষণ বোঝার জন্য রক্ত, ইউরিন পরীক্ষা ও অ্যাবডমিনাল আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কপি পরীক্ষার মাধ্যমেও জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

প্রতিবছর দেশে প্রায় ৯ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করা মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। গ্রামীণ নারীরা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। প্রথমে জরায়ু-তে ইনফেকশন, এবং পরে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে ক্যান্সারে রূপ নেয়। অনেকে লজ্জার কারণে চিকিৎসাও নিতে চায় না। তারা শরীরে রোগ পুষে রাখে। অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনের ফলে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অপরিণত বয়সে বিয়ে এবং ঘন ঘন প্রেগন্যান্সি বা ডেলিভারির কারণে জরায়ু ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। যেসব মেয়েরা বহুগামী কিংবা স্বামীরা অনেকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে এমন ক্ষেত্রেও নারীদের এইচপি (Human Papilloma Virus) ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

জরায়ু ইনফেকশনের ঔষধঃ 

প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক এবং পেইন কিলার দিয়ে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় খেতে হবে।

  • অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য
  • অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ: ছত্রাকের সংক্রমণের জন্য
  • ভাইরাসবিরোধী ওষুধ: ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য

জরায়ু সংক্রমণের প্রতিকারে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকস্:

  • Pulmocef 1500
  • Zomycin 250
  • Zybact 250 Mg
  • Cefadur CA 250 Mg
  • Zycin 250 mg
  • ALTAXIME 500MG
  • Cef 250 ইত্যাদি।

যদি এসব অ্যান্টিবায়োটিকস্ সেবনের পরও কোনো উন্নতি দেখা না যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হতে পারে; যেমন: ডিম্বনালী সংক্রমিত হয়ে পুঁজের সৃষ্টি হলে এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায়। এছাড়া যাদের বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের তীব্রতা কমানোর জন্য ডিম্বনালী এবং জরায়ু সার্জারি করে অপসারণ করা হয়।

উল্লেখ্য, আপনার যদি ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হবে যা গর্ভকালীন সময়েও নিরাপদ। তবে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করতে হবে যদিও সংক্রমণের লক্ষণগুলো সেরে যায়। অন্যথায়,আবার যেকোন মুহূর্তে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। ৩০ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস তিন মাসের মধ্যে আবার দেখা দেয়। অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ হল খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলো-কে মেরে ফেলা। কিন্তু এটি ভালো ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়। পুনরায় লক্ষণ প্রকাশ পেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এর পাশাপাশি স্বামী বা পার্টনারের চিকিৎসাও জরুরি। অন্যথায় বার বার জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাবে।

সময়মতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাঃ

যথাসময়ে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা না করালে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে তলপেট ব্যথা, কোমর ব্যথা, ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে বা জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারণে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সিও (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে গর্ভপাত, সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর গর্ভবতী নয় এমন মেয়েদের ক্ষেত্রে পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ এর আশঙ্কা দেখা দেয়। এটি sexually transmitted disease (যেমন- গনোরিয়া, ক্লামাইডিয়া, HIV ইত্যাদি)-এ সংক্রমিত হওয়ার পথকে সুগম করে।

তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। শুধু একটু সচেতনতা আপনাকে মারাত্মক জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে।

জরায়ু ইনফেকশনের হলে ঘরোয়া চিকিৎসা

এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান খুব উন্নত। তবে ডাক্তারি পরামর্শের পাশাপাশি আপনি ঘরোয়া কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

চলুন, দেখে নিই কি উপায়ে আপনি ঘরে বসেই সংক্রমণের মাত্রা হ্রাস করবেন-

দই ব্যবহারে:

দইয়ে Lactobacillus acidophilus নামে একধরনের ভাল ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যেখানে খুব চুলকানি হচ্ছে বা সংক্রমণের প্রভাব পড়েছে, ২০-৩০ মিনিট দই লাগিয়ে রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সরাসরি যৌনাঙ্গেও দই লাগাতে পারেন। দিনে দু’বার লাগান। ঘণ্টা দুই রেখে ধুয়ে নিন। এটি আপনার শরীরকে যেকোনো ধরনের ইনফেকশন থেকে রক্ষা করবে।

নারকেল তেল:

নারকেল তেলে অ্যান্টিফানগাল উপকরণ থাকে যা ছত্রাককে ধরাশায়ী করতে খুবই কার্যকরী। সংক্রমণ এলাকায় (তবে যৌনাঙ্গের ভিতরে লাগাবেন না) ভালভাবে নারকেল তেল লাগান। দিনে ২ থেকে ৩ বার লাগালে দ্রুত কাজ হবে। সঙ্গে একটু দারুচিনি তেল মিশিয়ে নিলে সংক্রমণ ছড়ানোর আর ভয় থাকবে না।

অ্যাপল সিডার ভিনিগার:

হাল্কা গরম জলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে দিনে দু’বার করে সপ্তাহখানেক খান। সাদা ভিনিগার বা অ্যাপল সিডার ভিনিগার জলে মিশিয়ে সংক্রমণের জায়গায়ও লাগাতে পারেন। এতে ভালো কাজ হবে।

রসুন:

অ্যান্টিফাংগাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ঘরোয়া অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে রসুনের জুড়ি নেই। কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। যেসব জায়গায় ফুসকুড়ি হয়েছে বা জ্বলছে ঐ স্থানে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। পাশাপাশি রোজ এক কোয়া করে রসুন খেতে পারেন। ছত্রাক নিরাময়ে এটি বেশ উপকারি।

যতটা সম্ভব ঢিলেঢালা পোশাক পড়া দরকার। আর সংক্রমণের জায়গাটা সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। দেখবেন দ্রুত সেরে উঠছেন ইনশা’আল্লাহ।

যেসব বিষয় মেনে চলা খুব জরুরি:

নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এবং কনডম ব্যবহার জীবাণুর সংক্রমণ থেকে জরায়ুকে রক্ষা করে।

যত্রতত্র এম আর (গর্ভপাত) করানো থেকে বিরত থাকুন। বাংলাদেশে অনেক ফার্মেসির দোকানেও গর্ভপাত করানো হয়। যা কখনোই উচিৎ নয়। কারণ সেখানে জীবাণু সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে। তাই গর্ভপাত বা ডিএন্ডসি করাতে হলে কোন ভালো গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে গর্ভপাত করানো উচিৎ।

ধূমপানের অভ্যাস থাকলে এখনি তা ত্যাগ করার সময়। ধূমপায়ীদের রক্তে (নিকোটিনের) পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং জরায়ুর মুখে ক্যান্সার এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হট টাব বা বাথ টাব এ গোসল না করে শাওয়ার নেয়ার চেষ্টা করুন। গোসলের পর যৌনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখতে হবে। সুগন্ধি ও রুক্ষ সাবান যথাসম্ভব পরিহার করুন।

বিশেষ অঙ্গের নিয়মিত যত্ন ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আপনাকে পরিছন্ন ও স্বাস্থ্যবান রাখবে। যত্ন নেয়া মানে শুধু গোসলের সময় পরিষ্কার করা নয়। নারীদের যৌনাঙ্গ প্রতিদিন তিন থেকে চারবার পরিষ্কার করা উচিৎ। বিশেষ করে বর্ষা ঋতু এবং পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে। এতে করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

সুতি কাপড় নরম এবং অধিক ত্বকবান্ধব। এটি দ্রুত আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং বাতাস চলাচলের জন্য অধিক উপযোগী। বিশেষ কোনো উপলক্ষে সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস পরতে পারেন। পাশাপাশি টাইট জামাকাপড় এড়িয়ে চলুন। কারণ এ ধরনের পোশাক বায়ু চলাচলে বাধা তৈরি করে।

Douche ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। গর্ভাবস্থায়ও Douche এর ব্যবহার উচিৎ নয়।

কোনো রকম ছোট সংক্রমণকে অবহেলা করা উচিৎ নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে, যৌন-স্বাস্থ্য ভালো থাকা মানে শরীর ভালো থাকা। নির্বিঘ্ন সুরক্ষিত যৌনজীবন আনন্দময়।

Source:
https://www.medicalnewstoday.com/articles/321298
https://www.medicalnewstoday.com/articles/177923
https://www.webmd.com/women/guide/your-guide-urinary-tract-infections
https://www.webmd.com/women/guide/cervicitis
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/urinary-tract-infection/symptoms-causes/syc-20353447
https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/pelvic-inflammatory-disease/symptoms-causes/syc-20352594
https://medlineplus.gov/ency/article/000888.htm
https://www.southerncross.co.nz/group/medical-library/urinary-tract-infections-symptoms-treatment-prevention

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা ও ব্যবহার

অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা

শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে অলিভ অয়েলে খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে কমায় কোলেস্টেরলের মাত্রা, হৃদরোগের ঝুঁকি, ডায়াবেটিস, এবং হজমের সমস্যা। এর পাশাপাশি রান্নায় স্বাদ-গুণ বাড়াতে অলিভ অয়েলের ব্যবহার অতুলনীয়। শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, এটি গায়েও মাখা যায়। ত্বকের জন্য উপকারী নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর অলিভ ওয়েল খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলো জেনে নেই। 

 

অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলপাই গাছের ফল থেকে তৈরি অতুলনীয় এই অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ই, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম আছে। এটি oleic acid ও palmitoleic acid-এর মতো উপকারী উপাদানেও সমৃদ্ধ। অলিভ অয়েলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

অলিভ অয়েল খাওয়ার উপকারিতা

শীতকালে অলিভ অয়েল খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন একটা করে জলপাই খান। নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ভালভাবেকাজ করে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

শুধু তাই নয়, অলিভ অয়েল সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে। এতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত জলপাই খান এবং প্রয়োজনে চুলে লাগান। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এর পাশাপাশি জলপাইয়ের তেল সেলুলার স্ট্রেস কমিয়ে অকাল বার্ধক্য রুখে দেয়।

চলুন একনজরে দেখে নিই, অলিভ অয়েল কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে-

অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ফ্যাট

শরীরকে সুস্থ রাখতে এতে থাকা উপকারী ফ্যাট প্রয়োজন। বিশেষ করে হরমোনাল এবং ব্রেন ফাংশন ঠিক রাখতে উপকারী ফ্যাটের কোনো বিকল্প নেই। তাই, নিয়মিত অলিভ অয়েল খাওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে oleic acid-এর মতো monounsaturated fat স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। এতে আরো রয়েছে ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের বাড়তি সুরক্ষা দেয়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে

আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অলিভ অয়েলের ব্যবহার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হার্টের যেকোনো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা হ্রাস পায়। এতে উপস্থিত polyphenols নামক উপাদানটি কোষের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ কারণে arterial wall-এর ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি পায়। আমাদের পাকস্থলীর জন্য এ তেল দারুণ উপকারী।

ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে

নিয়মিত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খান, দেখবেন ডায়াবেটিস আপনার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। কারণ, এতে  বিদ্যমান পলি ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে, যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

পেটের রোগের প্রকোপ কমে

গ্যাস-অম্বলের সাথে বদহজমের সমস্যাও এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, তেমনি আছে বদহজমের সমস্যাও। এতে রয়েছে monosaturated fat যা bowel movement এর উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়ে যায়। তাই, বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি অলিভ অয়েল খাওয়ার পরামর্শ দেন। নিয়মিত এক চামচ সঙ্গে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভাল হয়।

ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি দূরে রাখে

জলপাইয়ের তেলে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানকে ধ্বংস করে oxidative damage প্রতিরোধ করে। সেই সঙ্গে এটি ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধ্বংস করে দেয়। নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের অস্বাভাবিক কোষ গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়। পাশাপাশি এটি এপিজেনিক পরিবর্তন থেকেও শরীরকে রক্ষা করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

এতে প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও পলিফেনাল মজুদ থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই, পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাসায় তৈরি খাবারে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। বাড়তি পুষ্টিগুণ পেতে কাঁচা অলিভ অয়েলও খেতে পারেন।

স্ট্রেস-ডিপ্রেশনের প্রকোপ কমায়

অলিভ অয়েল খাওয়া মাত্র শরীরে serotonin নামে এক প্রকার ‘ফিল গুড’ বা ভাল লাগার হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মানসিক অবসাদ প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকর।

ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতে

ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে এর জুড়ি নেই। এতে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিডসমূহ মস্তিষ্কের উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, এটি ব্রেন সেলে তৈরি হওয়া Beta-Amyloid Plaque-ও দূর করে। এর ফলে স্নায়ু কোষগুলো সচল হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে

চটজলদি ওজন কমাতে অলিভ অয়েল খেতে ভুলবেন না। এটি হজমে সাহায্য করে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া জলপাইয়ে বিদ্যমান ভিটামিন-ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভেন-৩-ওলস, অ্যানথোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিমারস্ ফ্রি radical প্রতিরোধ করে ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

শরীরের প্রদাহ কমে

শরীরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে যেমন হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়, তেমনি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, এবং আর্থ্রাইটিস-এর মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই প্রদাহ হ্রাসে এটি দারুণভাবে কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রদাহের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা দেয়।

শরীরের ব্যথা নিরাময়ের জন্য

২০০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে ২০ চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। সাথে যোগ করুন ১০ চামচ সৈন্ধব লবণ। প্রতিদিন এভাবে অলিভ অয়েল ও লবণের মিশ্রণ তৈরি করে ব্যথার স্থানে ১৫ মিনিট ধরে মালিশ করুন।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

