মাসিকের নানা সমস্যার সহজ সমাধান

প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর নিয়মিত ও সময়মতো মাসিক হওয়াটা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। তবে যৌবনের প্রারম্ভে ও শেষে কারো কারো অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। মাসিকচক্র নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক মেয়ে দিনের পর দিন গোপনে মাসিকের সমস্যায় ভুগে, লজ্জায় কাউকে বলতে চায় না। এতে বরং নিজেরই ক্ষতি হয়। তাই, হীনমন্যতা এড়িয়ে ভয়কে জয় করে স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন, আর গড়ে তুলুন উৎকণ্ঠামুক্ত জগৎ।

তথ্য সূচী দেখুন

মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ কি কি

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস। আবার অতিমাত্রায় ব্যায়াম করার ফলে শরীরে হরমোন ক্ষরণে তারতম্য ঘটে; যা প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। দৌড়বিদ, সাতারু প্রমুখের ক্ষেত্রে অনেক সময় এজন্য পিরিয়ডে দেরি বা মিস হয়।

মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থির পাশে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস পিরিয়ডের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপে হাইপোথ্যালামাসের এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি যদি আপনার জীবনে এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে, যেমন- কারও মৃত্যু, ব্রেক-আপ, চাকরি না পাওয়া, কাজের চাপ ইত্যাদি, তবে পিরিয়ডে বিলম্ব হতে পারে।

এমনকি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের কারণেও পিরিয়ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। PCOS এর জন্য মুখে এবং গায়ে অতিরিক্ত লোম, ব্রন, তলপেট ব্যাথা, গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়। এটি অত্যাধিক রজস্রাবের জন্যও দায়ী। অনেকের আবার ওভারিতে সিস্ট হয়। এসব জিনগত সমস্যার জন্য মহিলাদেরকে পিরিয়ডে নানানরকম অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যার জন্যও হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। এজন্য পিরিয়ডে বিলম্ব হয়। সাথে মানসিক অবসাদ, অতিরিক্ত চুল ওঠা, ওজন বৃদ্ধি এবং সবসময় ঠান্ডা লাগছে মনে হওয়া; এরকম কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।

অবিবাহিত মেয়েদের মাসিকে সমস্যার কারণ

অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া এতে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিও থাকে। খাদ্যাভ্যাসে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ বেশি হওয়া এবং ওজন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। বয়ঃসন্ধির শুরুতে সাধারণত ১২-২০ বছর বয়সে অনেকের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন হরমোনের অভাব থাকে। এ কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। অনেকসময় এসব হরমোনের ঘাটতির ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জন্মগত ত্রুটির কারণেও পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।

একমাসে দুইবার মাসিক হওয়ার কারণ

মানসিক চাপ অথবা অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে কিংবা শরীরে কোন হরমোনাল সমস্যা থাকলে মাসে ২ বার পিরিয়ড হতে পারে। Contraceptive pills সেবনের কারণেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

তবে মাসিক যদি নির্দিষ্ট সময়ের দুই অথবা তিন দিন আগে বা পরেও হয় ভয় পাবেন না। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে নির্দিষ্ট দিনের সাথে যদি ছয় দিনের গ্যাপ থাকে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ কি

বছরে একবার বা দু’বার অনিয়মিত পিরিয়ড মোটামুটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনা যদি বারবার ঘটতে থাকপ তবে একে গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার। এটি কেবল আপনার সামাজিক জীবনকেই নষ্ট করবে না, বরং আপনার দৈনন্দিন রুটিন-ওয়ার্কেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।

চলুন দেখে নিই কি কি কারণে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে-

উচ্চ রক্তচাপ

পিরিয়ডের সময় উচ্চ রক্তচাপ ডিম্বস্ফূটনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে ইস্ট্রোজেন এবং অন্যান্য প্রজনন হরমোন উৎপাদনেও বিঘ্ন ঘটে। এতে গর্ভাশয় স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয় না, এবং মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে হয় না।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ

কম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপূর্ণ খাবার মহিলাদের হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দেয়। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিগুলোর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। এর ফলে কর্টিসোল বৃদ্ধি পেতে পারে; যা অনিয়মিত মাসিকচক্রের জন্য দায়ী।

অতিরিক্ত ভারি ব্যায়াম

অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে পিরিয়ড ইরেগুলার হতে পারে। যারা রেসার, হেভি ওয়েট লিফটিং করেন বা অন্যান্য কারণে নিয়মিতভাবে কঠিন পরিশ্রম করেন, তারা এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। কারণ অতিরিক্ত এক্সারসাইজ ইস্ট্রোজেন লেভেল কমায়। এতে পিরিয়ডও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রমের ফলে থাইরয়েড এবং পিটুইটারি গ্রন্থিগুলির স্বাভাবিক কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের অন্যতম কারণ।

মানসিক চাপ

মস্তিস্কে রয়েছে হাইপোথ্যালামাস নামের একটি বিশেষ অংশ, যেখান থেকে প্রতিনিয়ত নিঃসরিত হয় নানা ধরনের হরমোন। এর মধ্যে কিছু হরমোন রয়েছে, যা নারীদেহে মাসিকের জন্য প্রভাবকের কাজ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগলে অনেক সময় হাইপোথ্যালামাস ঠিকমতো কাজ করে না। যার ফলে মাসিক শুরু হতে দেরি হয়।

থাইরয়েড

থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের অবস্থান আমাদের গলার নিচে। এটি শরীরে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি দেহের অভ্যন্তরীণ কাজে সাহায্য করে। থাইরয়েড গ্রন্থির যে কোন সমস্যার কারণে আপনার মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল

জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল সেবন পিরিয়ডের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি মাসিক চক্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিরিয়ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিবাহিত নারীরা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বন্ধ করে দিলে বা বার বার ওষুধ পরিবর্তন করলেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। কিছু কিছু জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি, যেমন- IUD-এর প্রভাবেও পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে। আবার হঠাৎ করে এসব জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার বন্ধ করলেও স্বাভাবিক পিরিয়ড ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে যদি পিরিয়ড দেরি বা মিস হয় তবে এতে চিন্তার কোন কারণ নেই।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম

ডিম্বাশয়তে ছোট্ট ছোট্ট সিস্টের উপস্থিতি-ই হলো পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম। এর কারণে মহিলারা অনিয়মিত মাসিক চক্রের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এজন্য প্রতি মাসে ওভারি থেকে ডিম্বাণু নির্গমন হয় না। ডিম্বাণুগুলো ওভারিতে সিস্ট তৈরি করে এর চারপাশে জমা হয় এবং শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মাসিক সময় মত হয় না। কখনো কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ওজন কম বা বেশি হওয়া

শরীরের BMI ১৮ বা ১৯-এর নিচে নেমে গেলে, কম চর্বির কারণে আপনি অনিয়মিত পিরিয়ড অনুভব করতে পারেন। চর্বি দেহে ইস্ট্রোজেন তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযোগী। ওজনে অতিরিক্ত তারতম্য ঘটলে পিরিয়ডের উপর প্রভাব পড়ে। আবার অতিমাত্রায় স্থূল নারীদের ডিম্বাশয়ের চারপাশে ফ্যাট জমেও ওভুলেশন-এ সমস্যা হয়। এজন্য পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

অন্যান্য চিকিৎসাগত শর্তাবলী

ডায়াবেটিস, ফাইব্রোইয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিস এবং যৌন সংক্রামিত রোগের জন্যও একজন মহিলা অনিয়মিত পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। রুমাটয়েড-আর্থ্রাইটিসকেও অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য দায়ী করা হয়। এরকম অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

