মাথা ভর্তি ঝলমলে চুলের চেয়ে আকর্ষণীয় আর কিছু নেই। কিন্তু সেই চুল পড়া শুরু হলে কার না খারাপ লাগবে। দুশ্চিন্তা না করে ঘরে বসেই চুল পড়া বন্ধের ঔষধ তৈরি করুন। এগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক তাই পার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন ৫০-১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক। যদি এর চেয়ে বেশি চুল পরে সেটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
তথ্য সূচী দেখুন
Toggleকেন চুল পরে? (Why Hair Fall)?
ছেলে মেয়ে উভয়েরই নানা কারণে চুল পড়তে পারে। যেমন, পরিবেশগত প্রভাব, বয়স, মানসিক অশান্তি, অতিরিক্ত ধূমপান, পুষ্টিহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত হরমোন, বংশগত কারণ, মাথার ত্বকে সংক্রামণ, ভুল এবং উচ্চমাত্রায় রসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহার, কতিপয় ঔষধ ও রোগবালাই যেমনঃ গলগ্রন্থির রোগ এবং বড় কোন কঠিন রোগ।
চুল পড়া রোধে করনীয়ঃ (Ways to stop hair fall):
চুল পড়া রোধের প্রধান করনীয় চুলের গোঁড়া তথা মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা। গরমকালে দীর্ঘসময় বাইরে থাকলে, ঘরে ফিরে আগে শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এসময় বাতাসের সাথে প্রচুর ধুলাবালি এবং সূর্যের রশ্মির কারণে চুলের গোঁড়া রুক্ষ হতে পারে। হঠাত অতিরিক্ত চুল পড়া শুরু হলে কারণ বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়াও ঘরে বসে চুল পড়ার প্রাকৃতিক ঔষধ তৈরি করে ব্যবহার করুন।
চুল পড়া বন্ধের ঔষধঃ
চুল পড়া বন্ধের জন্য নিচে দেয়া ঔষধগুলো নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
১। চুলে তেল মালিশ করাঃ চুল পড়া রোধে প্রথম ধাপ হল, সঠিক তেল দিয়ে চুলের গোঁড়ায় ও চুলে মালিশ করা। এ মালিশের ফলে লোমকুপে রক্ত চলাচল বেড়ে যাবে, চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের গোঁড়া শক্ত হবে। এটা মাথা ঠান্ডা রাখতে এবং অশান্তিভাব কমাতে সাহায্য করে। নারিকেল তেল, কাঠা বাদাম তেল, জলপাই তেল, রেড়ির তেল (Castor Oil), আমলকী তেল, ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
দ্রুত এবং ভাল ফলাফলের জন্য সাথে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি সুগন্ধি তেল (Rosemary Essential Oil)যুক্ত করে নিন। তেল হাতের তালুতে নিয়ে আলতো করে পুরো মাথা জুড়ে আগে মাসাজ করে করুন। এরপর আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোঁড়ার চারপাশে হালকা চাপ দিয়ে মালিশ করতে থাকুন। সবশেষে পুরো চুলে মালিশ করুন। চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত একবার করে এই মালিশ করতে হবে।
২। চুল পড়া রোধে আমলকীঃ প্রাকৃতিকভাবে চুলের দ্রুত বিকাশের জন্য আমলকী বা আমলকীর তেল ব্যবহার করেন। এতে অনেক ভিটামিন সি আছে যা চুল পড়া রোধ করতে অনেক কার্যকরী। আমলকীতে এন্টি-ইনফ্লামেটির, এন্টিওক্সিডেন্ট, এন্টিব্যাক্ট্রিয়াল, এক্সফলিয়াটিং আছে যা চুলের গোড়াকে সতেজ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে ১ টেবিল চামচ আমলকীর নরম শাঁস ও লেবুর রস হাতের তালুতে নিয়ে চুলের গোঁড়ায় মালিশ করুন। পরিষ্কার ও নরম তোয়ালে দিয়ে অথবা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। সকালে উঠে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
৩। মেথির বীচিঃ মেথির বীচিতে প্রচুর আনুগামি হরমোন (Hormone Antecedents) আছে যা চুলের বিকাশ ঘটায় এবং লোমকূপকে পুনর্জীবিত করে। এটা চুলের পড়া বন্ধে প্রাচীন এবং খুব কার্যকরী একটি চিকিৎসা। এতে আরো আছে প্রোটিন এবং নিকোটিন এসিড যা নতুন চুল গজানোর পাশাপাশি চুলকে ঘন করে। রাতে ১ কাপ মেথির বীচি ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেটাকে বেঁটে সারা মাথায় লাগান। তারপর ৪০ মিনিট মাথা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন। সবশেষে আলতোভাবে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
৪। চুল পড়া রোধে পেঁয়াজের রসঃ উচ্চ মাত্রায় সালফার থাকার কারণে পেঁয়াজের রস চুল পড়া রোধে দারুণ কার্যকরী। এটা চুলের গোঁড়ায় রক্তচলাচলের গতি বাড়ায়, মৃত লোমকূপগুলোকে জীবিত করে ফলে চুল ঘন হয়। এতে থাকা এন্টিব্যাক্ট্রিয়াল উপাদানগুলো জীবাণুর ধ্বংস করে এবং চুলের গোড়ার সংক্রামণ ভাল করে। ফলে খুব দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হয়। ১টি পেঁয়াজ রস করে চুলের গোঁড়ায় লাগান। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। পেঁয়াজের রসের সাথে ঘৃতকুমারীর জেল মিশিয়েও লাগাতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
৫। এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীঃ এলোভেরায় এনযাইম নামে জৈবরসায়নিক পদার্থ আছে যা সরাসরি চুলের স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে কাজ করে। এতে থাকা ক্ষারজাতীয় রসায়নিক (Alkalizing) চুলের গোঁড়া শক্ত ও মজবুত করে সঠিক স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে। চুলের খুশকি দূর করে লোমকূপকে পুনর্জীবিত করতে এলোভেরা জেল অতুলনীয়। চুলের গোঁড়ায় ঘৃতকুমারীর রস মাখান। কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর কুসুমগরম পানি মাথা ধুয়ে ফেলুন। ভাল ফলাফলের জন্য এটা সপ্তাহে ৩-৪ বার করুন। খালি পেটে ১ টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর রস খেতে পারেন। এটা চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেক উপকারি।
৬। চুল ঘন করতে যষ্ঠিমধুঃ চুল পড়া বন্ধের ভেষজ ঔষধ হিসেবে যষ্ঠিমধু অনেক প্রসিদ্ধ। এটা নতুন করে চুল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং চুল ঘন করে। এটা ব্যবহারের ফলে চুলের রুক্ষভাব দূর হয় এবং চুলের গোঁড়ার ব্যাথাকে উপশম করে। ১ কাপ দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ যষ্ঠিমধুর কুচির সাথে এক চতুর্থাংশ টেবিল চামচ জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগান। সারারাত রেখে দিন এবং সকালে মাথা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার করে এই প্যাক লাগান।
৭। রসূন তেলঃ পেঁয়াজের মত রসূনেও প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে। এ কারণে এটা চুল নতুন গজাতে এবং চুলের গোঁড়া শক্ত করতে অনেক কার্যকরী। কয়েক কোয়া রসূনের সাথে পরিমাণ মত নারিকেল তেলের মধ্যে দিয়ে গরম করে নিন। তারপর ঠান্ডা করে চুলের গোড়ায় আলতো করে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট রেখে দিন এবং পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এটা ব্যবহার করুন।
৮। বিট মূলঃ বিটমূলের রসে কার্বহাইড্রেড, প্রোটিন, পোটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি ও সি আছে। এসব পুষ্টিগুণ চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। বিটমূলের জুসের সাথে পালংশাকের রস, লেটুস পাতার রস এবং গাজরের রস মিশিয়ে মাথায় লাগালে আরো দ্রুত কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়। সব রস একসাথে মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় তেলের মত করে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কয়েকবার এটা করুন।
৯। তিসির বীচিঃ তিসির বিচীতে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা চুল পড়া বন্ধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল ঘন করে। এটি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি দেহকে সুস্থ রাখার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপদান। চুল পড়া থামাতে ১ টেবিল চামচ তিসির বীচি এক গ্লাস পানি দিয়ে খেয়ে ফেলুন। এছাড়াও আপনি সালাদ, স্যুপের সাথে, ভর্তা করে, ইত্যাদি উপায়ে তিসির বীচি খেতে পারেন। অথবা তিসির তেল ব্যবহার করতে পারেন।
১০। ডিমঃ ডিমে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান চুল পড়া বন্ধ করতে সক্ষম। এতে উচ্চ মাত্রায় সালফার, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, জিঙ্ক এবং প্রোটিন আছে। এসব উপাদান চুল পড়া রোধ করে চুলের স্বাস্থ্য বিকাশ করে। ১টি ডিমের সাদা অংশের সাথে ১ চা চামচ জলপাই তেল ভালভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এটা চুলের গোঁড়ায় ভাল করে মালিশ করুন। মালিশ করার পর ১০-২০ মিনিট রেখে দিন এবং সবশেষে শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
১১। নারিকেল তেলঃ নারিকেল তেলে উচ্চমাত্রায় প্রটিন এবং দরকারি সব ফ্যাট আছে যা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুব কার্যকরী। এটা ব্যবহারে দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হবে। বিশুদ্ধ নারিকেল তেল নিয়ে চুলের আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত ভাল করে মালিশ করুন। মালিশ করার ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সাথে গোলমরিচের গুঁড়া এবং মেথির গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
চুলের গোঁড়া শক্ত রাখতে চুল পড়া বন্ধ করতে উপরের প্রাকৃতিক চিকিৎসাগুলো অনুসরণ করার পাশাপাশি বেশি বেশি পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন। সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
Categories
Author
-
একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।
No comment yet, add your voice below!