হৃদরোগীদের জন্য এটা খুবই উপকারী। দুর্বল হার্টের জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজনীয় চর্বির জোগান দেয় অলিভ অয়েল। এই লক্ষ্যে ছোট একটি কড়াইয়ে দেড় কাপ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, ৮-১০টি শুকনা রোজমেরি পাতা, সামান্য সামুদ্রিক লবণ ও গোলমরিচ নিন। এরপর ৫-১০ মিনিট ধরে এটি জ্বাল দিন। কিছুক্ষণ পর চুলা থেকে নামিয়ে নির্যাসটুকু গ্রহণ করুন এবং বোতলে সংরক্ষণ করুন। ভালো ফল পেতে আপনি সালাদ, স্যুপসহ অন্যান্য পছন্দের খাবারের সঙ্গে তৈরিকৃত জেলিটি ব্যবহার করতে পারেন।

কানের সমস্যায় অলিভ অয়েল

কানের মধ্যে চুলকানি এবং দুর্গন্ধ হওয়া এমন বেশ কিছু সাধারণ সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। এসব সমস্যা দূর করতে একটা কটন বাড অলিভ অয়েলে ভিজিয়ে খুব সাবধানে কানের মধ্যে ব্যবহার করুন।

নাক ডাকা বন্ধ করতে

অলিভ অয়েলে থাকা ঔষধিগুণ নাক ডাকা বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই, প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। এটি আপনার কণ্ঠনালীকে পিচ্ছিল করে দেয় এবং নাক ডাকা বন্ধ করে।

ডার্ক সার্কেল দূর করতে

চোখের নিচে কালি পড়লে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। এবং পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মমাফিক প্রতিদিন ব্যবহারে চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয়ে যায়।

তাছাড়া এটি আমাদের ভিটামিন ‘এ’র অভাব পূরণ করে। রাতকানা ও গ্লুকোমা-সহ চোখের অন্য সব রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

পা ফাটা সমস্যার সমাধান

পায়ের দুরবস্থার কারণে কারও সামনে পা বের করতে বিব্রত হচ্ছেন? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন এবং ঘুমানোর সময় মোজা পরে ঘুমান। আর পরদিন সকালে নরম তুলতুলে পায়ে পছন্দের স্যান্ডেল পড়ে চলে যান আপনার গন্তব্যস্থলে।

ঠোঁটের স্ক্রাবার হিসেবে

ঠোঁটে মাঝে মাঝে মরা চামড়া জমে কালচে দেখায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অলিভ অয়েল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষুন। এতে ঠোঁটের মরা চামড়া দূর হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঠোঁটের কোমলতা ধরে রাখতে এবং ঠোঁট ফাটা রুখতে এক চা চামচ তেল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও আধ চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ঠোঁটে লাগিয়ে চিনি না গলে যাওয়া অবধি ম্যাসাজ করুন।

নখের যত্নে

ভঙ্গুর নখ এবং নখের চামড়ার বাইরের স্তর সুস্থ, সুন্দর এবং কোমল রাখার জন্যও এটি দারুণ উপযোগী। কয়েক ফোঁটা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হাতের আঙুলে নিয়ে নখের উপরে এবং চারপাশে ভালোভাবে মালিশ করুন। এতে নখ শক্ত ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। অথবা, প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নখ ও এর আশেপাশের ত্বকে ম্যাসাজ করে নিন। ধীরে ধীরে নখ ভাঙ্গার প্রবণতা কমে যাবে এবং নখ হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়।

আয়রনের ভালো উৎস

আয়রনের অভাব দেখা দিলে আমাদের দেহাবস্থিত টিস্যুগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আয়রন শরীরে শক্তি উৎপাদনের এক দারুণ উৎস। আয়রনের ঘাটতি দূর করতে প্রতিদিন কালো জলপাই খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে। সর্বোপরি শারীরবৃত্তীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরিমিত পরিমাণে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

অলিভ অয়েল বাথ

এক বালতি পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে গোসল করুন। অথবা, গোসলের আগে তেল দিয়ে পুরো শরীর ম্যাসাজ করে নিলে ভাল ফলাফল পাবেন।

মেক-আপ রিম্যুভার

বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখের মেইকাপ তোলার জন্যও সবচেয়ে ভালো হচ্ছে অলিভ অয়েল। চোখের পাপড়িতে লাগানো মাশকারা ওঠাতে কিংবা চোখের নিচের কালো দাগ এবং রিঙ্কল দূর করতেও এটি ভালো কাজ করে। এটি চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা ত্বককে হাইড্রেট করে আরো নরম করে তোলে। আর ত্বকের মেকআপ তুলতে আঙ্গুলের ডগায় অথবা কটন প্যাডে এই তেল লাগিয়ে নিন। তারপর সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে সমস্ত মেক-আপ তুলে ফেলুন। তারপর ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে আপনার মেক-আপ তোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।

অলিভ অয়েল মুখে দিলে কি হয়

অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ রয়েছে যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তাই বাইরে বেরোনোর আগে মুখে খানিকটা অলিভ অয়েল মেখে নিন।

তাছাড়া অলিভ অয়েল ব্রণ প্রতিরোধকও বটে। মুখে ব্যবহারের জন্য ৪ টেবিল চামচ লবণের সাথে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এই পেস্ট ২ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। নিয়মমতো এক সপ্তাহ এই পেস্ট ম্যাসাজ করলে আপনি অবশ্যই মুখের পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

এমনকি, অন্য যেকোনো তেলের তুলনায় অলিভ অয়েল খুবই হাল্কা বিধায় এটি খুব সহজেই মুখের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। সেজন্য ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/৪ কাপ ভিনেগার আর ১/৪ কাপ পানি মিশিয়ে একটি সলিউশন তৈরি করুন, যা রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিমের মত ব্যবহার করতে পারবেন। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম করে তোলে, এবং ভিনেগার ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে।

 

চুলে অলিভ অয়েলের উপকারিতা

আপনার চুলের সুরক্ষায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ ওয়েল ময়েশ্চরাইজার হিসেবে চমকপ্রদ ফল দেয়।

অলিভ বা জলপাইয়ের তেল চুলকে ঘন ও উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল নিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কোমল ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। চায়ের লিকার, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিয়েও চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটা হেয়ার ট্রিটমেন্টের কাজ করে।

চুলের বাড়তি যত্ন নিতে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করুন-

  • ১। যাঁদের খুশকির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা সপ্তাহে দু’দিন ভাল করে মাথায় এই তেল ম্যাসাজ করুন। তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি সমপরিমাণ জলপাই তেল আর বাদামের তেল একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ করলে খুশকি অনেকটা কমে আসবে।
  • ২। তাছাড়া অলিভ অয়েলের সঙ্গে অল্প নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের আগা তাতে চুবিয়ে রাখুন। এতে চুল নরম থাকে, এবং ফাটার আশঙ্কা আর থাকে না।
  • ৩। আবার চুলের ফ্রিজিনেস দূর করার জন্য একটি চিরুনি অলিভ অয়েলের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। এতে চুল ময়েশচার হয়ে ফ্রিজিনেস কেটে যাবে।
  • ৪। কন্ডিশনারের পরিবর্তেও আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো ভাবে দুই হাতে ঘষে ফেলুন। তারপর এটি আলতো করে চুলে লাগিয়ে নিন।
  • ৫। আর প্রতি সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করুন। এভাবে ২/৩ ঘন্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর নিজেই লক্ষ করবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।

এভাবে বাসায় বসে আপনি ভেষজগুণসমৃদ্ধ অলিভ অয়েল ব্যবহারে চুলের যত্ন নিতে পারেন।

 

ত্বকে অলিভ অয়েলের উপকারিতা

অলিভ অয়েলে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস্ ত্বককে আলট্রা-ভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে। এতে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। অলিভ অয়েলে আরো রয়েছে ভিটামিন এ এবং ই যা ত্বককে সতেজ রাখে। তাই, প্রতিদিন বাসায় ফিরে গোসল করার পর সামান্য পানির সাথে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে সারা শরীরে ম্যাসেজ করুন। দেখবেন শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং সারারাত শরীরে ভেজাভাব বজায় থাকবে। প্রতিদিন এভাবে অলিভ অয়েল দিয়ে শরীরের ত্বক ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে সহজে বলিরেখা পড়ে না।

পাশাপাশি শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা আঁচড় লাগলে অলিভ অয়েল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। একটি পরিষ্কার পাত্রে প্রয়োজনমত এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, নারকেল তেল, ক্যালেনডুলা ও ল্যাভেন্ডার তেল, মোম, চা পাতা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে।

জলপাই তেল শিশুর ত্বকের জন্যও নিরাপদ। শিশুদের নিতম্ব থেকে র‌্যাশ দূর করতে সামান্য অলিভ ওয়েল মাখিয়ে দিন। যাদের ত্বকে চুলকানির সমস্যা রয়েছে তারা নির্দ্বিধায় এ তেল গায়ে মাখতে পারেন। অলিভ অয়েল অতিরিক্ত শুষ্ক, ছোপ ছোপ ত্বক কোমল ও মসৃণ করে। জলপাই তেলে রয়েছে হাইড্রেটিং এজেন্ট, যা শিশুর ত্বককে নরম করে তোলে।

 

অলিভ অয়েলের প্রকারভেদ

বাজারে মোটামুটি চার ধরনের অলিভ অয়েল পাওয়া যায়; ক্লাসিক বা ভার্জিন অলিভ অয়েল, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, অলিভ পোমেস অয়েল এবং লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল। আমাদের প্রাত্যহিক রান্না-বান্নায় সয়াবিন বা সরিষার তেলের বিকল্প হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি।

চলুন দেখে নিই বিভিন্ন প্রকার অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ-

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল

এটি সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের অলিভ অয়েল। রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য আপনি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মাখনের বিকল্প আপনি হিসেবেও এটি খেতে পারেন। অন্যান্য ভেষজ তেলের তুলনায় এটি অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল জলপাইয়ের আসল নির্যাস থেকে প্রস্তুত করা হয়। এবং এতে অলিক অ্যাসিডের পরিমাণও অনেক কম। একেবারে খাঁটি তেল হিসেবে আপনি এটি গ্রহণ করতে পারেন।

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে জিরো ক্যালোরি। ফলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের ব্যবহার ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি দেহে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। পাশাপাশি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনলস্ এবং ফ্যাট। এটি আমাদের দেহকে নানারকম রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করে।

ক্লাসিক বা ভার্জিন অলিভ অয়েল

রান্না-বান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ক্লাসিক অলিভ অয়েল। এতে এসিডের পরিমাণ অত্যন্ত কম। পাস্তা, স্টার-ফ্রাইড ভেজিটেবল বা রাইস তৈরিতে ক্লাসিক অলিভ অয়েলের বিকল্প নেই। এটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও ভালো কাজ করে। ফলে চুল ও ত্বকে ব্যবহারের জন্যও ক্লাসিক অলিভ অয়েল উপযোগী।

অলিভ পোমেস অয়েল

গন্ধহীনতা ও লঘু হলুদ রঙের কারণে অলিভ পোমেস রান্নার জন্য আদর্শ তেল। উচ্চ স্ফুটনাঙ্কের কারণে ডিপ ফ্রাইং-এর জন্য খুব ভালো এই তেল। পোলাও, পরোটা এমনকি পাকোড়া তৈরিতেও অলিভ পোমেস অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল

হালকা রং ও মৃদু গন্ধের জন্য সহজেই এই অলিভ অয়েল চিনতে পারবেন। এটি দিয়ে কন্টিনেন্টাল রান্না, ভাজি, রোস্ট বা বেকিং এমনকি যেকোনো রকম পদই অনায়াসে তৈরি করতে পারেন।

আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়

বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল তেল কিনতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোনটি আসল কোনটি নকল সেটা বোঝা মুশকিল।  এছাড়া বিদেশি অনেক ব্র্যান্ডের প্রক্রিয়াজাত ও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল পাওয়া যায়। চলুন, আসল তেল চেনার কিছু সাধারণ নিয়ম জেনে নেই।

