এলার্জির চিকিৎসায় ভেষজ ঔষধ

এলার্জির চিকিৎসায় ভেষজ ঔষধ

এন্টিজেন জাতীয় পদার্থের প্রভাবে আমাদের শরীরে কিছু অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়; যেমন- চুলকানি, ত্বক ফুলে যাওয়া, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি। এ সৃষ্ট উপসর্গগুলোই হলো এলার্জি।

এলার্জিতে ভোগে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। অনেকের সিজনাল ডাস্ট এলার্জি, অর্থাৎ শীতকালে বাতাসের শুষ্কতার কারণে এলার্জি হয়। আবার কেউ কেউ সারাবছরই এ সমস্যায় পড়েন। রাস্তাঘাটের ধুলোবালি, ঘরদোর পরিষ্কার করতে গিয়েও ডাস্ট এলার্জির শিকার হতে হয়।

 

এলার্জি কেন হয়

দেহের গঠনগত ভিন্নতার কারণে এলার্জির কারণেও বৈচিত্র্য থাকে। একেকজনের একেক কারণে এলার্জির উপসর্গ দেখা যায়। এলার্জির কারণগুলো দেখে নিই-

১. মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল প্রভৃতি পতঙ্গে এলার্জির উপদান থাকে। শরীরে পশম বা পালক আছে এমন গৃহপালিত পশু (যেমন- বিড়াল, কুকুর, গিনিপিক ইত্যাদি) এবং গৃহপালিত পাখিও অনেক সময় এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

২. খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে এলার্জির সম্ভাবনা থাকে। কিছু সবজি, মাছ, মাংস, চকোলেট, বাদাম, পেয়াজ, আপেল, গম, ডিম, রসুন, তরমুজ ইত্যাদিতে এলার্জির উপাদান থাকে।। এমনকি ঠান্ডা পানীয়ও কোনো কোনো ব্যক্তির এলার্জির জন্য দায়ী।

৩. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে। ফোঁড়া, পাঁচড়া, মাথা ব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা ইত্যাদির জন্য পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ আমরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই খেয়ে থাকি। পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন থেকে শরীরে এলার্জিজনিত চুলকানি হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না।

৪. দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম ইত্যাদি দেহে এলার্জিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এতে হাঁপানি বেড়ে যাওয়ার মারাত্মক আশঙ্কা রয়েছে। যারা হাঁপানিতে ভুগছেন তাদের এগুলো পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। কোনো কোনো খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনির, পাউরুটি এবং কেক তৈরিতে ছত্রাক ব্যবহৃত হয়। এ ছত্রাক এলার্জির অন্যতম কারণ।

৫. ঘরের ধুলোতে মাইট নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে, যা শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। ঝাড়ু দেয়ার সময় এবংকম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ, আসবাবপত্র প্রভৃতিতে যে ধুলো জমে, তা পরিষ্কার করার সময় মুখে মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করুন।

৬. বাবা মা কেউ এলার্জিতে আক্রান্ত থাকলেসন্তানের মাঝে এলার্জি হওয়ার অধিক আশঙ্কা থাকে।

বাতাসে (বিশেষ করে শীতকালে) যখন ফুলের রেণু বেশি থাকে তখন এলার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশি হওয়াতে সেখানে এলার্জির প্রকোপও বেশি।

এলার্জি জাতীয় খাবার

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় হাঁসের ডিম, গরুর মাংস, ফার্মের মুরগী, বেগুন, মিষ্টিকুমড়ো ইত্যাদি খাবার শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে থাকে। কোনো একটি খাবারে একজনের শরীরে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হলে, সে খাবারটি অন্যজনের শরীরেও অ্যালার্জি তৈরি করবে এমন নয়।

তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা বেশি আছে, তাঁদের অ্যালকোহল, চা এবং কফি পান না করাই ভালো। কিছু কিছু খাবারে এলার্জির মারাত্মক আশঙ্কা থাকে; যেমন- দুধে, বিশেষ করে গরুর দুধে শিশুদের এলার্জি হতে পারে। এছাড়া পেয়াজ, রসুন, আপেল, আঙ্গুর, তরমুজ, চকোলেট ইত্যাদি কোনো কোনো ব্যক্তির এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