  • বয়সঃ 
    কম বয়সে স্বাভাবিক কারণেই পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। বয়সের সাথে মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়মিত হয়ে যায়। এজন্য কিশোরী বয়সের অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য চিন্তিত হওয়া যাবে না। এসময় অভিভাবকদের উচিৎ, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মেয়েকে সচেতন করে তোলা।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ
    অনিয়মিত মাসিক-এর আরেকটি প্রধান কারণ হলো অসুস্থতা। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং নানান রোগব্যাধি শরীরে চেপে বসে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক হয় না।
  • প্রি-মেনোপজঃ
    সাধারণত ৫০ বছর থেকে মেনোপজ হয় বা একবারে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। ৪০ থেকে ৪৫ বছর থেকেই মেনোপজের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। এ পর্যায়কে প্রি-মেনোপজ বলে। এ সময়েও পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।
  • ব্রেস্ট ফিডিংঃ
    ব্রেস্ট ফিডিং-কে বলা হয় ন্যাচারাল কন্ট্রাসেপ্টিভ বা প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যেসব মায়েরা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের পিরিয়ড সাধারণত বন্ধ থাকে বা অনিয়মিত হয়।
    সদ্যজাত শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় মূলত প্রোল্যাকটিন হরমোনের প্রভাবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে থাকে।
  • দৈনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ
    ভ্রমণ বা কাজের সময়ের পরিবর্তন ইত্যাদির জন্যও পিরিয়ডে দেরি বা মিস হতে পারে। তবে এটা সাময়িক; এতে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। এছাড়া নতুন কোন ঔষধ খেতে শুরু করলেও পিরিয়ড দেরি বা মিস হতে পারে।

নিয়মিত পিরিয়ড না হলে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এক মাসে হলে দেখা যায় আরেক মাসে হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো দুই-তিন মাস পরপর পিরিয়ড হয়। কখনো অল্প রক্তপাত হয়, আবার কখনো অনেক বেশি। এতে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস প্রায়। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণেরও কারণ হতে পারে অনিয়মিত মাসিক। এজন্য অনেক সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে এবং অস্বস্তি বোধ হয়।

অনিয়মিত পিরিয়ড কি গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করে?

অনিয়মিত পিরিয়ড মানে আপনার প্রতি মাসে ঠিকভাবে ডিম্বস্ফূটন হচ্ছে না। এটি আপনার প্রজনন স্বাস্থ্যের বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে অনেক মহিলা সারাজীবনের জন্য মা হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। আপনার অনিয়মিত বা অনিশ্চিত পিরিয়ড যদি হরমোনাল হয়, তবে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

মাসিক বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা

৬ মাসের বেশি সময় ধরে যদি মাসিক না হয় অথবা বয়স ১৬ পার হওয়ার পরেও মাসিক শুরু না হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে সতর্ক না হলে শরীরের গ্রোথ হরমোন উত্‍পাদনে ব্যাঘাত ঘটবে এবং দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। কোন কোন মহিলার জন্মগতভাবে যোনিতে ত্রুটি থাকে। এজন্যও মাসিক অনিয়মিত হয়।

আবার মাসিকের আগে বা পরে হরমোনের কারণে স্তন ব্যথা হতে পারে। এজন্য মাঝে মধ্যে পেইন কিলার খেতে পারেন। স্তন ব্যথাকে স্বাভাবিক ধরে নিলেই ভালো। মাসিক অনিয়মিত হওয়ার জন্য আপনাকে কিছু হরমোন টেস্ট করাতে হবে। আমাদের দেশে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন মহিলার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক আরম্ভ হয় না।

অতিরিক্ত ওজন আপনার মাসিক অনিয়মিত হওয়ার জন্য দায়ী। অনেক সময় ওভুলেশন ঠিকমতো না হলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এজন্য একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের বা অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্টের তত্ত্ববধানে হরমোন পরীক্ষা করে তদানুযায়ী ওষুধ সেবন করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

অনিয়মিত মাসিকের সমস্যার জন্য কিছু ওষুধ (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা বাঞ্ছনীয়) –