  • বোতল: আসল অলিভ অয়েল সবসময় ডার্ক কাচের বোতলে স্টোর করা হয়। কারণ সূর্যালোক এর গুণ নষ্ট করে।
  • গন্ধ: আসল অলিভ অয়েলের একটা নির্দিষ্ট গন্ধ থাকে। একটি ছোট কাঁচের পাত্রে খানিকটা তেল স্প্রে করে তার মুখ আঁটকে দেয়া যেতে পারে। এরপর এতে সামান্য পরিমাণ তাপ প্রয়োগ করুন। পাত্রের ঢাকনা খুললে যদি এর সুগন্ধ আগের চেয়ে বেশি হয়, তবে বুঝতে হবে এটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। আর সুগন্ধ যদি কমে যায়, তাহলে বুঝে নিবেন এটি আসল এক্সট্রা ভার্জিন নয়।
  • স্বাদ: আসল তেলের স্বাদ একটু তিক্ত হয়।
  • ঘনত্ব: আসল তেল অন্যান্য তেলের তুলনায় ঘন হয়।
  • ফ্রিজ পরীক্ষা: ফ্রিজে রাখলে আসল অলিভ অয়েল জমাট বাঁধে। আপনার ব্যবহৃত তেলটি আসল কিনা এটা নির্ণয়ের জন্য ফ্রিজ টেস্ট অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এজন্য একটি পাত্রে খানিকটা তেল নিয়ে ২ ঘন্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজ থেকে বের করার পর যদি দেখেন এটি জমে শক্ত হয়ে গেছে অথবা লিকুইড’ই আছে, তাহলে বুঝবেন এটি খাঁটি  নয়। তবে যদি দেখেন, হালকা জমে গেছে অথবা ঘন হয়ে আছে, তখন আপনি এটাকে খাঁটি ধরে নিতে পারেন।
  • লেবেল: এক্সট্রা ভার্জিন হলে বোতলের লেবেলে ‘Extra Virgin Olive Oil’ লেখা থাকতে হবে।
  • অ্যাসিডিটি: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের অ্যাসিডিটি 0.8% এর কম হতে হবে।
  • রঙ: এক্সট্রা ভার্জিন তেলের রঙ হালকা সবুজ বা হলুদ হয়।
  • স্বাদ: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের স্বাদ আরও বেশি তিক্ত হয়।
  • মূল্য: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল অন্যান্য গুলোর চেয়ে দামি হয়।

উল্লেখ্য, উপরোক্ত উপায়গুলো 100% নির্ভরযোগ্য নয়। তবে এগুলো অনুসরণ করলে আসল ও এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কেনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য, সব সময় ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন। আর যদি অন্ধকার জায়গায় রাখতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। খুব উচ্চ তাপমাত্রায় এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই, কোনোভাবেই এর শিশি উষ্ণ স্থানে ফেলে রাখা যাবে না। এভাবে নিয়ম মেনে অলিভ অয়েল সংরক্ষণ করলে তিন বছর পর্যন্ত এটি ভাল থাকবে।

 

কুর’আন ও হাদিসে অলিভ অয়েলের বর্ণনা

রাসূল (স.) নির্দেশ দেন, তোমরা জয়তুনের তেল(জলপাইয়ের তেল) খাও এবং শরীরে মাখো। কেননা, এটি আসে বরকতময় গাছ থেকে। (সহিহ তিরমিজি, আহমাদ)।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘আর তিনি এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন বিভিন্ন রকম ফসল, জয়তুন (জলপাই), খেঁজুর, আঙুর ও সব ধরনের ফল। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা : নাহল : ১১)

শুধু কোরআন ও হাদিস দ্বারাই এর উপকারিতা বা ব্যবহার প্রমাণিত নয়, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যখন মানুষের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে, তখন হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। জয়তুন তথা অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ হার্ট ব্লক হতে বাধা দেয়। তাছাড়া হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল মুখে মাখলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। জয়তুন তেল অ্যালার্জি প্রতিরোধেও সহায়তা করে। জয়তুনে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে অত্যন্ত কার্যকর।

 

অলিভ অয়েল তেল খাওয়ার সঠিক ও কার্যকরী নিয়ম

অলিভ অয়েল হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। এটি  বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তবে সঠিক ও কার্যকরী নিয়ম মেনে চললে এর সুফল পাওয়া যায়। অলিভ অয়েল খাওয়ার নিয়মগুলো হলঃ 

  • এটি কাঁচা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। রান্নার সময় অতিরিক্ত গরম হলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
  • প্রতিদিন ২-৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিবিদ অথবা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এর বেশি খাওয়া ঠিক না। 
  • সালাদ, স্যুপ, ভাত, ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • এর তেল দিয়ে রান্না করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে রান্না না করাই ভালো।
  • এটি ফ্রিজে রাখলে তা ঘন হয়ে যায়। তাই রুমের তাপমাত্রায় রাখা ভালো।

তবে, অলিভ অয়েল খাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।

  • যারা ওজন বেশি তাদের অতিরিক্ত অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে।
  • যাদের পিত্তথলির সমস্যা আছে তাদের খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • এতে অ্যালার্জি আছে কি না তা আগে থেকে জেনে নেওয়া উচিত।
  • অলিভ অয়েল কেনার সময় ভালো ব্র্যান্ডের অলিভ অয়েল কেনা উচিত।
  • এটি খোলা অবস্থায় বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। কারণ এতে বাতাসের সংস্পর্শে এসে অক্সিডাইজ হয়ে যেতে পারে।

নিয়মিত ও সঠিকভাবে অলিভ অয়েল খেলে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন সম্ভব।

 

বাচ্চাদের অলিভ অয়েল খাওয়ার নিয়ম

নিয়মিত ও সঠিকভাবে অলিভ অয়েল খাওয়ালে শিশুদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

  • ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের অলিভ অয়েল খাওয়ানো উচিত নয়।
  • ১-২ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১ চা চামচ এই তেল খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ২-৩ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১-২ চা চামচের বেশি খাওয়ানো উচিত নয়।
  • ৩ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ২-৩ চা চামচ খাওয়ানো যেতে পারে।

শিশুদের সালাদ, স্যুপ, ভাত, ডাল, মাছ, মাংস ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। অলিভ অয়েল দিয়ে শিশুদের জন্য রান্না করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে রান্না না করাই ভালো। শিশুদের অ্যালার্জি আছে কি না তা খাওয়ানোর আগে জেনে নেওয়া উচিত। নিয়মিত ও সঠিকভাবে অলিভ অয়েল খাওয়ালে শিশুদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

 

অলিভ অয়েলের দাম

অন্যান্য ভোজ্য তেলের তুলনায় অলিভ অয়েলের দাম খানিকটা বেশি। ব্যান্ডভেদে আন্তর্জাতিক বাজারে অলিভ অয়েলের মূল্যমানে তারতম্য লক্ষ করা যায়। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে মেরিল অলিভ অয়েল বেশ জনপ্রিয় ও উপকারী। বাজারে প্রতি ১লিটার এক্সট্রা ভার্জিন অয়েলের দাম ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ক্লাসিক, পোমেস ও লাইট ফ্লেভার অলিভ অয়েল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় পাওয়া যায়।

অলিভ অয়েল অপরিমেয় পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের শরীর সচল রাখতে এটি অত্যন্ত উপকারি রসদ। খাদ্যগুণ বিবেচনায় ভোজ্য তেল হিসেবে অলিভ অয়েলের চাহিদা এখন সর্বাধিক।

 

Source:

https://www.medicalnewstoday.com/articles/266258
https://food.ndtv.com/food-drinks/olive-oil-amazing-benefits-of-olive-oil-for-health-hair-skin-its-wonderful-uses-1736506?amp=1&akamai-rum=off
https://www.stylecraze.com/articles/amazing-benefits-of-olive-oil-that-you-never-knew/
https://feeds.aarp.org/health/healthy-living/info-2020/olive-oil-benefits.html?_amp=true
https://www.sclhealth.org/blog/2020/01/olive-oil-the-real-thing-has-real-benefits/
https://olivewellnessinstitute.org

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

কিভাবে নবজাতক শিশুর যত্ন করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

এই ধরণী মাঝে নতুন শিশুর আগমন সৃষ্টিকর্তার পরম অনুগ্রহ। ক্ষুদ্র একটি ভ্রুণ তিল তিল করে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। তারপর একদিন আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণ। শিশুর জন্মে পরিবার-পরিজনদের মাঝে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। নতুন অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য চারদিকে চলে নানা আয়োজন। তাকে ঘিরে তৈরি হয় অনেক স্বপ্ন, সম্ভাবনা। তাই সদ্যভূমিষ্ঠ এই নবজাত শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য থাকতে হবে বাড়তি সতর্কতা এবং এর পাশাপাশি বিশেষ যত্ন নেওয়াও চাই।

নবজাতকের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন কেন?

মূলত মাতৃগর্ভ আর পৃথিবীর মাঝে বিস্তর ফারাক। তাই নতুন এই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
জন্মের সময় নবজাতকের পাকস্থলী, কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি পরিপূর্ণ থাকে না। এছাড়া তার ত্বকও অনেক সংবেদনশীল হয়। পৃথিবীর আলো- বাতাসের সাথে খাপ-খাইয়ে নিতে তাকে অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়। তাই তার বেড়ে ওঠার এই পরিবেশকে অনুকূল করে তুলতে তার প্রতি আমাদের সযত্ন দৃষ্টি রাখা খুব প্রয়োজন।

জন্মপরবর্তী ঘণ্টার বিশেষ যত্ন:

শিশুর জন্মের প্রথম ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কে তাই বলা হয় গোল্ডেন ওয়ান আওয়ার কেয়ার। নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে জন্মের সাথে সাথে শিশুকে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে মুছে নিন।

এরপর আরেকটি পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে মাথা ও শরীর জড়িয়ে রাখুন। দেরি না করে নবজাতককে মায়ের বুকে দিন। মায়ের শরীরের উষ্ণতা তার জন্য খুব প্রয়োজন। জন্মের ৩ দিনের মধ্যে কোনোভাবেই শিশুকে গোসল করানো যাবে না । এইসময়ের মধ্যে শিশুকে মায়ের শাল-দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মূলত শিশুর জন্মের পরপর মায়ের শরীরে প্রথম ঘন আঠালো হলুদ বর্ণের যে দুধ বের হয় এটিই তার একমাত্র খাবার।

শালদুধের উপকারিতা:

শালদুধ শিশুর জন্য প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি এটি নবজাতকের শরীরে পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগায় । শালদুধ খাওয়ালে শিশুর রাতকানা, জন্ডিস ও অন্যান্য রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে । শালদুধ খাওয়ানো মা ও শিশু উভয়ের জন্যই জরুরি। কারণ শিশুকে শালদুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ কম হয় এবং জরায়ু দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে । তাছাড়া শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ৬ মাস শুধু মায়ের বুকের দুধই খাওয়াতে হবে। এসময় এক ফোঁটা পানি খাওয়ানোরও প্রয়োজন নেই।

ঋতু অনুযায়ী নবজাতকের যত্ন

নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়কাল অনুযায়ী তার যত্নের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, যে প্রতিটা নবজাতকই আলাদা। এসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নবজাতকের জন্য সঠিক পরিচর্যা নিতে হবে।

নবজাতক শিশুর গরমকালের যত্ন:

এসময় একটু পর পর বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে দেখতে হবে ঘাম আছে কিনা। বাচ্চাকে বেশি কাঁথা- কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা যাবে না। গরমের কারণে বাচ্চার গলা শুকিয়ে যেতে পারে। তাই বার বার মায়ের দুধ পান করানোর কোনো বিকল্প নেই।

এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন:

  • শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত নরম সূতি কাপড় ভিজিয়ে শিশুর গা মুছে দিতে হবে।
  • গরমের সময় শিশুর দেহের বিভিন্ন জায়গায় ঘামাচি হতে পারে। ঘামাচি এড়ানোর জন্য নবজাতকের গোসলের পানি কুসুম গরম করে নিতে হবে।
  • প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে ডায়াপার না পরানোই ভালো।
  • গরমের সময় নবজাতক শিশুর ঘুমাতে সমস্যা হয়। তাই ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করা খুব জরুরি। শিশুকে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় রাখতে হবে।
  • তাছাড়া বাড়ির আশে-পাশে কোথাও জলাবদ্ধতা থাকলে সে স্থান পরিষ্কার করে নিন। ফলে মশা জন্মাতে পারবে না। এবং বাড়ির জানালায় নেট লাগিয়ে রাখলে পোকামাকড়-মশা ইত্যাদির কামড় থেকে শিশু রক্ষা পায়।

 

নবজাতকের শীতকালীন যত্ন:

ঠাণ্ডা নবজাতক-কে খুব খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এ থেকে বাচ্চার নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এসময় নবজাতকের মা ও অন্য যারাই বাচ্চার দেখাশোনা করবেন তাদের বারবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।

শীতকালে খেয়াল রাখতে হবে নবজাতকের ঘরে যাতে ঠাণ্ডা বাতাস না আসতে পারে। ঘর যথাসম্ভব গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দিনের বেলা দরজা-জানালা খোলা রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুর ব্যবহার্য লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি কড়া রোদে শুকাতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ভালো ভাবে ঝেড়ে পরিস্কার করাও জরুরি। এগুলোর ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো কারণ এতে সহজে ধুলাবালি থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়।

পাশাপাশি শিশুর শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটি ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করে এবং হাড়ও শক্ত করে। এসময় কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন এবং ডাক্তারের পরামর্শমত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

পাশাপাশি লক্ষণীয়:

  • শিশুকে কয়েক স্তরের শীতের কাপড় পরিধান করাতে হবে। তবে অতিরিক্ত মোটা পোশাক যেন শিশুর অস্বস্তির কারণ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
  • শিশুকে গরম রাখার জন্য কখনোই চুলার কাছে কিংবা আগুনের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। এর ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে।
  • খুব প্রয়োজন না হলে শিশুকে গোসল করানো থেকে বিরত রাখা উচিত।
  • নবজাতককে উষ্ণ রাখার জন্য ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার পদ্ধতি অর্থাৎ মায়ের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতে হবে।
  • শিশুর দেহের তাপমাত্রার দিকে নজর রাখতে হবে। নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম হলে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে৷ আবার তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের থেকে বেশি হলে নবজাতকের জ্বর হতে পারে। কোনো রকম অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • নবজাতককে ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খেতে দিন। বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধক শক্তি থাকে বলে শিশু সহজে ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয় না। সাথে সাথে মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শিশু যদি ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার প্রস্রাব করে তাহলে বুঝতে হবে ঠিকমতো দুধ পাচ্ছে। এছাড়া শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোবালি বেশি থাকে। তাই খেয়াল রাখতে হবে শিশুর গায়ে যেন ধুলোবালি না লাগে।

