জীবনযাপনের জন্য বেশি বেশি পানি খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক স্বাস্থ্য এবং চর্ম বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে একমত যে বেশি পানি মানবদেহ ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত থাকে, সুস্থ সবল থাকে এবং চামড়া থাকে অনেক মোলায়েম ও প্রাণবন্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি খেয়ে দিন শুরু করা খুব ভাল অভ্যাস। কিন্তু সেটা গরম পানি না ঠান্ডা পানি হবে এটা জানা অনেক জরুরী।
চিকিৎসকরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে এক গ্লাস গরম পানি খেতে বলেছেন। শুধু পানি খেতে ভাল না লাগলে সাথে লেবুর রস দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এটার অনেক বিস্ময়কর স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। যেমন, এতে যকৃত ভাল থাকে, মনকে সতেজ রাখে, সারাদিনে অনেক শক্তি পাওয়া যায়, দেহ থেকে কোলেস্ট্রোরেল বা চর্বি কমায়, ইত্যাদি। পানি খাওয়া শধু সকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। চলুন দেখে নেই কখন, কিভাবে গরম পানি খেলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়।
গরম পানি খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
১। হজমশক্তি বাড়ায়ঃ হজমশক্তি জনিন সমস্যা থাকলে এখন থেকেই নিয়মিত পানি পান করা শুরু করুন। কুসুম গরম পানি হজমক্রিয়ার লালাগ্রন্থির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটা পরিপাকতন্ত্রে খাবারগুলোকে ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে হজমক্রিয়াকে এত বেশি পরিশ্রম করতে হয় না এবং হজমক্রিয়ার শক্তি খরচ হয় না। এছাড়াও গরম পানি খেলে বদহজম হয় না। দৈনন্দিন খাবারের সাথে গ্রহণ করা পুষ্টিগুণগুলো অটুট থাকে। ২। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ নিয়মিত গরম পানি পান করার ফলে অন্ত্র বা দেহের অভ্যন্তরীণ নাড়িভুঁড়ির নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমে সাহায্য করে এবং বদহজমের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বদহজম হওয়ার প্রধান কারণ কম পানি খাওয়া। অল্প পানি খাওয়ার কারণে মল শক্ত এবং শুকনা হয়ে যায়। ফলে সেটা দেহ থেকে সহজে বের হতে পারে না। গরম পানি পানে হজমক্রিয়া সচল থাকে। এটা পেটের ভেতরে খাবারগুলোকে সহজেই হজম করতে এবং মল হিসেবে বের করতে সহায়তা করে। বদহজম হলে দুই গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই পায়খানা হয়ে পেট পরিষ্কার হবে। বদহজমের কারণে হওয়া পেট ব্যাথাও দূর হবে। দ্রুত এবং ভাল ফলাফলের জন্য গরম পানির সাথে মধু বা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। ৩। গলা শুকানো প্রশমিত করেঃ ঠান্ডায় বা ঠাণ্ডা-জ্বরের কারণে অনেক সময় গলা শুকিয়ে যায় এবং ব্যাথা হয়। এসময় গরম পানি পান করলে সাথে সাথে গলা শুকিয়ে যাওয়া ভাল হবে এবং গলা ব্যাথা সেরে যাবে। এটা গলার ভেতরে থাকা শ্লেষ্মাকে গলিয়ে বের করতে সাহায্য করবে। এসময় আপনি চাইলে লবণ গরম পানি দিয়ে গড়গড়াও করতে পারেন। ৪। নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ হয়ঃ নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে গরম পানি খুব কার্যকরী। গরম পানি নাকের গহ্বর পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ফলে দ্রুত পানি পড়া বন্ধ হয়ে যায়। যখন গরম পানি পান করায় নাসিকা গহ্বর এবং শ্বাসযন্ত্র আলগা হয়ে যায়। ফলে সেসব জায়গার ব্যাকটেরিয়া হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও এটা দেহের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে দূর করতে সাহায্য করে। ৫। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ গরম পানির ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। যারা ওজন কমানোর জন্য নিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ বা ডায়েট করেন এবং ব্যায়াম করেন, ঠান্ডা পানির চেয়ে গরম পানি ব্যবহারে তারা আরো দ্রুত ফলাফল পাবেন। গরম পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়ায়। ফলে বিপাকীয় হার বা মেটাবলিক রেট বেড়ে যায়। বিপাকীয় হার বাড়ার কারণে দেহ থেকে অধিক ক্যালরি পুড়বে। সকালে খালি পেটে লেবুর রস যোগে গরম পানির সাথে পান করলে দেহে জমে থাকা চর্বিগুলো দ্রুত গলে যায়। ৬। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করেঃ গরম পানির পান করার উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হল এটা দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে দেহকে পরিষ্কার রাখে। গরম পানি পান করায় দেহের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ঘাম হয় এবং ঘামের সাথে সব ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে যায়। নিয়মিত গরম পানি পানে ত্বকের মধ্যে থাকা জীবাণুগুলো দূর হয়। ফলে ত্বকের নানা রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ৭। মাসিকের ব্যাথা উপশম করেঃ শুনতে অদ্ভুত লাগলেও গরম পান করলে মেয়েদের মাসিকের ব্যাথা কমে যায়। গরম পানি জরায়ুর পেশিগুলোকে শান্ত রাখে। ফলে দ্রুত ব্যাথা উপশম হয়। এছাড়াও এটা শরীরকে পানিময় রাখে এবং মাসিকের সময় দেহের ভেতরে পানি শুকিয়ে যায় না। ৮। রক্ত চলাচলের ক্ষমতা বাড়ায়ঃ গরম পানি পান করলে দেহের রক্ত চলাচলের সক্ষমতা উন্নত হয়। অক্সিজেন এবং পুষ্টিগুণ বিভিন্ন অঙ্গ ও কোষ সমষ্টির মধ্যে রক্ত চলাচলের মাধ্যমে পৌছে। এছাড়াও পেশি এবং স্নায়ুর কার্যক্রমের জন্য সঠিক মাত্রায় রক্ত চলাচল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গরম পানি পান করার ফলে দেহের চর্বিগুলো দূর হয় এবং স্নায়ুর সুগঠিত হয়। বরফ ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। এটা শিরাকে সংকুচিত করে ফেলে। ৯। যৌবন ধরে রাখেঃ গরম পানি পান করা ত্বকের জন্য খুব কার্যকরী। এটা ত্বকের সব জীবাণু দূর করে ত্বককে বিশুদ্ধ করে। কিছু জীবাণু ত্বকের সতেজ ভাব দূর করে অকালে বয়সের ছাপ এনে দেয় এবং নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। গরম পানি ত্বকের মৃত কোষগুলোকে জীবিত করে এবং তেল চকচকে করে। ১০। রাতে ভাল ঘুম হয়ঃ ইদানিং কালে বিশেষকরে এ যুগের ছেলেমেয়েদের এই সমস্যা অনেক বেশি। নিয়মিত গরম পানি পান করলে এই রোগ অনিদ্রা রোগ ভাল হয়। গরম পানি পান করলে দেহের তাপমত্রা বেড়ে যায়। ফলে শরীর ও স্নায়ু শান্ত থাকে যা আপনাকে একটি সুনিদ্রা দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটা মধ্যরাতে ঘুম ভাঙ্গার প্রবণতা কমিয়ে ফেলে। সতর্কতাঃ * সবসময় কুসুম গরম পানি পান করবেন। অতিরিক্ত গরম পানি মুখের কোষ ও লালার ক্ষতি করতে পারে। * পানি গরম করার পর ঠান্ডা হতে সময় দিন। * খাবার খাওয়ার সময় হালকা গরম পানি পান করুন। ঠান্ডা পানি খেলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়। যা হজমক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে। * ব্যায়াম করার পর গরম পানি পান করবেন না। তখন শরীরের তাপমাত্রা এমনিতেই উচ্চ থাকে।আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
5/5 - (1 vote)
Author
-
একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
তথ্য সূচী দেখুন
Toggle
No comment yet, add your voice below!