  • Carbonica
  • Amenorrhea
  • Aconitum n.
  • Viburnum op.
  • Ferrum meta.
  • Natrum

মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

পিরিয়ড নিয়মিত করতে চিকিৎসকেরা সাধারণত হরমোন থেরাপি দিয়ে থাকেন, যা আমরা খাবার পিল হিসেবে চিনে থাকি। কিন্তু এসব পিল-এর অনেক ধরনের সাইড ইফেক্ট থাকে। মোটা হয়ে যাওয়া, খাবারে অরুচি, পিম্পলস, মাথা ব্যথা, পা ব্যথা, পেট ফাঁপা ইত্যাদিসহ নানান অসুবিধা দেখা দিতে পারে। মাসিক অনিয়মিত হলে দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। হঠাৎ করে আপনার মাসিক অনিয়মিত হওয়া শুরু করলে সেটিকে নিয়মিত করার সহজ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে।

চলুন দেখে নিই, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করে তাড়াতাড়ি মাসিক হওয়ার কিছু ঘরোয়া সমাধান-

কাঁচা পেপে:

কাঁচা পেপে পিরিয়ড রেগুলেশন-এ সাহায্য করে। এটি জরায়ুর মাসল ফাইবার কন্ট্রাকশনের জন্যও উপকারি। পর পর কয়েক মাস নিয়মিত কাঁচা পেপের রস খেলে পিরিয়ড নিয়মিত হয়। পিরিয়ড নিয়মিত করা ছাড়াও কাঁচা পেপে হজমে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। তবে পিরিয়ড চলাকালীন এটি না খাওয়াই ভালো। গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকায় গর্ভকালীন সময়েও পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলুন।

কাঁচা হলুদ:

হলুদ পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদ প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরের হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় রাখে। কাঁচা হলুদ জরায়ুর মাংসপেশী সঙ্কোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান পিরিয়ড-এর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধে চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ কাঁচা হলুদ নিয়ে মধু বা গুড় মিশিয়ে কিছুদিন খেয়ে দেখুন, পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন।

অ্যালোভেরা:

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী রূপচর্চার পাশাপাশি মাসিক নিয়মিতকরণেও দারুণ কার্যকর। এটি হরমোন রেগুলেশনে সাহায্য করে। সব থেকে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তাজা অ্যালোভেরা পাতার রস সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খান। তবে পিরিয়ড চলাকালীন না খাওয়াই ভালো।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:

রক্তে ইনসুলিন ও সুগার-এর তারতম্যের কারণেও মাসিক অনিয়মিত হয়। এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার করে খান। আপনার পিরিয়ড সাইকেল নিয়ন্ত্রণে এটি সাহায্য করবে। পাশাপাশি রক্তে ইলসুলিন এবং ব্লাড সুগার এর মাত্রা কমিয়ে আপনাকে বাড়তি সুরক্ষা দিবে।

আদা:

১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ পরিমাণ মিহি আদা কুঁচি নিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর এতে সামান্য চিনি বা মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন খাওয়ার পর এই পানীয়টি তিন বেলা খাবেন। আদা পিরিয়ড সাইকেল রেগুলেশনে সাহায্য করে এবং অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করে। পাশাপাশি সর্দি-কাশি থাকলেও আদা খাওয়ার ফলে তা দূর হয়ে যায়।

দারুচিনিতে হবে জাদু: 

পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে দারুচিনি দারুণ উপকারি। দারুচিনি ব্যবহারে পিরিয়ডজনিত ব্যথা থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন।এক গ্লাস দুধে ১/২ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো যোগ করুন। সাথে খানিকটা মধু মিশিয়ে নিন। ৪-৫ সপ্তাহ নিয়মিত এই মিশ্রণ পান করুন। পিরিয়ড নিয়ে সমস্যা কেটে যাবে। অনিয়মিত পিরিয়ড দূর করতে চা বা লেবুর রসের সাথেও দারুচিনি গুড়া করে মিশিয়ে খেতে পারেন।