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা:

প্রথমবার নবজাতককে স্পর্শ করার অনুভূতি তুলনাহীন। আবার এই আনন্দ-উদ্দীপনার মাঝেও মিশে থাকে খানিকটা স্নায়ুচাপ, আত্নপ্রত্যয়ের অভাব। তাই, দেখে নিই আপনি কিভাবে জন্মপরবর্তী সময়ে আপনার কলিজার টুকরা শিশুর লালন-পালন করবেন-

আরামদায়ক পোশাক পরান :

নবজাতককে গরম কিন্তু আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। নবজাতকের গায়ে ভারি কম্বল বা লেপ কোনোটাই দেওয়া যাবে না। শীতের প্রকোপ কমাতে নবজাতকের হাত ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। আপনার শিশুর গায়ের পোশাকটি তার অনুভূতি এবং ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলে। আরামদায়ক গরম পোশাক আপনার বাবুকে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে। তবে ভারী এবং আঁটসাঁট কাপড় ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

নবজাতকের চোখের যত্ন:

চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল অংশ। আঙুল, শাড়ির আঁচল, গামছা বা অপরিষ্কার কাপড় দিয়ে কখনোই নবজাতকের চোখ মোছা উচিৎ নয়। সব সময় পরিষ্কার, নরম সুতি কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে হবে।

নবজাতকের ত্বকের যত্ন:

শিশুর ত্বককে সবসময় মসৃণ রাখতে হবে। এজন্য ভালো মানের বেবি লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। জন্মের পর শিশুর ত্বকের অবস্থা কিছুটা নাজুক থাকে। নবজাতকের ত্বকে ভারনিক্স (Vernix) নামের একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ থাকে যা এন্টিবডির (Antibody) মতো কাজ করে। তাই শিশুর ত্বকের যত্নে হঠাৎ করেই কোনো পাউডার, ক্রিম, তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নাভির বিশেষ যত্ন:

নবজাতকের নাভির সংক্রমণের বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে; যেমন- নাভি থেকে পুঁজ পড়া, নাভির চারদিকে চামড়া পর্যন্ত লাল হয়ে যাওয়া, নাভিতে দুর্গন্ধ, নাভি দেরিতে পড়া ইত্যাদি। অনেক সময় নাভী থেকে এটি লিভারে গিয়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে তখন জন্ডিস, লিভারের ফোড়া-সহ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। কখনো কখনো এ ইনফেকশন হাড় অথবা অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নাভির সংক্রমণের চিকিৎসায় বিলম্ব হলে অথবা সঠিক চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে।

তবে জন্মের পরপরই নাভীর যত্ন নিলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এসব লক্ষণ অল্পমাত্রায় দেখা দিলে নাভী স্পিরিট দিয়ে ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে। সেই সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক পাউডার প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাভীতে তেল বা এমন কোনো কিছু লাগানো যাবে না।

চুলের যত্ন:

চুল কাটার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আর যেহেতু এটি শীতকালে ঠান্ডার প্রকোপ থেকে শিশুকে সুরক্ষা দেয়, তাই এসময় চুল না কাটাই ভালো। তবে ফাঙ্গাস, অ্যালার্জি বা অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মাথায় খুশকি বা মাথার চামড়া উঠে যেতে পারে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। তেল বা শ্যাম্পু ব্যবহারের আগেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

গোসলের ক্ষেত্রে যেসব সাবধানতা জরুরি:

নবজাতকের গোসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে জন্মের পরপরই তাকে গোসল দেয়া যাবে না। এত দিন মায়ের গর্ভে শিশু উষ্ণতার ভেতর ছিল। বাইরের বাতাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তার একটু সময় লাগে। তাই জন্মের সাথে সাথে গোসল না করিয়ে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করাতে হবে।

গোসলের পানিতে স্যাভলন বা ডেটল এসব দেওয়ার দরকার নেই। কুসুম গরম পানি দিয়ে যে ঘরে বাতাস নেই এ রকম জায়গায় গোসল করাতে হবে। জন্মের ৩ দিন পর থেকে শিশুকে প্রতিদিন গোসল বা গা মুছিয়ে দিয়ে হবে। শীতের সময়ে একদিন পরপর গোসল করানো ভালো। তাছাড়া শিশুর মাথা ভেজানোর পরে খুব দ্রুত ভালো করে মুছে ফেলতে হবে।

বার্থ এসফেক্সিয়া (Birth asphyxia):

নবজাতক জন্মের পর যদি নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাকে বার্থ এসফেক্সিয়া বা এসফেক্সিয়া নিউনেটারাম বলে। গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের নিউমোনিয়া, হার্ট ফেইলুর, রক্তস্রাব বা এক্লামপসিয়া (Ecclampsia) জাতীয় কোনো রোগ থাকে তাহলে শিশুর এসফেক্সিয়া নিউনেটারাম হতে পারে। এছাড়া প্রসবের সময় শিশুর গলায় অনেক্ষণ নাড়ীর প্যাচ লেগে থাকা, মাথায় রক্তপাত হওয়া বা আঘাত পাওয়া কিংবা কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও এমন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

এক্ষেত্রে নবজাতক বিশেষজ্ঞ বা নিউন্যাটোলজিস্ট (Neonatologist)-এর পরামর্শ নিতে হবে। শিশু জন্মের ১ মিনিট এর মধ্যে ও যদি শ্বাস না নেয় তাহলে দ্রুত তার মুখ গহ্বর পরিষ্কার করে মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে। এবং শিশুকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শিশুর তাপমাত্রা কোনোভাবেই কমে না যায়। এজন্য তাকে উষ্ণ কাপড়ে মুড়ে রাখতে হবে।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে সাকশন (suction) দিয়ে মুখ ও পেট খালি করা হয় এবং ৮০% অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। জন্মের তিন মিনিটের মধ্যেও শ্বাস না নিলে মুখে বা গলায় নল দিয়ে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দিতে হয়। সেই সাথে হাতের তালু দিয়ে বুকে ঘন ঘন চাপ দিয়ে (Cardiac massage) হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হয়।
বার্থ এসফেক্সিয়া তীব্র হলে বা চিকিৎসা করাতে সামান্য দেরী হয়ে গেলেও শিশু মানসিক প্রতিবন্ধকতা, মৃগী রোগ, নির্জীব থাকা বা প্যারালাইসিস(Cerebral palsy)-সহ নানা জটিলতায় ভুগতে পারে। এ রোগে শিশুর মৃত্যুর হারও অত্যাধিক।

নবজাতকের ওজনহীনতা:

চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, কিশোরী মাতার সন্তানের ওজন সাধারণত খুব কম হয়। আবার গর্ভে শিশু পরিণত বয়সপ্রাপ্ত হবার আগে (Preterm) ভূমিষ্ঠ হলেও ওজন খুব কম হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি ডায়াবেটিস (Diabetes), হৃদরোগ, কিডনি রোগ, পুষ্টিহীনতা, রক্তশুন্যতা, বড় কোনো ইনফেকশন, টক্সেমিয়া (Toxaemia), রক্তস্রাব বা এইধরনের জটিল কোনো রোগ থাকে তাহলে নবজাতকের ওজন কম হতে পারে। জমজ শিশু বা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের ওজন কম হয়। ধুমপায়ী মায়েদের সন্তানেরও জন্মের সময় ওজন বেশ কম থাকে।

কম ওজনের নবজাতক অল্পতেই যে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমন, অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর মুখ ও নাকে শ্লেষ্মা এবং অন্যান্য পদার্থ জমে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করে। সর্দি জমে থাকার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। যার কারণে বুক ঘন ঘন ওঠানামা করে ও শিশু ক্লান্ত হয়ে পরে। এসকল লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথে মুখের লালা ও নাকের সর্দি পরিষ্কার করে দিতে হবে।

শিশুর ওজন একদমই কম হলে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি নাকে নল দিয়ে খাবার দেয়া, এমনকি শিরার মাধ্যমেও খাবার দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে তাকে ইনকিউবেটর (Incubator)-এ রাখতে হবে। ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি ভিটামিন এবং ফেনোবারবিটোন (Phenobarbitone)জাতীয় ঔষধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ভূমিষ্ঠ হওয়া (Preterm) শিশুর অবস্থা খুব খারাপ হলে শিশুকে এন,আই,সি,ইউ (NICU – Neonatal Intensive Care Unit)-তে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়।

নবজাতকের পরিপূর্ণ যত্নে যা একান্ত জরুরি:

বুকের দুধ পানে:

শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময় মা পিঠ সোজা রেখে বসবেন। শিশুর পেট মায়ের পেটের সঙ্গে লাগানো রাখতে হবে। শিশু বড় হাঁ করে স্তনের বোঁটা নিয়ে নেবে। সিগারেট ধরার ভঙ্গিতে স্তনের বোঁটা শিশুর মুখে গুঁজে দেয়া ভুল।

আবার খেয়াল রাখতে হবে, যেন নবজাতকের পেটে গ্যাস জমে না যায়। এজন্য প্রতিবার খাবার পরে তাকে কাঁধের উপর শুইয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে ঢেকুঁর তোলাতে হবে। এতে পেটে গ্যাস জমে থাকলে এটি বেরিয়ে আসবে।

শিশুকে শোয়ানো:

বেশি তুলতুলে নরম বিছানায় নবজাতক শিশুকে শোয়ানো উচিৎ নয়। এতে করে সে উল্টে গিয়ে তার নাক-মুখ চেপে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছুটা শক্ত বিছানা ও দুই পাশে ছোট বালিশ ব্যবহার করুন।

ঘুম থেকে জাগানো: 

শিশুকে জাগাতে তীব্র কোনো বাজনা বাজানো বা শব্দ সৃষ্টি না করা ভালো। তাকে আলতোভাবে চুম্বন-স্পর্শ দিন। গায়ে হালকা করে সুড়সুড়ি দিন। আস্তে আস্তে সে জেগে উঠবে। পিঠে বা শরীরের অন্য অংশে জোরে থাপড় বা ঝাঁকুনি দেওয়া একদমই অনুচিৎ।

শিশুকে নিয়ে খেলার সময়: 

ছোট্ট শিশুকে নিয়ে খেলার সময় ওকে এমনভাবে দুই হাতে ধরে রাখতে হবে, যেন সে হাত থেকে ছিটকে না পড়ে। হাত ছেড়ে শূন্যে খেলা করা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।

শিশুকে শান্ত করানো: 

হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে তার কান্না থামাতে যাওয়া অনুচিৎ। এগুলোর মধ্যে বিপজ্জনক দ্রব্যও থাকতে পারে। বরং তাকে কাঁধে নিন। মায়া-মমতায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিন। দেখবেন শিশুর কান্না থেমে যাবে।

শিশুকে হাসাতে:

অনেকে শিশুকে হাসানোর জন্য তার মুখের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দেন। এটা একদমই নির্বোধের মতো কাজ। বরং তার বয়স অনুযায়ী রং-বেরঙের পুতুল নিয়ে তার সঙ্গে মজা করুন।

শিশুর নাক পরিষ্কার রাখতে: 

নবজাতকের নাক পরিষ্কার করতে গিয়ে কেউ কেউ নিজের অপরিচ্ছন্ন আঙুলের ডগা শিশুর নাসারন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেন। এতে মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে একটা পরিষ্কার কাপড় সুঁচোমুখ করে তাতে কয়েক ফোঁটা লবণমিশ্রিত পান দিয়ে শিশুর নাক পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে ন্যাজেল অ্যাসপিরেটরের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

দেহের উষ্ণতা: 

উষ্ণ ও আরামদায়ক পরিবেশ আপনার শিশুকে সবসময় হাসিখুশি রাখবে। এজন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যেসব দরজা-জানালা দিয়ে বাবুর ঘরে জোরে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে পারে সেগুলো বন্ধ রাখুন। কিন্তু স্বাভাবিক আলো-বাতাস চলাচলের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখুন। একইসাথে শুষ্কতা এবং ত্বক ফেটে যাওয়া এড়াতে পর্যাপ্ত আর্দ্র পরিবেশ বজায় রাখুন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা একান্ত জরুরি:

নবজাতকের কাঁথা, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে তার ব্যবহৃত সবকিছু পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া শীতকালে ফ্লু ও ঠাণ্ডা লাগার বাড়তি ঝুঁকি থাকে। এজন্য শিশুকে খাওয়ানোর আগে, কোলে নেয়ার আগে এমনকি আদর করার সময় সংক্রমণ এড়াতে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। এতে আপনার বাবু ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।

আবার শিশুর ব্যবহৃত কাপড় থেকে বিভিন্ন চর্মরোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। আবার শিশুদের নখ বড় থাকার কারণে নখের আঁচড়ে দেহের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ছিলে যেতে পারে। এজন্য নবজাতকের নখ বড় হলেই কেটে ছোট করে দিতে হবে।

ম্যাসাজিং কিভাবে করবেন?

নবজাতক শিশুকে ম্যাসাজ করতে হবে। এতে তার শরীরের রক্ত-সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। তেল এবং ময়েসচারাইজার শিশুকে রাখবে নরম এবং প্রাণবন্ত। তবে এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শমত একটি বা দু’টি ওয়েল বেছে নিন।

সতর্কতা:

কোন কারণে শিশু অসুস্থ হয়ে গেলেও মায়ের বুকের দুধ দেয়া বন্ধ করা যাবে না। আবার নবজাতক যাতে কোন অবস্থায় প্রস্রাব-পায়খানা করে তার মধ্যে বেশিক্ষণ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে ডায়াপার পরাতে হবে। তবে ডায়াপার র‍্যাশ থেকে সাবধান হতে হবে। দিনের কিছু সময় ডায়াপার ছাড়া রাখতে হবে। তবে ডায়াপার র‍্যাশ যদি একান্ত হয়েই যায় সেক্ষেত্রে র‍্যাশ দূর করার ক্রিম লাগাতে হবে। পাশাপাশি নবজাতকের নাভি না পরা পর্যন্ত তেল বা পানি যাতে না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা:

সময় অনুযায়ী শিশুকে সবগুলো টিকা দেওয়াতে হবে। এটি শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেক বড় ভূমিকা রাখে এবং বেশ কিছু সংক্রামক অসুখের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। যদি কোনো কারণে একটি ডোজ বাদ যায়, তবে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন এবং সেই অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা নিন।

যেসব কাজ একদমই করা যাবে না:

  • শিশুর জন্মের পর অনেকেই মুখে মধু বা চিনি দিয়ে থাকেন। এটা মোটেই উচিৎ নয়। জন্মের ছয় মাসের মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের দুধের বাইরে কোনো কিছু খাওয়ানো তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
  • বাচ্চার গরম লাগবে ভেবে বাচ্চাকে একদম খোলা রাখা বা শীত লাগবে ভেবে বেশি কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা উভয়ই বর্জনীয়। এক্ষেত্রে বাচ্চাকে সহনীয় পোশাক পরাতে হবে।
  • হলদেটে রঙ বিধায় অনেকে শাল দুধ খাওয়াতে নিরুৎসাহিত করেন। এটা কখনোই করা যাবে না। মা ও শিশু উভয়ের জন্যই এই শাল দুধ পান করানো অতি উত্তম।
  • নবজাতক অবস্থায় শিশুর মুখের সংস্পর্শে এসে আদর করা থেকে একদম বিরত থাকা উচিৎ।
  • বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে নবজাতককের ঘরে প্রবেশ করা যাবে না।
  • ছোট্ট একটি প্রাণ আমাদের সবার জীবনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। সেই আনন্দকে সব সময় ধরে রাখতে হলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে শিশুর একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ। সেইসাথে নিতে হবে পরিপূর্ণ যত্ন। তবেই শিশুর বেড়ে উঠা নিরাপদ হবে।

Source:

http://healthtalkbd.org/newboarn_care
https://bangla.babydestination.com/how-to-take-care-of-newborn-in-summer-in-bengali
https://www.shajgoj.com/new-born-babys-winter-care-12-tips/
https://www.jagonews24.com/amp/10694
https://www.kalerkantho.com/print-edition/doctor-acen/2017/12/10/575526
https://mytonic.com/bn/child-health/tonic/%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A8
https://learningfrommylife.wordpress.com/newborn/
http://m.poriborton.news/children-health/191277

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা | কিভাবে ইমিউন সিস্টম বুস্ট করবেন

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়াবেন?

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বেশি আমাদের সকলেরই আছে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। তখন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি হয়। ইমিউন সিস্টেমে ঘাটতির ফলে আমাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে এবং কায়িক পরিশ্রম করলে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়।

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি?

ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো কোষ এবং প্রোটিনের এমন এক আন্তঃজাল যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। মূলত শ্বেত রক্তকণিকা, অস্থিমজ্জা, অ্যান্টিবডি, প্লীহা ইত্যাদির সমন্বয়ে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম গঠিত হয়। শ্বেত রক্তকণিকা বিভিন্ন রকম পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া, ফানজাই ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আবার অ্যান্টিবডিগুলো রোগজীবাণু ও এদের বিষক্রিয়া মোকাবিলা করে। এবং প্লীহা রক্তকে ফিল্টারিং করে । আর অস্থিমজ্জা লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি করে যা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজকে ত্বরান্বিত করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা:

চিকিৎসকদের মতে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে মানুষ সহজেই যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। তাই দেহে যথাযথ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, তার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু আছে যা হজমে সাহায্য করে। পাকস্থলীর এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে গেলে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। শারীরিক পরিশ্রমের সময় আমাদের দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। এতে মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। একই সাথে শরীরের রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীরের সবপ্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে এবং কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদিত হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় কেন:

মানসিক চাপ:

মানসিক চাপগ্রস্ত অবস্থায় কিংবা ভয় পেলে শরীরে ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে দেয়।
তাই এসব পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা বন্ধ করে ইতিবাচক কাজে মনোযোগ দিতে হবে।

ঘুমের ঘাটতি:

অনেকে হয়তো দিনভর সিনেমা দেখে পার করে, রাত জাগে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্ট ঘুমানো জরুরি। পাশাপাশি ঘুম হতে হবে নির্ভেজাল।

পড়ুনঃ অনিদ্রা দূর করার উপায়

ধূমপান:

ফুসফুসের ক্ষতি করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করছে এই বদোভ্যাস। এতে অল্পতেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বিড়ি-সিগারেটে নিকোটিন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে যা ‘কর্টিসল’ হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। আবার ধূমপানের কারণে রক্তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-এর মাত্রাও কমে। এজন্য ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাস দূর করা খুব জরুরি।

মদ্যপান:

কালেভদ্রেও যদি কেউ মদ্যপান করে তবে সেটাও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি মদ্যপান অন্ত্রের ‘ফ্লোরা’ ও যকৃতের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া যেকোনো মাত্রার ‘অ্যালকোহল’ পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

জ্বর না হওয়া:

প্রয়োজনের সময় জ্বর না হওয়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ। শরীরের নানান রোগের প্রতিরোধের জন্য জ্বর হওয়া প্রয়োজন। জ্বর হলে অধিকাংশ মানুষ শুরুতেই তা কমানোর জন্য ওষুধ খায়। এটা শরীরের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। সংক্রমণ ছাড়া যদি দীর্ঘদিন জ্বর না হয়, তাহলে বুঝতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।

আরো পড়ুনঃ
জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

দুর্বল অন্ত্র:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ৮০ শতাংশ নির্ভর করে অন্ত্রের সুস্থতার উপর। কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি, পেটফাঁপা ইত্যাদির কারণে অন্ত্রের দুর্বলতা দেখা দেয়। এর প্রতিকারের জন্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার।

ভিটামিন ডি কম থাকা:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমে গেলে তা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিৎ। নতুবা নানারকম সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিনি খাওয়া:

অত্যাধিক পরিমাণে চিনি খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। কারণ সুগার রক্তের শ্বেত কণিকার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অথচ এই রক্ত উপাদান আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা দেয়াল হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম এর বেশি চিনি খাওয়া উচিৎ না। অতিরিক্ত ‘মিউকাস’ বা শ্লেষ্মার কারণেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এক্ষেত্রে বাড়তি চিনি, লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার আমাদের কিছুটা উপকার দিতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ:

প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে প্রাইমারী ইমিউনোডেফিসিয়েন্সী বলে। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য নিচের লক্ষণগুলোকে চিনে রাখা জরুরি-

শিশুদের ক্ষেত্রে:

১. বছরে চার বা তার চেয়ে বেশি বার কানের ইনফেকশন হওয়া।
২. বেশি বেশি সাইনাসের সমস্যা হওয়া।
৩. অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরও যদি কাজ না হয়।
৪. বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে।
৫. শিশুর ওজন এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকভাবে না হওয়া।
৬. মুখের ঘা বা ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ সহজে ভালো না হওয়া।
৭. জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বার অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগের প্রয়োজন হলে।

বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে:

১. অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলেও এক বছরের মধ্যে দুই বা তার চেয়ে বেশি বার সাইনাসের ইনফেকশন হওয়া।
২. বেশি বেশি নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হওয়া।
৩. দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া এবং ওজন কমে যাওয়া।
৪. বার বার ভাইরাসের সংক্রমণ যেমন সর্দিকাশি, হার্পিস ইত্যাদি।
৫. মুখের ঘা, ত্বক বা অন্যান্য স্থানে ছত্রাকের সংক্রমণ সহজে ভালো না হওয়া

তাছাড়া সারাক্ষণই মন মেজাজ খারাপ থাকা, খিটখিটে মেজাজ এবং অল্পতেই মানসিক চাপে পড়ে যাওয়া ইত্যাদিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ। পাশাপাশি সবসময় অসুস্থ থাকা, ক্লান্ত লাগা, ঘুম ঘুম ভাব, কোনো আঘাত ভালো হতে অনেক সময় লাগা, রক্ত শূন্যতা, হতাশা, চোখের নিচে কালো দাগ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। তাই, আপনার বয়স অনুযায়ী কতটুকু স্ট্যামিনা থাকা প্রয়োজন তা জেনে নিন। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তৎপর হোন।

আবার বারবার হাঁচি(ধুলার কারণে অ্যালার্জি), গলা ব্যথা, ত্বকে দানা দানা ওঠা ইত্যাদির মানেও হল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

অনেকে আবার পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনেই অসুস্থ হয়ে যান। এর প্রধান শরীরের তাপমাত্রা কম থাকা। সুস্থ অবস্থায় কোনো ব্যক্তির মুখমন্ডলের তাপমাত্রা ৩৬.৩° সেলসিয়াসের কম হয় না। কারণ সাধারণ ঠাণ্ডার ভাইরাস যেমন- রাইনোভাইরাস ৩৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শক্তি পায়। নিয়মিত শরীরচর্চা শরীরের তাপমাত্রা ও কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া রসুন, আদা, দারুচিনি, এলাচ ইত্যাদি মসলা শরীর গরম রাখতে ভালো কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়:

আমরা অনেক সময় নিজেদের শরীরের অনেক বড় রোগ বা জটিল বিষয় খেয়াল করি না। শুধু একটু সচেতন এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হলে অনেক অঘটন থেকে বাঁচা সম্ভব। পাশাপাশি প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রাকৃতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে এবং রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা জোগায়।
নিচের বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখলে আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারবো।

খাদ্যভ্যাস:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। ফলের রসের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফল চিবিয়ে খাওয়া-ই ভালো। এতে পুষ্টি উপাদানের সাথে সাথে ফাইবারও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন, ৮ থেকে ১০ গ্লাস। ফাস্টফুড, তেল-চর্বি ও মসলা জাতীয় খাবার যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন।

পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন এবং খনিজ লবণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-ই অধিক কার্যকর।

তাছাড়া ফ্লু বা সর্দি-কাশি উপসর্গে জিংকের বেশ উপকারিতা রয়েছে। জিংক-সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে আদা, রসুন, ডাল, বিন্স, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইদ্যাদি।

আমরা আমাদের খাদ্যতালিকায় মধু যোগ করতে পারি। মধুতে জীবাণু ধ্বংসকারী হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও নাইট্রিক অক্সাইড রয়েছে যা ফ্লু উপসর্গে মধু বেশ উপকারি। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা মধু সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

মানসিক চাপমুক্ত থাকুন:

অতিরিক্ত মানসিক চাপে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এজন্য মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবরগুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো সময় কাটান, বই পড়ুন বা নতুন কিছু শেখায় মন দিন। মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি ভালো উপায়।

শরীরচর্চা:

শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা অপরিহার্য। বিশেষ করে এসময়ে যখন আমরা সবাই ঘরে অবস্থান করছি। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এবং বাচ্চাদের কমপক্ষে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিৎ। ঘরে থেকে আপনি হাঁটাহাটি, সাইক্লিং, ইয়োগা, ওয়েট শিফ্টিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা ইত্যাদি ব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি নফল নামাজ পড়াও আপনার শরীর চর্চার উপায় হতে পারে।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা:

ধূমপান সরাসরি আপনার শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে শ্বাসনালীতে বিভিন্ন রকম ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ধূমপান বাদ দিন ও সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপন করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা:

শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। খাবার পরিমিত খান ও শারীরিকভাবে সচল থাকুন।

আরো পড়ুনঃ
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর সহজ পদ্ধতি
মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর সহজ উপায়
কিভাবে ব্যায়াম ছাড়া ওজন কামাবেন
দ্রুত ওজন বাড়ানোর উপায়
ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

পরিমিত ঘুম:

পরিমাণমতো ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘণ্টা করে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

আমরা যদি রোগের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে চাই, তবে নিজের ও আশ-পাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার্য জিনিপত্র জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দরজার হাতল, সুইচ, লিফ্টের বাটন জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার রাখুন

যেসব খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

শারীরিক সুস্থতা এবং রোগের আক্রমণে টিকে থাকতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের রক্ষা কবচ। কিছু খাবার আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীর সুস্থ রাখে।

এমন কিছু খাবারের তালিকা এখানে দেয়া হলো-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় হলুদ:

গবেষণায় দেখা যায়, হলুদে প্রচুর পরিমাণে কার্কিউমিন পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যান্টিভাইরাল হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া হলদি চা-ও আমাদের শরীরের জন্য ভারী উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর জুড়ি নেই। এর সাথে আদা, গোলমরিচ, দারচিনি মিশিয়েও খাওয়া যায়।

প্রোটিন বা আমিষসমৃদ্ধ খাবার:

আমিষ আমাদের দেহ গঠনেে এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সহায়ক। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল এগুলো প্রোটিনের প্রধান উৎস। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রতিদিন দেহের ওজনের ০.০০১% প্রোটিনের যোগান দেয়া জরুরি। অর্থাৎ, কারও ওজন যদি ৬৮ কেজি হয়, তবে দৈনিক তাঁর ৬৮ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন দরকার।

খাদ্যতালিকায় ভিটামিন-সি:

আমরা জানি, লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি আছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। মানবদেহের জন্য এটি অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। তাছাড়া ভিটামিন-সি দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। তাছাড়া ভিটামিন-সি শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আমলকী, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। এমনকি গোল মরিচে ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় যা চোখের সুরক্ষার জন্য খুব উপকারী।
তবে ভিটামিন-সি আমাদের শরীরে জমা থাকে না। এজন্য প্রতিদিন ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।

ভিটামিন বি১২-যুক্ত খাবার

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও ডিমে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। তবে যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো মেডিসিন গ্রহণ করতে পারেন।

আদা ও রসুন:

আদা প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে। কারো বমির ভাব থাকলে আদা খাওয়ার ফলে তা চলে যায়। এছাড়া এটি দেহের কোলেস্টেরলও হ্রাস করে। তাছাড়া খাবারের ঝাঁজ বাড়াতে আদার তুলনা নেই। আবার, আদা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেরও ভালো উৎস।

রসুনও আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি ধমনীগুলোকে শক্ত ও স্থির করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর। রসুন থাকে সবার বাসায়ই। কাঁচা রসুন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে, ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে ভালো কাজ করে রসুন। আবার দেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে অধিক উপযোগী রসুন।

পালং শাক:

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। যতটা কম রান্না করা যায় ততই এটি স্বাস্থ্যকর। তবে আমাদের দেহ যাতে সহজে এতে বিদ্যমান ভিটামিন-এ এবং অ্যান্টালিউট্রিয়েন্ট অক্সালিক অ্যাসিড শোষণ করে নিতে পারে এজন্য হালকা রান্না করে নিলে ভালো। পালং শাক খুবই পুষ্টিকর এবং উপাদেয় খাদ্য।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দই:

দই আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। দই ভিটামিন ডি এর দুর্দান্ত উৎস।
দিনে অন্তত ১০০ গ্রাম দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এমনকি COVID-19-এর প্রতিষেধক তৈরিতে দই-এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে।

বাদাম:

বাদামে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। এটি ঠাণ্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। তাছাড়া এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি প্রদান করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সমুন্নত রাখে।

সূর্যমুখী বীজ: 

সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি -6 এবং ভিটামিন-ই সহ অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।

ভিটামিন ই ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সূর্যমুখীর বীজে এতো বেশি পরিমাণ সিলিনিয়াম রয়েছে যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের সিলেনিয়ামের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম।

গ্রিন টি:

গ্রিন টি-তে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড বিদ্যমান। এই চা অ্যামিনো অ্যাসিড এল-থানাইনিনের একটি ভাল উৎস। আর এল-থ্যানাইন ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনেক কার্যকর। তাছাড়া গ্রিন টি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভারী উপকারী।

পেঁপে:

পেঁপেতে পাপাইন নামক একধরনের হজম এনজাইম রয়েছে যা প্রদাহ উপশম করে। উৎসব-পার্বণে আমাদের ভূড়িভোজ একটু বেশিই হয়ে যায়। এজন্য বিড়ম্বনাও কম হয় না। হজমশক্তি বাড়াতে এবং পেটের গোলযোগ এড়াতেও পেঁপে অনেক কার্যকর।

এছাড়া পেঁপেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেট থাকে, যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এমনকি পেঁপেতে টমেটো বা গাজরের চেয়েও বেশি ভিটামিন এ আছে। তাছাড়া পেঁপের পুষ্টিগুণ চোখের মিউকাস মেমব্রেনকে সবল করতে ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পেঁপেতে বিটা ক্যারোটিন, জিয়াক্সনাথিন ও লুটেইন বিদ্যমান; যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত পেঁপে খেলে সাধারণ রোগবালাই দূরে থাকে। কোলন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি অনেক উপকারি।

মুরগির স্যুপ:

মুরগির স্যুপ খুব উপাদেয় খাদ্য। ঠান্ডার সমস্যা দূরীকরণে এটি ভালো ফল দেয়। বাসায় বানানো চিকেন স্যুপ মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারি। এতে থাকে কারনোসিন নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে মানুষের শরীরকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
তাছাড়া মুরগী ভিটামিন বি-৬ এর অন্যতম প্রধান উৎস; যা শারীরবৃত্তীয় বিক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়ক। এটি মূলত লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে।

মুরগির মাংসে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যান্য আরো অনেক সহায়ক পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

শিম বীজ:

জিঙ্কের ঘাটতির ফলে রক্তে শ্বেতকণিকার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শিম ও দুগ্ধজাত পণ্যে জিঙ্কের পরিমাণ বেশি থাকে। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অধিক পরিমাণে জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো উচিৎ। তাছাড়া শিম চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আবার শিম ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। শিমে সিলিকনজাতীয় উপাদান থাকে যা হাড় সুগঠিত করে।

এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিম সাহায্য করে। নিয়মিত শিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। তাছাড়া শিমের ফুল রক্ত আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে। শিমের দানায় ভিটামিন বি সিক্স ভালো পরিমাণে থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে। ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শিম মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে ও এলার্জির সমস্যার প্রতিকারক হিসেবে বেশ কার্যকর।

মিষ্টি আলু:

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে। পরে মানুষের শরীরে এসে এটি ভিটামিন এ-তে রূপ নেয়। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এমনকি বার্ধক্য ঠেকাতেও কাজ করে বিটা-ক্যারোটিন।

আমলকী:

আমলকীর সাথে অল্প আদা ও খেজুর বেটে নিন। ভিটামিন সি-তে ভরপুর আমলকীর এই চাটনি শরীরের জন্য ভারি উপকারি।

তরমুজ:

তরমুজে থাকে গ্লুটাথায়োন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার সক্ষমতা বাড়ে।

পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশি করে গাজর, টমেটো, কুমড়ো খান। প্রতিদিন ১ কাপ গাজরের জুস খেলে দারুণ উপকার পাবেন। গাজরের জুস দুধের থেকেও সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর। এবং সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কোমল পানীয় কম খান। এটি শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলে সহজে কোনো রোগ আক্রান্ত করতে পারে না। আসলে প্রতিটি মানুষের শরীর-ই আলাদা। । বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে কার ইমিউনিটি কতটা শক্তিশালী। এজন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লো নাকি কমলো, সেটা জানাও অনেক কঠিন। আপনি রাতারাতি প্রচুর ভিটামিন খেতে আরম্ভ করলেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে না। সামগ্রিকভাবে সুস্থ এবং সবল থাকার চেষ্টা করতে হবে।

Source:
https://www.bbc.com/bengali/amp/news-49151613
https://www.healthline.com/health/food-nutrition/foods-that-boost-the-immune-system
https://food.ndtv.com/bengali/keep-this-turmeric-tea-pre-mix-handy-for-your-daily-dose-of-immunity-booster-2216732?amp=1&akamai-rum=off
https://amp.dw.com/bn/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF/g-53434727
http://www.prothomalo.com/amp/life-style/article/1055981/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A7%9F
https://m.bdnews24.com/amp/bn/detail/lifestyle/1749590
https://www.somoynews.tv/pages/details/208611/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B0-%E0%A7%A7%E0%A7%A6-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A7%9F
https://www.priyo.com/articles/%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A7%AB-%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9D%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE
https://mytonic.com/bn/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF/tonic/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%83-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%9D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8
https://mytonic.com/bn/%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF/tonic/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%95-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

করোনা ভাইরাস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ, প্রতিকার ও সুরক্ষার উপায়

বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য পেয়েছে কোভিড-১৯, যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত । এই ভাইরাসের বিস্তার জনজীবনকে অস্বাভাবিক করে তুলেছ। মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারছে না। শ্রমজীবী-পেশাজীবী মানুষকে ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই রোগটির সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্ব মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পুরনো হলেও, এই মরণঘাতী ভাইরাসের সাথে কয়েকদিন আগেও মানুষের পরিচয় ছিলো না। ২০০২ সালে চীনে সংক্রমিত হওয়া সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসে মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সংক্রমিত হয়েছিল আরো হাজার হাজার মানুষ। এটিও ছিল এক প্রকারের করোনাভাইরাস।

করোনা ভাইরাস কি?

এটি মূলত ভাইরাসের একটি শ্রেণি, যা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। হোমো স্যাপিয়েন্সের মাঝে এদের সংক্রমণস্থল শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে। অনেক সময় এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, যা সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই। আবার অনেকক্ষেত্রে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা যায়।অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন, মুরগির মধ্যে এটি উর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।

মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

কিভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল এই ভাইরাস?

মাঝে মাঝে জীব-জন্তু থেকে নতুন কোনো ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বাধে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, করোনার উৎস কোনো প্রাণী। এই ভাইরাসে মানুষের প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে একটি মাছের আড়ৎ-এ। শহরের ঐ বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ ইত্যাদি । এসব প্রাণী এই করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে বলে মনে করা হয়।

পরীক্ষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের বাদুড়ের মাঝে সংক্রমণ ঘটায় এমন ভাইরাসের সাথে এর ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। তাদের ধারণা, ভাইরাসটি প্রথমে বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণীতে প্রবেশ করেছে। এবং এরপর কোনোভাবে সেটা মানুষের শরীরে পৌঁছে গেছে।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণঃ

এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন:

  • অবসাদ
  • মাথা ব্যাথা
  • গলা ব্যাথা
  • অঙ্গ বিকল হওয়া
  • পেটের ব্যাথা
  • শ্বাসকষ্ট
  • শুষ্ক কাশি
  • বমি হওয়া
  • জ্বর

এটি মানুষের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায় এবং আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে যাওয়া কারণে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডার মতো এই ভাইরাস হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত হলে অনেকসময় শুষ্ক কাশির সঙ্গে জ্বরও থাকে।

জ্বর ও কাশি’র মোটামুটি ৭ দিনের মাথায় শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ডব্লিউএইচও-এর মতে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সবগুলো লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্তও সময় লাগতে পারে। এটাকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।

রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা ( ডায়াবেটিস, অ্যাজমা,উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদি) রয়েছে তারা মারাত্মকভাবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘ্রাণ না পাওয়াও করোনায় সংক্রমণের লক্ষণ

ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, স্বাদ হারানো বা ঘ্রাণ না পাওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই গবেষণাটি চালিয়েছে কিংস কলেজ লন্ডন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এমন চার লাখের বেশি মানুষ এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।

তবে ফুসফুসের অন্যান্য জটিলতার ক্ষেত্রেও স্বাদহীনতা বা ঘ্রাণ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এসব লক্ষণ প্রকাশিত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

এই ভাইরাসের লক্ষণ কি পরিবর্তনশীল হতে পারে?

হ্যাঁ, আক্রান্ত ব্যক্তি যখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন, তখন হঠাৎ করে তার এই লক্ষণগুলো আর প্রকাশ পায় না। তিনি সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু আবারও এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে রোগীর শরীরে। কয়েকদিন বা সপ্তাহধরে জ্বর, ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের মাত্রা পরিবর্তন হতে থাকে।

আপনার কি লক্ষণ ছাড়াই কোভিড -১৯ থাকতে পারে?

কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ সাধারণত ২-১৪ দিনের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। তবে অনেক সংক্রমিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না এবং তারা অসুস্থও বোধ করে না।

আক্রান্ত ব্যক্তির হাতে তৈরি খাবার থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ

ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না না করেন তবে সেই খাবার থেকে আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। আমাদের কাশির সঙ্গে যে সূক্ষ্ম থুতুকণাগুলো বেরিয়ে আসে এগুলোকে বলা হয় ‘ড্রপলেট’। হাঁচি বা কাশির সঙ্গে এই ভাইরাস খাবার বা আমাদের ব্যবহার্য জিনিসে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা জরুরি। আর যারা খাবার তৈরি করছেন, যে কোন খাদ্যবস্তু স্পর্শ করার আগে তার উচিৎ ভালভাবে হাত ধুয়ে নেয়া।

শিশুরা কি ঝুঁকিতে?

যে কোন বয়সের মানুষই করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে বিশেষ করে অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। আবার বস্তিতে থাকা দরিদ্র শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ভাইরাসের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। কারণ তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে সহজেই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরের মতে,
“এই করোনাভাইরাসটি ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের উপর এই ভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে আমরা আশঙ্কাগ্রস্ত । কিন্তু নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সময় আমাদের সাথে নেই।”

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়ীত্বকাল

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসকে কতদিন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারবে- এই নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে আমাদের অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। আর যেহেতু রোগটি নতুন,তাই এই নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী তথ্যের অভাব রয়েছে। এজন্য আশ-পাশের মানুষের সুরক্ষার জন্য অন্যদের মাঝে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া আক্রান্ত ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব।

লক্ষণ প্রকাশ পেলে কি করবেন?

নিজের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপরোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে প্রথমে নিজেকে সবার থেকে আলাদা রাখতে হবে। এর পর নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর বা সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁদের দেয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে নিচের হটলাইন নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা যেতে পারে:
৩৩৩
১৬২৬৩
১৬৬৩৩
১০৬৫৫
০১৯৩৭০০০০১১
০১৯৩৭১১০০১১
০১৯২৭৭১১৭৮৪
০১৯২৭৭১১৭৮৫

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার উপায়:

সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে নিম্নোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে বা অ্যালকোহলযু্ক্ত হাত-ধোয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

কাশি বা হাঁচি দেবার সময় মুখ এবং নাক কনুই দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন।

ঠান্ডা লেগেছে বা জ্বরের লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।

স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া।

করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলি না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়াও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিদিন বাড়ি-ঘর ভালো মতো পরিষ্কার করাও জরুরি।

আসুন জেনে নিই, যে পাঁচটি স্বাস্থ্য উপকরণ আমাদের সবার ঘরে থাকা জরুরি-

১. জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাসা-বাড়িতে জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ রাখতে হবে । খাবার রান্না করার আগে ও পরে, খাবার খাওয়ার আগে-পরে, প্রতিবার বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে, এবং বাইরে থেকে বাসায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন কাজে আমাদের জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।

হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি:

ধাপ ১: প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো;
ধাপ ২: ভেজা হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাবান ব্যবহার করা;
ধাপ ৩: হাতের পেছনের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যের অংশ এবং নখের ভিতরের অংশ অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ধোয়া;
ধাপ ৪: প্রবাহমান পানিতে ভালোভাবে কচলে হাত ধোয়া;
ধাপ ৫: একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার করেন এমন তোয়ালে দিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে ফেলা।

বার বার হাত ধুয়ে নিবেন। বিশেষ করে, নাক পরিস্কার করার পর, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পরেও। আর যদি সাবান বা পানি বা থাকে, তবে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

২. জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে

রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখতে জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে ব্যবহার করুন। রান্নাঘর ছাড়াও বাথরুম, ডাইনিং রুম, লিভিং রুম এবং বেডরুমও জীবাণুনাশক ক্লিনিং স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করুন ।

৩. রাবার গ্লাভস

টয়লেট বা ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করা এবং হাড়ি-পাতিল ধোয়ার মতো গৃহস্থালি কাজেও রাবার গ্লাভস ব্যবহার করুন।

৪. বক্সড টিস্যু

বাড়ির প্রতিটি ঘরে টিস্যু রাখুন। যাতে কাশি বা হাঁচির সময় হাত বাড়ালেই টিস্যু পাওয়া যায়।

৫. ভেজা টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং পকেট টিস্যু

স্যানিটাইজার বা ভেজা টিস্যু ঘরে বা ঘরের বাইরেও ব্যবহার করা সম্ভব। যখন হাতের কাছে সাবান বা পানি পাওয়া যাবে না, তখন আপনি সহজেই এসব ব্যবহার করে জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন। আমাদের সকলেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

আমাদের কি মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিৎ?

যদি কারো শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (কাশি বা হাঁচি) থাকে, তবে অন্যের সুরক্ষার জন্য মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি । তবে আপনার যদি ভাইরাসের কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই।

আর কেউ যদি একান্তই মাস্ক ব্যবহার করেন, তবে ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। এবং ব্যবহার শেষে মাস্ক নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে।

তবে শুধু মাস্কের ব্যবহার এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট নয়। এর সাথে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি ও কাশি ঢেকে রাখা, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিৎ ।

যদি আপনার সন্তানের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে কি করা উচিত?

যদি কারো কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। এসময় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হাত ধোয়া এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। যদি অন্য কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ থাকে তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী সন্তানকে ভ্যাকসিন দিন। এছাড়াও, অন্যদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য জনসমাগমস্থলে (কর্মক্ষেত্র, বিদ্যালয়, গণপরিবহন) যাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। এর পাশাপাশি জীবাণুনাশক ক্লিনার ব্যবহার করে দরজার নক, ফোন, ট্যাবলেট এবং ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ঘন ঘন পরিষ্কার করুন। এসময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিন। আর এক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় আক্রান্ত ব্যক্তির আলাদা বাথরুম ব্যবহার করা উচিৎ ।

 

ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বের কার্যকারিতা

আমাদের শুনে হয়তো খারাপ লাগছে যে, এতগুলো ক্রীড়া ইভেন্ট, উৎসব এবং অন্যান্য জমায়েত বাতিল করা হচ্ছে। মূলত এর পেছনে জনস্বাস্থ্য রক্ষা অন্যতম উদ্দেশ্য। এভাবে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা একটি অভিনব কৌশল। অফিসে না গিয়ে বাসায় থেকে কাজ করা এবং স্কুল বন্ধ করে বা অনলাইনে ক্লাস স্যুইচ করে সামাজিক দূরত্ব তৈরি অত্যন্ত কার্যকরী।তবে, অনেকের মতে এটা কার্যকরী নয় বরং তথ্য বিভ্রাট।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভেষজ চা:

আমরা অনেকেই এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে সকাল শুরু করি। কিছু লোক কাজের পরে সন্ধ্যায় সতেজ চা পান উপভোগ করেন। আমরা যদি প্রতিদিন চা গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলি, তবে এটি ভাইরাল সংক্রমণের জন্য আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলবে। চলুন কিছু ইমিউন বুস্টার ভেষজ চা সম্পর্কে জেনে নিই।

গ্রিন টি(Green Tea): 

আমরা সকাল বেলা গ্রিন টি খেতে পারি। এটি ক্যাফেইনের দুর্দান্ত উৎস; যা আমাদের দেহে ইনস্ট্যান্ট শক্তি সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া, গ্রিন টি-তে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে, যেমন- পটাসিয়াম (K), আয়রন (Fe), ক্যালসিয়াম (Ca), প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।

এছাড়াও শুকনো গ্রিন টি পাতায় কিছু সক্রিয় পদার্থ রয়েছে, যেমন- ফ্যাটি অ্যাসিড, তেল, ফ্ল্যাভানলস্, ক্লোরোফিল এবং আরও অনেক ভেষজ উপাদান। এসব পদার্থের মাধ্যমে গ্রিন টি আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-এনজাইমেটিক বিক্রিয়া করে । এইভাবে গ্রিন টি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

গ্রিন টি কীভাবে প্রস্তুত করবেন:

আধা লিটার পানি প্রায় ১০ মিনিটের মতো সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ পানিতে ১টা টি-ব্যাগ বা ১ চামচ চা-পাতা দিন এবং এভাবে আরো ৩-৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপরে চা ব্যাগটি সরিয়ে ফেলুন বা চা ছাড়িয়ে দিন। আরো স্বাদের জন্য আপনি গ্রিন টিতে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১চামচ মধু যোগ করতে পারেন। এভাবে আপনি খুব সহজে গ্রিন টি তৈরি করে নিতে পারেন।

লেবু চা: 

আপনি যখন গলা ব্যথা, অবিরাম মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, অথবা অন্য কোনো ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা অনুভব করেন, এ অবস্থায় আপনি বেছে নিতে পারেন এসবের ঘরোয়া প্রতিকার লেবু চা। এছাড়াও লেবু চা প্রদাহ হ্রাস, রক্তচাপ হ্রাস, রক্তনালীগুলির কার্যকারিতা বাড়ানো, হজমে সাহায্য করা-সহ অসংখ্য সুবিধা দিতে পারে। এমনকি লেবু সাধারণ সর্দি, ফ্লু, H1N1 (সোয়াইন) ফ্লু, সাইনাস প্রদাহ, টিনিটাস, পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, কিডনিতে পাথর ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে চিকিৎসকরা COVID19 এর চিকিৎসার জন্য ভিটামিন সি ডোজ প্রয়োগ করেছেন। কারণ এখনও পর্যন্ত করোনার অনুমোদিত কোনো ভ্যাকসিন নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, COVID19 এবং অন্যান্য সাধারণ ধরণের ভাইরাল সংক্রমণ রোধে প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া অত্যন্ত উপকারি। লেবু ভিটামিন সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। তাই লেবু চা আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার অংশ হতে পারে।

লেবু চায়ের প্রস্তুত প্রণালী:

প্রথমে আধা লিটার পানি ১০ মিনিটের জন্য সিদ্ধ করুন। সাথে দারুচিনি, গোল মরিচ, লবঙ্গ, কালোজিরা, তেজপাতা, এলাচ পরিমাণমত যোগ করুন। তারপর ১ চা চামচ চা-পাতা যোগ করুন। চা পাতা কয়েক মিনিটের জন্য জ্বাল দিন। চায়ের স্বাভাবিক রং হওয়ার পর ২ চামচ লেবুর রস যোগ করুন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য, আপনি আপনার লেবু-চাতে ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন।

আদা চা: 

হাঁপানি, সর্দি, কাশি, বমি বমি ভাব, বাত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি, ভ্রমণ অসুস্থতা, হতাশা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময়ের জন্য আদা মূল বা গুঁড়ো অত্যন্ত কার্যকর সমাধান। আদার ব্যবহার ভাইরাস সংক্রমণকেও প্রতিরোধ করে। আদার ব্যবহার আপনার শরীরের সঞ্চিত টক্সিনগুলোকে ভেঙে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফুসফুসের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আদা অত্যন্ত উপকারি।

আদা প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আপনার দেহ কোষের ডিএনএ কাঠামোর ক্ষতি প্রতিরোধ করে। COVID19 এর বিরুদ্ধে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্ত করতে, আপনি আপনার ডায়েট পরিকল্পনায় আদা চা যুক্ত করতে পারেন।

আদা চা কীভাবে প্রস্তুত করবেন:

এক চা চামচ আধা গুঁড়া বা টাটকা আদা ১/২ লিটার পানিতে যোগ করুন এবং এগুলো ১০-১৫ মিনিট ধরে সিদ্ধ করতে থাকুন। এরপর ১ চা চামচ চা-পাতা যুক্ত করুন। ২-১ মিনিট পর চা চুলো থেকে নামিয়ে ফেলুন । পানীয়টি স্বাস্থ্যকর করতে আপনি ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন।

এছাড়া আমরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালোজিরা ও রসুনের ভর্তা, অথবা সরিষা ভর্তা যোগ করতে পারি। এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ থাকে। পাশাপাশি এসব খাদ্য গ্রহণে আমাদের শরীরের pH লেভেলে ভারসাম্য তৈরি হয়। তাছাড়া এসব মুখরোচক খাবার আমাদের এনার্জির ঘাটতি দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

করোনা ভাইরাসের ঔষধ:

কবে এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে? এখন এই প্রশ্ন সবারই।
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দুরন্ত গতিতে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে ২০টিরও বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। তবে গবেষকরা এ বছরের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেও এটিকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে হার্ড ইমিউনিটি পলিসির দিকে ঝুঁকছে।

ভ্যাকসিন বা টিকা:

গোটা বিশ্বে গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা ভাইরাসের টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু হয়ে গেছে৷ তবে এগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

পাশাপাশি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধিভুক্ত জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট-এর নেতৃত্বে একটি প্রি-ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট হয়। অক্সফোর্ডের গবেষক দলটির দাবি, তাদের উদ্ভাবিত টিকা একবার নিলেই শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে। পরীক্ষামূলক এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনসিওভি-১৯’। সফল পরীক্ষা শেষে চলতি বছরেই এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

আবার, প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাসের (2019-nCoV) টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছেন রাশিয়া ও চীনের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে চীন করোনা ভাইরাসের জেনোম রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তারা আশা করছেন, শিগগিরই ভাইরাসটির প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।

বিভিন্ন দেশে ট্রায়াল দেয়া ঔষধ সমূহ:

যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনার চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’ ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের প্রতিরোধে এটা অনেক কার্যকর ছিল। তাছাড়া ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনে এন্টিভাইরাল থাকায় চিকিৎসকরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটি সেবনেরও পরামর্শ দিচ্ছেন।

আবার চীনে করোনা রোগীর চিকিৎসায় অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি ইন্টারফেরন আলফা-টুবিও প্রেসক্রাইভ করা হচ্ছে। এ থেকেও আশাপ্রদ ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া যুক্তরাজ্যের ‘রিকভারি ট্রায়ালে’ পরীক্ষা করা হচ্ছে ডেক্সামেথাসন নামের একটি ঔষধের। এটি এক ধরণের স্টরয়েড যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

তাছাড়া ‘জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.- তৈরি ফ্যাভিপিরাভির ‘অ্যাভিগান (Avigan)’ অ্যান্টভাইরাল ওষুধ হিসেবে অনেক কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় এটি তৈরি হয়েছিল। চীনের উহানে কভিড-১৯-এ ব্যাপক প্রাণহানির পর ‘অ্যাভিগান’ ভাইরাসের প্রতিরোধে অনেক সুফল দিয়েছিল।

উল্লেখ্য, ফ্লুর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ওসেলটামিভির নামে একটি ওষুধ। এবং এইচআইভি-র চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের নাম লোপিনাভির এবং রিটোনাভির। ব্যাংককের রাজাভিথি হাসপাতালের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন, এসব ওষুধের প্রয়োগে করোনা রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে। তাঁরা এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

হার্ড ইমিউনিটি কি? 