চলুন, এলার্জি জাতীয় কিছু মাছের কিছু তালিকা দেখে নেই-

  • চিংড়ি
  • পাঙ্গাস
  • বোয়াল
  • ইলিশ

এছাড়াও কতিপয় ছোট মাছে অনেকের এলার্জি হতে পারে। যেমনঃ পুঁটি মাছ, বেলে মাছ, শিং মাছ ইত্যাদি।

খাবারে অ্যালার্জির কারণে বেশ কিছু সমস্যা (যেমন- বমি, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে। কোনো খাবারে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হলে, সেই খাবারটি খাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

 

এলার্জিজনিত সমস্যা ও উপসর্গ

এলার্জি অত্যন্ত সংকটজনক, যা হঠাৎ শুরু হয় এবং চরম পর্যায়ে মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। সাধারণত এলার্জেনের প্রভাবে কয়েক মিনিট বা ঘণ্টার ব্যবধানে চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি, গলা ফোলা, এবং নিম্ন রক্তচাপসহ বেশ কিছু উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে।

চলুন, বিভিন্ন ধরনের এলার্জির লক্ষণগুলো  সমন্ধে জেনে নিই-

ফুড এলার্জি

খাদ্যে এলার্জিজনিত উপসর্গগুলি হলো- ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চুলকানি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমির ভাব, উদরাময় ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাদ্যের এলার্জি থেকে এনাফাইল্যাক্সিস-ও হতে পারে।
এর ফলে-

  • দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়
  • জিভ, গলা এবং ঠোঁট ফুলে যায়
  • হাত এবং পায়ে ঝিঁ ঝিঁ করে

খাদ্যে এলার্জির কারণ-

  • জন্মের পরপর একাধিকবার
  • ডায়রিয়াজনিত রোগে ভোগা
  • জীবনের শুরুতেই নানাবিধ
  • এন্টিবায়োটিকস্ ঔষধ গ্রহণসহ
  • যাদের পরিপাকতন্ত্র একটু দেরিতে পরিণত অবস্থার দিকে এগোয় তাদেরও খাবারে এলার্জি দেখা দেয়
    এছাড়া কোনো কারণে পরিপাকতন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াল ফ্লোরা বিপর্যস্ত হলেও ফুড এলার্জি দেখা দেয়।

এলার্জিক রাইনিটিস

ধূলিকণা, কুকুর ও বিড়ালের লোম, ছত্রাক ইত্যাদি এলার্জিক রাইনিটিসের জন্য দায়ী। নিঃশ্বাসের সাথে এ জাতীয় জীবাণু যখন নাকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তখন নাক সংলগ্ন কান, সাইনাস এবং গলাও সংক্রমিত হয়।

উপসর্গ:

  • নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরা
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • নাকে চুলকানো
  • অতি মাত্রায় হাঁচি
  • কান ও গলা চুলকানো, খুসখুস করা ইত্যাদি।

এলার্জিক এ্যাজমা বা হাঁপানী

শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত এ সমস্যায় ফুসফুস ও এর অভ্যন্তরভাগে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশের পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।

উপসর্গ:

  • প্রথম দিকে সর্দি-কাশি বা শুকনো কাশি শুরু হয়, ক্রমশ শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়
  • নিঃশ্বাসে শো শো শব্দ হয়, দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয় ইত্যাদি।

এলার্জিক কনজাংকটিভাইটিস বা চোখের এলার্জি

শরীরের অন্যান্য অংশের মত চোখেও এলার্জির সৃষ্টি হয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ ধরনের এলার্জি বেশি দেখা যায়। এছাড়া কাজল, আইলাইনার, মাসকারা ইত্যাদি প্রসাধনীও অনেক সময় চোখের এলার্জির কারণ হয়।

উপসর্গ:

  • সমস্ত চোখ বিশেষ করে চোখের পাতার নীচে লাল হওয়া
  • চুলকানির ফলে চোখ ফুলে ওঠা
  • চোখ ছলছল করে পানি পড়া।

হাইভস্

এলার্জিক ও নন এলার্জিক উভয় ব্যক্তির শরীরেই হাইভস দেখা দিতে পারে। বিশেষ কোন খাবার বা ওষুধের কারণে শরীরের যে কোনো অংশের ত্বকে এ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

উপসর্গ:

  • তীব্র চুলকানি
  • ত্বক লাল হয়ে ফুলে যাওয়া

এলার্জিক শক

এলার্জির কারণে শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংক্রমিত হয়। হরমোনাল ইনজেকশন বা কোনো পোকামাকড়ের হুল দ্বারা এ ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