আঙুর: 

আঙুর ফলও পিরিয়ড রেগুলার করার জন্য খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন আঙুরের জুস খেলে বা খাবারের তালিকায় আঙুর থাকলে ভবিষ্যতে মাসিকে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

লেবুর রস: 

পিরিয়ড আসার এক বা দুই সপ্তাহ আগে এক গ্লাস লেবুর রস খালি পেটে পান করুন। তবে লেবুর রসে পানি মেশানো যাবে না। চাইলে আপনি এতে লবণ যোগ করতে পারেন। মাসিক নিয়মিত করতে এটি দারুণ ফলদায়ক।

শশা এবং তরমুজ: 

শশা এবং তরমুজ খুব ঠান্ডা জাতীয় ফল। এক সপ্তাহ যাবৎ দিনে দুই বার করে শসা অথবা তরমুজ খেলে এবং একবার এর জুস খেলে আপনি অনিয়মিত মাসিক থেকে মুক্তি পাবেন ইনশা’আল্লাহ।

জিরা:

মাসিক নিয়মিত করতে জিরা ভারি উপকারি। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ জিরা নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এই পানি এবং জিরা দুটোই খেয়ে ফেলুন। নিয়মিত সেবন করুন, ইনশা’আল্লাহ সুফল পাবেন।

সবজির জুস:

খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি সবজির জুস রাখুন। এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখে ও হরমোন রেগুলেশনে সাহায্য করে। গাজর, পুদিনা পাতা, করলার রস ইত্যাদি দিনে দু’বার করে খেতে পারেন।
গাজরে প্রচুর বিটা ক্যরোটিন রয়েছে, যা মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে। মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দিনে ধনিয়া পাতার রসও সেবন করতে পারেন।

মাসিকের সময় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রনের চাহিদা তৈরি হয়। এজন্য বেশি বেশি কলা, আপেল, পেয়ারা খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি গরু, মুরগীর মাংস, কলিজা, চিংড়ি, ডিম, কচুর শাক, লাল শাক, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি, খেজুর, গাব, টমেটো, ডাল, ভুট্টা, শস্যদানা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খান। তবে সফট ড্রিঙ্কস্, কফি ও চা খাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

মূলত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সামগ্রিক সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোবোটিক্স থাকা অপরিহার্য। সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং নিজেকে ঠান্ডা রাখুন।

তিল এবং গুড়: 

তিল আপনার অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করবে। তিলের পুষ্টিগুণ হরমোন উৎপাদনেও সহায়ক। অল্প পরিমাণ তিল ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এর সাথে এক চামচ গুড় মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন খালি পেটে এক চা চামচ করে খান। প্রতিদিন গুড় খেলেও আপনার মাসিক নিয়মিত হবে।

টক জাতীয় ফল: 

টক জাতীয় ফল বিশেষ করে তেঁতুল মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে থাকে। চিনি মেশানো পানিতে কিছু তেঁতুল এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এর সাথে লবণ, চিনি এবং জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এটি দিনে দু’বার করে খেলে দারুণ ফল পাবেন।

যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন:

মাসিক নিয়মিত না হওয়ার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। শরীরে যে সমস্ত হরমোন পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্রেস-এর কারণে সেগুলোর ব্যাল্যান্স নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ঠিকমত পিরিয়ড হয় না। যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে।

 

মেনেপজ কাকে বলে?