যখন কোনো এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে একটি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক দেয়া হয়, তখন ঐ এলাকায় রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা আর থাকে না। কারণ ঐ অবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার মতো আর কোনো মানুষই থাকে না।

কিন্তু করোনাভাইরাসের তো এখনো কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি।

হার্ড ইমিউনিটি কিভাবে কাজ করে?

এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, যারা একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে এক ধরনের শক্তিশালী ইমিউনিটি তৈরি হয়। এভাবে বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে থাকলে এক সময় বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাসের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যার কারণে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়, যাতে করে রোগটির সংক্রমণ থেমে যায়।

তাই সংক্রমণের শুরুতে এই হার্ড ইমিউনিটির ভরসাতেই ছিলো সুইডেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রাজিল, ইতালির মতো দেশ। এজন্য তারা অন্যান্য দেশের মতো লকডাউন সিস্টেমে যায় নি। এর নেপথ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখাও উদ্দেশ্য ছিল। তবে এসব দেশে মৃত্যুহার এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, বাধ্য হয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য, ইতালি হার্ড ইমিউনিটি ফর্মূলা থেকে সরে এসেছে। কিন্তু সুইডেন তাদের নীতিতে এখনও অটল। তারা তাদের বিপণী বিতান, পরিবহন, মানুষের অবাধ চলাচল চালু রেখেছে। সেই দেশের সরকারের দাবি রাজধানী স্টকহোমে এরই মধ্যে প্রতিটি নাগরিক হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছে।

দীর্ঘ দিনের লকডাউনের পর বাংলাদেশ সরকার এখন আস্তে আস্তে হার্ড ইমিউনিটির দিকেই হাঁটছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি হার্ড ইমিউনিটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসব মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার সক্ষমতা সরকারের নেই। এতে ডেথ রেট ক্রমশ বাড়তে পারে। তাই, হার্ড ইমিউনিটি পলিসি প্রয়োগে একটা বড় আশঙ্কা থেকেই যায়।

 

হাদিসের আলোকে করোনা ভাইরাস(মহামারী )থেকে মুক্তির উপায়:

মহামারির সময়ে সতর্কতা প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১০৬৫)

তাই আমাদের উচিৎ, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে; যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।

এছাড়া নবিজি (স.) মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়তে বলেছেন- اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ (আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি,ওয়া মিন্ সাইয়ি-ইল আসক্কম)। অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত রোগ, পাগলামি, কুষ্ঠ রোগ এবং জানা-অজানা সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।

সর্বোপরি করোনা প্রতিরোধে আমাদের যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। আর সাথে সাথে মহান রব্বুল আ’লামিনের কাছে এই ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি দু’আ করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমরা এই মহমারী থেকে রক্ষা পাবো ইনশা’আল্লাহ।

Source:

https://www.bbc.com/bengali/news-51257048
https://www.jagonews24.com/amp/555631
https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public
https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/prevent-getting-sick/prevention.html
https://www.webmd.com/lung/coronavirus
https://www.health.harvard.edu/diseases-and-conditions/preventing-the-spread-of-the-coronavirus
https://www.wvi.org/publications/infographic/bangladesh/karaonaa-bhaairaasa-paratairaodhae-abhaibhaabakaera-bhauumaikaa
https://www.unicef.org/bangladesh/%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B9/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A1-%E0%A7%A7%E0%A7%AF
https://m.banglanews24.com/cat/news/bd/767570.details
https://amp.dw.com/bn/%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%93%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%A7-%E0%A6%A4%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE/a-52869385
https://www.ittefaq.com.bd/covid19-update/146909/%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE-%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%8B%E0%A6%97%C2%A0
https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/60503

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়

শিশুর সর্দি কাশি হলে করনীয়

শিশুর সর্দি কাশি দুর করার উপায়

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন

শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের যত্ন । ১০ টি ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার

হাত পা ঘামার ঔষধ

হাত পা ঘামার প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার নিয়ম

ঘুম কমানোর উপায়

ঘুম কমানোর উপায়

টনসিলের ঔষধ

টনসিলের ওষুধ | টনসিল হলে কি করবেন

বাদাম খেলে কি হয় | বাদাম খাওয়ার উপকারিতা

হরেক রকম বাদামের হরেক রকমের উপকারিতা | বাদাম খাওয়ার নিয়ম

টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ ও ঔষধ | টাইফয়েড হলে করনীয়

ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে কি করবেন

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন

 উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা




Categories

ডেঙ্গু জ্বর হলে করনীয় | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ও ঘরোয়া ঔষধ

ডেঙ্গু থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গুকে ঘাতক জ্বরও বলা হয়। এই জ্বরের ভাইরাস বা জীবাণু সরাসরি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে যেতে পারে না। জ্বরে আক্রান্ত ব্যাক্তির রক্তে থাকা জীবাণু মশার মাধ্যমে আশে পাশের অন্য কারো শরীরে প্রবেশ করলে তারও ডেঙ্গু জ্বর হয়।

Continue reading

জ্বর কমানোর প্রাকৃতিক চিকিৎসা

home remedies for fever

শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে আমরা জ্বর বলি। ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে আমরা স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করি। কিন্তু এটা সর্বজন গ্রহণযোগ্য মত না। বয়সভেদে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভিন্নতা হয়।

জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট (NIH) এর মতে একজন শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেটাকে জ্বর হলা হবে। আর একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ থেকে ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৩৭.২ থেকে ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেটাকে জ্বর বলা হবে।

কখনো কখনো জ্বর অন্যকোন রোগের লক্ষণ হিসেবে হতে পারে। মানব দেহ যখন কোন সংক্রামণ (Infection)’র সাথে লড়াই করে তখন জ্বর হতে পারে। হঠাত এক পরিবেশ থেকে আরেক পরিবেশে যাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের কারণেও জ্বর হয়।

সাধারণত কয়েকদিনের মধ্যে আপনা আপনি জ্বর ভাল হয়ে যায়। তবে জ্বরের কারণে যদি অস্বস্তি লাগে তাহলে আপনি সহজে ঘরে বানানো জ্বর কমানোর কিছু প্রাকৃতিক ঔষধ ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে পারেন।

সতর্কতাঃ শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

নিচে জ্বরের ঘরোয়া সমাধানগুলো বর্ণনা করা হল।

১। ঠান্ডা পানিঃ পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে হাত-পায়ের তালু ও বগলের নিচে ভাল করে বার বার মুছে নিতে হবে। অথবা এক টুকরো কাপড় ভিজিয়ে কপাল এবং ঘাড়ে জলপট্টি দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। এছাড়াও কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে জ্বর ভাল হয়ে যায়। যদিও জ্বর হলে মোটেও গোসল করা উচিত নয়। যত বেশি সম্ভব বিশ্রাম নিতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

২। তুলসী পাতাঃ জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার খুব কার্যকর। বাজারে পাওয়া জ্বরের এন্টিবায়োটিক ওষুধের মতই এটা কাজ করে।এতে থাকা নানা ঔষধি গুন দ্রুত জ্বর ভাল করতে পারে।

  • ২০ টি তুলসী পাতা এবং ১ চা চামচ আদা কুচি এক কাপ পানিতে গরম করতে থাকুন। পানি যখন অর্ধেক হয়ে যাবে তখন নামিয়ে ফেলুন। ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিয়ে দুই থেকে তিনবার এই পানীয় পান করুন।

৩। আপেল সিডার ভিনেগারঃ জ্বরের প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার দামি হলেও খুব কার্যকরী। এতে থাকা উপকারী এসিড ত্বকের  নিচ থেকে তাপ কমাতে দ্রুত কাজ করে।এতে উচ্চ মাত্রায় শরীরের জন্য উপকারী খনিজ পানীয় বা মিনারেল থাকায় জ্বর দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

  • আধাকাপ ভিনেগার গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট সেই পানি সারা শরীরে ঢালুন। ২০ মিনিটের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে।
  • এক টুকরো কাপড় ৩ ভাজ করে এক ভাজ ভিনেগার দিয়ে আর বাকি দুই ভাগ পানি দিয়ে ভিজিয়ে কপাল এবং পেটে জলপট্টি দিন। পায়ের তালুতেও এই পট্টি দিতে পারেন। ভেজা কাপড় গরম হয়ে গেলে আবার পানি এবং ভিনেগার দিয়ে ভিজিয়ে নিন।
  • ২ চা চমচ আপেল সিডার ভিনেগারের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ১বার পান করলেও ভাল ফল পাওয়া যায়।

৪। রসুনঃ রসুন শরীর গরম করে। আবার এই রসুন জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে ভাল কাজ করে। রসুনে থাকা শরীর গরম করার নানা উপাদান দেহকে আরো উত্তপ্ত করে ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে জ্বর সারাতে পারে। এটা শরীর থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রসুনে আছে এন্টিফাঙ্গাল (Antifungal) এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল (Antibacterial) যা দেহের বিভিন্ন সংক্রামণের সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম।

  • বড় সাইজের এক কোয়া রসুন কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে এক কাপ ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর রসুনের কুচিগুলো ছেঁকে ফেলে দিয়ে পানিটুকু চায়ের মত করে পান করুন। ভাল ফলাফলের জন্য এই পানি দিনে দুইবার পান করুন।
  • ২ কোয়া রসুন ছেঁচে, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ দুই পায়ের তালুতে লাগিয়ে নিন। তবে পুরো তালু জুড়ে লাগানো যাবে না। মাঝে মাঝে ফাকা রাখতে হবে। গজ কাপড় দিয়ে পায়ের তালু পেঁচিয়ে সারারাত রাখুন। এই পদ্ধতিতে অনেকের এক রাতের মধ্যে জ্বর ভাল হয়ে যায়।

সতর্কতাঃ রসুনের এই চিকিৎসা গর্ভবতী ও বাচ্চাদের জন্য নয়।

৫। কিশমিশঃ কিশমিশে আছে নানা ধরনের এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টিওক্সিডেন্ট খাদ্যগুণ। এছাড়াও জ্বর থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে কিশমিশ টনিকের হিসেবে কাজ করে।

  • ২৫ টি কিশমিশ দেড় কাপ পানিতে নরম না হওয়া পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখুন। এরপর কিশমিশগুলো চটকে পানির সাথে ভাল করে মিশিয়ে নিন। ২ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে ভাল করে মিশ্রণ করুন। দিনে দুই বার এই মিশ্রণ সেবন করুন জ্বর না কমা পর্যন্ত।

৬। আদাঃ আদা দেহের তাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে আছে প্রাকৃতিক এন্টিভাইরাল (Antiviral) যা দেহের ইমিউন সিস্টেমকে (Immune System) যে কোন ধরনের সংক্রামণ থেকে রক্ষা করে। ফলে দ্রুত অতিরিক্ত জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে আদা অনেক কার্যকরী।

  • এক কাপ গরম পানির সাথে আধা চা চামচ আদা বাটা ভাল করে মিশিয়ে অল্প কিছুক্ষণ রাখুন। পরিমাণ মত মধু মিশিয়ে এই চা দিনে ৩ থেকে ৪ বার পান করুন।
  • এছাড়াও আধা চা চামচ আদার রসের সাথে ১ চা চামচ লেবুর রস এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ৩ থেক ৪ বার খেলে জ্বর কমে যায়।

৭। পুদিনা পাতাঃ জ্বরের প্রাকিতিক চিকিৎসা হিসেবে পুদিনা পাতা প্রসিদ্ধ। পুদিনা পাতা শরীরের ভেতরকে ঠান্ডা করতে পারে। এক কাপ গরম পানির সাথে এক টেবিল চামচ পুদিনা পাতা বাটা মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ বার পান করুন।

৮। চন্দনঃ চন্দনে থেরাপিউটিক ( Therapeutic) নামক ভেষজ উপাদান আছে, যা জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। চন্দন মূলত দেহ এবং মন দুটোকেই ঠান্ডা ও শান্ত রাখতে পারে।

  • আধা চা চামচ চন্দনের গুড়ার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট কপালে ভাল করে মাখিয়ে রাখুন। দ্রুত জ্বর কমাতে দিনে কয়েকবার এই পেস্ট ব্যবহার করুন।

অতিরিক্ত পরামর্শঃ

  • জ্বর হলে বেশি বেশি পানি এবং লেবু জাতীয় পানীয় পান করুন।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি অথবা বরফ ব্যবহার করবেন না।
  • ১ থেকে ২ দিন পুরোপুরি বিশ্রাম নিন।
  • প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি খান।
  • ফ্রিজের খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।

ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

বর্তমানে ডায়াবেটিস খুব প্রচলিত একটি রোগ। নানা কারনে মানব দেহে এই রোগ হতে পারে। এটা দুই ধরনের হয়ে থাকে। ধরন ১ ডায়াবেটিস (Type 1 diabetes) হয় যখন দেহ ইনসুলিন (Insulin) বা হর্মোন তৈরি করতে পারে না। দ্বিতীয় ধরনের ডায়াবেটিস (Type 2 diabetes) হয় যখন দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন ভালভাবে কাজ করে না।

Continue reading