উপসর্গ:

  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া, সাথে শো শো আওয়াজ হওয়া, গলা শুকিয়ে আসা।
  • নাক বন্ধ হওয়া
  • ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া
  • সমস্ত ত্বক লাল বর্ণে রূপ নেওয়া।
  • মুখ মণ্ডল, ঠোঁট, গলা এবং জিহ্বা ফুলে যাওয়া।
  • যেখান কীট-পতঙ্গ কামড়ায় বা হুল ফোটায় সেখানে চুলকানি, ছুলি এবং অবশেষ ছোট ফোসকা পড়ে, যার ভিতরে পুঁজের মতন বস্তু থাকে
  • বমি বমি ভাব

এছাড়া পাকস্থলী ও অন্ত্রের উপসর্গের মধ্যে পেশির সঙ্কোচনজনিত পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি অন্যতম। আক্রান্ত ব্যক্তি মূত্রথলীর নিয়ন্ত্রণও হারাতে পারে, এবং নিতম্বে (pelvis) জরায়ুর সংকোচনের কারণে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। মস্তিষ্কের চারপাশের রক্তনালীসমূহের বিস্তৃতির কারণে মাথাব্যথা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলার্জির সংক্রমণ

শ্বেত রক্তকণিকা আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। রক্তকোষে এক ধরনের আইজি এন্টিবডি উৎপন্ন হয়। এলার্জেন(যা এলার্জির জন্য দায়ী) কোনো কারণে দেহের সংস্পর্শে এলে এটি আইজি এন্টিবডির সাথে মিশে ত্বকের নিচে, শ্বাসনালীতে, নাকে ও অন্ত্রে অবস্থিত মাস্টসেলকে ভেঙে ফেলে। ফলে মাস্টসেল থেকে হিস্টামিন, সেরোটনিন ইত্যাদি নির্গত হয়ে রক্তনালীর উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং এতে এলার্জির প্রভাব দেখা দেয়।

 

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা

এলার্জির চিকিৎসা শুরুর আগে রক্ত পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি। এর ফলে রক্তে ইয়োসিনোফিলের মাত্রা বেশি আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়। হাঁপানি রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই বুকের এক্সরে করে নেয়া দরকার, এটা জানার জন্য যে অন্য কোনো কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা।

আবার, স্কিন প্রিক টেস্টের মাধ্যমে রোগীর চামড়ায় বিভিন্ন এলার্জেন দিয়ে এ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে নির্ণয় করা হয় কোন কোন জিনিসে রোগীর এলার্জি আছে। স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

 

এলার্জির চিকিৎসা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে এলার্জি অনেকটা উপশম করা যায়। অনেকের ধারণা এলার্জি একবার হলে আর সারবে না। সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসায় এলার্জি পুরোপুরি ভালো হয়। তবে অবহেলা করলে এবং রোগ দীর্ঘসময় ধরে থাকলে চিকিৎসা একটু কঠিন হতে পারে।

এলার্জেন পরিহার:

এলার্জির প্রধান ওষুধ হল এন্টিহিস্টামিন ও নেসাল স্টেরয়েড। এন্টিহিস্টামিন ও নেসাল স্টেরয়েডের ব্যবহারে উপসর্গ তাৎক্ষণিকভাবে প্রশমিত হয়। তবে স্টেরয়েডে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে বিধায় এ ওষুধ এক নাগাড়ে বেশিদিন ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

নিয়মিতভাবে ‘জল নেতি’ করে নাক পরিষ্কার রাখলে বাতাসে বয়ে আসা এলার্জেন থেকে বাঁচতে পারবেন।

ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি:

এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপির মাধ্যমে শরীরে এলার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। এ প্রক্রিয়ায় কোনো অ্যালার্জিক ব্যক্তির শরীরে ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি ইনজেক্ট করে এলার্জেনের সংবেদনশীলতা কমিয়ে আনা হয়।

কিভাবে কাজ করে :

১. ইমুনোথেরাপি রক্তে আইজিই( IgE- Immunoglobulin E)’র মাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়, যা এলার্জির জন্য দায়ী।

২. রক্তকোষে আইজিজি(IgG-Immunoglobulin G)’র মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।

৩. হিস্টামিন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ইমুনোথেরাপি’র মাধ্যমে এলার্জির চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এটাই এলার্জিক রাইনাইটিস রোগীদের দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।

 

এলার্জির চিকিৎসা

এলার্জিতে ফুলে যাওয়া কমাতে এলার্জি-প্রতিরোধী ওষুধ, যেমন-এন্টিহিস্টামাইনস সাহায্য করে। এন্টিহিস্টামাইনস্ হিস্টামাইন নামক রাসায়নিকের নিঃসরণকে ব্যাহত করে এবং নাক থেকে জল পড়া এবং নাক বন্ধ হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। ডিকনজেস্টান্টস্ নাকের ভিতরের পর্দাগুলোর ফোলা কমায়। ত্বকে ফুসকুড়ির ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। যদি কারো তীব্র এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে, তাদের হাতের কাছে এপিনেফ্রিন ইনজেকশান রাখা দরকার।

 

এলার্জির ভেষজ ঔষধ

চলুন, এলার্জি প্রতিরোধে কিছু ভেষজ ঔষধের ব্যবহার দেখে নিই-

নিম পাতা

নিম পাতা ত্বকের যে কোনো সমস্যা সমাধানে অনেক কার্যকর। নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাঁচড়া চলে যায়। পোকামাকড় হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।

ব্যবহার:
নিমপাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়ো এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ১/২ ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে খান। ইনশা’আল্লাহ এলার্জির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

তুলসী পাতা

কর্পূর সমৃদ্ধ তুলসী পাতা ত্বকের যেকোন ধরণের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমাতে সহায়তা করে। তুলসির কাঁচা পাতার রস বা বিচির থেতলানের পর রস কিছুটা গরম করে সংক্রমিত জায়গায় লাগালে এলার্জি ভালো হয়। অথবা খানিকটা আদা ও তুলসি পাতা পানিতে ফুটিয়ে তাতে এক কাপ মধু মিশিয়ে দিনে ৪ থেকে ৫ বার খেলেও উপকার পাবেন।

কলা

অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কলা খেলে অ্যালার্জির বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কলার চামড়ায় প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি উপাদান বিদ্যমান, যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজড্ করে তোলে। ব্রণ দূর করার জন্যও কলার চামড়া ব্যবহার করা হয়।

লেবু

লেবুর রস মেশানো পানি এবং মধু শরীরের জন্য ভারি উপকারি ডিটক্সিফাইং পানীয়। এটি নিয়মিত পান করলে শরীরের টক্সিক পদার্থগুলো বের হয়ে আসবে এবং অ্যালার্জির সমস্যা কমে যাবে। বিশেষ করে লেবুর ভোলাটাইল তেল শরীরের যেকোন রকমের চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। লেবু টুকরা করে কেটে নিয়ে চুলকানির স্থানে কিছুক্ষণ ঘষুন, চুলকানি কমে যাবে।

গ্রিন টি

গ্রিন টি-তে বিদ্যমান এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টি-হিস্টাসিন এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি চোখে লাল ভাব, র‌্যাশ বেরোনো ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। কফি, কোমল পানীয় ইত্যাদির অভ্যাস পরিহার করুন। এর পরিবর্তে দৈনিক দু-তিন বার গ্রিন টি খান।

আদা

আদা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এবং অ্যালার্জির সমস্যা প্রতিরোধ করে। বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, হজমের সমস্যা এমনকি ডায়রিয়া নিরাময়েও আদা খুব উপকারি। খানিকটা আদা কুঁচি কুঁচি করে কেটে গরম পানিতে ফুটিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খান, এলার্জির বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবেন।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে বিদ্যমান অ্যাসিটিক অ্যাসিড এলার্জেনের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে। ১ গ্লাস পানিতে ২ চামচ ভিনেগার মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়।

ব্রোমেলিন

ব্রোমেলিন শরীরে প্রদাহ জনিত প্রতিক্রিয়া কমায়। নিয়মিত ব্রোমেলিনসমৃদ্ধ খাবার খান, এলার্জির সমস্যা লাঘব হবে।

উৎস: আনারস

জিংক

জিংকসমৃদ্ধ খাবারে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ থাকে যা এলার্জেনের প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহায়ক। ওয়েস্টার মাশরুম জিংকের সবচেয়ে ভালো উৎস। মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শিম বীজ, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদিতেও প্রচুর পরিমাণে জিংক রয়েছে। প্রাণিজ জিঙ্কের প্রধান উৎস হল মুরগীর মাংস। এলার্জি থেকে বাঁচতে নিয়মিত জিংকসমৃদ্ধ খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ক্যারোটিনয়েড

ক্যারোটিনয়েড হলো উদ্ভিদের মধ্যস্থিত রঞ্জক বা রঙিন পদার্থ। এসবের মধ্যে ক্যারোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন, লাইকোপেন, ক্রিপটোজেন্থিন এবং জিজেন্থিন থাকে যা এলার্জিক প্রতিক্রিয়ায় ভালো কাজ করে।

উৎস: সবুজ, হলুদ অর্থাৎ রঙিন শাক-সবজি (যেমন- গাজর, মিষ্টি কুমড়া, হলুদ, পালংশাক, ডাটা শাক ইত্যাদি)।

অনন্তমূল

অনন্তমূল এক ধরনের লতানো উদ্ভিদ। এতে প্রচুর পরিমাণে স্টেরল, টার্পিন, লুপিয়ল, স্যাপোনিন ও ট্যানিন বিদ্যমান, যা এলার্জেন প্রতিরোধক। এছাড়া গাছের পাতায় ও শিকড়ে টাইলোফিরিন থাকে যা এলার্জিজনিত শ্বাসনালীর প্রদাহসহ অ্যাজমার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

ব্যবহারবিধি:

১-৩ গ্রাম মূল অথবা গাছের চূর্ণ দিনে দু’বার খাবারের পর খেলে খোস পাঁচড়া , কুষ্ঠরোগ, শ্বেতি, চুলকানিসহ সব ধরনের চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

শরীরের প্রদাহ ও ব্রণে অনন্তমূল পেস্টের মতো তৈরি করে কুমুম গরম পানি মিশিয়ে প্রলেপ দিলে দ্রুত উপশম হবে, ইনশা’আল্লাহ।

অথবা ৩ গ্রাম অনন্তমূল বেটে খানিকটা সৈন্ধবলবণ মিশিয়ে শরবতের মতো প্রতিদিন দু’বার খান। একজিমা ও হাঁপানির সমস্যা থাকলে তা সেরে যাবে।

ইউক্যালিপটাস তেল

মাথা যন্ত্রণা, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদির প্রতিকারে এক বাটি গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল নিয়ে তার ভাঁপ নিন। এতে নাক বন্ধ হওয়া, নাকের ভিতরে অ্যালার্জির কারণে কোনো প্রদাহ থাকলে তা থেকেও রেহাই মেলে।

দুগ্ধজাত পদার্থ

খাওয়ার পাতে টক দই, ছানা ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাদ্য রাখুন। এদের প্রোবায়োটিক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ফলে ধুলোবালির কারণে এলার্জেনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কা কমে।

ঘি

এক চামচ খাঁটি ঘি তুলোয় নিয়ে চুলকানির জায়গায় লাগান, আরাম পাবেন। নিয়মিত ঘি খেলেও ঠান্ডা লাগা বা এলার্জির প্রবণতা কমবে। দ্রুত ফল পেতে, ৫ থেকে ৭ ফোঁটা ঘি নারিকেল কোরায় মিশিয়ে খান।

অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও ভিটামিন ই যা ত্বককে এলার্জেনের প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করে।

ব্যবহার:

খানিকটা গরম পানিতে এক কাপ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, এক কাপ নারকেল তেল ও চার টেবিল চামচ মোম নিন। এরপর এতে আট ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন। তৈরিকৃত মলমটি প্রতিদিন আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে মশ্চারাইজিং ক্ষমতা রয়েছে। চুলকানির জায়গায় এক টুকরা অ্যালোভেরা কেটে ঘষুন, চুলকানি চলে যাবে। অ্যালার্জির কারণে মাঝে মাঝে ত্বকে লালচে দাগ দেখা যায়। এ দাগ দূর করতে গোসলের পানিতে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস্

অনেক সময় পাকস্থলীতে প্রোটিনের আধিক্য হলেও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তাই, এলার্জি প্রতিরোধে নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার খান।

উৎস: কাঁচা মরিচ, বাঁধাকপি, আলু, বাতাবি, টমেটো, পেয়ারা, কামরাঙ্গা ইত্যাদি।

শসা এবং গাজরের রস

তাৎক্ষণিক এলার্জির সমস্যা দূরীকরণে শসা এবং গাজরের রস দারুণ উপকারি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-এলার্জিক উপাদান বিদ্যমান, যা দেহ কোষগুলোকে এলার্জেনের প্রতিক্রিয়া রুখতে সাহায্য করে।

ক্যাস্টর অয়েল

ক্যাস্টর অয়েল শুধুমাত্র আপনার চুলের সমস্যায় নয়, এলার্জির অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধেও সহায়ক। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে এক কাপ পানিতে ৫-১০ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খান।

আপনার শিশুকে ছোট থেকেই সব ধরনের খাবার, ফল ও সবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। এর ফলে সে খাদ্যজাত এলার্জির হাত থেকে মুক্ত থাকবে।

 

এলার্জি প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা :

১. গোসলখানার জানালা সবসময় খোলা রাখুন, যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। মেঝে, প্যান, বাথটাব ক্লিনার দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

২. রান্নার সময় মশলার ঝাঁঝাঁলো গন্ধ এড়াতে মুখে মাস্ক বা শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন।

৩. ধুলোবালি থেকে বাঁচতে শিশুদের খেলনা, শোপিস, জুতা, ফ্যান, এসি, ঝাড়বাতি ইত্যাদি নিয়মিত ঝাড় দিন।

৪. গৃহপালিত পশুপাখি থাকলে তাকে নিয়মিত গোসল করান এবং থাকার জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। উচ্ছিষ্ট খাবার থাকলে তা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিন।

৫. বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন। লেপ-কম্বল রোদে শুকিয়ে নিন, যাতে সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মিতে হাউজ ডাস্ট মাইট মরে যায়। এক সপ্তাহ পর পর ভেজা কাপড় দিয়ে দরজা এবং জানালা পরিষ্কার করুন।

৬. রাস্তা-ঘাটে চলাচলের সময় ধুলোবালি থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।

৭. উচ্চ মাত্রার সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। স্প্রে করার সময়ও নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন।

৮. ফ্রিজের পানি এবং ঠান্ডা খাবার গ্রহণ করা যথাসম্ভব পরিহার করুন।

৯. ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরকে এলার্জি প্রতিরোধে সক্ষম করে তোলে। তাই, সকালের রোদে দৈনিক কমপক্ষে ১/২ ঘন্টা সময় কাটান।

১০. যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে আগে এর সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে জেনে নিন। ভ্রমণের সময় অ্যালার্জি প্রতিরোধক মেডিসিন সাথে রাখুন।

শারীরিক সুস্থতা প্রাত্যহিক জীবনের আনন্দ উপভোগের জন্য অপরিহার্য। দেহের ক্ষয়পূরণ ও কর্মোদ্যম ফিরিয়ে আনতে পরিপূর্ণ বিশ্রামও প্রয়োজন। পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তির জন্য নিয়মিতভাবে ভ্রমণ,খেলাধুলা, বনভোজন এবং বই পড়ুন, প্রাণোচ্ছ্বল থাকুন।

Source:
https://www.healthline.com/health/home-remedies-for-allergies
https://www.webmd.com/allergies/allergy-education-17/slideshow-natural-relief
https://www.verywellhealth.com/natural-allergy-remedies-89245
https://food.ndtv.com/health/5-remarkable-home-remedies-for-seasonal-allergies-1676578

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
আমার ওজন কমানোর গল্প

আমার ৩৪ কেজি ওজন কামানোর কথা

home remedies for insomnia

অনিদ্রা দূর করার উপায় । ১০ টি ঘরোয়া ঔষধ

আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আমার ওজন কমানোর খাবার তালিকা

আমার ওজন কমানোর খাবার তালিকা বা ডায়েট চার্ট

অতিরিক্ত ওজন কমানোর ঔষধ

ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা

কফ কাশির প্রাকৃতিক ঔষধ

কফ বা কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়

গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা

গরম পানি খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

খুশকি দূর করার উপায়

ঘরে বসে খুশকি দূর করার সহজ ১০টি উপায় । খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক শ্যাম্পু

চুল পরা বন্ধের উপায়

চুল পড়া বন্ধের প্রাকৃতিক ঔষধ 

দ্রুত ওজন বাড়ানোর উপায়

দ্রুত ওজন বারানোর উপায়

বমি দূর করার উপায়

বমি দূর করার উপায় | বমি হলে করনীয়

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর ৯ টি সহজ উপায়

দ্রুত ওজন কমানোর খাবার তালিকা

মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট




Categories