মেনোপজ (রজনীবৃত্তিকাল) হলো জীবনের এমন এক পর্যায় যখন মাসিকচক্র চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, এবং গর্ভধারণের আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। প্রত্যেক মহিলার তলপেটে জরায়ুর দু’ধারে দুটি ডিম্বাশয় থাকে। এদের কাজ হল ডিম্বস্ফূটন এবং হরমোন নিঃসরণ। নারীর বয়স ৪০ পার হওয়ার পর ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এবং বয়স যখন ৫০-এ পৌঁছে যায়, তখন ডিম্বাশয় একদমই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

 

মেনোপজের পূর্ব লক্ষণ

সাধারণত ছয় মাস একটানা রক্তস্রাব বন্ধ থাকলে ধরে নেয়া যায় যে মেনোপজ পর্যায় শুরু হয়েছে। এসময় হঠাৎ করে গরম লাগা, মনোসংযোগ না থাকা, মাথাব্যথা, দুশ্চিন্তা, যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া, এবং ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। পাশাপাশি কিছু দৈহিক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়, যেমন- শরীরে কিছু বাড়তি মেদ জমে থাকা, স্তনের আকার ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যাওয়া, হজমে ব্যাঘাত, চুল পড়া ইত্যাদি।

নারীদের মেনোপজ হলে দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। এতে করে হাড়ের ক্ষয়, হাড় ভাঙা, হৃদরোগ, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক নারীই এসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, তাদের বদ্ধমূল ধারণা জীবনের সব কিছুই শেষ হয়ে গেল, এভাবে বাঁচার কোন অর্থ নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মেনোপজ মানে জীবনের এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে পদার্পণ। এ নতুন অধ্যায়টি অবাঞ্ছিত নয়- একান্তভাবে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। সংসারে এমন একজন মহিলার মতামতের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর স্বামীর কাছেও তার দাম অনেক বেড়ে যায়, কারণ এখন সে যেকোনো বিজ্ঞচিত মতামত দিতে সক্ষম।

পিরিয়ডের সমস্যাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিন। এসময় গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা ইত্যাদি চিত্তবিনোদনমূলক কাজে প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় ব্যয় করুন। এতে পিরিয়ডকালীন ব্যথা আর অস্বস্তি অনেকটাই লাঘব হবে। আর দেখবেন, আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে প্রাত্যহিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছেন।

Source:
https://medlineplus.gov/druginfo/meds/a682470.html
https://www.medicalnewstoday.com/articles/178635
https://www.healthline.com/health/womens-health/irregular-periods-home-remedies
https://my.clevelandclinic.org/health/diseases/14633-abnormal-menstruation-periods/management-and-treatment
https://www.drugs.com/condition/menstrual-disorders.html

আপনার পছন্দের লেখাগুলো নিয়মিত পেতে ইমেইল দিয়ে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন।
সর্বশেষ পোস্টগুলো
আমার ওজন কমানোর গল্প

আমার ৩৪ কেজি ওজন কামানোর কথা

home remedies for insomnia

অনিদ্রা দূর করার উপায় । ১০ টি ঘরোয়া ঔষধ

আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আঁচিলের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

আমার ওজন কমানোর খাবার তালিকা

আমার ওজন কমানোর খাবার তালিকা বা ডায়েট চার্ট

অতিরিক্ত ওজন কমানোর ঔষধ

ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ

ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা

কফ কাশির প্রাকৃতিক ঔষধ

কফ বা কাশির প্রাকৃতিক চিকিৎসা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়

গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা

গরম পানি খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

খুশকি দূর করার উপায়

ঘরে বসে খুশকি দূর করার সহজ ১০টি উপায় । খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক শ্যাম্পু

চুল পরা বন্ধের উপায়

চুল পড়া বন্ধের প্রাকৃতিক ঔষধ 

দ্রুত ওজন বাড়ানোর উপায়

দ্রুত ওজন বারানোর উপায়

বমি দূর করার উপায়

বমি দূর করার উপায় | বমি হলে করনীয়

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর উপায়

ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর ৯ টি সহজ উপায়

দ্রুত ওজন কমানোর খাবার তালিকা

মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট




Categories
ভাল লাগলে ৫ স্টার রেটিং দিন!

Author

  • আবু তালহা

    একজন ওয়েব অন্ট্রাপ্রেনিয়ার, ব্লগার, এফিলিয়েট মার্কেটার। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে লেখালেখি নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ৩৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন।

Recommended Posts

No comment yet, add your voice below!


Add a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *